মাধ্যম! তবে সিমানা আওতায়ঃ
লিখেছেন লিখেছেন আবু হাফসাহ ২৪ মার্চ, ২০১৩, ০৭:১৬:৩৬ সন্ধ্যা
তাওয়াস্সুল বা মাধ্যম ধরা প্রসংঙ্গে
ক - সংঙ্গাঃ- আরবীতে ‘ তাওচ্ছুল’ শব্দটি ওয়াসিলা থেকে নির্গত। ওয়াসিলা বলা হয়, লক্ষ্যার্জনে মাধ্যম অবলম্বন করা এবং লক্ষে অন্তহীন চেষ্টা করা। শরিয়তের পরিভাষায় ওয়াসিলা বলা হয়, আল্লাহ্র সন্তুষ্ট এবং জান্নাত অর্জনে উপনিত হওয়া এবং এ জন্যে শরিয়ত সম্মত কর্মকান্ডগুলি পুরাপুরি আঞ্জাম দেয়া ও শরিয়তের নিষিদ্ধ জিনিষ বর্জনের মাধ্যমে চেষ্টা করা।
খ- কোরআন কারীমে ‘ওয়াসিলা’-র অর্থঃ
কোরআনে ‘ওয়াসিলা’ শব্দটি দুই স্থানে এসেছে।
এক, আল্লাহ্ বলেন:
অর্থ, “হে ঔ সকল লোকেরা তোমরা যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছো! তোমরা ‘ তাকওয়া’ অবলম্বন কর। এবং তাঁর সান্নিধ্য অর্জনে ‘ওয়াসিলা’ অন্বেষণ কর আর আল্লাহ্র পথে জিহাদ করতে থাক,আশা করা যায় যে, তোমরা সফলকাম হবে”[সূরাহ: মায়েদা:৩৭]
দুই, আল্লাহ্ বলেন: অর্থ,“ তারা যাদেরকে আহবান করে তারাই তো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের ‘ওয়াসিলা’ সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকটবর্তী হতে পারে, তার পুরস্কারের প্রত্যাশা করে ও তার শাস্তিকে ভয় করে; তোমার প্রতিপালকের শাস্তি ভয়াবহ”[সূরাহ:বানী ইসরাইল:৫৭]
আয়াতদ্বয়ে উল্লেখিত ‘ওয়াসিলা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ্র নির্দেশিত কাজগুলি সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করা। এ অর্থে নিম্নে কোরআনের খ্যতিমান ব্যাখ্যাকারদের কয়েকটি উদ্ধৃতি পেশ করা যেতে পারে, যেমন:
হাফেজ ইবনে কাছীর (রঃ) প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে বলেন, (আয়াতে উল্লেখিত ‘ওয়াসিলা’ র অর্থ আরবীতে‘কুরবাহ’ বা নেক আমল বুঝানো হয়েছে বলে বলেছেন) এর সমর্থনে - মুজাহিদ, আবু ওয়ায়িল, হাসন বছরী ,আব্দুল্লাহ ইবনে কাছির , সুদ্দী, ইবনে যায়েদ প্রমূখ তাবীদের থেকে এমন একই মতামত পাওয়া যায়। এবং সূরাহ বানী-ইসরাঈলের আয়াতে ‘ওয়াসিলা’র অর্থ প্রসংঙ্গে বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাঃ) আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার যে উপলক্ষ উপস্থাপণ করেছেন, তাতেই তা স্পষ্ট হবে। তিনি বলেন: (আরবের কিছু পল্লিবাসী একদল জ্বীনের উপসনা করিত। পরবর্তিতে এসকল জ্বীনেরা ইসলাম কবুল করলো।কিন্তু যেলোকেরা তাদের উপষণা করিত তারা তা বুঝতে পারিনি) এখানে স্পষ্ট করে উল্লেখ হয়েছে যে, ‘ওয়াসিলা’ দ্বারা ঐ সকল সত্কাজ ও ইবাদতকে বুঝানো হয়েছে, যেগুলি চর্চার মাধ্যমে আ্ল্লাহ্র সান্নিধ্য অর্জন করা যায়। এজন্যেই বলা হয়েছে, (তারা তাদের প্রভূর নৈকট্য অর্জনের জন্যে ‘ওয়াসিলা’ খোজে) অর্থাত, যার মাধ্যমে আল্লাহ্র সান্নিধ্য হাসেল সম্ভব তার অন্বেষণে তার উদগ্রীব থাকে এবং যার মাধ্যমে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভে ধণ্য হওয়া যায় এমন সত্কাজগুলির সন্ধান করা ‘ওয়াসিলা’র মূল কথা।
গ- আগেই জেনেছি যে, ‘ওয়াসিলা’ বলতে কিছু কাজকে বুঝায়।(কোন মুর্তি,জি্বন, পাথর,গাছ ইত্যাদিকে মাধ্যম বানানোকে বুঝানো হয়নি)
এ ‘ওয়াসিলা’ গ্রহণ দুভাগে বিভক্তঃ এক, শরিয়ত সম্মত ‘ওয়াসিলা’ অবলম্বন।দুই, নিষিদ্ধ ‘ওয়াসিলা’।
১- শরিয়ত সম্মত ‘ওয়াসিলা’ ধরা: সঠিক ও শরিয়ত সম্মত ‘ওয়াসিলা’ গ্রহণের মাধ্যমে আল্লাহ্র কাছে পৌঁছা। ইহার সঠিক পথের ঠিকানা জানতে কোরআন এবং সুন্নাতের দিকে প্রত্যবর্তন করতে হবে। এবং তার সবগুলিই একমাত্র এখান থেকে ভালোভাবে জানতে হবে। কোরআন ও হাদীস যেটাকে ‘ওয়াসিলা’ হিসেবে সম্মতি দিয়েছে সেটাকেই প্রকৃত শরিয়ত সম্মত ‘ওয়াসিলা’ বলা হয়।এর বিপরিতে বর্তমান বাজারে প্রচলিত মাধ্যমগুলি বিবর্যিত ও শরিয়ত পরিপন্থী।
বৈধ ‘ওয়াসিলা’ তিন প্রকারঃ-
১- আল্লাহ্ সুন্দর গুনবাচক নাম ও মহাতগুনাবীর মাধ্যমে ‘ওয়াসিলা’ অবলম্বন করা যেমন, কোন মুসলিম আল্লাহ্র কাছে দো’আ প্রার্থনা করা সময় বলবে: ‘ আল্লাহুমা ইন্নি আস-আলুকা বিআন্নাকার রাহ্মানুর রাহিম আন-তুয়াফিয়ানী’ অথবা এমন বলবে, ‘আস-আলুকা বিরাহমাতিকাল্লাতি ওয়াসি’তা কুল্লা শাইয়্যিন আন-তাগফিরালি ওয়া ক ওয়া তারহামানী’ অনুরুপ অন্য যেকোন দু’আ করতে পারে।
এ প্রকার “তাওস্সুল”-এর শরয়ী ভিত্তিক দলীল: আল্লাহ্র বাণী:
অর্থ, “আল্লাহ্র অনেকগুলি সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে; সেগুলির মাধ্যমে আল্লাহ্কে আহ্বান কর”[সূরাহ: আরাফ:১৮০]
২- নিজ পূন্নময় কৃতকর্মের মাধ্যমে ‘ওয়াসিলা’ ধরা যায়েজ। যেমন, এমন বলিবে: (হে আল্লাহ্- তোমার ওপর আমি ঈমান এনেছি, তোমার জন্যে আমার ভালোবাসা রয়েছে এবং তোমার রাসূলের অনুসরণ করি এগুলির মাধ্যমে তোমার দরবারে ক্ষমা প্রার্থী। অথবা বলবে: “হে আল্লাহ! তোমার নাবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর ভালোবাসি এবং আমি তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, এগুলির ওসিলায় আমার বিপদ-আপদ দুর করে দাও” অথবা দু’আ প্রার্থণা কারি তার গুরুত্বপূর্ণ সত্কাজের ওয়াসিলা করে আল্লাহ্র কাছে দু’আ করতে পারে।যেমন ‘তিনজন গুহাতে আটকা পড়া অবস্থায় দু’আ নিজ নিজ সত্কাজের ওয়াসিলা করে দুয়া করেছিল’ তার আ্লোচনা সামনে আসবে।
এ প্রকার ওয়াসিলার প্রমাণে আল্লাহ্ বলেন:
অর্থ, “যারা বলে হে আমাদের রব্ব! আমরা ঈমান এনেছি।তার বদলোতে আমাদের গুনাহ্গুলি ক্ষমা করে দাও।এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে উদ্ধার কর”[সুরাহ: আল ইমরান:১৬] তিনি আরও এরশাদ করেন: অর্থ,“ হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার অবতীর্ণ করা সবকিছুর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তোমার রাসূলের অনুসরণ করি সেহেতু তোমার স্বাক্ষীদানকারিদের মধ্যে শামিল কর”[আল-ইমরান:৫৩]
তিন জন ‘আসহাবুল গার’-র প্রসিদ্ধ ঘটনা এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে, যেমন আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন:আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, “ পূর্ব যুগের একটি ঘটনা। একদা তিন জনের একটি দল রাস্তায় চলছিল,ইত্যবসরে হটাত্ বৃষ্টি শুরু হলো।তারা একটি গুহাতে আশ্রয় নিলে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল, তারা পর্ষপরে বলতে লাগলো: আল্লাহ্র কসম করে বলছি; সততা ভিন্ন কেহ তোমাদের এ ত্থেকে মুক্তি দিবেনা। সুতরাং প্রত্যেকে নিজের জানা মত আল্লাহ্র জন্যে একনিষ্ঠ ভাবে কৃত-কর্মের অসিলায় দু’আ করতে হবে। সিন্ধান্ত মত তাদের একজন দু’আ করার সময় বলল:(হে আল্লাহ্! তোমার জানা আছে, আমার একজন প্রমিক ছিলো। তার সাথে কিছু চাউলের বিনিময়ে বিনিময়ে কাজ চুক্তি হয়। সে কাজ শেষে প্রাপ্য না নিয়ে চলে যায়। আমি সেই চাউল দিয়ে উত্পাদের জন্য ক্ষেত-খামার করেছি। পুনরায় তা দিয়ে গরু ক্রয় করেছি, (তা একপাল হয়েছে) তারপর সেই শ্রমিক মুজরী চেতে আসলে আমি তাকে বলেছি: ঐ গুরুর খামারে যাও এবং সব নিয়ে যাও।তখন সে বলল: তুমি আমার সাথে মজাক করছ? আমি তোমার কাছে কিছু চাউল পাবোব।তখন সে উত্তর দিল; এসব গরু তোমার চাউলের কামায়। তারপর সে গরুর পাল নিয়ে গেল।সুতরাং আমি যদি জানো যে, একাজটি তোমার ভয়ে করেছি তাহলে আমাদের এবিপদ থেকে উদ্ধার করো। তখন পাথরটি সামান্য ফাঁক হয়ে গেলো। অন্য আর একজন বলল: (হে আল্লাহ্! আমার দুজন বৃদ্ধ মাতা-পিতা ছিল: প্রত্যেক রাতে আমার ছাগলের দুধ তাদের জন্য আনিতাম। একদিন তা আনতে দেরি হয়ে গেলো।যেয়ে দেখি তারা ঘুমিয়ে গেছে। আমার পরিবার ও সন্তানাদীরা ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে। আমি মাতা-পিতা এদুধ পান না করা পর্যন্ত তাদের পান করতে দেয়নি।এবং তাদের ঘুম ভাঙাতে মন চাইনি। তাদের জন্যে দুধ রেখে চলে যাওয়াটাও আমার মনে মানেনি।এভাবে আমি ফজর পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। হে আল্লাহ্ এ কাজটি তোমার ভয়ে করে থাকি তাহলো তার অসিলায় এ-বিপদ থেকে উদ্ধার করো। তখন গুহার পাথর এতটুকু পরিমান ফাক হয়ে গেলো যে, সে ফাঁক দিয়ে আসমান দেখা যায়) শেষে অন্য একজন বলল: (হে আল্লাহ্! তুমি যানো যে, আমার একটি চাচাতো বোন ছিল। তাকে খুববেশি পছন্দ করিতাম।এক সময় কামভাব মিটাতে তাকে প্রস্তাব দিলাম। সে একশত দীনারের বিনিময়ে সম্মতি হলো। আমি তা কষ্ট করে জোগাড় করে দিলাম। সে আমার শর্ত মোতাবেক সুযোগ দিলো। যখন তার দু হাত-পার মাঝে বসলাম। তখন এ চাচাতো বোন বলল: ‘ তুমি আল্লাহ্কে ভয় করো; এর হক্ব আদায় করা ছাড়া মহর্ ভাঙা ঠিক হবেনা’ এ কথা শুনা মাত্র আমি উঠে গেলাম এবং একশত দীনার ছেড়ে চলে এলাম। যদি একাজটি তোমার ভয়ে করে থাকি তাহলে এর ওয়াসিলায় আমাদের এ বিপদ থেকে উদ্ধার করো। আল্লাহ্ তাদেরকে মুক্তি দিলেন। তারা বের হয়ে আসলো ) [বুখারী]
৩- যার দু’আ কবুলের আশা করা যায়। সে রকম সত্লোকের দু’আর অসিলা ধরা যায়েয। যেমন, কোনো মুসলিম এমন কোনো সত লোকের নিকট গেলো, যার দ্বীনদারিতা আছে, সততা ও আল্লাহ্র আনুগত্য পরায়ণতা আছে। এব্যক্তির কাছে তার জন্যে আল্লাহ্র কাছে দু’আ করতে বলা। যাতে মসিবত দুরভূত হয় এবং তার মুশকিল আসান হয়ে যায়। এ প্রকার অসিলা ধরার স্বপক্ষে শরীয়তের প্রমান বিদ্ধমান আছে। সাহাবীগুন রাসূলের নিকট নিজেদের জন্যে দু’আ চেতেন। কখনো বিশেষ ভাবে দু’আ করতে বলতেন। আবার কখন সাধারণ ভাবে বলতেন। বুখারী ও মুসলিম শরিফে আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। “একলোক জুম’আর দিন মেম্বারের সামনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে রাসুলের সাথে স্বাক্ষাত করলো। তখন রাসূল (সাঃ) দাড়াঁয়ে খুতবা দিতেছিলেন। লোকটি রাসুলের মুখোমুখি হয়ে বলল: হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের গবাদি পশু শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের খাদ্যের উপকরণ বন্ধ হচ্ছে। আপনি আল্লাহ্র কাছে বৃষ্টি বর্ষণের দু’আ করেন। আনাস রাঃ) বলেন: তখন রাসুল (সাঃ) তার দুহাত উপরে উঠায়ে দু’আ করলেন: হে আল্লাহ্ আমাদের বৃষ্টি দাও, আল্লাহ্ আমাদের বৃষ্টি দাও,আল্লাহ্ আমাদের বৃষ্টি দাও; আনাস (রাঃ) বলেন: আল্লাহ্র কসম! আমরা আকাশে তখন কোন মেঘমালা দেখিনি।এমনকি খণ্ড খণ্ড মেঘও ছিলোনা। আমাদের থেকে সিলা পাহাড় পর্যন্ত কোন কিছুই ছিলো না। তিনি বলেন: ইত্যবসরে আমাদের পিছনের দিকে ধঁনুকের আকৃতির মেঘমালা দেখা গেলো। যখন আসমানের ওপর মেঘগুলি চলে গিয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে যেয়ে বৃষ্টি বর্ষণ হতে লাগলো। ছয়দিন পর্যন্ত আমরা সূর্য দেখতে পায়নি। পরবর্তি শুক্রবারে রাসূল (সাঃ) খুতবা দেয়া অবস্থায় এক লোক এসে মুখোমুখি দাড়ায়ে বলল: হে আল্লাহ্র রাসূল! আমাদের মালামাল বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা ঘাট ভেঙে চুরে যাচ্ছে। আল্লাহ্র কাছে দু’আ করেন যেন বৃষ্টি থামায়ে দেয়। আনাস (রাঃ) বলেন: তখন রাসূল (সাঃ) দুহাত উপরের দিকে উঠিয়ে বলতে লাগলেন: হে আল্লাহ্! আমাদের আশেপাশে এবং আমাদের উপর বৃষ্টি দিওনা। হে আল্লাহ্ ! পাহাড়-পর্বত, টিলা উপত্যাকা, নার্সারির দিকে বৃষ্টি দাও। এর পরপরই বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল। আমরা পরক্ষণে রোদ্রের ভিতর বের হলাম। তখন শরিক নামে লোক আনাসের কাছে জিজ্ঞেস করলেন: রাসূলের নিকট প্রথম ও দ্বিতীয় দিন কি একই লোক দু’আ চেয়েছিল? উত্তর দিল: আমি জানিনা) [বুখারী:১০১৩, মুসলিম:৮৯৭]
বিশুদ্ধ গ্রন্থ বুখারী ও মুসলিম-এ উল্লেখ আছে: নাবী (সাঃ) যখন ঘোষণা দিলেন তার উম্মতের মধ্যে কিয়ামতের দিন সত্তর হাজার এমন লোকের দল দেখা যাবে যারা হিসাব নিকাশ ও শাস্তি ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে।– তাদের পরিচয় দিতে গিয়ে (রাঃ) বলেন-: “তারা হলো যারা ঝাড়-ফুঁ করতে বলেনা, ছ্যাক লাগায় না, কোনো কিছু থেকে কুলক্ষণ মনে নেইনা এবং তাদের প্রতিপালকের উপর একান্ত ভরসা রাখে” এ কথা শুনে উক্কাশা ইবনে মুহছেন (রাঃ) আবেদন জানালেন: হে আল্লাহ্র রাসুল! আপনি আমার জন্য আল্লাহ্র নিকট দু’আ করেন যেন আমি তাদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়। তিনি বললেন: “তুমি তাদের মধ্যে শামিল”[বুখারী:৫৭০৫, মুসলিম:২১৮] এ প্রসংঙ্গে নাবী (সাঃ) ওয়ায়েস কারণী (রঃ) এর কথা স্মরণ করলেন এবং বললেন: “তোমরা তাকে বলো, সে তোমাদের জন্যে আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে” এ জিবিত লোকের নিকট দু’আ যাওয়া বৈধ ওয়াসিলার অন্তর্ভুক্ত। তবে তার মৃত্যুর পরে জায়েজ নেই; কেননা তার কোন কাজ করার ক্ষমতা নেই।
২- যে সব ‘ওয়াসিলা’ নিষিদ্ধঃ-
যেটাকে শরিয়তে ওয়সিলাহ হিসেবে গ্রহণ করার স্বকৃতি দেয়নি সেটাই মুলতঃ নিষেধ। ইহা অনেক প্রকার। তার একটি অন্যটি থেকে মারাত্মক। উদাহরণ স্বরুপ কয়েটি দেয়া হলো।
ক- মৃত্য ও অনুপোস্থীত লোকের দু’আর ওয়াসিলা করে আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করা এবং তাদের মাধ্যমে বিপদ থেকে উদ্ধারের সাহায্য চাওয়া এবং তাদের নিকট নিজের প্রয়োজন মিটানো ও সমস্যা দুর করার জন্য দুআ প্রার্থনা করা ইত্যাদি। ইহা একেবারেই শির্ক এবং মুসলিম মিল্লাত থেকে বহিস্কার করে দেয়।
খ- কবর ও মাজারের কাছে ইবাদত বন্দেগির পরে আল্লাহ্র নিকট দু’আ করা ও প্রার্থনা করা এবং কবরের উপর ঘর বানানো,বাতি জ্বালানো এবং পর্দা দেয়া ইত্যাদি। এসব কাজ ছোট শির্কের অন্তর্ভুক্ত। তাওহীদের পরিপূর্ণতা নষ্ট করে। এবং বড় শির্কে লিপ্ত হওয়ার সূচনা বটে।
গ- আম্বীয়া-সতলোক এবং আল্লাহ্র নিকট তাদের মান -মর্যাদার ওয়াসিলা করে আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করা। ইহা নিঃসন্দেহে হারাম। বরং ইহা কুসংস্কার; কেননা ইহা এমন এক মিনতি করা যার পক্ষে শরিয়তের কোন প্রমান নেই এবং রাসূল (সাঃ) এ মিনতির অনুমতি দেননি। আল্লাহ্ বলেন:
অর্থ, “ আল্লহ্ কি এর অনুমতি তোমাদের দিয়েছে”[সুরাহ: ইউনুস:৫৯] যেহেতু আল্লাহ্র নিকট নাবী ও সতলোকদের মান ও ভাবমূর্তি আছে। সে ভাবমূর্তি দ্বারা নিজেরা উপকৃত হবে।যেমন আল্লাহ্ বলেন:
অর্থ, “মানুষের জন্যে একমাত্র তাহায় রয়েছে যতটুকু সে করে” [সূরাহ্: নাজ্ম:৩৯] এজন্যে নাবী ও সতলোকদের ওয়াসিলা ধরে দুয়া করার বিষয়টি নাবী ও সাহাবীদের আমলে প্রসিদ্ধ ছিলো না। একাধিক আলেম থেকে ইহা হারাম হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য বিভিন্ন গ্রন্থ প্রমানিত আছে। যেমন: ইমাম আবু হানিফা (রঃ) বলেন: দু’আ ভাষা এমন হওয়া মাকরুহ : (হে আল্লাহ্!! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি অমকের হকের মাধ্যমে, অথবা তোমার অমক আওলিয়া বা রাসূলের হকের মাধ্যমে অথবা ‘কাবাঘর’ ও ‘মাশআরুল হারামের’ হক্বের মাধ্যমে দু’আ করছি ইত্যাদি)
বিষয়: বিবিধ
১৭০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন