শিশু হত্যা প্রতিরোধে চাই সঠিক পদক্ষেপ
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০২:৩৭:২৯ রাত
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ নির্মমতার শিকার হচ্ছে শিশুরা ।প্রতিদিন খবরের কাগজে শিশু হত্যার খবর পড়তে হয়। এমনকি একদিনে একাধিক শিশু হত্যার খবর আসতেছে যা জাতির জন্য কলঙ্কজনক। শিশু হত্যার মত ভয়াবহতার জন্য অন্যতম কারণ হচ্ছে অপসংস্কৃতির সাজে সজ্জিত সমাজের পরিবেশের পাশাপাশি আই শৃঙ্খলার অবনতি । পারিবারিক বিরোধের ফলে শিশুদের খুন করা হচ্ছে। বাবা-মায়ের ওপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে খুনির হাতে খুন হচ্ছে শিশু । আর্থিক লোভে শিশুদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করার কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রত্যেক বাবা -মায়ের কাছে শিশুরাই হলো সবচেয়ে বড় ভালবাসার ধন । যার ফলে ফায়দা আদায়ের জন্য বেছে নেয়া হয় কোমলমতি শিশুদের।বিশেষ করে অপসংস্কৃতির কালো থাবায় সমাজ থেকে শ্রদ্ধা -স্নেহ দিনদিন কমে যাচ্ছে যার ফলে নানা রকমের অপকর্মের বিজয় হচ্ছে , একের পর এক মায়ের বুক খালি হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিশু ফোরামের তথ্যমতে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার বছরে সারা দেশে ১ হাজার ৮৫ জন শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এর মধ্যে ২০১২ সালে ২০৯টি শিশু, ২০১৩ সালে ২১৮টি শিশু, ২০১৪ সালে ৩৬৬টি শিশু ও ২০১৫ সালে ২৯২টি শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। বেশিরভাগ শিশুকেই হত্যা করা হয়েছে অপহরণের পর। ২৭ জানুয়ারি অপহরণ করা হয় ঢাকার ধামরাইয়ের চৌহাট এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে শাকিল (১১) ও আবু বকরের ছেলে ইমরান হোসেনকে (১১)। অপহরণের দু’দিন পর টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরের হারিয়া গ্রাম থেকে শিশু দুটির গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২৯ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জে নিখোঁজ হয় শিশু আবদুল্লাহ (১১)। রুহিতপুর ইউনিয়নের মুগারচরের গ্রামের বাড়ি থেকে দুপুরে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় সে। দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়েও শিশুটিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। চারদিন পর শিশুটির মায়ের মামা মোতাহারের বাড়ি থেকে শিশুটির গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর ৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চিতাখেলা এলাকায় র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় মোতাহের।সম্প্রতি হবিগঞ্জের বাহুবল এলাকায় নির্মমতার বলি হয়েছে চার শিশু। হত্যার পর এক সঙ্গে বালিচাপা দিয়ে রাখা হয় তাদের। এর একদিন আগে গাজীপুরে হত্যা করা হয় এক শিশুকে। এছাড়া প্রায়ই দেখা যায় কোমলমতি শিশুকে ধর্ষণ করে খুন করা হচ্ছে।
শিশু খুন জাতির জন্য কলঙ্কজনক।বাঙালদেশের মত স্বাধীন দেশে এরকম খুন কাম্য নয়। শিশু খুনের পরিসংখ্যান দেখে বলতে হচ্ছে সব মানুষ কিন্তু এখন আর মানুষ নয়। মানবতা আজ শুধুই ইতিহাস। এমন নির্মমতায় বলা চলে বিশ্বমানবতা এখন ব্যর্থ প্রেমিক। শিশুদের লাশ বলছে মানবতা মানুষের মনের পশুর কাছে পরাজিত। হিংস্র জানোয়ারের ন্যায় মানবতাকে চিবে খেয়ে ফেলেছে মানুষ নামের অমানুষেরা। দিনদিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে মায়ার পৃথিবী। মায়ের কোলের সন্তান রেহাই পাচ্ছেনা নরপশুদের হাত থেকে। এখন বাংলাদেশে ৪ খুন, ৭ খুন, ৮ খুন শুধুই কাগজের পাতার খবর। মর্মান্তিক এসব খুনের খবর পড়ে কেউ জ্ঞান হারায় না। শিশু হত্যা দেখে আবেগে কেউ চোখের পানি ফেলেনা। কারণ খুনের মত নষ্ট সংস্কৃতির সাথে আমারা নিজেদের মানিয়ে নিয়েছি। অথচ আমরা দেখেছি কোনো এলাকায় একটি শিশু স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করলে এলাকাবাসী শোকে কাতর হয়ে যেত। আমার মনে আছে একাবর টেলিভিশনের খবর দেখছিলাম আমার পাশে বসা ছিলেন একজন বৃদ্ধ মহিলা। সেই সময় টেলিভিশনে শিশু হত্যার একটি খবর বলছিল সাথে সাথে মহিলা কান্না শুরু করে দিয়েছিলেন। আমার বিশ্বাস সবাই এমন কাহিনীর সাথে পরিচিত কিন্তু আজ এসব শুধুই ইতিহাস।
শিশু হত্যা করতে পারে যে সমাজের মানুষ সেই সমাজ শুধুই ঘৃণা পাওয়ার উপযুক্ত।মায়ের বুক খালি করে নিজ স্বার্থ হাসিলে যে সমাজ এগিয়ে সেই সমাজের ভালো হয় কি করে ? সময় থাকতে শিশু নির্যাতন, শিশু শ্রম, শিশু ধর্ষণ , শিশু হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আজকের শিশু যার মুখে আগামিতে মায়াবী বাংলা উচ্চারিত হবে ,যারা বাংলাদেশ পরিচালনা করবে অথচ এই শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে।আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার বিশেষ অংশ হচ্ছে আজকের শিশু। আজকের শিশুকে যদি আগামির ভবিষ্যৎ বলা হয় তাহলে বলা যায় শিশু হত্যা করা মানে দেশের ভবিষ্যৎ অগ্রগতিকে নস্যাৎ করা।
দেশের সরকার, প্রশাসন, সাধারণ জনগণ কেউ শিশু হত্যার দায়ভার এড়িয়ে যেতে পারেন না। শিশু হত্যা,শিশু ধর্ষণ , শিশু শ্রম, শিশু নির্যাতন থামাতে হলে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় ভাবে নতুন করে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। সমাজে সঠিক সংস্কৃতির বিজয় নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে আর যেন কোনো শিশু রাজন ,সাইদ ,ইমরানদের মত নির্মমতার শিকার না হয়।
বিষয়: বিবিধ
১২২৯ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুতরাং শুধু শিশু না, কেউ বাংলাদেশে আজ নিরাপদ না।
সুন্দর লিখাটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন