আল বিদা “আমীরুল অসাতিয়্যাহ ফী বাংলাদেশ”
লিখেছেন লিখেছেন আল মাসুদ ১৪ মে, ২০১৬, ০৫:৫০:১২ বিকাল
ডঃ খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার, গত বৃহস্পতিবার (১২-০৫-২০১৬) বাদ মাগরিব জানাযা নামাজের মধ্যে দিয়ে ইসলাম প্রিয় মানুষদের শোক সাগরে ভাসিয়ে আপনার প্রভূর দরবারে হাজিরা দিলেন। কারো রক্তের সম্পর্ক অথবা কোন নির্দিষ্ট দলের প্রতিনিধি না হয়েও আপনি যে ভালবাসা পেলেন, তা কয় জনের ভাগ্য জোটে? লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এবং সারাবিশ্বে কোটি মানুষের দোয়া, ভালবাসা নিয়ে আপনার প্রস্থান যে কারো জন্য ঈর্ষার কারণ।
স্যার, আপনি মারা যেয়ে প্রমাণ করলেন আপনার একটি ধারণা ভূল ছিল। ২০০৭ সালের কোন এক বিকালে আসর নামাজের পরে ঢাকার ফুরফুরা শরীফ দরগাহের লাইব্রেরীর সামনে কথার মাঝে বলেছিলেন, মাসুদ, মানুষের যে বয়সে সামাজিকীকরণ হয় আমি জীবনের সে সময়টা সৌদি আরবে কাটিয়েছি। প্রায় ২০ বছরের প্রবাস জীবনে দেশের মানুষ ও সমাজের সাথে আমার অন্তরঙ্গ সম্পর্কটা হয়ে ওঠেনি। এজন্য আমার চেয়ে তোমরা যারা দেশে কাটিয়েছ তারা খুব সহজে মানুষের সাথে মিশতে পারো, বুঝতে পারো, বুঝাতে পারো এবং তাদের আপন করে নিতে পারো। আমার এই সময় এসে নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করা কষ্টসাধ্য এবং অসম্ভব ও বটে।
স্যার আপনি মারা যেয়ে প্রমাণ করলেন, মানুষের সাথে আপনার সম্পর্কটা কত গভীর ছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাইয়েরাও আপনাকে এক নজর দেখার জন্য আস-সুন্নাহ ট্রাস্টের চত্ত্বরে এসে চোখের পানি ফেলেছে। তাদের আসার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে বলেছে, স্যার আমাদেরকে খুব ভালবাসতেন। একজন মানুষ কতটুকু সমাজবান্ধব হলে অন্য ধর্মাবলম্বীরাও চোখের পানি ফেলে?
স্যার, আপনার অন্তর্ধানে শুধু ঝিনাইদহবাসী নয় বরং কুরআন পাগল বাংলাদেশী মুসলমানেরা এক অমূল্য রত্ম হারিয়েছি। আপনার জীবদ্দশায় আমরা আপনার প্রাপ্য সন্মান ও মূল্য দিতে পারিনি। আপনার জ্ঞানের গভীরতা, ভাষার সরলতা, আমল ও সুন্নাতের পাবন্দীতা, বাছবিচারহীন মানুষের আপন করার প্রবণতা, দাওয়াতী কাজের প্রতি ব্যাকুলতা, অন্যের সমালোচনা হজম করার উদারতা, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভদ্রতা প্রদর্শন, বাংলার আলেম সমাজের অনৈক্য ও বৈপরীত্যের বিপরীতে সবার বটবৃক্ষ হয়ে ওঠা যখন আমরা উপলব্ধি করেছি, তখন আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর আমরা এদেশের মানুষ চোখের আড়ালে না গেলে কারো মর্ম বুঝিনা, প্রাপ্য সন্মান দেইনা বরং তার স্বীকৃতি দিতে কুন্ঠা করি, সমালোচনায় জর্জরিত করে গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করার হেন কোন কাজ নেই, যা আমরা করে থাকিনা।
স্যার, বর্তমান বাংলাদেশের আলেম সমাজের মধ্যে বিদ্যমান কোন্দল, অন্যের মতামতের প্রতি অশ্রদ্ধা, অন্যকে বিভ্রান্তিকর ও বিপথগামী ঘোষনা করার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাপ্রবাহের মাঝে ভিন্ন চরিত্রের ছিলেন আপনি। টিভি প্রোগ্রামে আপনার কঠোর সমালোচকের প্রতি আপনার যে শ্রদ্ধাপূর্ণ শব্দচয়ন, তা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে ভারসাম্যপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হয়। এক গ্রুপ যখন অন্য গ্রুপের সমালোচনায় ব্যস্ত আপনি তখন উভয় গ্রুপের মাঝে সেতু বন্ধনের জন্য কিনা প্রচেষ্টা করেছেন। আপনার এ প্রচেষ্টার ফলে বিবাদমান উভয় গ্রুপের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। যেকোন বিষয়ে আপনার মধ্যমপন্থা অনুসরণ করার ফলে ইসলাম প্রিয় কোটি প্রাণের হৃদয়ে আপনি স্থান পেয়েছেন। এজন্য মোঃ রুহুল আমীন ভাইয়ের দেওয়া “আমীরুল অসাতিয়্যাহ ফী বাংলাদেশ” স্বীকৃতি আপনারই মানায়।
স্যার, আপনার বিদায়ের ক্ষতি আমরা কিভাবে কাটিয়ে উঠব জানিনা। তবে অল্প সময়ে মানুষের মনিকোঠায় যে স্থান করে নিয়েছেন তা আপনার কর্মের সফলতার স্বাক্ষ্য বহন করে। আপনার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আলেম সমাজের মাথার উপর উম্মতের বড় এক দায়িত্ব দিয়ে অবেলায় নিভে গেলেন আপনি। আপনার বিদায় দিতে হৃদয় ভেঙ্গে গেলেও অস্ফুট কন্ঠে, ছলছল চোখে, ধরা গলায় বলতে হচ্ছে, আল বিদা “আমীরুল অসাতিয়্যাহ ফী বাংলাদেশ”।
বিষয়: বিবিধ
২১০২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুধু যদি "হাদিসের নামে জালিয়াতি" বইটাও তিনি লিখতেন তবুও তার অবদান স্মরনিয় থাকত।
মহান আল্লাহ
উনার প্রতি সদয় হোন, আমিন।
সত্যি কিছু ক্ষতি অপূরণীয়
রয়ে গেল একগাদা স্মৃতি-
এগুলোর সূত্র ধরেই যদি সেদিন জানতে চান, "আমি তো চলেই এলাম, আপনারা পরে আর কী কী করলেন?""
- জবাব দেয়া কঠিন-ই হবে!!
আল্লাহতায়ালা তাঁকে জান্নাতে উচ্চমর্যাদায় রাখুন ....
মন্তব্য করতে লগইন করুন