দেশি পণ্য কিনে হই ধন্য’ এখন শুধুই শ্লোগান
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৩২:৫৪ রাত
দেশের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত বিদেশি পণ্যতে এখন তৃপ্তি পায়। শুধু পণ্য কেন এখন বিদেশি সংস্কৃতি বাংলাদেশের মানুষের মগজে প্রিয়তমার মতো আঁকড়ে আছে। টিভি চ্যানেল, ফিল্ম, নাটক, ড্রামা সব এখন বিদেশি হওয়া চাই। অনেকে আবার স্টাইল করে বিদেশি পণ্য ক্রয় করি। বিদেশি পণ্য ক্রয় করে সমাজে নিজেকে বড় করার চিন্তা করি।
১৯০৬ সালের বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিলেতি পণ্য বর্জন এবং স্বদেশী পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করা শ্লোগান ‘দেশি পণ্য কিনে হই ধন্য’ এখনো কোনো কাজে আসছে না যা নিতান্তই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের বেলায় অগ্রাধিকার দেখা যাচ্ছে দেশি পণ্যের চেয়ে অধিক গুণে বিদেশি পণ্যের।
মার্কেটে গেলেই প্রথমেই বিদেশি পণ্য দেখে ক্রয় করার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন ক্রেতারা। কেউ দেশি পণ্যের কাছে যেতেও রাজি নয়। আর সে জন্য বিক্রেতারাও বিদেশি পণ্যের প্রতি জোর দিয়েছে বেশি। প্রসাধনী সামগ্রী থেকে শুরু করে নিম্নে এখন কাঁচামাল পর্যন্ত বিদেশি চাই। ২০১৪ সালের এক দুপুরে গ্রামের মধ্যে এক ফেরিওয়ালা কাপড়ের বোঝা নিয়ে এসেছে সেও বলে তার অধিকাংশ কাপড় বিদেশি। সব পর্যায়ের ক্রেতারা যেখানে বিদেশি পণ্যের প্রতি জোর দিয়েছে সে কারণে বিক্রেতারা দেশীয় পণ্য বেশি বাজারে রাখে না। যার ফলে প্রভাব পড়েছে দেশীয় পণ্যের উৎপাদনের ওপর। দেশে উৎপাদিত পণ্য বাজারে কম চলার ফলে পণ্যের দাম কমে যায় এক পর্যায়ে সেই পণ্যের মানও কমাতে বাধ্য হয় উৎপাদক।
দেশের বেকার যুবকরা কর্মসংস্থানের জন্য নিজেদের শ্রম, বুদ্ধি, বিবেক খাটিয়ে দেশের মাটিতে বিদেশি পণ্যের বাজার গড়তে মরিয়া হয়ে আছে। সেক্ষেত্রে পণ্য মানসম্পন্ন কিনা সেটা দেখার বিষয় থাকে না বরং ব্যবসায়ীরা যে যেভাবে পারছেন বিদেশি পণ্যের বাজার গড়ার কাজে নিয়োজিত। বিদেশি পণ্যের মানে নয় নামে আমরা আকৃষ্ট হয়ে আছি। গত ২০ ডিসেম্বর ২ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশি খাদ্যদ্রব্য জব্দ করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ওমেগা এক্সিম লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত এসব জব্দ করেন। র্যাব-২ এর অপারেশন অফিসার এএসপি ইয়াছির আরাফাত জানান, বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়াই ওইসব খাদ্যদ্রব্য আমদানি করা হয়। এর মধ্যে আছে- বিভিন্ন ধরনের আপেল ও অরেঞ্জ জুসসহ নানান রকমের জুস। এগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য ২ কোটি টাকা।
দেশপ্রেমে জাগ্রত হয়ে বিদেশি পণ্য বর্জন করে দেশি পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার চেষ্টা সময়ের দাবি। তবে অনেক পণ্য রয়েছে, যা বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না সেসব পণ্যের বেলায় অবশ্যই ভিন্নতা থাকতে পারে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশি পণ্যের চেয়ে সুযোগ ও পর্যাপ্ত মনে হলে বাংলাদেশি পণ্য ক্রয় করা উচিত। বিদেশি পণ্য ক্রয় করে গর্বিত না হয়ে দেশি পণ্য ক্রয় করে নিজেকে গর্বিত করা দেশপ্রেমিকের পরিচয়। যেকোনো অনুষ্ঠানে বিদেশি কাপড় পরিধান করে না গিয়ে দেশি কাপড় পরে অনুষ্ঠানে যাওয়ার মাধ্যমে তৃপ্তির মনে করা উন্নত মানসিকতার পরিচয়।
বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে বিদেশি পণ্য ব্যবহারে অভ্যস্ত হচ্ছে ভবিষ্যতে দেশি পণ্যের বিদায়ঘণ্টা বাজতে বাধ্য। বিদেশি পণ্যের প্রতি এ রকম বেশি জোর থাকলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়বে।
বাংলাদেশ সরকারের করণীয় হচ্ছে দেশীয় পণ্য মানসম্পন্ন করার জন্য বিদেশি কোয়ালিটি সার্টিফিকেশন কোম্পানির মাধ্যমে র্যাংকিং করে পণ্য বাজারজাত করা। দেশের বিশেষ দিনে অর্থাৎ দুই ঈদে, রমজানে এবং পূজার সময় দেশি পণ্যে ভ্যাট বাড়িয়ে পণ্যের দাম কমানো। বাংলাদেশের শিল্প সেক্টর দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য প্রশাসনিকভাবে নজরদারি বাড়ানো দরকার। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজারের পণ্য পরীক্ষা করা বিশেষ করে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির অযোগ্য বলে সিল মারতে হবে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়কারীকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
৩৪৮৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার মোবাইলটা কোন দেশি ??
মুরগী ক্রয়ের সময় দেশী
পন্য ক্রয়ের সময় বিদেশী
মন্তব্য করতে লগইন করুন