মধ্যপ্রাচ্যে কেমন আছি আমরা (পর্ব - ২২ ) আবেগ , বিবেক এবং সচেতনতা
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০২:০৫:৩৪ রাত
ছবি : আল কাসবা , শারজাহ
প্রচলিত একটা কথা সবাই জানে বাংলাদেশীদের বিবেকের চেয়ে আবেগ বেশি । আর সেটা দেশ বিদেশে বারবার পরীক্ষিত । প্রবাসে আসলে মানুষ এমনিতেই আবেগপ্রবণ হয়ে যায় তাই বলে অতি আবেগ নিজের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে সেটা ভুলে থাকা ঠিক নয় । অতি আবেগর ফলে বারবার বিপদের সম্মুখীন হওয়া ও অযৌক্তিক কিছু নয়। প্রবাসের আইন অনেক কঠিন সেই আইনের সাথে আবেগকে কন্ট্রোল করে চলতে হবে । বিবেককে সব সময় অগ্রাধিকার দিতে হবে আবেগের চেয়ে ।
২০১৩ সালের জানুয়ারী মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ শহরের একটি পার্ক "আল কাসবা" সেটাতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমিরাতের কয়েকটি পার্কের মধ্যে এটা অন্যতম। আমার সাথে ছিল সহকর্মী কামাল মিয়া ( ছদ্ধনাম ) । আমি কিছু উপভোগ করলে নিজের মত করে করি মানে অনেক আগ্রহ এবং নজরধারীর মাধ্যমে। প্রায় ১ ঘন্টার চেয়ে বেশি সময় আমরা পার্কে ছিলাম। সময় ছিল তখন আসরের পর মাগরিবের আগ মুহূর্ত। সূর্যের তাপও কম ছিল শান্তিময় পরিবেশে যার ফলে মন ছিল অনেকটা শান্ত । শান্ত মন নিয়ে যখন চলে আসার চিন্তা করতেছি পার্ক থেকে ঠিক সেই মুহুর্তে সব উলট পালট হয়ে যায়। আমার সাথে থাকা কামাল মিয়াকে পাশে না দেখে আশপাশ থাকাচ্চি। আমার কাছ থেকে আনুমানিক ২০/২৫ পা দুরে একজন মহিলা উচ্চস্বরে চিল্লাচ্ছেন এবং মহিলাটির আশপাশে গোল করা প্রায় ৮/১০ জন লোক । আমি দেখে না দেখার মত করে আপন চিন্তায় রইলাম। সাথের মানুষকে কাছে না দেখে মোবাইল হাতে নিলাম ফোন করার জন্য। ঠিক সেই মুহুর্তে কামালের আচমকা ধরনের কন্ঠে আব্দুল্লাহ ( আমি প্রবাসে আব্দুল্লাহ নামেই পরিচিত ) ডাক শুনতে পেলাম । এ কি ? ওই মহিলার পাশে দাড়ানো কামাল আর তার দুই হাতে ধরা পার্কের সিকিউরিটি। দেখতে পেলাম মহিলাটি রাগে লাল হয়ে আছে। কামাল আমাকে ইশারা দিয়ে কাছে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমি পাশে গেলাম কামালের অবস্থা দেখে বুঝা গেল কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু কথা বলার পরিবেশ নেই কারণ সিকিউরিটি ওরে প্রশ্ন করতেছে। সেখানে যেতেই প্রশ্ন শুনলাম সত্য বল নয়তো সমস্যা হবে। সিকিউরিটির অনুমতি নিয়ে কামালের সাথে আমি কথা বললাম। কামালের কাছ থেকে জানতে পারলাম সে নাকি একটি ছোট্র বাচ্চার হাতে ধরে কথা বলছিল বাচ্চার ইচ্ছে অনুযায়ী পরবর্তিতে কুলে ও নিয়েছিল। পাশে মায়ের কুলে বাচ্চাকে দেখে বুঝা গেল বয়স ৩/৪ বছরের মেয়ে ।আমি মোটামোটি আরবি ভাষা জানি বলে আমার সাথে ভদ্র মহিলা ও পার্কের সিকিউরিটি কথা বলেলেন এক পর্যায়ে বিষয়টা শেষ করা হলো। আমি উনাদের অনেক কষ্টে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে তার অন্য কোনো লক্ষ্য ছিল না। সে বুঝে নাই তার ভুল হয়েগেছে । কামালকে আমি ইশারা দিলাম যাতে সে স্যরি বলে।সেদিনের মত বড় একটা বিপদ থেকে বাচা গেল। যদি পুলিশে খবর যেত তাহলে বড় কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে হত কামালকে। এমনিতেই পার্কে সবসময় পুলিশ থাকে কিন্তু সেই দিন ভাগ্যক্রমে ছিল না। কি প্রয়োজন বাচ্চাদের হাত ধরার কিংবা কুলে তুলার ? আবেগ কন্ট্রোল করতে না পারলে বাহিরে বের হওয়া ঠিক নয়। মানলাম বাচ্চাটাকে আপনার ভাই/বোন কিংবা সন্তানের মত লাগতেছে তাই বলে ওরে কুলে নিতে হবে ? এটা কি রকম আবেগ ?
আমাদের এই ঘটনার কিছু দিন পূর্বে এই একই পার্কে একজন ভারতীয় পুরুষ ১০ বছরের একটি ছোট্র মেয়ের হাত ধরার অপরাধে ১ বছরের জেল হয়েছিল। যদিও আদালতের মাধ্যমে প্রমান হয়েছিল সেই পুরুষ বাচ্চাটিকে যৌন হয়রানি করেছে। ( চলবে,,,,)
বিষয়: বিবিধ
১০৬২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি একবার আমার পরিচিত মরক্কোর ইমামের মেয়েকে কোলে নিয়েছিলাম, মেয়েটি বয়সে আমার জান্নাতের সমান হবে হয়তো, কিন্তু দেখলাম ইমাম সাহেবের চেহারা মলিন। তাতে বুঝলাম আমি ভালো কাজ করিনি। সেই থেকে দূরে থাকি।
সুন্দর পোষ্ট, অনেক অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন