ডেইলী টেলিগ্রাফের চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট: সাভারের উদ্ধারকর্মে উন্নত বিশ্ব কর্তৃক আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রদানের প্রস্তাবকে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যাখ্যান
লিখেছেন লিখেছেন নাওয়াজ মারজান ২৯ এপ্রিল, ২০১৩, ১১:২৩:২৯ রাত
গত সপ্তাহে ঢাকার ভয়াবহ ভবনধসে চাপা পড়া লোকজনকে উদ্ধার করতে বৃটেন ও অন্যান্য দেশকর্র্তৃক সার্চ ও রিসকিউ টীম প্রেরণের প্রস্তাবকে নাকোচ করেছে বাংলাদেশ। ডেইলী টেলিগ্রাফ অবগত হয়েছে।
৩৯৭ জনের অধিক লোক প্রাণ হারায়, গত বুধবার যখন নয়তলা বিশিষ্ট ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়ে পাথরস্তুপে পরিণত হয়। স্থানীয় উদ্ধারকর্মীর দল পর্বতসম ধ্বংসস্তুপের মধ্য দিয়ে জীবিতদেরকে উদ্ধার করার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
অভিজ্ঞ উদ্ধারকর্মীদল প্রেরণের প্রস্তাব, যা সম্ভবত আরো অনেক লোকের প্রাণ রক্ষা করতে পারত, গত সপ্তাহ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কুটনৈতিক সূত্র জানায়। (http://www.telegraph.co.uk/news/worldnews/asia/bangladesh/10024004/Bangladesh-UK-rescue-aid-rejected-after-Dhaka-factory-collapse.html)
ডেইলী টেলিগ্রাফ কর্তৃক প্রত্যক্ষ করা ডক্যুমেন্ট ইঙ্গিত করে, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট ও পররাষ্ট মনত্রণালয় উভয়ই প্রস্তাবগুলোকে নাকোচ করেছে, কারণ তাদের আশঙ্কা ছিল যে, সাহায্য গ্রহণ করা জাতীয় গৌরবের মানহানি করবে। ডক্যুমেন্ট প্রকাশ করে, বাংলাদেশী কর্মকর্তাদেরকে সাহায্য গ্রহণ করতে রাজী করার জন্য একটি কুটনৈতিক অভিযান চালানো হয়। অভিযানটি গোপনে রাখা হয়, যাতে তা বাংলাদেশীদের অনুভুতিতে আঘাত না হানে ।
যখন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা অবগত হলেন যে, অসংখ্য লোক ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে, তখন উদ্ধার অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যথোপযোগী সামর্থ্য আছে কি-না সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্বের কুটনিতিবিদদের সাথে পরামর্শ করা হয়। তারা নেতিবাচক সিদ্ধান্ত উপনিত হন এবং বৃটেনসহ আরো কয়েকটি দেশের কাছে প্রস্তাব পাঠান যাতে তারা ভারী উদ্ধার-যন্ত্র ও অভিজ্ঞ উদ্ধারকর্মীর দল প্রেরণ করে।
“আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তল্লাস ও উদ্ধারকর্মে প্রয়োজনীয় সাহায্য ও বৃটেনের অংশগ্রহণের বিষয়টি জাতিসংঘ আন্ডারলাইন করে দেয়, কিন্তু প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করা হয়।” একজন কর্মকর্তা জানান।
পক্ষান্তরে উদ্ধার অভিযান সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের উপর নির্ভর করছিল, যারা কোন ধরণের প্রটেকটিভ স্যুট পরিধান করছিল না। এদের অনেকেই প্লাস্টিক স্যান্ডাল পরিধান করে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। শনিবার ডেইলী টেলিগ্রাফ প্রকাশ করে - কীভাবে ডাক্তাররা একজন স্বেচ্ছাসেবক গার্মেন্ট ফেক্টরী শ্রমিককে চাপা পড়া একজন মহিলাকে রক্ষার্থে তার হাত কেঁটে ফেলার দায়িত্ব প্রদান করেন। আটকে পড়া অনেক শ্রমিক নিজেদের প্রস্রাব পান করে ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার দিনগুলোতে প্রাণের জন্য লড়াই চালিয়ে যান।
আটকে পড়া শ্রমিকদের আত্মীয়-স্বজনদের পক্ষ থেকেও সরকারকে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়, যখন অসম্পূর্ণ উদ্ধারাভিযানকে স্থগিত করার আভাস দেয়া হয়। আটকে পড়া জীবিত লোকজন ৭২ ঘন্টার উপর বাঁচতে পারবেনা - এমন অবাস্তবিক অজুহাত দিয়ে গত সপ্তাহ সরকারী কর্মকর্তারা ভারী মেশিনারী দিয়ে ধ্বংসস্তুপ ক্লিয়ার করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু জনসাধারণের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় সে সিদ্ধান্তকে মূলতবী করা হয়। কারণ তৎক্ষনাত ভেতরে আরো অনেক জীবিত ব্যক্তিদের আর্তনাদ শুনা যাচ্ছিল। বৃটেনের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ) এর মুখপাত্র বৃটেন কর্তৃক স্পেশালিষ্ট প্রযুক্তি সাহায্য প্রদান করার প্রস্তাবের বিষয়টি সত্যায়ন করেন, যা বাংলাদেশ প্রত্যাখ্যান করে।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র সেক্রেটারী সি কিউ কে মুশতাক আহমদ জানান, তিনি তার মন্ত্রী কর্তৃক প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যানের খবর শুনেছেন, তবে সরাসরি তার কাছ থেকে জানেন নি। “আমি শুনি তিনি বলেছেন, [বৈদেশিক সাহায্যের] কোন প্রয়োজন নেই।” জনাব আহমদ বলেন।
ভবনটির মালিক বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের একজন যুবনেতা মুহাম্মদ সোহেল রানাকে রবিবার ভারতের সীমান্তবর্তী বেনাপোলে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে ইঞ্জিনিয়ারদের প্রদত্ত সতর্কবাণী সত্তে¡ও শ্রমিকদেরকে ভবনটির ভেতর ফেরে যেতে উৎসাহ প্রদান করে।
দুই : এতোগুলোশ লাশ। এতোগুলো মানুষ আহত হলো। অভিজ্ঞ উদ্ধারকর্মীদল আসলে হয়ত আরো অনেকে বেচে যেতো। এই খুনের দায় কী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেবেন? এই দায় কী বাংলাদেশ সরকার নেবে। সব কিছুতেই লম্বা লম্বা কথা। ডিমান্ট আর প্রেসটিজ এটাতেই নষ্ট আমরা। আমাদের সরকার।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন