জনগণের আশার মৃত্যু
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ০৩ অক্টোবর, ২০১৩, ০১:৩৯:০৬ রাত
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের মতো আমাদের প্রতিনিধিও দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বের অস্থিতিশীলতা নিয়ে বক্তব্য দেবেন, এটাই দেশের জনগণের কাম্য ছিল। কিন্তু না, উনি দেশে যেরকম রাজনৈতিক বক্তব্য দেন পল্টন ময়দান বা মুক্ত মঞ্চের ভাষণ মঞ্চে, ঠিক সেই রকম বক্তব্যই দিয়েছেন যা কাম্য ছিল না। তার বক্তব্যে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বেশি ছিল যা আন্তর্জাতিক এই ফোরামে বেমানান। দেশের মানুষ আশা করেছিল, বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন ভারত দ্বারা টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ বন্ধের জন্য, দেশ ভাটি অঞ্চলের বিধায় পানির হিস্যা পাওয়ার জন্য, সদ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে, বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানাবেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য, সীমান্তে হত্যা বন্ধের জন্য জাতিসংঘের সহযোগিতা চাইবেন, বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করে অথচ বাংলাদেশী শ্রমিককে পারিশ্রমিক কম দেয়া হয় অন্যান্য দেশের শ্রমিকের চেয়ে, সেই বিষয় নিয়ে। জনগণের টাকায় ১০ জনের পরিবর্তে ১৪০ জনের রেকর্ড বহর নিয়ে তিনি এসব বক্তব্য না দিয়ে নির্ধারিত ১৬ মিনিট শুধু নিজ ও নিজের পরিবার, দল ও সরকারের গীত গেয়ে এলেন। তিনি মহান স্বাধীনতাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদের দোহাই দিয়ে ৯০ ভাগ মুসলমানের চরিত্রে আঘাত দিয়ে বক্তব্য রেখেছেন, বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কে প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য রেখেছেন, যা বিশ্ব নেতাদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হওয়ার জন্য যথেষ্ট। যদিও তিনি যুদ্ধাপরাধীর বিচারকে অভ্যন্তরীণ দাবি করেন, অথচ সেখানে সেই বিচারের সমর্থন চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সন্ত্রাসী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি একত্রে এক সন্ত্রাসীচক্র গড়ে তোলে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতের সঙ্গে কোয়ালিশন করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। এই চক্র তাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করছে। এমনকি সেই সময় নাকি জঙ্গিবাদের জন্ম হয়েছিল বলে মিথ্যে বক্তব্য দিয়েছেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মনে রাখা উচিত ছিল, যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে সেই ট্রাইব্যুনাল ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে দেশে-বিদেশে, যার কারণ স্কাইপ কেলেঙ্কারি, শাহবাগের নাটক ও আইন পরিবর্তন, অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার আগেই গ্রেফতার করে বছরের পর বছর বিরোধী দলের নেতাদের কারাগারে রাখায়। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যে সূত্রে বাংলাদেশেকে জঙ্গিবাদের অপবাদ দিয়ে এলেন তা মূলত শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাইদেরকে নিয়ে। মনে হয় আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মরণশক্তি কমে গেছে, তাই তিনি মনে রাখতে পারেননি আবদুর রহমানরা কোন দলের কার ভগ্নিপতি ছিল? তিনি ভুলে গেছেন কার সরকারের আমলে ওদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল? তিনি ভুলে গেছেন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে যখন তার দল ক্ষমতায় ছিল তখন থেকে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। পরে চারদলীয় জোটের সময়কালীন অর্থাত্ ২০০১-০৬ সালের বিএনপি-জামায়াত সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে এই জঙ্গিবাদীরা নির্মূল হয়েছিল। জাতিসংঘের এই ভাষণ মঞ্চে যেখানে পৃথিবীর প্রতিটি দেশের সরকারপ্রধান বা প্রতিনিধিরা নিজ নিজ দেশের প্রশংসায় ব্যস্ত ছিলেন, সেখানে আমাদের প্রতিনিধি দেশের প্রধানমন্ত্রী কেন দেশের দুর্নামে ব্যস্ত ছিলেন? এই ভাষণ মঞ্চ সাধারণ কোনো ভাষণ মঞ্চ নয়, এই ভাষণ পল্টন ময়দান বা মুক্ত মঞ্চের ভাষণ মঞ্চ নয়। এই ভাষণ মঞ্চ বিশ্বের অন্যতম সংগঠন জাতিসংঘের ভাষণ মঞ্চ। যেখানে বিশ্বের সব দেশের প্রতিনিধি থাকেন, এই অধিবেশনে উপস্থিত থাকেন বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, কূটনীতিক, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পর্যায়ের গোয়েন্দারা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে মুসলিম দেশগুলোকে যারা জঙ্গিবাদের দেশে পরিচিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে, তাদের সাহায্য করা হলো কি? নাকি আমাদের প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন নিজ দেশের সম্মান নষ্ট হলেও নিজের ও তার দলের সম্মান বাড়বে? আমাদের প্রধানমন্ত্রী কত ভাগ সঠিক ভাষণ দিয়েছেন তা অধিবেশনে উপস্থিত অনেকেই জানেন বলে মনে হয়। কারণ তাদের সবারই রয়েছে বাংলাদেশে দূতাবাস রয়েছে, গোয়েন্দা বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীকে এরকম প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দেয়ার এই কুবুদ্ধি কে দিয়েছে? উনি মনে করেছেন দেশের ও বিরোধী দলের দুর্নাম করে বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে দলের সমর্থন আদায় করে আবার ক্ষমতায় যেতে পারবেন। কিন্তু তাকে এটা লক্ষ্য করা উচিত ছিল, এই মঞ্চ আওয়ামী লীগের সমর্থন লাভের মঞ্চ নয়, এই মঞ্চ দেশের স্বার্থে বক্তব্য রেখে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধিশালী দেশে পরিচিত করানোর। বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ, আর মুসলমান জঙ্গিবাদের বিপক্ষে এমনকি ইসলাম তা সমর্থনও করে না। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের দেশে পরিচিত করার উদ্দেশ্যে যদি কেউ বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের অপবাদ দেয় তার প্রতিবাদ করার কথা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর, কিন্তু তিনি তার পরিবর্তে নিজেই বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের দেশে পরিণত করার চেষ্টা করে এলেন। যা আমাদের জাতির জন্য এক বেদনাদায়ক ও কষ্টের পাশাপাশি ঘৃণারও।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন