আমার চোখের পানি
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ১৪ এপ্রিল, ২০১৫, ০৭:৩৮:৫০ সন্ধ্যা
প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা আপনারা জানেন ২০১৪ সালের আগস্ট মাসের ৩০ তারিখ দেশে যাওয়ার জন্য দুবাই ছেড়েছিলাম। ৩১ তারিখ বিকেলে মায়ের কুলে গিয়ে হাজির । একটু বিশ্রাম নিয়ে অনেক তৃপ্তির একটা ঘুম দেই। রাত ১০ টায় ঘুম থেকে উঠে যাই ,এশার নামাজ শেষ করে এই ১০ :৩০ মিনিট থেকেই শুরু হয়ে যায় পাগলা হওয়ার তরে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। স্থানীয় বাজারে বন্ধুদের সাথে আড্ডা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সামাজিক নেতৃবৃন্দের সাথে কুশল বিনিময় করে রাত ১ টায় বাড়ি ফিরে মায়ের হাতের রান্না করা মজাদার খাবার খেয়ে আবার ঘুম।
মধ্যখানে আরো একটি দিন চলে যায় অনেক রকম কার্যকলাপে। ২ সপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় বাবা মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে দুই দিনের জন্য চাচাত ভাইয়ের কাছে সিলেট শহরে চলে গেলাম। চাচত ভাইয়ের কাছে যাওয়ার পেছনে মূল টার্গেট ছিল ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার এক হোটেলে কমিউনিটি ব্লগারস ফোরাম (সিবিএফ) কেন্দ্রিয় আহবায়ক কমিটি গঠনের অনুষ্টানে যোগ দেওয়া। আমার টার্গেট শামীমকে প্রবাসে থাকাকালীন সময় জানিয়ে রেখেছিলাম।
৪ তারিখ সকাল পর্যন্ত শামীমের কাছে ছিলাম । সকাল ৯ টায় সিলেট থেকে শামীমকে নিয়ে বাসে করে ঢাকায় চলে গেলাম ,প্রথমেই দৈনিক ইনকিলাব অফিসে গেলাম অফিসে গিয়েছিলাম সেখান থেকে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ব্লগার বাংলার দামাল সন্তানের সাথে হয়ে অনুষ্টানে যোগ দিলাম। তার পূর্বে একাদিক বার ফোন করে শ্রদ্ধাবাজন ওহিদুল ইসলাম ভাইয়া আমার খবর নিয়েছেন।
জাগরণের কবি আব্দুল হাই শিকদার সহ আমার প্রিয় ব্লগার ভাইয়াদের উপস্থিতেতে অনুষ্টানটি অনেক সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয়। অনুষ্টান শেষ হওয়ার সাথে সাথে আরমা সিলেট ফিরে যাওয়ার জন্য সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি সে সময় অনেকেই বলেছেন এক সাথে বের হবেন কিন্তু আমার সময় ছিল কম কারণ একদিকে বাড়িতে জানে না আমরা ঢকায় আসছি অন্যদিকে বাড়ি থেকে সবাই বারবার ফোন করতেছে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য ।
ঘৃণার সময় শুরু হলো
ঢাকার রোড আমার অপরিচিত আর অন্যদিকে রাত ১০ টা হয়েগেছে। শামিম একটি সিএনজি ডেকে কোনো এক বাস টার্মিনালের নাম বলেছিল। কিছু পথ যাওয়ার পর সিএনজি চালক মূল রাস্তা থেকে বাম পাশে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। আর সেখানেই আমাদের গাড়ি থামিয়ে দিল ৫-৬ জন পুলিশ। প্রথমে আমাকে গাড়ি থেকে নামার জন্য বলা হলো। পুলিশের কথা মত গাড়ি থেকে নামলাম , নামতেই দুজন পুলিশ আমার শরীর সার্চ করা শুরু করলো। এমন ভাবে সার্চ করেছিল মনে হচ্ছিল আমি শাহীন নয় জঙ্গি শাহীন ! আমার কাছে কিছুই না পেয়ে আমার মানি ব্যাগ ,দুটি মোবাইল পুলিশের হাতে রেখে দিল। তারপর আমার ভাই শামীমকে গাড়ি থেকে নামিয়ে সার্চ না করে মানি ব্যাগ এবং সাথে থাকা দুটি মোবাইল অন্য এক পুলিশ নিয়ে নিল। শামীমের সাথে যখন পুলিশ কথা বলছিল তখন আমি চারপাশ থাকিয়ে দেখলাম আশেপাশে প্রায় ১০-১২ জন পুলিশ দাড়িয়ে আছে।
যখন শামিম পুলিশের কাছে মোবাইল মানি ব্যাগ নেওয়ার কারন জানতে চাইলে পুলিশের মধ্যে কেউ উত্তর না দিয়ে পাশের এক পুলিশকে ডেকে এনে চুপি চুপি কি আলোচনা করার পর আমাদের কাছে ১০ হাজার টাকা চেয়ে বসলো।যদি ১০ হাজার টাকা দিতে অপারগতা দেখাই তাহলে আমাদের জঙ্গি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে থানায় নিয়ে যাবে বলে হুমকি দেওয়া হলো । শামীমকে কথা না বলার জন্য হুশিয়ারী করে দেয় এক পুলিশ।
এমন যখন অবস্থা তার মধ্যে আরো একজন পুলিশ এসে আমাকে আড়ালে নিয়ে বলেন তোমাদের বাঁচিয়ে দেব আর তার জন্য ৫ হাজার টাকা দিলে চলবে। তার কথা মত শামীমকে চুপি চুপি করে বললাম ভাই টাকা দিয়ে দেই। শামিম জবাব দিল মানি ব্যাগ পুলিশের হাতে তাদের যা ইচ্ছে করুক। এবার প্রথমে যে পুলিশ আমাকে সার্চ করেছিল সে এসে দুজনের ৪ মোবাইল ,মানি তাকাবিহীন মানি ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে চলে যেতে বলে। কিন্তু আমরা কি ভাবে যাব আমাদের কাছে টাকা নেই যা ছিল মানি ব্যাগে ছিল তা তো পুলিশ নিয়ে গেছে। আমরা যখন অসহায়ের মত দাড়িয়ে ছিলাম ঠিক তখন এক পুলিশ আমাদেরকে ২ হাজার টাকা দিয়ে বলে গাড়ি ভাড়া দিয়ে দিও। সেই পুলিশ আমার কানে কাছে এসে বলেছিল দেখেছ আমি রোমাদের সাহায্য করলাম বাঁচিয়ে দিলাম।
আবার সিএনজিতে উঠে ড্রাইবারকে জিজ্ঞাসা করলাম সে কেন অন্ধকারের মধ্যে গাড়ি নিয়ে গেল। সে জবাব না দিয়ে বলে ভাই দেখছেন পুলিশ গুলো কত খারাপ ! শামীমের কাছ থেকে অবাক করা একটা কথা শুনে আমি নিরব হয়ে গেলাম সেটা হলো ,এই ড্রাইবার ইচ্ছে করে নিয়ে গেছে আর এটা ওদের ব্যবসা। ঢাকার বাহিরের লোক বুঝতে পারলে তারা এসব কাজ করে।
ঢাকা থেকে নরমাল একটি বাসে করে যখন সিলেট আসছিলাম আর দুর্ঘটনার কথা আলোচনা করছিলাম তন্মধ্যে আমার চোখ দিয়ে দু ফুট পানি নেমে এলো নিজের অজান্তেই। শামিম আমার চোখের দিকে থাকিয়ে বলে কেন কাদতেছ ? জবাব ছিল না তাই জবাব না দিয়ে মুচকি হেসে নিজেকে কন্ট্রোল করে নেই। আমার কান্নার কারণ ছিলনা আমার পরিশ্রমের টাকা ,আমার কান্নার কারন ছিল না আমাদের হয়রানি করা ,আমার কান্নার কারণ ছিল না আমাদের বুকে আঘাত করা। আমি তখন কেদেছিলাম প্রিয় মাতৃ ভূমি স্বাধীন বাংলাদেশের চরিত্রের রূপ দেখে।
বিষয়: বিবিধ
১৮১১ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এক পুলিশ আমাকে এক দিন বলে আমি যদি এইসব টাকা না নেই তাহলে আমাকে জামায়াত শিবির বলে অনেক ক্ষতি করে। যদিও কি কি ক্ষতি করে তা বলে নাই।
এক জনে চুরি করলে দশ জনে মিলেমিশে নিতেই হবে এই হচ্ছে তাদের অবস্থা।
মানুষ আর মানুষ নেই। এই জন্যেই গোটা জাতি গজবের ভেতর রয়েছে। আপনার অভিজ্ঞতা শুনে খুব খারাপ লাগল
সাধারণ মানুষের ট্যাঁক্সের টাকায় জীবিকা নির্বাহ করে যেখানে জনগণের জানমালের হেফাজত ও নিরাপত্তা বিধান করার কথা পুলিশের সেখানে উল্টো তারাই দেশের সবচেয়ে বড় ডাকাত এবং সন্ত্রাসী। তাদের আতঙ্কে থাকে অসহায় মানুষ।
আমাদের অবস্থা এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। টাকা গেছে যাক জীবনটা তো বেঁচেছে এটাই সান্ত্বনা!! কী হতভাগ্য জাতি আমরা.......!!!!!
অনেক ভয়ঙ্কর সময় আসতেছে দেশের জন্য
এখন ক্রিমিনালদের পুলিশে রিক্রুট করা হয়। আপনার এই অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনার মাধ্যমে বিষয়টি আর একবার প্রমাণ হলো।
শুকরিয়া শেয়ার করার জন্য!
মন্তব্য করতে লগইন করুন