জবানবন্দি - আমি কেন শাহবাগ ছাড়লাম...

লিখেছেন লিখেছেন রণতরী খান ২১ মে, ২০১৩, ১২:৪৭:১০ রাত

আমার পিতা একজন বোবা মুক্তিযোদ্ধা। এটা এই অর্থে যে, গত ৪০ বছরে তিনি কাউকে বলেননি 'আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমি মুক্তিযোদ্ধা।' আমরাও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এ রাষ্ট্র থেকে কোন সুযোগ সুবিধা নেইনি।

তবে স্বাধীন দেশ, মানচিত্র ও মাটিকে ভালবেসেছি। বরাবর ইসলামের পক্ষে আমার পিতা ও আমাদের অবস্থান। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে অপরাধী বলে অভিযুক্তদের বিচার শুরু হলে অন্য অনেকের মতো আমরাও তাতে উচ্ছাস প্রকাশ করেছি। কিন্তু আমি নিজে ট্রাইব্যুনালের (১) বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করায় প্রায়শই সরকার পক্ষের আইনজীবী ও বিচারকদের আচরণ দেখে হতাশ হতাম। তবু আশা হারায়নি। যে দিন কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন দেয়া হয় সেদিনও আমি ট্রাইব্যুনালে (২) ছিলাম। আর সবার মতো আমার ও মনে হয়েছে সরকার আঁতাত করেছে। তাই ন্যায় বিচারের দাবিতে ছুটে যাই শাহবাগে।

কিন্তু শাহবাগে জরো হওয়া অন্যদের সাথে আমি একমত হতে পারি না । 'বিচার নয় ফাঁসি চাই' এ স্লোগান নিয়ে দফায় দফায় ওদের (শাহবাগিদের) সাথে তর্ক হয় আমার। সিগারেট বা অন্য কিছু না খাওয়া ও সারাজীবন বয়েজ প্রতিষ্ঠানে পড়ার কারণে তাদের আচরণের সাথেও এডজাস্ট করতে পারছিলাম না নিজেকে। দিন কয়েক পর (সম্ভবত চতুর্থ দিন) ওরা দেখি বিচার থেকে সরে এসে ছয় দফা দাবি জুড়ে দিয়েছে। এতে যা বলা হয়েছে তার সাথে কোনভাবেই একমত হতে পারলাম না । তাই সেদিনই শাহবাগ ছেড়ে চলে আসলাম। এরপর আর ওখানে কোন দিন যাইনি।

আমার কাছে মনে হয়েছে, মানুষের আবেগকে পুঁজি করে ওরা একটা সস্তা খেল খেলতে চায়। ওদের এখানে আদর্শের চেয়ে বড় ব্যক্তি স্বার্থ। তারা ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে জরো হয়ে কেন ' রাজিনৈতিক দল নিষিদ্ধ, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাজেয়াপ্ত, পত্রিকা বন্ধের মতো জঙ্গী দাবি তুললেন তা এখনো আমার ধারণার বাইরে।

আমার চোখের সামনেই শাহবাগ ব্যর্থ হলো। মানুষ এখন ঐদিকে ফিরে থুতু দিতেও ইতস্তত বোধ করে! পৃথিবীর ইতিহাসে একটি সাজানো ড্রামা হিসেবে স্থান করে নিবে কথিত শাহবাগ জাগরণ।

মুক্তিযুদ্ধ, স্বদেশ ও স্বধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ব্যর্থ শাহবাগের জন্য করুণা বোধ করছি।

প্রসঙ্গত, তিন / চার রাত শাহবাগে ছিলাম একদিনও ফ্রি বিরাণী বা খিচুরি খাইনি।

অনুলেখক - রণতরী খান

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File