পোস্টমর্টেম-বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (মানবতা বিরোধী অপরাধ সমূহ-১)

লিখেছেন লিখেছেন রণতরী খান ৩০ মে, ২০১৩, ০৯:০৪:৫৭ রাত

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ । তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বেশী মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে এ সংগঠনটি। তাদের খুনের রাজনীতির আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল - তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় ছাত্রনেতা আবদুল মালেককে প্রকাশ্যে হত্যার মধ্য দিয়ে।

অবশ্য ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করলেও তরুণ প্রজন্ম তাদের অপরাধের কোন বিচার চইছেনা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছাত্রলীগ নামধারী প্রধানমন্ত্রীর পোষ্য গুণ্ডাদের নির্যাতনের হাত থেকে কেউ রেহায় পায়নি । হোক না সে ডাক্তার, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, পুলিশ, রাজনীতিবীদ, সংসদ সদস্য, নিজ দলের কর্মী, সাংবাদিক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের কর্মী । দেশের প্রায় সব নাগরিকই ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার।

গত চার বছরে সারা দেশের জনগণ দেখেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। বিশ্বজিতৎকে হত্যার দৃশ্য দেখেছে সারা বিশ্ব। তারা শিক্ষকদের উপর চালিয়েছে নির্যাতন । ছাত্রলীগের হত্যাকাণ্ড ,ভর্তিবাণিজ্য, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি,ধর্ষণ, দখলসহ নানা মানবতা বিরোধী অপকর্ম ছিল বর্তমান সরকারের চার বছরের বড় সাফল্য । তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বন্ধ হয়েছে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেড়েছে একাডেমিক সেশনজট। উচ্চ শিক্ষাঙ্গন অস্থিতিশীল হওয়ায় শিক্ষার্থীদের একাডেমিক শিক্ষাজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

অথচ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইসতিহারের ১০.৩ ধারায় বলা হয়েছিল শিক্ষাঙ্গন সন্ত্রাস, সেশনজট মুক্ত করা হবে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে তোলা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হবে। বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা কর্মের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে। আওয়ামী লীগের এসকল প্রতিশ্রুতি আজও নেতাকর্মীদের কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে জাতি এর কোন বাস্তবায়ন স্বপ্নেও দেখেনি। নিচে কিছু ফিরিস্ত তুলে ধরা হলো -

ছাত্রলীগের ডিজিটাল ধর্ষণ:

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে চেয়েছেন একথা আমরা সবাই জানি । কিন্তু তিনি বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে পেরেছেন কিনা তা আমরা বুঝতে পারিনা। তবে ছাত্রলীগ ডিজিটাল কায়দায় নারী ধর্ষণ করতে শিখেছে একথা হলফ করে বলা যায়।

একসময় ছাত্রলীগের নেতারা ধর্ষণের পর বিরোচিত এসব কাহিনী ডায়রীতে বিস্তারিতভাবে লিখে রাখতেন । বর্তমান ছাত্রলীগের কর্মীরা এক্ষেত্রে ডিজিটাল হয়েছে, তারা ধর্ষণ করার সাথে সাথে ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

একটি ঘটনা, ১২ সালের ৫ই জুন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এক ছাত্রী বাড়ি থেকে টাঙ্গাইলের সখীপুর বাজারে আসে খাতা কেনার জন্য। বাড়ি ফেরার সময় উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুল্লাহ ইতিহাস ওরফে হাবিব, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ, সখীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত সিকদারের ভাগ্নে বাবুল ও তার নাতি আকাশ মোটরসাইকেলযোগে সখীপুর হাজিপাড়ায় আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে যায় তাকে। পরে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুল্লহ ইতিহাস তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার সহযোগীরা ধর্ষণের চিত্র ভিডিওতে ধারণ করে

০৬-০১-২০১২ কলেজছাত্রী এক নৃত্যশিল্পীকে শীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা ওরফে পলাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাতক্ষীরায় নৃত্যশিল্পীকে ধর্ষণ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটেছিল আরেকটি ধর্ষণের ঘটনা। পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর মুজিব প্রেমিকার নগ্ন ছবিসহ আপত্তিকর যুগল ছবি এবং এর বিবরণ তিনি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছেন। জেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির ওই সাধারণ সম্পাদক পিরোজপুর-১ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি একেএম এ আউয়ালের ভাতিজা বলে তার বিচার এখনো হয়নি। ছাত্রলীগ নেতা অভি ও তার কথিত প্রেমিকার নগ্ন ছবি এখন পিরোজপুরের সর্বত্র মোবাইল থেকে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে।

৪ জানুয়ারি ২০১২ সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে জুয়েল ও পলাশ স্বামীকে মারধর করে আটকে রেখে এক নৃত্যশিল্পকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ১৯ জানুয়ারি ২০১২ সিলেটের জকিগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা মিছরা জামান কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন এক মহিলা। ২৪ জানুয়ারি ২০১২ সরাইলে যুবলীগ ক্যাডার জাকির কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হন এক তরণী। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে গণধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর বাবা মামলা করতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সমুদয়কাটি ইউনিয়নের সুন্দর গ্রামে মা (৩০) ও মেয়েকে (১১) ধর্ষণের পর হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।২৮ ফেব্রুয়ারি

২০১২ চট্টগ্রামে র্যাব পরিচয়ে এক তরণীকে ধর্ষণ করে ৩ বখাটে। ১২ মার্চ ২০১২ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ বাজার এলাকায় স্বামীর অনুপুস্থিতিতে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করে যুবলীগ কর্মী সুমন। 'সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হলো।'

পরবর্তী পর্ব (শিক্ষকদের উপর হামলা)

সংকলনে - রণতরী খান ও অভি মামুন

সৌজন্যে - কমিউনিটি ব্লগারস ফোরাম (সিবিএফ)

বিষয়: বিবিধ

২৪০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File