ফেলানি হত্যার বিচার ও সীমান্ত হত্যা
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ০৩ জুলাই, ২০১৫, ০২:২৫:১৬ রাত
সীমান্ত হত্যার প্রতিক বোন ফেলানি। ফেলানির লাশ যখন কাঁটাতারে ঝুলছিল বাংলাদেশের মানুষ তখন কাদছিল। আজ পর্যন্ত সেই কান্নার মুল্য দেয় নাই তথাকথিত বন্ধু ভারত। বরং উল্টো আমাদের আবেগ আমাদের বুকের ব্যথাকে নিয়ে ফাজলামি করেছে। ভারতের আদালত আমাদের ফেলানিসহ বিএসএফের হাতে খুন হওয়া সকল লাশের সাথে তামাশা করতেছে বারবার। আর আমরা সেই তামাশাকে বন্ধুর মশকরা মনে করে নিরব থাকতেছি।
২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে বাবার সঙ্গে নিজের বাংলাদেশে আসছিল ১৬ বছরের ওই কিশোরী ফেলানি খাতুন - তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল।কোচবিহার জেলার চৌধুরীহাট সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার পেরুনোর সময় বি এস এফের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদস্য অমিয় ঘোষ তাঁর ইনসাস ৫.৫৬ মিলিমিটার বন্দুক থেকে গুলি করে হত্যা করে ।কাঁটাতারের ওপরে ফেলানির দেহ দীর্ঘক্ষণ ঝুলে ছিল।পরে বাংলাদেশের জনগণ কিংবা সরকারকে সান্তনা দেওয়ার জন্য বি এস এফে নিজেই বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ দায়ের করে মামলা রুজু করে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যা আর বি এস এফে আইনের ১৪৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছিল।বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট বা জি এস এফ সি প্রথমে যে রায় দিয়েছিল মি. ঘোষকে নির্দোষ বলে।২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জি এস এফ সি রায় দিয়েছিল যে অভিযুক্ত বি এস এফ প্রহরী নির্দোষ।সে রায় যথার্থ মনে না হওয়ায় তার পুনর্বিবেচনার আদেশ দিয়েছিলেন বাহিনীর মহাপরিচালক। ৩০ শে জুন সর্বশেষ শুনানি শুরু হয়। এবং আবারও অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ঘোষণার মাধ্যমে আবার প্রমান করেছে ভারত হত্যায় বিশ্বাসী। একের পর এক হত্যা করে যাচ্ছে সীমান্তে যা আন্তর্জাতিক ভাবে মানবাধিকার লঙ্গন।
আমরা বাংলাদেশের জনগণ মনে করি এই বিচার -বিচার খেলা ছিল স্রেফ তামশা কিংবা বাংলাদেশের মানুষকে বোকা বানানো।
বোন ফেলানি শুধু একটি লাশের নাম নয় বরং দেশের রক্ত। ফেলানি বাংলাদেশের সন্তান ,ফেলানির লাশ নিয়ে বারবার তামাশা করা মানে বাংলাদেশের সাথে তামাশা করা। ফেলানির লাশের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকার সম্মান।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্যমতে ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্তু সীমান্তে বিএসএফ বা ভারতীয় সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১১শ’ জন বাংলাদেশি। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার তাদের আরেকটি প্রতিবেদন বলেছে চলতে বছরের গত পাঁচ মাসে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে মারা গেছেন ২০ জন বাংলাদেশের নাগরিক। ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি যশোরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ জানান, ২০১৩ সালে বিএসএফের হাতে ৩৮ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব মতে, ২০১৩ সালে হত্যার পাশাপাশি বিএসএফ ৮৩ জন বাংলাদেশিকে আহত করে এবং ২১৫ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। যার মধ্যে ১২৯ জনের কোনো খবরই পাওয়া যায়নি বা নিখোঁজ রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসেব মতে, ২০১২ সালে ৩৬ জন বাংলাদেশিকে বিএসএফ ও ভারতীয়রা হত্যা, ৯৮ জনকে গুলিতে অথবা পিটিয়ে আহত করেছে। ৬৪ জনকে অপহরণ করে। যশোরের সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর প্রধান দাবি করেন, সীমান্ত হত্যা কমে এসেছে। তার দেয়া তথ্যমতে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে ২১৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ। ওই সময়ের মধ্যে ৩২৩ জন আহত হন। আর এই সময়ের মধ্যে বিএসএফের সাথে পতাকা বৈঠক হয়েছে ২ হাজার ২২০টি। ২০১০ সালের মানবাধিকার সংগঠনের হিসেবে দেখা যায়, বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে ৫৩ জন বাংলাদেশি। ওই বছর বিএসএফের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন ৯৪০ জন, অপহরণের শিকার হন ৯৪৫ জন, নিখোঁজ হন ১৮৮ জন ও পুশইনের শিকার হন ২৪০ জন, ধর্ষণের শিকার হন ১৭ নারী। পরিসংখ্যান বলছে, বিএসএফের হত্যার শিকার হয়েছেন ২০০৯ সালে ৯৬ জন, ২০০৮ সালে ৬২ জন, ২০০৭ সালে ১২০ জন, ২০০৬ সালে ১৪৬ জন, ২০০৫ সালে ১৪ জন, ২০০৪ সালে ১৩৫ জন, ২০০৩ সালে ৪৩ জন, ২০০২ সালে ১০৫ জন, ২০০১ সালে ৯৪ জন এবং ২০০০ সালে ৩৯ বাংলাদেশি নাগরিক।
বিশ্বের কোনো সীমান্ত নেই যেখানে কাঁটাতারে বেড়া রয়েছে ? বিশ্বের কোথাও এমন সীমান্ত নেই যেখানে বছরের পর বছর লাশ পড়তেছে এক পক্ষের সীমান্ত প্রহরীর গুলিতে। বিএসেফ গুলি করে হত্যা শুধু নয় পিটিয়ে আমাদের জনশক্তি মেরে ফেলতেছে।ভারত যখন আমাদের জনশক্তি হত্যা করতেছে টিক তখন বাংলাদেশের সরকারের অনেক মন্ত্রীরা এই হতাকে স্বাভাবিক বলতেছেন। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক ভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য ভারতকে প্রতিহত করতে হবে আন্তর্জাতিক । আমরা যুদ্ধ চায়না শান্তি চাই। ফেলানিদের হাতের মেহেদী রক্তে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।রাষ্টীয় ভাবে প্রতিবাদ না করার কারণেই এমনটা হচ্ছে বারবার। আমাদের দেশের সরকারগুলো ভারত প্রেমে নিজেদের ডুবিয়ে রাখে যার ফলে প্রতিবাদের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বারবার সীমান্ত চুক্তি না করে একবার সঠিক সিদ্ধান্ত নিন আর সেটা জাতিসংঘের মাধ্যমে সমাধান।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৮ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর দিনের অপেক্ষায় একদিন আসবে সেই দিন যেদিন দেশের পক্ষে কথা বলবে দেশের সরকার
মন্তব্য করতে লগইন করুন