শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতীর দুর্দান্ত বিশ্লেষন, ১০৮ ঘণ্টার হরতাল ও কিছু কথা

লিখেছেন লিখেছেন বাংলার সিংহ ১০ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:৪৭:৩৭ সন্ধ্যা

১০৮ ঘণ্টার হরতাল ও কিছু কথা

মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন : বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে হরতাল অতি পরিচিত একটি প্রতিবাদ কর্মসূচির নাম। অতি সাধারণ বিষয়ে বা তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ইস্যু ছাড়াই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট কর্তৃক হরতাল পালন করার নজির এদেশে রয়েছে। যদিও সাধারণভাবে এদেশের মানুষ হরতাল পছন্দ করেন না। কারণ হরতালের নাম শুনলেই এর একটি নেগেটিভ চিত্র মানুষের সামনে ভেসে আসে। আর তা হলো- হরতাল মানেই আগের দিন থেকে শুরু করে হরতাল শেষ হওয়া পর্যন্ত গাড়িতে আগুন, পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যা, গাড়ি ভাঙচুরসহ অনেকটা গায়ের জোরে জনসাধারণকে হরতাল মানতে বাধ্য করা। এটি হচ্ছে আমাদের দেশের হরতালের অতি সামান্য একটি চিত্র। ফলে হরতাল ডাকলেই মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হন, কারণ কখন কার ওপর হামলা হয় এই আশঙ্কায়। কিন্তু হরতালের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমধর্মী নজির স্থাপন করলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। হরতাল সম্পর্কে উপরে বর্ণিত চিত্রের কোনো কিছু করা ছাড়াই জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক তৎপরতার মাধ্যমে হরতাল বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। আমার এ বক্তব্য বাংলাদেশের সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় পরিবেশিত সংবাদ দ্বারা সত্যায়িত। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গত ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে (মাঝখানে শুক্র, শনি ও মঙ্গলবার ছুটির দিনগুলো) বাদ দিয়ে ৭ নভেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত তিন দফায় মোট ১২০ ঘণ্টার লাগাতার হরতাল আহ্বান করে। পরে পবিত্র আশুরার জন্য সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার হরতাল কমিয়ে এনে সর্বমোট ১০৮ ঘণ্টার এক ব্যতিক্রমধর্মী হরতাল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এককভাবে টানা এত দীর্ঘ সময় হরতালের ঘটনা বিরল। অনেকটা বাধ্য হয়েই জামায়াত এ হরতাল আহ্বান করে। গত ২৯ অক্টোবর বেলা ১১টার পর থেকে গণমাধ্যমে খবর আসতে থাকে ৩০ অক্টোবর বুধবার আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর তথাকথিত মানবতাবিরোধী মামলার রায় প্রদান করা হবে। খবরটি শুনার সাথে সাথে কিছুটা স্তম্ভিত হলাম। কিন্তু বিস্মিত হলাম না। কারণ এই সরকারের পক্ষে এ ধরনের অমানবিক ঘটনার জন্ম দেয়া মোটেই কোনো বিস্ময়ের বিষয় নয়। কারণ মানবিকতা, সহমর্মিতা, মানবতাবোধ সম্মানীয় মানুষকে সম্মান প্রদান ইত্যাদি রাজনৈতিক শিষ্টাচার এ সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকে বহু আগেই উধাও হয়ে গেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে এ সরকার এখন বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন করেছে। যখন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর লাখ লাখ নেতাকর্মী, সাধারণ বিবেকবান মানুষসহ বিশ্বের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষ তাদের প্রিয় নেতা, বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অভিভাবক, ভাষাসৈনিক, ডাকসুর সাবেক নির্বাচিত জিএস ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মজলুম জননেতা শহীদ অধ্যাপক গোলাম আযমকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান। সবাই যখন অশ্রুসজল, নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদসহ নানা স্মৃতিচারণে ব্যস্ত ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর, সাবেক সফল মন্ত্রী, বিশ্বের প্রভাবশালী ইসলামিক স্কলার ও ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী, আজন্ম ভদ্র, শান্ত-শিষ্ট একজন আল্লাহর মুহসিন বান্দা জননেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়ার নীল নকশায় নতুন করে মেতে ওঠে সরকার। শুধু এখানেই শেষ নয়, মিথ্যা মামলায় সাজানো সাক্ষীর মাধ্যমে তাকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করে ফাঁসির দন্ডে দন্ডিত করা হয়। সরকারের এহেন হীন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী তাৎক্ষণিক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদসহ পরের দিন ৩১ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে ১ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত প্রথম দফায় ২৪ ঘণ্টা এবং শুক্র ও শনিবার বিরতি দিয়ে রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। জামায়াত নেতাকর্মীগণ দলকর্তৃক ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে যখন ব্যস্ত তখনই ৩১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর জানা গেলো ইসলামী আন্দোলনের আরেকজন সিপাহসালার, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কেন্দ্রীয় সভাপতি মীর কাশেম আলীর তথাকথিত মানবতাবিরোধী মামলার রায় ৩ নভেম্বর প্রদানের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে সরকার কর্তৃক মিথ্যা ও সাজানো মামলায় মীর কাশেম সাহেবকেও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হলো। প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী একদিনের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও ২৪ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করে। আমীরে জামায়াতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে চলতে থাকা কর্মসূচির মধ্যেই মিডিয়ার মাধ্যমে আমরাসহ দেশবাসী অবগত হলাম ৪ নভেম্বর সোমবার জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদক যিনি এফসিও অতিথি হিসেবে যুক্তরাজ্য সফর করেছেন, তাকে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদান করা প্রাণদন্ডের বিরুদ্ধে আপিলের রায় প্রদান করা হবে। একদিকে অভিভাবক হারিয়ে বাকরুদ্ধ আন্দোলনের জনশক্তি, অপরদিকে মানবতাবিরোধী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক আমীরে জামায়াতসহ তিনজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও ইসলামী আন্দোলনের তিন প্রাণপুরুষকে পর পর হত্যার ষড়যন্ত্র, ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে তাদের দুর্বল করার অপচেষ্টা অন্যদিকে অব্যাহত উস্কানিমূলক আচরণের মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়িয়ে ফায়দা হাসিলের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানো হয়। কর্মী ও জনগণের প্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অবিচার আর মিথ্যাচার চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের কারণে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের শান্ত রাখাটা ছিল অনেক বড় ধৈর্যের পরীক্ষা। মানবতাবিরোধী সরকার ও তার উপদেষ্টারা মনে করেছিল প্রিয় নেতাকে হারিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে গিয়েছি সুতরাং এই অবস্থায় তারা তাদের চক্রান্ত সহজেই বাস্তবায়ন করতে পারবে। তারা উপর্যুপরি অপতৎপরতা চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনতাকে উত্তেজিত করতে চেয়েছিল। তারা বেশি চালাকি করতে গিয়ে নিজেরা গলায় দড়ি দিয়েছে। এ কাজটি করার জন্য তারা কোমলমতি ছাত্রদের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার সময়টাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। তারা ভেবেছিল এ সময় হয়তো জামায়াত হরতাল দেবে না আর দিলে জনগণকে জামায়াতের বিরুদ্ধে উস্কানি সম্ভব হবে। বিধি বাম। সরকারের এ উদ্দেশ্য মাঠে মারা গেছে। জনগণ জামায়াতের বিরুদ্ধে বিরুপ ভাবাপন্ন তো হয়ই-নি বরং স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল মেনে নিয়ে জনগণ জামায়াতের প্রতি তাদের সহমর্মিতা ও সমর্থন ব্যক্ত করেছে। আর ধিক্কার জানিয়েছে সরকারের দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত অন্যায়, অযৌক্তিক ও অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে। এ হরতাল পালনের মাধ্যমে জনগণ তাদের অবস্থান পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছে। জনগণ সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে তথাকথিত মানবতাবিরোধী বিচারের নামে দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রখ্যাত আলেমে দ্বীনদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বিচারের নামে যে প্রহসন চলছে তা তারা সমর্থন করে না। এটিকে জনরায় হিসেবে গ্রহণ করে অবিলম্বে সরকার এ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ করবে দেশবাসী তা প্রত্যাশা করেন। আমি লেখছিলাম ১০৮ ঘণ্টার হরতাল প্রসঙ্গে। বাংলাদেশে সেই স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ১৫ দলীয় জোট, ৭ দলীয় জোট ও জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক কখনও কখনও যৌথ কখনও কখনও আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন থেকে শুরু করে কেয়ারটেকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। (অবশ্য জামায়াত তখন স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী ছিল না, যেহেতু তারা আওয়ামী লীগের সাথে আন্দোলন করেছে) এরপর বিএনপি, জামায়াত ও চারদলীয় জোট কর্তৃক শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং অতি সম্প্রতি ২০ দলীয় জোট কর্তৃক স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। শুধু জামায়াতে ইসলামীর ডাকে পালিত হরতাল আমার মনে হয় রেকর্ড করেছে। মিডিয়ার ভাষ্যমতে জামায়াতে ইসলামী হরতাল ডেকে তাদের ভাষায় কোনো সহিংসতা তো দূরে থাক ঝটিকা মিছিল ছাড়া তেমন কোনো পিকেটিং বা এ অন্যকোনো তৎপরতা চালায়নি। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় জামায়াতের হরতালে বলপ্রয়োগ ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনগণ সমর্থন প্রদান করেছেন। যদিও মিডিয়ার একটি অংশ সরকারি দলের লোকদের মতো জামায়াতের হরতাল ঢিলেঢালাভাবে হচ্ছে, জীবনযাত্রা স্বাভাবিক, গণপরিবহন ও জনসাধারণ রাস্তায় নেমে এসেছে ইত্যাদি প্রপাগান্ডা চালিয়ে হরতালকে দুর্বল করতে কোনো অপচেষ্টা বাকি রাখেনি। তারপরও তাদের মিথ্যা প্রপাগান্ডায় জনগণ সাড়া দেয়নি। মিডিয়ার এ অংশটি অতি চালাকির আশ্রয় নিয়ে সরকারের দালালি করতে গিয়ে শুধু নিজেদের প্রাইভেট চ্যানেলটিকেই নয় বরং পুরো প্রাইভেট মিডিয়ার বিশ্বাস যোগ্যতাকেই জনগণের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। আল্টিমেটলি এর মধ্যদিয়ে সরকারি টেলিভিশন বিটিভির প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি টেলিভিশনের খবর ও অন্যান্য প্রতিবেদনের ব্যাপারে জনগণের উৎসাহ উদ্দীপনা ও আস্থা তারা ধ্বংস করে দিচ্ছে। কোনো কোনো টিভি চ্যানেল হলুদ সাংবাদিকতার আশ্রয় নিয়ে নির্লজ্জভাবে শুধু সরকারের পারপাসই সার্ভ করছে না বরং তারা মিথ্যার বেসাতি চালাচ্ছে। তারা জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত, হিংসা-বিদ্বেষ উসকিয়ে দেয়াসহ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনার প্রতিনিধিত্বকারী, গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক ধারার অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তার দেশপ্রেমিক জাতীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অব্যাহত বিষোদগার চালিয়ে যাচ্ছে। মিডিয়ার এ অংশটি জনগণকে বোকা ভাবে আর নিজেদের অতিবুদ্ধিমান মনে করে। কিন্তু প্রকারান্তরে নিজেরাই বোকার স্বর্গে বাস করছে এবং নিজেদের জন সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে একটি ঘৃণার জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে এটা বুঝতে পারলে তাদেরই ভালো হতো। মিডিয়াকে বলা হয় সমাজের দর্পণ বা আয়না। আয়নার সামনে দাঁড়ালে আয়না কোনো বেশকম ছাড়াই প্রকৃত অবস্থান শো করে। তেমনি মিডিয়াকে দলবাজি ছাড়াই সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে হবে। দলবাজি করার জন্য মিডিয়ার পরিচয় প্রত্যাখ্যান করে সংশ্লিষ্ট দল বা রাজনীতির সাথে মিশে গেলেই তারা ভালো করবেন। ৪ নভেম্বর ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের একটা টকশো দেখলাম। বিষয় ছিলো ‘প্রতিফলন না প্রতিসরণ’। সেখানে এক নারী সাংবাদিক তার মত ব্যক্ত করে বললেন, জামায়াতে ইসলামীর ‘ওয়েবসাইট’ থেকে নিউজ পরিবেশন করে সংবাদকর্মীরা নাকি ঠিক কাজ করছে না। সেখানে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য চ্যানেলের অন্তত বিশিষ্ট আরো পাঁচজন সাংবাদিক সর্বজনাব মোজাম্মেল বাবু, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আহমেদ জুবায়ের, রেজওয়ানুল হক ও মোস্তফা ফিরোজ দিপু উনারা অবশ্য এটার প্রতিবাদ করে বলেন, জামায়াত যেহেতু সাংবিধানিকভাবে একটি বৈধ রাজনৈতিক দল সুতরাং তার ‘ওয়েবসাইট’ থেকে নিউজ প্রচারে কোনো অসুবিধা থাকার কথা নয়। সম্মানিত বিশিষ্ট এ পাঁচ সাংবাদিককে ধন্যবাদ সত্য ভাষণের জন্য। আমি মনে করি মিডিয়ার কোনো পক্ষপাতিত্ব করা উচিত নয়। এতে মুক্ত গণমাধ্যমের গতি ধারা ব্যাহত হবে। বাস্তবে এর দ্বারা ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী শক্তিই লাভবান হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে মুক্তধারা, দেশ, দেশের জনগণ ও দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধাররা।

মিডিয়ার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতার নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জাতিকে হতাশ করে। যেমন জামায়াতের এই ১০৮ ঘণ্টা হরতালের খবর প্রচার করতে গিয়ে ইলেকট্রনিক সংবাদ মাধ্যমের একটা অংশ যে চালাকির আশ্রয় নিয়ে সরকারের পক্ষ অবলম্বন ও জামায়াতের বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়েছে তা খুবই নগ্নভাবে ধরা পড়েছে। চ্যানেলগুলোর নিউজ হেডলাইন ও বিস্তারিত নিউজ লাইভ কাস্টসহ যেভাবে পরিবেশন করা হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত একটা চিত্র আমি পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে চাই।

একটা হেডলাইন ছিল এভাবে : জামায়াতের হরতাল ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে, মাঠে নেই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। অথচ ফুটেজে দেখানো হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের শান্তিপূর্ণ মিছিল, আর সে মিছিলে আক্রমণ করছে পুলিশ এমন দৃশ্য। মাঠে না থাকলে মিছিলের ছবি কোথা থেকে আসল আর পুলিশই বা কার ওপর আক্রমণ চালালো? জনমনে এমন প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক।

আরেকটা হেডলাইন : জামায়াতের ডাকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ঢিলেঢালাভাবে চলছে, রাজধানীতে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। সেখানে লাইভ ফুটেজে দেখানো হচ্ছে রাস্তাঘাট ফাঁকা, কোনো পরিবহন নেই।

আরেকটা হেডলাইন হলো : জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দফা হরতাল ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে, গণপরিবহনসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রাইভেট গাড়ি রাস্তায় ব্যাপক চলছে। আবার একই সাথে বলা হচ্ছে, পরিবহনের অভাবে সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তি, মানুষ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছে। একদিকে ব্যাপক গণপরিবহন চলছে, অন্যদিকে গন্তব্যে পৌঁছতে পরিবহনের জন্য রাস্তায় মানুষের জটলা ও ভোগান্তির দৃশ্য পরিবেশন। তাহলে এরকম পরস্পরবিরোধী সংবাদ পরিবেশনা থেকে মানুষ কি বুঝবে?

আরেকটি হেডলাইন : হরতালে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক অন্যদিকে ফুটেজে কাঁচামালের বাজার দেখিয়ে বলা হচ্ছে, পরিবহনের অভাবে মাল আনা নেয়া যাচ্ছে না বলে জিনিসপত্রের দাম বেশি, ক্রেতার উপস্থিতি কম।

অন্য আরেকটি হেডলাইন হলো : জামায়াতের হরতালে জনগণের সাড়া মেলেনি এবং জীবনযাত্রার ওপর এর কোনো প্রভাব পড়েনি। আবার বলা হচ্ছে প্রতিদিন গড়ে হরতালে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। বিদেশী অর্ডার বাতিল হচ্ছে ইত্যাদি। সুতরাং মিডিয়ার একটি অতি উৎসাহী দলকানা অংশ যতই শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করুক না কেন তাদের পরিবেশিত এইসব সংবাদের ওপর যে দেশবাসীর পুরোপুরি আস্থা নেই এটি অত্যন্ত পরিষ্কার। ফলে তারা যা বলবে জনগণ তাতেই বিশ্বাস করে বা করবে তার কোনো ভিত্তি নেই। জনগণ এখন অনেক সচেতন। মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে জনগণকে বোকা বানানোর দিন শেষ। কথা আছে মিথ্যা কথা কখনো জোড়া লাগে না। সত্যকে ঢাকতে গিয়ে অসংখ্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। সেজন্যই হয়তো গোয়েবলস বলেছিলেন, একটা মিথ্যাকথা একশ বার বললে তা সত্য বলে মানুষ বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়। মিডিয়ার এ অংশ গোয়েবলসকেও হার মানিয়েছে। গোয়েবলস বেঁচে থাকলে হাসতেন না কাঁদতেন তা জানি না। কারণ তিনি যেটা ১০০ বারের কথা বলেছিলেন তার অনুসারীরা এটাকে ১০০০ বার বলতেও দ্বিধা করছে না। তবুও সত্যকে চাপা দিতে হবে। একটি টকশোতে কথা বলতে গিয়ে তাদেরই একজনের মুখ দিয়ে তার স্টেশন পলিসি ও তাদের ষড়যন্ত্রের কিছু দিক বেরিয়ে এসেছে। তারা জামায়াতের যেকোনো ভালো কাজকে অর্থাৎ সত্যকে ঢাকবার জন্য কিভাবে ষড়যন্ত্রের কুটিল জাল বিস্তার করেন তার কিঞ্চিৎ বর্ণনা যারা ঐ টকশোটি দেখেছেন তারা হয়তো উপলব্ধি করতে পেরেছেন। অধ্যাপক গোলাম আযমের জানাযায় এতো লোক কোথায় থেকে আসল! এটা জনগণকে ভুলভাবে বুঝানোর জন্য তিনি কি করেছেন তার একটা ফিরিস্তি দিলেন। তিনি বললেন, আমি ফুটেজে দেখলাম ইসলামী ব্যাংক ও ইবনে সিনার কর্মকর্তারা তাদের অফিসের কাজগুলো গুছিয়ে অফিস ছেড়ে জানাযায় অংশ নিয়েছেন। আর এভাবেই গোলাম আযমের জানাযা বিরাট বড় হয়েছে। মিথ্যার ভিত্তি যে মাকড়সার জালের চাইতেও দুর্বল এটা হলো তার দৃষ্টান্ত। জানাযায় লোক হয়েছে লাখ লাখ আর ইবনে সিনা ও ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করে লোকসংখ্যা কত? সম্মানিত পাঠক আপনারা আমাদের দেশের মিডিয়ার এ অংশটি সম্পর্কে সম্মক অবহিত। তারপরও আমি তার কিঞ্চিৎ তুলে ধরলাম। এরাই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করাকে ঝটিকা বা ঢিলেঢালা বলে মিডিয়ায় কভারেজ দিতে চায় না। আর পুলিশের হামলা, গুলি ও বাড়াবাড়ির মোকাবিলায় আমাদের দু’-একজন কর্মী আত্মরক্ষার্থে ঢিল মারলে, এটিকে জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে সহিংস আচরণ করা হয়েছে বলে সংবাদ পরিবেশন করে। তারা তিলকে তাল বানিয়ে জামায়াতকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তুলে ধরতে চায়।

সুতরাং জামায়াতের ডাকে ১০৮ ঘণ্টার হরতাল সফল হয়েছে এ দেশের জনগণের সমর্থন ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে। এবং মিডিয়ার এ অংশটির মিথ্যাচার সত্ত্বেও জনগণ দেখেছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা হরতাল ডেকে মাঠ থেকে উধাও হয়ে যাননি। বরং তারা শক্তভাবে মাঠে ছিলেন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে মিছিল, পিকেটিং সবই তারা করেছেন। তবে তারা হরতাল বাস্তবায়নের জন্য গাড়িতে আগুন ও পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করেননি। জ্বালাও পোড়াও ও ভাঙচুরে যাননি। এটি জামায়াত-শিবিরের বৈশিষ্ট্যও নয়। বরং জামায়াত-শিবিরের দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্য হলো- শৃঙ্খলা, নিয়মতান্ত্রিকভাবে আইন ও সংবিধানের অনুসরণ। যারা জামায়াত ও শিবিরকে সহিংস ও জঙ্গি বলেন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই- তাদের এ বক্তব্যের ভিত্তি কি? তারা কি আজ পর্যন্ত জামায়াত ও শিবিরের ভাইদের কাছে একটি খেলনা পিস্তলও দেখাতে পেরেছেন? অবশ্যই পারেননি। আর পারবেনও না ইনশাআল্লাহ।

লেখক : সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

বিষয়: বিবিধ

২৪০৮ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

283017
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:১৯
বড়মামা লিখেছেন : সব সত্য কথা। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৪৪
226320
বাংলার সিংহ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ।
283018
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২২
আল্লাহর সন্তুষ্টি লিখেছেন : পিলাচ
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:০১
226322
বাংলার সিংহ লিখেছেন : ;Winking
283020
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:২৫
মহি১১মাসুম লিখেছেন :
হরতালের নাম শুনলেই এর একটি নেগেটিভ চিত্র মানুষের সামনে ভেসে আসে। আর তা হলো- হরতাল মানেই আগের দিন থেকে শুরু করে হরতাল শেষ হওয়া পর্যন্ত গাড়িতে আগুন, পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যা, গাড়ি ভাঙচুরসহ অনেকটা গায়ের জোরে জনসাধারণকে হরতাল মানতে বাধ্য করা। এটি হচ্ছে আমাদের দেশের হরতালের অতি সামান্য একটি চিত্র।

আপনারা ইতিপূর্বে উপরোক্ত কাজগুলো করতেন বিধায় সাঃ জনগনের মধ্যে সেই আতংক রয়ে গেছে। তার অর্থ এই নয় যে মানুষ হরতাল সফল করেছে।
ধন্যবাদ।
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:১৬
226323
বাংলার সিংহ লিখেছেন : জামায়াতের ডাকা এই হরতাল সফল হয়েছে। লেখাটি আরেকবার ভালোভাবে পড়লে আশাকরি বুঝতে পারবেন,ধন্যবাদ।
১১ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৫১
226424
বেআক্কেল লিখেছেন : দেশে তো এমনিতেই কাম কাইজ নাই, আয় নাই, একদিন হরতালের ডাক দিলে গাড়ি রাস্তায় না নামলে কি হয়। শাহরিয়া কবির আর মুতা মামুন তো রাত্রে হরতাল ডাইকা নদী নালার নৌকা পর্যন্ত বন্ধ কইরাছিল। মানুষ নামে নাই, তাতে কার কি হইল। শেষ কতা হইল হরতালে রাস্তায় গাড়ী না নামাইলেই ভাল।
১৬ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪১
228187
বাংলার সিংহ লিখেছেন : শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতীর দুর্দান্ত বিশ্লেষন, জনগণের ভাষা বুঝুন গণরায় মেনে নিন।
জনগণের ভাষা বুঝুন গণরায় মেনে নিন

গত একটি সংখ্যায় লিখেছিলাম জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল, যার জন্মই হয়েছে অন্যায়, অসত্য, অগণতান্ত্রিক, সহিংসতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানবতার কল্যাণধর্মী কাজের মাধ্যমে বুদ্ধিভিত্তিক তৎপরতা, চারিত্রিক মাধুর্যতা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহিষ্ণুতা, সহনশীলতা, উদারতা, বদান্যতা ও ভারসাম্যপূর্ণ তৎপরতার মাধ্যমে মানুষের স্বাভাবিক সমর্থন আদায় করে একটি জনকল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই জামায়াতের লক্ষ্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জামায়াতে ইসলামী তার নীতি-পদ্ধতি ও আদর্শের অনুসরণের ব্যাপারে অটল ও অবিচল। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের ডিগবাজি খাওয়ার কোন উদাহরণ নেই।

মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও এব্যাপারে ভিন্নমতের সুযোগ নিয়ে মানবতার মহান বন্ধু ও কল্যাণকামী জামায়াত নেতৃত্বকে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী ও এদেশের কিছু বিপথগামী মানুষ কর্তৃক যেসব হত্যা, ধর্ষণ এবং অন্যায় জুলুম-নিষ্পেষন সংঘটিত হয়েছে, তার সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব আসল অপরাধীদের বিচারের পরিবর্তে এসব অপরাধ থেকে যোজন-যোজন দূরে অবস্থানকারী নিষ্কলুষ চরিত্রের জামায়াত নেতৃত্বের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজানো সাক্ষীর মাধ্যমে তাদেরকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করে মিডিয়ার দলকানা একটি মতলববাজ অংশকে দিয়ে ইচ্ছেমতো রিপোর্ট তৈরি করে নেতৃবৃন্দের চরিত্র হননের চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি, হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে বাংলাদেশে স্থায়ী বিভেদের যে বীজ বপনের অপচেষ্টা চালানো হয়েছিল, তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে স্থানীয় নির্বাচন ও নিকট অতীতে জামায়াতের ডাকা হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যাপক সমর্থন প্রদান করে জনগণ তাদের মনের অভিব্যক্তি ও গণরায় সরকারকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে।

এরপরও জামায়াতে ইসলামী ও তাঁর নেতৃত্বের ব্যাপারে যেসব বিভ্রান্তিকর, অসত্য, অসম্মানজনক ও উস্কানিমূলক সংবাদ ও খবর মিডিয়ার চিহ্নিত ওই একটি অংশ পরিবেশন করে চলেছে তার প্রকৃত উৎস কি? তাহলে তাদের এসব বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের উৎস কি তাদের উদ্ভট মস্তিষ্কের হলুদ সাংবাদিকতা ছাড়া আর কিছু? মিডিয়ার এই অংশের ব্যক্তিরা যদি খোলা মন নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার নিয়ম মেনে একটু পেছনে কিংবা বর্তমানেও নিরপেক্ষ মন নিয়ে অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে দেখবেন সন্ত্রাস, সহিংসতা, উগ্রবাদ, জঙ্গীবাদ এবং জ্বালাও-পোড়াও এর কর্মকান্ড বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী গোষ্ঠীর আজন্ম চরিত্র। এই আওয়ামী লীগই জঙ্গীবাদের মদদদাতা। তাদের নেতা মীর্জা আযমের আপন দুলাভাই শায়খ রহমান। এই শায়েখ রহমান ও বাংলা ভাইদের কার্যক্রম আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে পরিচালিত হতো বলে অনেকে মনে করে থাকেন। তার কিছু দালিলিক প্রমাণও সেই সময়ের পত্র-পত্রিকা ও অন্যান্য মিডিয়ায় পরিবেশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায়। সে সময়ে ‘দৈনিক প্রথম আলো’তে শায়খ রহমান বাংলা ভাইদের বিভিন্ন আস্তানা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের যে পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছিল তার বেশির ভাগ আস্তানা ছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে। যেগুলো ভাড়া নিয়ে শায়খ রহমান ও বাংলা ভাইদের অনুসারীরা বোমা তৈরি ও অস্ত্রের মজুদখানা হিসেবে ব্যবহার করতো। তাদের ছাত্র ও যুব সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগ হলো অস্ত্র ও জঙ্গি তৈরির ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এবং সাপ্লাই সেন্টার। তারাই হরতালের নামে চলন্ত যাত্রীবাহী গাড়িতে গানপাউডার নিক্ষেপ করে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাকারী। তাদের নেতা-নেত্রীরা কতটা উগ্র তা তাদের বক্তব্য প্রদানের সময় উগ্রতার তেজ দেখে বুঝা যায়। তাদেরই এক নেত্রী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশের এক সদস্যের হাতে কামড় বসিয়ে দিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছিলেন। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পুলিশের এক সদস্যকে বিবস্ত্র করে জনসম্মুখে তাকে টেনে-হেঁচড়ে ঠাট্টা মশকরায় মেতে ওঠেছিল। তারাই স্বাধীনতা উত্তর প্রথম সরকার গঠন করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ শিকদারকে হত্যার পরে দম্ভোক্তি করে বলেছিল, কোথায় আজ সিরাজ শিকদার? তারাই শুধু মতের ভিন্নতা ও দেশের স্বার্থের পক্ষ অবলম্বনের অপরাধে হাজার-হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের নবম সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল দেশের স্বার্থের পক্ষে ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে মহান মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে সেক্টর কমান্ডারের ভূমিকা পালন করার পরও তাকেই হতে হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দী। তারা রক্ষী বাহিনী গঠন করে রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক তৌহিদী জনতার ওপর অকথ্য নির্যাতন পরিচালনা করেছিল। এই রক্ষীবাহিনীর সহযোগিতায় যখন তখন যে কাউকে ধরে নিয়ে খুন, মা-বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন, মানুষের জায়গা-জমি দখল, যে দখল থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তিও রক্ষা পায়নি। স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণ, দলীয়করণ, ব্যাংক লুটপাট ও সীমাহীন দুর্নীতির মহোৎসবের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে শূন্যের কোঠায় পৌঁছে দিয়েছিল। যার ফলে তৎকালীন সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রের কর্মচারীদের বেতন দেয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাদের লুটপাটের ফলেই ৭৪’ এ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। যে দুর্ভিক্ষে সৃষ্টির সেরা মানুষ আর কুকুরের মধ্যে ডাস্টবিনের খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে দেখা যায়। বাসন্তিরা জাল পরে লজ্জা নিবারণের চেষ্টা চালিয়েছিল। দেশের এই করুণ অবস্থায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, মানবাধিকার সংগঠন, এনজিও সংস্থাগুলো সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে। কিন্তু আওয়ামী লুটেরারা লুটের নেশায় এতোই বেপরোয়া হয়েছিল যে, বিদেশ থেকে পাওয়া ত্রাণের টাকা ও বিভিন্ন সামগ্রী লুটপাট করতেও লজ্জাবোধ করেনি। তাইতো তাদের নেতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান আপসোস করে বলেছিলেন, ‘মানুষ পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। আমার ডানে চোর, বামে চোর, সামনে চোর পিছনেও চোর’। তিনি আরো বলেছিলেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির জন্য সাড়ে সাত কোটি কম্বল এনেছিলাম, আপসোস! আমার কম্বলটিও সংরক্ষণ করতে পারিনি। সেজন্য এদলটিকে কম্বল চোরের দল হিসেবেও এক সময় ব্যাপক জনশ্রুতি ছিল।

গুম, খুন, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দুর্নীতি আর লুটতরাজের সে পুরনো অভ্যাস থেকে আওয়ামী লীগ কখনো বের হয়ে আসতে পারেনি। ৯৬-২০০১ সালে তাদের নেতা-কর্মীরা শেয়ার মার্কেট লুট ও দুর্র্নীতির মহোৎসব চালিয়েছিল। তাদের সে সময়ের শাসনামলে ডা.এইচ.বি ইকবালের নির্দেশে প্রকাশ্যে দিবালোকে পিস্তল ঠেকিয়ে মালিবাগে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে হত্যা ও আহত করেছিল। তাদেরই দলের সন্ত্রাসের গডফাদার নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, লক্ষ্মীপুরের তাহেরসহ আরো অনেকের কুকীর্তির ফিরিস্তি সে সময়ের মিডিয়া ও জনগণের মুখে-মুখে ছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আঁতাতের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে তাদের পূর্বের ঐতিহ্যকে ধরে রেখে দলীয় সহযোগি সংগঠনগুলোকে দিয়ে শিক্ষাঙ্গনকে জিম্মি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য, অপহরণ, গুম, খুন মা-বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন, জনজীবনে ব্যাপক আতঙ্কের পাশাপাশি গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, দুর্নীতি লুটতরাজ, শোষণ ও বঞ্চনার হাতিয়ারে পরিণত করেছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করার মানসে তাদেরই প্ররোচণা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকস সেনা অফিসারকে হত্যা করে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। জনশ্রুতি আছে, বিদ্রোহীদের একটি অংশ ও খুনিদেরকে নির্বিঘেœ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে ক্ষমতাসীনদেরই একটি অংশ।

সীমান্তে ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটা তারে ঝুলিয়ে রাখলেও তারা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় তাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা শেয়ার বাজার লুটপাট করে ৭০ লাখ মানুষের পকেট কেটে নিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন পুঁজি হারিয়ে আত্মহত্যা করে মারাও গিয়েছেন। প্রতারণা, ঘুষ-বাণিজ্য আর মন্ত্রীদের সহযোগিতায় সরকারী-বেসরকারী ব্যাংকে জনগণের আমানতের হাজার-হাজার কোটি টাকা লুট করে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে দলীয় কর্মীদের পকেটকে সরগরম করেছে। আর তাদেরই একজন সিনিয়র মিনিস্টার হাসতে হাসতে বলেছেন ৪-৫ হাজার কোটি টাকা এটি কোন বড় ব্যাপার নয়। কুইক রেন্টাল প্রকল্পের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগার ও জনগণের পকেট খালি করে দলীয় নেতা-কর্মীদের জন্য দেশের বাইরে দ্বিতীয় নিবাস বানাবার সুযোগ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তাদের গত আমলে কোন প্রকল্প শুরুর আগেই প্রথম দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। সেজন্য বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু শুরুর আগেই দুর্নীতির অভিযোগে তাদের ফান্ড প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী ও তাদের সহযোগিদের দেশপ্রেমিক আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে তার সরকার ও মন্ত্রীদেরকে হাসির খোরাকে পরিণত করেছেন। তারাই ২৮ অক্টোবর ২০০৬ইং-এ জামায়াতে ইসলামীর শান্তিপূর্ণ জনসভায় হামলা করে জনসভায় আগত নিরীহ জামায়াত ও শিবিরের নেতা-কর্মীদের হত্যা করে। শুধু এখানেই শেষ নয়, প্রকাশ্যে দিবালোকে সাপ মারার মতো লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে-পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে। তারা মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও লাশের ওপর উন্মত্ত নৃত্য প্রদর্শন করে যা মিডিয়ার মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষ দেখেছে। তারাই নাটোরের বড়াই গ্রামে ও ফেনীতে প্রকাশ্যে দিবালোকে জনপ্রতিনিধিদেরকে রাজপথে পিটিয়ে হত্যা করে। তারাই এবং তাদেরই মদদপুষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একটি অংশ নারায়ণগঞ্জে জনপ্রতিনিধি কমিশনার নজরুল ইসলামসহ সাত নাগরিককে হত্যা করে লাশ নদীতে চুবিয়ে রাখে। ইসরাঈলী বাহিনী গাজায় যেভাবে নৃশংসতা চালিয়ে গণহত্যা, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে দেয়াসহ মানবাধিকারকে পদদলিত করেছিল একই কায়দায় সাতক্ষীরায় যৌথবাহিনী অভিযানের নামে যে তান্ডব চালিয়েছে তা অনেক ক্ষেত্রে ইসরাঈলী বাহিনীর বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। তারাই তো রাষ্ট্্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ইচ্ছামতো আইন রচনা করে মিথ্যা মামলায় সাজানো সাক্ষী ঠিক করে বিশ্ববিখ্যাত আলেমেদ্বীন ও দেশপ্রেমিক দুর্নীতিমুক্ত জাতীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করছে ও তাদের অশুভ চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে জনতা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বিক্ষোভে ফেটে পড়লে সরকারের নির্দেশে ও তাদের দলীয় গুন্ডাদের সহযোগিতায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই শতাধিক দেশপ্রেমিক নাগরিক শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। তাদের বর্বরতা থেকে নারী ও শিশুরাও রেহাই পাননি। সুতরাং তাদের এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে সহিংসতা, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা না বলে জামায়াত-শিবিরের নিয়মতান্ত্রিক, সুশৃঙ্খল ও গঠনমূলক কার্যক্রমকে কোন যুক্তিতে সহিংসতা ও জঙ্গীবাদী কার্যক্রম বলে চিত্রিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়? ১০.১১.২০১৪ সোমবার অনলাইন নিউজে খবর এসেছে যুবলীগের একটি সমাবেশে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক বিবৃতির প্রতিবাদে বলেছেন, “তোমাদের ওই মানবাধিকার আটলান্টিকের ওপারে রাখ, ইউরোপের মধ্যে রাখ” তার এই বক্তব্যই প্রমাণ করে আওয়ামীলীগ কতটা কোন ধরনের চিন্তা-চেতনা পোষণ করে ও তাদের কাছে মানবাধিকারের প্রসঙ্গটি কতটা গুরুত্বহীন। তারপরও কিছু দলকানা মিডিয়ার বন্ধুরা এখনো আওয়ামীলীগকে সহিংস, জঙ্গী ইত্যাদি না বলে অন্যায়ভাবে জামায়াতের ওপর এই বদনাম চাপাবেন? সুতরাং সময় এসেছে চিন্তা-ভাবনা করার ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার। এ চিন্তা ও সিদ্ধান্তে ভুল করলে শুধু যে জামায়াত শিবিরের ক্ষতি হবে তা নয় বরং জাতি হিসেবে আমরা আরো দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়বো। সামাজিক অস্থিতিশীলতা আরো বাড়বে। বিঘিœত হবে শান্তি ও শৃঙ্খলা। ফলে এর জন্য ক্ষতি হবে গোটা জাতির। বড় খেসারত দিতে হবে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে।

তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের বশংবদ মিডিয়ার একটি অংশ দিয়ে এসব বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগ জামায়াত ও তার নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে প্রচার করে আসছে। কিন্তু জনগণ এসবে বিশ্বাস করেনি। তার প্রমাণ ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ছাড়াই জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী সরকার সবকিছু তার একক নিয়ন্ত্রণে নেয়ার লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাচনের ঘোষণা করে। তারা ধারণা করেছিল এ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতে তথা ২০দল অংশ নেবেনা। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় স্থানীয় নির্বাচনের সকল পদ দখল করে তৃণমূল পর্যন্ত লুটপাট চালাতে পারবে। কিন্তু ২০ দল তথা বিএনপি-জামায়াত ইলেকশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। তাতেই প্রমাদ গুনল ক্ষমতাসীনরা। এ জন্য বিশেষ করে জামায়াত যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে ধর পাকড় শুরু করে। তারপরও জামায়াত নির্বাচনের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলো। অনেক জায়গায়ই প্রার্থী নিজে গিয়ে নমিনেশন দাখিল করতে পারেননি। ভোট চাইতে জনগণের কাছে যেতে পারেননি। এজেন্টদেরকে ভোটের আগেই মামলা-হামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। ভোট সেন্টার থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। আগের রাতে প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী ক্যাডাররা সীল মেরে বাক্স ভরে ফেলে। সারাদিন একেকজন এক হাজার দু’হাজার পর্যন্ত ভোট প্রদান করে। আবার গণনার সময় জামায়াতের এজেন্টদের বের করে দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইট অফ করে রেজাল্ট পাল্টে দিয়ে ফলাফল ঘোষণা করে। এতো কিছুর পরও জামায়াত ৩০২টি উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করে। এই ৩০২ টিতে প্রদত্ত ভোটে আওয়ামীলীগ পেয়েছে শত কারচুপির পরও ৩৬% জামায়াতে ইসলামী শত বাধার পরও ৩৫% আর বিএনপি পায় ৩২%।

সুতরাং স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণরায় পরিষ্কার হয়েছে। জনগণ আওয়ামীলীগের তথাকথিত মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে, সাজানো সাক্ষীর মাধ্যমে পরিচালিত প্রহসনের বিচারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপরও আওয়ামীলীগ সঠিক উপলব্ধি করতে পারেনি। তারা একটি ভোটারবিহীন অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে আবারও খুনের নেশায় মেতে উঠেছে এবং এখনো জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখে পুরনো পথেই হাঁটছে। জনগণ জামায়াতের ডাকে ১০৮ ঘন্টা স্বত:স্ফূর্ত হরতাল পালন করে আওয়ামীলীগের অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিবাদি অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আবারও গণরায় দিয়েছে। সুতরাং শাসকগোষ্ঠী এ গণরায়কে সম্মান প্রদর্শন ও জনগণের ভাষাকে যথার্থ উপলব্ধি করে নিজেদের চিন্তাধারাকে শুধরে নিয়ে সঠিক পথে যাত্রা শুরু করতে পারেন। আর তা না করে যদি জামায়াতে ইসলামী ও তাঁর নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত অব্যাহত রাখেন তাহলে জনগণ অচিরেই আপনাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় লালকার্ড প্রদর্শন করবে ইনশাল্লাহ.
283021
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৮:৫৩
বাংলার সিংহ লিখেছেন : জামাতের ডাকা এই হরতাল সফল হয়েছে। লেখাটি আরেকবার ভালোভাবে পড়লে আশাকরি বুঝতে পারবেন,ধন্যবাদ।
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:২২
226342
মহি১১মাসুম লিখেছেন : লেখা না পড়ে মন্তব্য দিবো কেন? পড়েই দিয়েছি । মানুষ আতংকে বের না হলে,হরতাল সফল হয়ে গেলো!
আতংকের রেষ কাটতেওতো সময় লাগবে।
ধন্যবাদ আপনরা অতীতে জনমনে যে আতংক সৃষ্টি করেছিলেন,তারই রেজাল্ট পেয়েছেন।
283024
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:০৬
হতভাগা লিখেছেন : 'কিন্তু হরতালের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রমধর্মী নজির স্থাপন করলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ''

০ পাগলের সুখ মনে মনে ।

লুতুপুতু মার্কা হরতাল বাংলাদেশের জনগন খায় না । বাংলাদেশের জন চায় আওয়ামী লীগ মার্কা ড্যাসিং হরতাল যে হরতালে থাকে আতন্ক , সাসপেন্স - হরতালে বের হলে পিকেটিংয়ে নাজেহাল হবার সমূহ সম্ভাবনা .....

এরকম নরম হরতাল করে ভেবেছেন যে মানুষ জামায়াতের উপর খুশি হয়ে তাদেরকে সাপোর্ট করা শুরু করবে , সামনের নির্বাচনে তাদেরকে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাইয়ে দেবে ?

হরতাল দিয়ে জনগনের মনে আতন্ক সৃষ্টি না করতে পারলে বাংলাদেশের জনগনের মন্জয় করা যাবে না - এটা পরীক্ষিত ।
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩৫
226338
বাংলার সিংহ লিখেছেন : নতুন ধারার ব্যতিক্রমধর্মী নজির যে জামায়াত সৃষ্টি করতে পারে এবং পারবে জনগন এটা বুঝতে পারছে,আর এখানেই তো সফলতা।
283028
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:১৩
শেখের পোলা লিখেছেন : 'সত্য পথ দেখায় আর মিথ্যা ধ্বংস করে'
আপনাকে ধন্যবাদ৷
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২১
226326
বাংলার সিংহ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ।
283060
১১ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৩৯
তায়িফ লিখেছেন : জামাতের শক্তি কি বিএনপির মত নি:শেষ
১১ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:১০
226400
বাংলার সিংহ লিখেছেন : মোটেই না।
283080
১১ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০১:৪৯
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : কি হল? সবাই দেহি রাগের উপর আছেন।
১১ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:১৩
226401
বাংলার সিংহ লিখেছেন : আমি মোটেও রেগে নেই,ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File