মধ্যপ্রাচ্যে কেমন আছি আমরা (পর্ব - ২৩ ) পরিষ্কার পরিছন্ন
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:১১:২৪ রাত
উন্নত দেশের প্রথম পরিচিতি হচ্ছে তার রূপ।আর সেই রূপ হয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন । সংযুক্ত আরব আমিরাতও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে। আমিরতের প্রতিটি স্টেটের বিশেষ স্থান সমূহ সাজানো হয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রের ন্যায়। আমিরাতে প্রায় ১৪০ দেশের মানুষ রয়েছে যাদের বেশিরভাগই উন্নত দেশের। আমিরাত শাসকের আলাদা বাত্সরিক বাজেট থাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য।
একটা বিষয় খেয়াল করলেই বুঝা যাবে আমিরাত সরকার পরিষ্কারের বিষয়ে কতটা সোচ্চার। সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে অনেক সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজের জন্য কর্মী আনার চুক্তি হয়। এছাড়া নেপাল ,পাকিস্থান ,ভারত ,শ্রীলংকা থেকেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজের কর্মী আনা হয় আমিরাতে। যারা বলদিয়ার ( Municipality ) অধীনে কাজ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন ছাপ্লাই কোম্পানিও একই কাজের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিয়ে আসে । ছাপ্লাইয়ের কর্মীরা বিভিন্ন কোম্পানিতে বাত্সরিক বা মাসিক চুক্তিতে কাজ করেন।
বাংলাদেশী প্রবাসীরা আমিরাতে নানান পেশায় রয়েছেন তবে অধিকাংশই সাধারণ কর্মী। আমরা বাংলাদেশী প্রবাসীরাও পরিষ্কার পরিছন্ন থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করি। কিন্তু কিছু প্রবাসীদের কারণে আমাদের দেশের দুর্নাম হচ্ছে। এমনকি বিদেশীদের মুখে সরাসরি শুনতে হয় দুর্নামের কথা। অনেক সময় কিছু প্রবাসী ভাইদের অসচেতনতার জন্য সবাইকে লজ্জিত হতে হয়। দুবাই , শারজাহ শহরে রয়েছে বাংলা বাজার মূলত বাংলাদেশীদের লোক সংখ্যা বেশি বলে লোক মুখে স্থানের নাম লেগেছে বাংলা বাজার । দুবাই ,শারজাহ ছাড়া আরো দু একটা স্থান এমনটা রয়েছে। এসব বাংলা বাজারে গেলে বুঝাই যায় না বাংলাদেশ নাকি আমিরাত ?পানের পিক ,পানের কাগজের পেকেট ,হাকিম পুরী আর মিষ্টি জর্দার ক্যানে ভরপুর পুরো বাজার। বাজারের যে প্রান্তেই যাবেন দেয়ালে পানের পিকের দাগ পাবেন। আমিরতের পথে পথে আবর্জনা ফেলানোর জন্য কখে পড়ার মত বড় বড় রঙিন ডাস্টবিন রাখা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশী অনেক ভাই সেটা ব্যবহার না করে দেখা যায় রাস্তার মধ্যেই আবর্জনা ফেলেন।
সামাজিক ভাবে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবে ক্লিন থাকাটা জরুরি অন্তত নিজের জন্য। কর্মস্থলে নিজের কাপড় যেন পরিষ্কার থাকে সেই দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কাপড় পুরোনো কিংবা নতুন বিষয় সেটা নয় পরিষ্কার থাকা হচ্ছে আসল। শরীরে কোনো রকম দুর্গন্ধ থাকা ঠিক নয়। তবে এটা ঠিক কিছু কাজ রয়েছে পরিষ্কার থাকা যায় না তবুও নিজের মত করে সোচ্চার থাকতে হবে।সহকর্মীদের পাশে দাঁড়ালে নিজেকে যেন কখনো দুর্বল মনে না হয় । ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিছন্ন থাকার কারনে অনেক রকম সুযোগ সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।
প্রবাস জীবনে একাকিত্বের প্রধান নমুনা হচ্ছে নিজের কাজ নিজে করতে হয়। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ নিজেই করতে হয়। প্রবাস জীবনকে যে ভাবেই চিন্তা করবেন কষ্টের সেটা মানতেই হবে। প্রবাস জীবন কষ্টের হলেও নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে আর সে জন্য সোচ্চার হতে হবে।
আমার পরিচত এক প্রবাসী গত ৫ বছর থেকে একটি কোম্পানিতে কাজ করে আসছেন। উনার কাজ হচ্ছে অফিস পিয়নের। বিভিন্ন ফাইল পত্র এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে আনা নেওয়া করেন। দীর্ঘ ৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় সহজেই নিজের কাজ করতে পারেন কোনো রকম সমস্যা হয় না। কিন্তু একদিন এক অফিসার উনাকে তার অফিসে যেতে নিষেধ করেছে। উনি কষ্ট পাওয়ার কথা ছিল কিন্ত কষ্ট না পেয়ে বরং লজ্জিত হলেন। এর পেছনে একমাত্র কারণ উনি কখনো কখনো পান খেয়ে অফিসে যেতেন। আমার সাথে ভালো পরিচয় ছিল , উনি যখন পান খেতেন বাহিরী রকমের জর্দা পানের মধ্যে দিয়েই খেতেন। এসব জর্দার মধ্যে অন্য রকম একটা গন্ধ রয়েছে নতুন কেউ পাশে থাকলে মাথা ব্যথা করবে। সেদিন ও হয়তো এমন কোনো জর্দা পানের সাথে খেয়েছেন আর অফিসারের খারাপ লেগেছে। উনি আমাকে বলেছেন পূর্বেও নাকি অনেকবার বলা হয়েছিল পান খেয়ে উনার অফিসে না যাওয়ার জন্য।কিন্তু তিনি সেটা আমলে নেন নাই। বেশ কিছু দিন এভাবে চলার পর একদিন সেই অফিসার ডেকে নিয়ে থাকে বলেছেন উনার মাথা ব্যথা করে এসব গন্ধে। এর পর থেকে উনি আর পান খেয়ে অফিসে যান না এমনকি আগের মত পান খাওয়ার অভ্যাস নেই।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব ভাল লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন