আমরা প্রবাসীরা দেশের কাছে একটু সম্মানও একটু ভালোবাসা চাই ।।

লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ১২:৫৩:৫১ দুপুর

দেশ থেকে বহুদূর। বাবা মায়ের প্রত্যক্ষ আদর থেকে বঞ্চিত ,স্বজনদের প্রত্যক্ষ স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত ।নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতির মায়ামোহী পরিবেশ থেকে বঞ্চিত ।বাংলাদেশী হিসেবে যে অধিকার পাওয়ার কথা সে অধিকার থেকে অনেকটা বঞ্চিত ।আমরা হলাম প্রবাসী ।জীবনে চলার পথকে আর্থিকভাবে সচ্ছ করার লক্ষে শুধু আর্থিক বল্লে ভুল হবে সামাজিক ভাবেও নিজে ও পরিবারকে সচ্ছ করার লক্ষে প্রবাসে আসা ।প্রবাসীরা নিজে ও নিজের পরিবারকে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে সচ্ছ করার পাশাপাশি দেশের অনেক উপকারে আসে ।প্রবাসীরা নিজ পরিবারের কাছে টাকা পাঠান সেই টাকাতে শুধু তার পরিবারনয় গুটা দেশ লাভবান হয় ,প্রবাসীদের টাকা পাঠানোর ফলে দেশের রেমিটেনন্স বৃদ্ধি হয় । আমাদের দেশের সরকার প্রবাসীদের এই রেমিটেন্সের জন্য গর্ব করেন।উল্লেখ্য ,প্রবাসীদের রেমিটেন্স সবচেয়ে বেশি আসে সল্প বেতনের কঠোর পরিশ্রমের শ্রমিকদের পাঠানো টাকায় ।আর তা মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে ।বর্তমানে রেমিটেন্স বৃদ্ধিকারী কয়কেটি দেশের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য দেশ হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত ।

সৌদিআরব ,কাতার ,বাহরাইন ,কুয়েত ,ওমান এছাড়া ইউরোপের কয়েকটি দেশ ও রয়ছে দেশের রেমিটেন্স বৃদ্ধির মধ্যে ।

আমি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একজন প্রবাসী ,এখানে আছি বিগত ৫ বছর থেকে এর মধ্যে দেশে একবার যাওয়া হয়েছে ।আমিরাতে আসার পর এখানকার বাংলাদেশীদের কে আমার পরিবার ভাবতে শিখেছি ।যার কারণ প্রবাসে আমাদের সকলের একটি পরিচয় বাংলাদেশী ।প্রবাসী বাংলাদেশীরা একে অন্যের পাশে থাকার চেষ্টা করে সাধ্য মত, তবে যারা কিছুটা মনের দিক থেকে দুর্বল তাদের কথা ভিন্ন ।

প্রবাসে অন্য দেশের কেউ যদি একজন বাংলাদেশির বা বাংলাদেশ সম্পর্কে কটুকথা বলে আমরা তার প্রতিবাদ করি নিজের জায়গায় দাড়িয়ে যেমন করা যায় তেমন এটা শুধু আমার কথা নয় যারা প্রবাসে আছেন বা ছিলেন তাদের বাস্তবতা ।

আমরা প্রবাসীরা দেশকে খুভ বেশি ভালোবাসি। দেশের কল্যাণের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি ।রাত জেগে টেলিভিশনের খবর দেখি ,খবরে যদি দেশের সামাজিক আবহাওয়া ভালো দেখি আমরা আনন্দ পাই আবার সামাজিক পরিবেশ খাড়াপ দেখি আমরা কষ্ট পাই আল্লাহর কাছে দুয়া করি দেশের জন্য ।

কিন্তু প্রশ্ন হলো দেশ আমাদেরকে কতটা ভালবাসে? কতটা সম্মান দেয় ?আমাদের বেলায় দেশের কি কোনো দায় আছে ?আমার মনে এই প্রশ্ন গুলো জেগেছে দুটি বিষয় নিয়ে ।সেই বিষয় গুলো হলো ,২০১১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে আমি যখন দেশে যাই তখনকার শাহজালাল বিমান বন্দরে যে ব্যবহার দেখতে হয়েছে ।এবং গত ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তারিখে আবুধাবির আল আইনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর পর ।

২০১১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমি যখন দেশে যাওয়ার জন্য দুবাই বিমান বন্দরে গেলাম তখন দুবাই ইমিগ্রেশনে সবাই লাইন ধরে শৃঙ্খল ভাবে চুপ চাপ দাড়িয়ে থাকলাম পাসপোর্টে পাস সিল লাগানোর জন্য আমার পেছনে যে মানুষটি ছিল সে একজন ইউরোপের যাত্রী তাই বলে উনাকে সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই কারণ আইন সবার জন্য সমান ।কিন্তু যখন বাংলাদেশের হজরত শাহজালাল বিমান বন্দরে গেলাম দেখলাম টিক তার উল্টো নেই কোনো শৃঙ্খলতা ।তার উপর আবার উশৃঙ্খল কথাবার্তা ।যেমন (এই মিয়ে এই লাইনে যান,না ওই লাইনে যান ,এদিকে আসো ,আগে উনাকে দাও ,তুমি পরে আসো )প্রবাসীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ করে দেওয়ার নামে কষ্টে অর্জিত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার দৃশ্য ,আরো কত কি । সেই দিন এগুলো দেখে প্রথমে মনে মনে ভাবলাম মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রী বলে তাই পাশাপাশি সেটা এক সামাজিক দুর্বলতা বলে আমি মেনে নিয়েছিলাম ।

কিন্তু গত ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তারিখে আবুধাবির আল আইনে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর পর যা দেখলাম তা মেনে নেওয়ার মত না ।এত বড় একটা মর্মান্তিক ঘঠনা ঘটল অতছ বাংলাদেশ থেকে সরকারের কোনো প্রতিনিধি আসেন নি ,যেমনটা আসতে দেখা যায় অন্যান্য দেশের প্রবাসীদের বিপদে তাদের দেশের সরকারকে ।আমিরাতে বাংলাদেশ দুতাবাস সুচ্চার ছিল এটা টিক ,কিন্তু দেশ থেকে সরকারের প্রতিনিধি আসলেন না কেন ?যেখানে আমিরাতের টেলিভিশন কিংবা সংবাদ পত্র বলেন ধারাবাহিক ভাবে খবরটি প্রচার করেছে তিন দিন তাও আবার প্রথম সংবাদ হিসেবে এখন পর্যন্ত আজ ১২ তারিখ ও তাদের দুটি খবরের কাগজে এই দুর্ঘটনার খবর চাপা হয়েছে ।কিন্তু নিজ দেশ বাংলাদেশের টেলিভিশনের কোনো চেনেলের সংবাদে দুর্ঘটনার দিন প্রথম খবর হিসেবে প্রচার করেনি ,কোনো একটি পত্রিকায় প্রথম সংবাদ করেনি ,কিন্তু কেন ?দেশের দুষ্ট রাজনীতির পরিবেশ প্রচার করা কি বড় হয়ে গেল ২০ জন বাংলাদেশির চেয়ে ।একজন সাহিত্যিক মারা গেলে একজন সঙ্গীত শিল্পী মারা গেলে দেশে যদি শোক দিবস ,দুয়া দিবস পালন করা হয় দেশের প্রধানমন্ত্রী ,মন্ত্রীরা ছুটে যান ।ইটা ভালো আমরা প্রবাসীরা তা দেখে খুশি হই ।তবে কেন ২০ জন প্রবাসী এক সাথে দেশের সম্পদ মৃত্যু বরণ করলেন সরকার কেন দুয়া দিবস, শোক দিবস ঘুষনা করলো না ?কেন প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীরা মৃত বেক্তিদের বাসায় গিয়ে তাদের পরিবারকে সন্তনা দিলেন না ? সামান্য কিছু টাকা দিলেই কি সরকারের দায়িত্ত শেষ হয়ে যায় ?দেশে সরকারী চাকরি করলে যদি অবসরে ভাতা দেওয়া হয় ,আমাদের প্রবাসীদের জন্য কেন এরকম আইন করা হলো না ? আমাদের কি দেশের কাছে কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই ? আমাদের পাঠানো রেমিটেন্সের জন্য গর্ব করার কিসের অধিকার রাখে বাংলাদেশের সরকার ?আমরা প্রবাসীরা কি বাংলাদেশী নয় ?প্রবাসীদের প্রতি বাংলাদেশর সরকার সম্মান ও ভালোবাসা দেখাতে বের্ত হয়েছে বের্ত হয়ছে দেশ বাসীও তারা কেন সরকার কে জানান দিল না দুয়া দিবস শোক দিবস পালনের ।আমরা প্রবাসীরা দেশের কাছে একটু সম্মানও একটু ভালোবাসা চাই ।

বিষয়: বিবিধ

১৮৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File