ঐশীর অপরাধ ও আমাদের দায়িত্ব

লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন ২৭ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:০২:৩০ বিকাল

সব বাবা-মায়ের স্বপ্ন সন্তান মানুষের মতো মানুষ হবে, ভবিষ্যতে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে অনেক বাবা-মায়ের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়, আবার অনেক বাবা-মায়ের স্বপ্ন বিফলে যায়। তেমন স্বপ্ন দেখেছিলেন পুলিশের এসবি বিভাগের পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান (৪৯) ও স্বপ্না রহমান। তাদের অতি আদরের দুটি সন্তান ছিল—একটি মেয়ে অপরটি ছেলে। রহমান দম্পতি তাদের সন্তানদের অনেক স্নেহ, আদর দিয়ে বড় করছিলেন, ছেলে সন্তান ক্লাস টু’তে পড়ে। মেয়ে ঐশী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ত। ২০১১ সালে সে ‘ও’ লেভেল শেষ করেছে। ‘ও’ লেভেল শেষ করে আর পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারেনি সে। এই ‘ও’ লেভেল পড়ুয়া মেয়ে ১৪ আগস্ট রাতে টাণ্ডা মাথায় খুন করেছে বাবা-মা মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানকে।

কিশোরী মতান্তরে শিশু ঐশীর এই নির্মম পৈশাচিক কাণ্ডে নিন্দিত হচ্ছে সে। ঐশীর বাবা-মায়ের অতি আদরের মেয়ে ঐশী কী কারণে তাদের খুন করল সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন কত জন মানুষ? ঐশী ছিল একটি শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। সে ছিল সমাজের উঁচুমানের মানুষের কাতারে। তাহলে সে কেন এই পৈশাচিক কাজ করল? ঐশীর বাবার যে চাকরি, সেটা ছিল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার। ওই মেয়ে কি করে তার বাবা-মাকে খুন করে, তাও আবার পরিকল্পিতভাবে? নিজ হাতে কেনা ঘুমের ট্যাবলেট কফির সঙ্গে মিশিয়ে প্রথমে মাকে পরে বাবাকে পান করিয়ে ধাড়াল অস্ত্র হাতে নিয়ে মা-বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে সবচেয়ে বড় যে কাজ তা হলো বাবা-মায়ের অসচেতনতা, ধর্মীয় শিক্ষা থেকে দূরে রাখা, মেয়েকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সমাজের দুষ্ট সংস্কৃতির সঙ্গে মিশতে দেয়া।

অল্প বয়সের এই মেয়ের মাসিক ব্যয় (হাত খরচ) পত্রিকান্তরে জানা গেছে লক্ষাধিক টাকা। একটি ১৭-১৯ বছরের মেয়ে লক্ষাধিক টাকা দিয়ে কি করবে? এ টাকাগুলো দেয়ার ক্ষেত্রে তার বাবার ভূমিকা ছিল প্রধান, মায়ের ছিল সমর্থন। বাবা-মা টাকা খরচের উত্স জানার চেষ্টা করেননি কেন? আমি এখানে কথা বলতে চাই না একজন সরকারি কর্মকর্তা ঐশীর বাবার টাকার উত্স নিয়ে, কথা বলতে চাই না একজন সরকারি কর্মকর্তার মেয়ের হাত খরচ লক্ষাধিক টাকা নিয়ে। পত্রিকান্তরে আরও জানা গেছে মেয়েটি বেপরোয়া চলাফেরা করত, অনেকদিন গভীর রাত করে বাসায় ফিরত হেলে, দুলে (নেশাগ্রস্ত), কখনও স্বাভাবিকভাবে। সমাজের খারাপ নষ্ট ছেলেদের সঙ্গে চলাফেরা করত। সে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, প্যাথেড্রিন, ইনজেকশন, মদ, গাঁজা, আফিম, চরশ এবং অ্যালকোহলে আসক্ত ছিল। সমাজের একটি সচেতন (?) পরিবারের মেয়ের যদি এই অবস্থা হয় অন্য ছেলেমেয়েদের বেলায় কী হবে? ঐশীর বাবা-মা প্রথম থেকে সচেতন না হয়ে যখন ঐশীর যাত্রা ড্যান্সবার পর্যন্ত, মাদকের চূড়ান্ত আস্তানা পর্যন্ত চলে গেছে, তখন সচেতন হওয়ার চেষ্টা করেছেন আর সেই চেষ্টার ফসল পুলিশ দম্পতি ঐশীর জন্মদাতা বাবা-মা ঐশীর হাতেই খুন! বাবা-মা কেন আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করলেন না ঐশীকে? ধর্মীয় শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে ভূমিকা রেখে সমাজে একটি সত্ ও চরিত্রবান সন্তান, ভাই কিংবা বোন উপহার দিতে পারে তার পরিবার।

দুই.

এদেশের সমাজে আজ অপসংস্কৃতির এত গভীরতা যা আমাদের অনেকের নাগালের বাইরে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে গেছে দুষ্ট সংস্কৃতি, যা আমাদের দেশের প্রত্যেক স্তরের মানুষকে বিপথগামী করতে সক্ষম। আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিবারে টেলিভিশন আছে আবার কারও পরিবারে ৬০-৭০টি চ্যানেল আছে, যেসব চ্যানেলে প্রতিদিন এমন সব অনুষ্ঠান দেয় যা সমাজের ছেলেমেয়েদের ধ্বংস করতে যথেষ্ট। যেখানে টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ছেলেমেয়েরা বিনোদন দেখবে, শিক্ষণীয় কিছু দেখবে তা থেকে শিক্ষা নেবে কিন্তু সেখানে তাদের শেখানো হচ্ছে নগ্নতা ও বেহায়াপনা। এই বেহায়াপনার শিকার হচ্ছে ঐশীরা। টিভি চ্যানেল বর্তমান বিশ্বে প্রয়োজনীয় সেই তাগিদে আমাদের দেশেও চাই, কিন্তু এমন চাই না যার ফসল আমাদের ঐশীর মতো মেয়ে জন্ম দেবে। আমরা আধুনিকতায় এগিয়ে যেতে চাই কিন্তু তা হতে হবে দেশীয় ও ধর্মীয় সংস্কৃতির রূপে। আমরা চাই আমাদের সমাজের সন্তানরা ভাইয়েরা, বোনেরা আধুনিকতায় নিজেদের সাজাক কিন্তু সেই সাজ যেন ধর্ম ও সমাজের বাইরে না যায়। ঐশীর অপরাধের সাজা সে পাবে। আইনের মাধ্যমে হয়তো তার ফাঁসিও হতে পারে। আমাদের ঐশীর এই কাণ্ড থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের সমাজে যেন ঐশীর মতো মেয়ে আর জন্ম না নেয়। আমরা যেন আমাদের অন্য ঐশীদের এমন সমাজ উপহার দিতে পারি, যে সমাজ থেকে ঐশীরা পরিবার গড়ার, সমাজ গড়ার ও বিশ্ব গড়ার হাতিয়ার হয়।

http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/08/27/213777#.Uhx4jX9c0fU

বিষয়: বিবিধ

২৩৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File