মধ্যপ্রাচ্যে কেমন আছি আমরা ( পর্ব -১৬) দুটি ঘটনার আলোকে
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ০৯ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:০৫:১৯ রাত
ভালোবাসা যায় তখন যখন কারো জন্য সম্মান তৈরী হয় মনের গহিনে । আর সম্মান তৈরী হয় তখন যখন সম্মানের যোগ্য কাজ তৈরী হয় ।
নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতির মায়ামোহী পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয়ে যারা জীবিকা নির্বাহের জন্য দূর পরবাসে রয়েছেন তাদের প্রতি সম্মান সৃষ্টি হওয়াটা সাভাবিক ।প্রবাসীরা যেমন নিজের জন্য প্রবাসে আছেন তেমনি দেশের জন্য সম্পদ হয়ে কাজ করেন। প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর ফলে দেশের রেমিটেনন্স বৃদ্ধি হয় । আমাদের দেশের সরকার প্রবাসীদের এই রেমিটেন্সের জন্য গর্ব করেন।উল্লেখ্য ,প্রবাসীদের রেমিটেন্স সবচেয়ে বেশি আসে সল্প বেতনের কঠোর পরিশ্রমের শ্রমিকদের পাঠানো টাকায় ।আর তা মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে ।বর্তমানে রেমিটেন্স বৃদ্ধিকারী কয়কেটি দেশের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য দেশ হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত ।
সৌদিআরব ,কাতার ,বাহরাইন ,কুয়েত ,ওমান এছাড়া ইউরোপের কয়েকটি দেশ ও রয়ছে দেশের রেমিটেন্স বৃদ্ধির মধ্যে ।
প্রবাসীরা দেশকে খুভ বেশি ভালোবাসি। দেশের কল্যাণের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি ।রাত জেগে টেলিভিশনের খবর দেখি ,খবরে যদি দেশের সামাজিক আবহাওয়া ভালো দেখি আমরা আনন্দ পাই আবার সামাজিক পরিবেশ খাড়াপ দেখি আমরা কষ্ট পাই আল্লাহর কাছে দুয়া করি দেশের জন্য ।
কিন্তু প্রশ্ন হলো দেশ আমাদেরকে কতটা ভালবাসে? কতটা সম্মান দেয় ?আমাদের বেলায় দেশের কি কোনো দায় আছে ?আমার মনে এই প্রশ্ন গুলো জেগেছে দুটি বিষয় নিয়ে ।সেই বিষয় গুলো হলো ,২০১১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে আমি যখন দেশে যাই তখনকার শাহজালাল বিমান বন্দরে যে ব্যবহার পেয়েছি সেখান থেকেই। এবং ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তারিখে আবুধাবির আল আইনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর পর ।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমি যখন দেশে যাওয়ার জন্য দুবাই বিমান বন্দরে গেলাম তখন দুবাই ইমিগ্রেশনে সবাই লাইন ধরে শৃঙ্খল ভাবে চুপ চাপ দাড়িয়ে থাকলাম পাসপোর্টে পাস সিল লাগানোর জন্য আমার পেছনে যে কয়েকজন মানুষ ছিলেন তার মধ্যে একজন আমিরিকান নাগরিক কয়েকজন ইউরোপের যাত্রী তাই বলে উনাদের সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই কারণ আইন সবার জন্য সমান ।বাংলাদেশী বলে আমাকে পেছনে যেতে হয় নাই বরং সমন থেকেই সম্মানের সাথে আমার ইমেগ্রেশন শেষ হয়েছে। কিন্তু যখন বাংলাদেশের হজরত শাহজালাল বিমান বন্দরে গেলাম দেখলাম ঠিক তার উল্টো নেই কোনো শৃঙ্খলতা ।তার উপর আবার উশৃঙ্খল কথাবার্তা ।যেমন (এই মিয়া এই লাইনে যান,না ওই লাইনে যান ,এদিকে আসো ,আগে উনাকে দাও , তুমি পরে আসো আরো কতকি ) প্রবাসীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ করে দেওয়ার নামে কষ্টে অর্জিত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার দৃশ্য । সেই দিন এগুলো দেখে প্রথমে মনে মনে ভাবলাম মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রী বলে তাই এমন আচরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি একটা সামাজিক দুর্বলতা বলে আমি মেনে নিয়েছিলাম ।
কিন্তু ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তারিখে আবুধাবির আল আইনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর পর যা দেখলাম তা মেনে নেওয়ার মত না ।এত বড় একটা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল অথচ বাংলাদেশ থেকে সরকারের কোনো প্রতিনিধি আসেন নি ,যেমনটা আসতে দেখা যায় অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের বিপদে তাদের দেশের সরকারকে ।আমিরাতে বাংলাদেশ দুতাবাস ও তেমন সোচ্চার ছিল না।প্রশ্ন জেগে ছিলি মনে সরকারের প্রতিনিধি আসলেন না কেন ?যেখানে আমিরাতের টেলিভিশন কিংবা সংবাদ পত্র বলেন ধারাবাহিক ভাবে খবরটি প্রচার করেছে তিন দিন প্রধান সংবাদ হিসেবে এবং ১২ তারিখ পর্যন্ত ও তাদের দুটি খবরের কাগজে এই দুর্ঘটনার খবর প্রকাশ করে ।কিন্তু নিজ দেশ বাংলাদেশের টেলিভিশনের কোনো চ্যানেলের সংবাদে দুর্ঘটনার দিন প্রথম খবর হিসেবে প্রচার করেনি ,কোনো একটি পত্রিকায় প্রথম সংবাদ করেনি ,কিন্তু কেন ?দেশের দুষ্ট রাজনীতির পরিবেশ প্রচার করা কি বড় হয়ে গেল ২০ জন বাংলাদেশির চেয়ে ।একজন সাহিত্যিক মারা গেলে একজন সঙ্গীত শিল্পী মারা গেলে দেশে যদি শোক দিবস ,দোয়া দিবস পালন করা হয় দেশের প্রধানমন্ত্রী ,মন্ত্রীরা ছুটে যান মৃত লাশ দেখতে ।এটা ভালো আমরা প্রবাসীরা তা দেখে খুশি হই ।তবে কেন ২০ জন প্রবাসী এক সাথে দেশের সম্পদ মৃত্যু বরণ করলেন সরকার দোয়া দিবস, শোক দিবস ঘোষণা করলো না ?কেন প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা মৃত বেক্তিদের বাসায় গিয়ে তাদের পরিবারকে সন্তনা দিলেন না ? সামান্য কিছু টাকা দিলেই কি সরকারের দায়িত্ত শেষ হয়ে যায় ?দেশে সরকারী চাকুরী করলে যদি অবসরে ভাতা দেওয়া হয় ,আমাদের প্রবাসীদের জন্য কেন এরকম আইন করা হলো না ? আমাদের কি দেশের কাছে কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই ? আমাদের পাঠানো রেমিটেন্সের জন্য গর্ব করার কিসের অধিকার রাখে বাংলাদেশের সরকার ?আমরা প্রবাসীরা কি বাংলাদেশী নয় ?প্রবাসীদের প্রতি বাংলাদেশর সকল সরকার সম্মান ও ভালোবাসা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে ব্যর্থ হয়ছে দেশ বাসীও তারা কেন সরকার কে জানান দিল না দোয়া দিবস বা শোক দিবস পালনের ।কারো ঘোষনাতে কিছু যায় আসে না তবে সম্মানের সীমা মাপা যেত। আমরা প্রবাসীরা দেশের কাছে আমাদের প্রাপ্য সম্মান ও ভালোবাসা চাই।
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি সফল আর সেই সফলতার অংশ পেতে চাইলে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীদের কথা মাথায় রাখতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৬১৮ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একমত পোষণ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি--
প্রবাসীরাই আমাদের গর্ব
https://www.facebook.com/pages/Probashi/372804382850180?ref_type=bookmark
মরার কোন অধিকার নাই। আমারা যারা নিজেরাই নিজেদের মারার জন্য জেমস বণ্ডের মত লাইচেঞ্চ দিয়ে রাখছি তারা এর চেয়ে ভালো কি আশা করতে পারি?
বেঁচে আছি এটাই তো বেশি কি বলেন?
আমরাই তো তারা সায়েন্স ফিকশন গল্পের মত প্রতি পাঁচ বছর পর একবার শীতল ঘর থেকে উঠে আসি নিজেদের রিফিল (অধিকার ফলানোর) করার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন