সজীব আলীর মেয়ের বিয়ে
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ১৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:১৭:৪৬ রাত
সজীব আলী গ্রামের একজন সত ও ধার্মিক মানুষ। সবার কাছে একজন ভালো কৃষক হিসেবে পরিচিত। শুনা যায় সজীব আলীর জমিনে যেরকম ফসল উত্পাদন হয় গ্রামের অন্য কৃষকের জমিতে এরকম ফসল হয় না। নিজের জমি নেই বর্গা চাষ করেন তিনি। সজীব আলীর কাছে জমি বর্গা দেওয়ার জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন এমন কি তাকে অনুরুধ ও করে থাকেন। উনার ৪ সন্তান ,সন্তানদের মধ্যে একটি মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত নাম রহিমা বেগম ,আরো দুটি মেয়ে ১০-১২ বছরের এবং একমাত্র ছেলের বয়স ৭ বছর। উনার দুটি ভাই আছে তারা ও পেশায় কৃষক এলাকাতে সজীব আলীর পরিবার যেমনটা পরিচিত তার ভাইদের পরিবার ও তেমনটা ।
সজীব আলীর মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার জন্য প্রায় তার স্ত্রী থাকে বলে ,সজীব আলীর ও ইচ্ছে চলতি বছর জমির ফসল ঘরে তুলেই মেয়ের বিয়ে দেবে।যেমন কথা তেমন কাজ ,ফসল ঘরে তুলার পরপরই মেয়ের বিয়ের জন্য ঘটকদের আনা গুনা বেড়ে যায় সজীব আলীর বাড়িতে।সজীব আলী তার বিশ্বস্ত বন্ধুদের বলে রেখেছিল বিষয়টা তাই ঘটকদের পাশাপাশি তার বন্ধুরাও মেয়ের জন্য পাত্রের খবর আনতে লাগলেন । সজীব আলীর গ্রাম থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরের এক গ্রাম থেকে এক প্রস্তাব আসে মেয়ের জন্য। পাত্র প্রবাসী পাত্রের মা -বাবা জীবিত , তিন ভাই তিনজনই প্রবাসে থাকে ,১ বোন বিয়ে হয়েগেছে। আত্বীয়ের মাধ্যমে খুজ নিয়ে সজীব আলী দেখলেন উনার ইচ্ছের প্রতিফলন হয়েছে। উনার ইচ্ছে ছিল মেয়ের জামাই ধার্মিক হতে হবে ,সত চরিত্রের অধিকারী হতে হবে ,সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে হবে।ঘটকের মাধ্যমে পত্র পক্ষকে আগে জানান দিয়ে সজীব আলী তার দুই ভাইকে নিয়ে পাত্রের বাড়িতে গেলেন ।সজীব আলী পাত্রের পক্ষকে ও দাওয়াত দিয়ে আসলেন বর কে সাথে নিয়ে তার বাড়িতে গিয়ে মেয়ে দেখে বিয়ের সকল আওয়োজন সম্পর্কে কথা বার্তা বলার জন্য ।পাত্র পক্ষ এসে মেয়ে দেখে তাদের ভালো লেগেছে , বর জমির আহমদের ও ভালো লেগেছে পাত্রী। ভালো লাগার কথা কারণ সজীব আলী পেশায় কৃষক হলেও সন্তানদের কে পড়া লিখা করিয়েছেন কষ্ট করে। যদি ও বেশি পড়া লিখা করাতে পারেনি মেয়েটি এসএসসি পাশ করেছে দুই বছর আগে দেখতে সুন্দরী ও তাকয়াবান । সজীব আলী পাত্রের বাবা ও ভাইদের কে জানিয়ে দিয়েছেন আমি কৃষক মানুষ মেয়ের সাথে কিছুই দিতে পারব না। তবে আমার মত করে সামান্য আসবাব পত্র দিতে চাই ,বরের বাবা জবাবে বলেছেন আপনার মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে যা দিলে ভালো মনে করেন আপনি তা দেবেন ।
চলতি মাসের এক শুক্রবারে বিয়ের দিন টিক করা হলো ।বিয়ে কনের পিত্রালয়ে হবে ,বর পক্ষে ১০০ জন মেহমান আসবেন। বিয়ের পরের দিন মেয়ের শশুর বাড়িতে ওয়ালিমা ও হবে কনের পক্ষের ৪০-৫০ জন যাবে। বিয়ের তিন দিন আগে সজীব আলী ও তার দুই ভাই মিলে কিছু আসবাব পত্র ক্রয় করে রাখলেন বিয়ের দিন মেয়ের সাথে করে দেবেন বলে।
সজীব আলী কারো কাছে হাত পেতে কিছু নেওয়ার মত লোক নয় তাই গ্রামের অনেকেই কৌশলে গ্রামের এই ভালো মানুষটিকে সাহায্য করেছেন। সজীব আলীর ছোট্র বেলার এক বন্ধু অনেক অনুরুধের পর মেয়ের বিয়ের জন্য গরু ক্রয়ের টাকা দিয়েছেন। বিয়ের রাতে রহিমা বেগম তার মনের তুলিতে অনেক সপ্ন লিখতেছে।মনের আনন্দে মুখ লুকিয়ে লুকিয়ে হাসতেছে অন্য দিকে মা - বাবা ভাই বোনদের ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্ট তার মনে কাজ করতেছে। রহিমা রাতে একবারের জন্য ও বিছানায় যায় যাচ্ছে না । সারা রাত কখনো মায়ের গলায় কখনো বাবার গলায় জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতেছে , ছোট্র ভাই বোনদের আদর করতেছে ।আবার বাড়িতে মেহমানদের সাথে বসে গল্প করতেছে । ফজরের আজান হয়ে গেল বাড়ির পুরুষদের কে নিয়ে সজীব আলী মসজিদে নামাজ আদায় করে আসলেন । এবার প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই জোহরের নামাজ শেষে বর আসবে। জোহরের নামাজের শেষে বর পক্ষ চলে আসলো। নির্দারিত স্টেজে বর গিয়ে বসলেন। এবার আকদ পড়ানোর পালা। আকদ পড়ানোর সময় বরের বাবা কনের বাবাকে সবার সামনে উদ্দেশ্য করে বলেন বিয়াইন সাহেব মেয়ের সাথে কি কি দেবেন বলে রেডি করে রেখেছেন। সজীব মিয়া প্রকাশ করলেন মেয়ের সাথে কি কি দেবেন ,একটি আলমারি ,একটি খাট ,৪ টি চেয়ার ,একটি টেবিল ,ও কিছু রান্নাবান্নার জিনিস।ওমা এ কি বরের বাবা বরের হাত ধরে চলে যাওয়ার ভঙ্গি করতেছেন উপস্তিত সবাই হতবাগ হলেন সজীব মিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরেছে। সজীব মিয়া নিরব কন্ঠে বললেন বিয়াই কি হয়েছে খুলে বলেন , বরের বাবা বলে মেয়ের সাথে এই সামান্য আসবাব পত্র দেবেন আমি কল্পনাও করিনি আপনার মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে হবে না। সজীব মিয়া এবার রেগে গিয়ে বলেন আপনি আগে যৌতুকের কথা বলেন নি এখন কেন বলেন ?বরের বাবা বলে কে বলেছে বলিনি আমি আপনাকে বলি নি যে ,আপনার মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে যা দিলে ভালো হবে মনে করেন আপনি তা দেবেন ?আপনি এখন নাটক করতেছেন কিছু বলিনি বলে। সজীব মিয়া জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে গেলেন ওদিকে ঘরে রহিমা বেগম ও তার মার একই অবস্তা। বিয়ে বাড়িতে উপস্তিত গ্রামের লোক জন ও বরের পক্ষের লোকজন অবাক হলেন বরের বাবার কান্ড দেখে।এলাকার ভালো মানুষটির মেয়ের বিয়েতে অনেক প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা এসেছিলেন, তার মধ্যে একজন প্রশাসনের ভয় দেখালেন বরের বাবাকে ,কিন্তু বরের বাবা সাফ জানিয়ে দিলেন এসব তিনি কেয়ার করেন না যদি তার ছেলের সাথে সজীব আলীর মেয়ের বিয়ে দিতে হয় তাহলে অন্তত একটি মটর বাইক ,একটি টিভি ,এক সেট সোফা ,একটি ফ্রিজ দিতেই হবে।
সজীব মিয়ার বাড়িতে যখন এই কান্ড হতে যাচ্ছে তন্মধ্যে পুরো গ্রামে হৈচৈ পরে গেছে । গ্রামের কিছু শিক্ষিত বিবেকবান যুবক ছুটে এলো সজীব মিয়ার বাড়িতে এসে সজীব মিয়াকে সান্তনা দেয়। ওপর দিকে বরের বাবাকে প্রথমে বুঝানোর চেষ্টা করে যৌতুক দেওয়া ও নেওয়া দুটি ধর্ম ও আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। কিন্তু তাতে বরের বাবা রাজি না হওয়ায় ,এবার যুবকরা বরকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন তার বাবা অন্যায় করতেছেন তাতে ও কাজ না হওয়ায় , যুবকরা বরের পক্ষের লোকদের কে বিষয়টা বুঝিয়ে বলেছেন। তাতে বর পক্ষের অধিকাংশ মানুষ যুবকদের কথা শুনে বরের বাবার সাথে কথা বলেন কিন্তু বরের বাবা রাজি হচ্ছেন না তিনি চলে যাওয়ার জন্য পায়তারা করতেছেন। অবশেষে যুবকরা বরের পক্ষের সহায়তায় বরের বাবা ও বর কে মারপিটের হুমকি দেয় উপস্তিত অন্যদের নিরবতা বরের বাবার ১২ টা বাজিয়েছে সেই সুত্রে এবার কাজ হয়। অতপর বিয়ে সম্পন্ন হয় ,সজীব মিয়ার মুখে হাসি রহিমা বেগমের মনে শান্তি ও উপস্তিত সকলের মুখে মুখে যুবকদের গুনগান।
বিয়ের এক সপ্তাহ পর জমির আহমদ শ্বশুড়ের মাধ্যমে ওই সব যুবকদের দাওয়াত করে বাড়িতে নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।যুবকদের দের জমির আহমদ বলেন যুবকরা এগিয়ে আসলে সমাজ থেকে অপসংস্কৃতি দূর হবে।জমির আহমদের বাবা ও যুবকদের প্রশংসা করেছেন তাদেরকে বলেছেন তারা যেন সমাজিক কাজে নিজেকে সব সময় নিয়োজিত রাখে।
বিষয়: বিয়ের গল্প
২৫৬৬ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বরও বাবার কথাতে একমত ছিল না , ছিল না বর পক্ষের অন্য লোকেরাও । পাড়ার যুবকেরা ব্যাপারটা ভালভাবেই সলভ্ করতে এগিয়ে এসেছে এবং সফলও হয়েছে । ফলে সজীব আলীর পরিবার একটা মারাত্মক আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছে - আল'হামদুলিল্লাহ ।
এখন তো সজীব আলীর মেয়ে জমিরের সংসারে গেল । সেখানে সে পারিবারিক সংঘাত লাগাবে । বাবা মায়ের সাথে ছেলের দূরত্বের সৃষ্টি করাবে ।
বিয়ের সময় বেশ লোক সমাগমের মধ্যে যৌতুকটা প্রকাশ্যভাবে চাওয়া হল বলে সেটাকে ইনস্ট্যান্ট ঠেকানো হল , প্রতিকারও একটা হয়ে গেল ।
কিন্তু বিয়ের পর রহিমারা যে জমিরদের ঘরে অশান্তির আগুন জালায় তা কি কখনও জনসমক্ষে আসে ?
আজ যে গ্রামের যুবকেরা তাদের বোনের জন্য এতটা এগিয়ে এল , জমিরের গ্রামের যুবতীরা কি তাদের ভাইয়ের এই সাংসারিক অশান্তি মেটাতে এগিয়ে আসে কখনও?
মেয়েরা সবসময়ই পুরুষদের কর্তৃক কৃত অপরাধ পুরুষকে দিয়েই সলভ করায় । কিন্তু নিজের স্বজাতি যদি আরেক পুরুষের অশান্তি করায় সে ব্যাপারে একেবারেই চুপ থাকে , এমন কি আপন মায়ের পেটের ভাই হলেও ।
বাট,মেয়েরা ব্যাক্তিত্ববান হয় না,হয় সুন্দরী এবং ধার্মিক।ভালো থাকবেন।লেখা চালিয়ে যাবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন