সৌদি - ইরান যুদ্ধের সম্ভাবনা কত টুকু ?
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ১৪ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৩:২৪:১৫ রাত
সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হচ্ছে সৌদি - ইরান যুদ্ধের সম্ভাবনা। কিন্তু আসলেই কি যুদ্ধের সম্ভাবনা আছে ? থাকলেই বা কার লাভ ? দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক কি নতুন ভাবে খারাপ হয়েছে নাকি ইটা পূর্বের ? অনেকের মতে আমেরিকা রাশিয়া চাচ্ছে সৌদি এবং ইরানের মধ্যে যুদ্ধ কিন্তু এটা কি সত্য ?
সৌদি -ইরান যুদ্ধের সন্দেহ করার পূর্বে অবশ্যই এসব বিষয় ভালো করে বিবেচনায় আনতে হবে। সম্প্রতি সৌদি আরবে শিয়া নেতা আল নিমরকে দেয়া মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। এমন ও বলা যায় ব্যাপকভিত্তিক জাতিতাত্ত্বিক সঙ্ঘাতের আশঙ্কা নতুন করে দেখা দিয়েছে। শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর ইরানের কটুর হুশিয়ারী এবং গালবাজি ছিল অনেকটা উস্কানির মত। ইরান ছাড়াও লেবানন ইরাকের শিয়া নেতারা উস্কানি মূলক প্রতিক্রায়ার কারণেই তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে । আন্তর্জাতিক আইন ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন অনুসারে এই হামলা ও অগ্নিসংযোগ নিতান্তই আইন লঙ্গন। ইরান আদালতের মামলাকে শিয়া সুন্নিতে রূপ নিয়ে বিশ্ব ব্যাপী একটি আতঙ্ক সৃষ্টি করার পায়তারা করছে।
সৌদি এবং ইরানের মধ্যে মনোমালিন্য নতুন কিছু নয়। একজনের ফাসিতে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে তা অকল্পনীয়। তাছাড়া গত দু দিন পূর্বে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির উপযুবরাজ ও ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান। দি ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। ইরানের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধের সম্ভাবনার বিষয়ে পরিষ্কার বলেছেন কোনো শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র যুদ্ধ চায় না। কিন্তু এটা ঠিক, যুদ্ধ এমন একটি বিষয়, যা বলেকয়ে আসে না। এ ছাড়া আমি এটা বলতে পারি যারা কাউকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয় তারা সুস্থ নয়।
সৌদি , বাহরাইন, সুদান, কুয়েত ও কাতার ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয় এ ছাড়া সম্পর্ক হ্রাস করে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান ও জিবুতি।এসব দেখে অনেকে যুদ্ধের আবাস পাচ্ছেন কিন্তু এসব পূর্বে আরো অনেকবার হয়েছে। ইরান সৌদি দুতাবাসে রকেট পর্যন্ত চুরেছিল সম্ভবত ১৯৭৯ সালে তখন কুটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল।
আমেরিকা কিংবা রাশিয়া কেউ চাইবেনা সৌদি -ইরান যুদ্ধ। যুদ্ধ না চাওয়ার কারণ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের তেল। আন্তর্জাতিক বানিজ্যের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের তেল হচ্ছে আমেরিকার অন্যতম কৌশলিক বানিজ্যিক অস্ত্র । তবে এটা সত্য যে , মধ্যপ্রাচ্যে বা মুসলিম দেশে শান্তি বিরাজ করুক সেটা ওরা চাইবেনা। ইসরাইল যদিও সরাসরি যুদ্ধ চাইবে কিন্তু হলফ করে বলা যায় বিশ্বের আর কোনো দেশ সৌদি ইরান যুদ্ধ চাইবে অন্তত নিজেদের স্বার্থে। মিডিয়ার মাধ্যমে শুনা যাচ্ছে মুসলিম বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশ তুরস্ক ও পাকিস্তান এ সঙ্ঘাত যাতে কোনোভাবে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য গঠনমূলক ভূমিকা পালনের প্রচেষ্টা নিচ্ছে। দেশ দু’টি সৌদি অবস্থানকে প্রত্যক্ষ সমর্থন না করে আলোচনা ও কূটনৈতিক উপায়ে সমাধানের পথে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।সার্বিক বিবেচনায় বলা যায় যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই এমনকি যুদ্ধ কাম্য নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঠিক বলেছেন, 'সার্বিক বিবেচনায় বলা যায় যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই এমনকি যুদ্ধ কাম্য নয়'।
ভাবছি ৫/৬ বছর আগে আমাদের কোন ভাই/বোন কিংবা কোন স্কলার কি স্বপ্নেও ভেবেছিল আমেরিকা, বৃটেন ও ইসরাইলের কাছে - সৌদী, জর্ডান, কাতার, তুরস্ক ইত্যাকার দেশ অমন উদার ভাবে নিজেদেরকে এবং নিজেদের সম্পদ, নিজেদের পলিটিক্স, নিজেদের অবশিষ্ট ঈমান অমন করে ভুলন্ঠিত করে - সিরিয়ায় তথাকথিত আমেরিকান আরব স্প্রিং এর জন্য কাজ করবে এবং আড়াই লক্ষ সিরিয়ানকে হত্যা করার উপযাচক হবে? আমার মনে হয় না।
এখন থেকে ঠিক ১ বছর আগেও কোন মুসলিম কিংবা স্কলার চিন্তাও করেনি স্বপ্নেও দেখেনি ইউএস স্টেইট অব জায়োনিস্ট সৌদী আরব অমন করে অমন করে মোস্ট প্রজ্ঞাসম্পন্ন ও ঈমানদার ইয়েমেন এর উপর আক্রমন করে আড়াইহাজারের ও বেশী মুসলমানকে হত্যা করবে? নিশ্চয়ই না।
মূলতঃ আমরা মুসলমানরা অদ্ভুত রকমের প্রতারনার খপ্পরে পড়ে আছি। ভাবছি কোরান ও হাদীসের অনেক অনেক ভবিষ্যতবানী আমাদের জন্য নয় - যদিও চোখের সামনে ঘটছে - কিন্তু মানতে চাইছি না, বুঝেও বুঝতে চাইছি না।
এ্যানীওয়ে এ জাতীয় ইস্যু নিয়ে আপনার ভাবনা শেয়ার করার জন্য ধণ্যবাদ।
বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের যা মুল্য তাতে এই ধরনের কোন যুদ্ধ হওযার সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয়না। সেীদি আরব এ শিয়া নেতার মৃত্যুদন্ড নিয়ে ইরানের অতি প্রতিবাদ হাস্যকর। বছরখানিক আগে ইরানে এক খুনি নারিকে ফাঁসি দেওয়া নিয়েও পাশ্চাত্য প্রেস এমন প্রচারানা চালিয়েছিল যে সেই নারি যেন একেবারে নিরপরাধ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন