করনিয় সাথে কিছু বর্জনিয়

লিখেছেন লিখেছেন আবু হাফসাহ ২০ মার্চ, ২০১৩, ০৩:০১:২২ দুপুর

ইসলামের প্রথম দিকে কবর যিয়ারত করা যায়েয ছিলনা;কেননা সবেমাত্র মুসলানগণ বরবরতা থেকে বের হয়ে এলো।তাওহীদের সীমানা ও এর সার্বিক দিকগুলি রক্ষার অভ্যাস গড়ে তোলাই এইমুহুর্তে একমাত্র মূল দায়িত্ব বলে রাসূল (সাঃ) মনে করেছিলেন। তাই তিনি অনায়েষে অনুধাবণ করতে পারিলেন যে, এ লোকগুলি ইতিপূর্বে কবরকে কেন্দ্র করে মুশরিক হয়েছিলো। এইমাত্র এত্থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামে দিক্ষীত হয়েছে। এর পরপরই যদি কবর যিয়ারত অনুমতি থাকে তাহলে হিত বিপরিত হতে পারে। সেহেতু যখন তাদের হৃদয়ে ইমান সুন্দর ভাবে গঠন হয়ে গেল। যখন মানব সমাজে ইমানের ভাবমূর্তি বেড়ে গেলো এবং তাদের হৃদয়ে ঈমান গেড়ে বসলো, এবং যখন তাওহীদের প্রমাণাদি মুসলমানদের কাছে পরিস্কার হয়ে গেলো, আবার পূনরায় কখনও শির্‌কে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দুরিভূত হয়ে গেলো তখন কবর জিয়ারতের লক্ষবলি নির্ধারণ ও উদ্দেশ্যগুলি স্পষ্ট করে উল্লেখপূর্বক এর শরয়ী অনুমদন জারি করা হলো। এ মর্মে বুরাইদা ইবনুল হুসায়িব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস: রাসূল (সাঃ) বলেছেন,“ আমি তোমাদের করব যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,এখন তোমরা যিয়ারত করতে পারবে ”[মুসলিম:৯৭৭]। অনুরুপ হযরত আবুহুরায়রা (রাঃ) বলেন,‘রাসূল (সাঃ) বলেন,“ তোমরা কবর যিয়ারত কর;কেননা ইহা মৃত্যুকে স্বরণ করে দেয়”[মুসলিম:৯৭৫] এমনি ভাবে আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) বলেন, ‘ আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম এখন তোমরা করতে পারো;কারণ এতে শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু আছে’[মুসনাদে আহমদ:৩/৩৮, মুসতাদরাকুল হাকেম:১/৫৩১] অন্য একটি হাদীসে আনাস ইবনে মালেক হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেন, “ আমি তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম,পুণরায় তার অনুমতি দিচ্ছি;কেননা করব যিয়ারত করলে হৃদয় নরম ও বিগলিত হয় , অশ্রুসিক্ত হয়, পরকালের স্মরণ হয়। এ সময় তোমর নিষিদ্ধ কোন কথা বলোনা”[মুসতাদরাকুল হাকেম:১/৫৩২] অন্যত্রে বুরায়দা (রাঃ) হতে এরশাদ হয়েছে, তিনি বলেন: “রাসূল (সাঃ) সাহাবাদের শিক্ষা দিয়েছেন।যখন তারা কবর যিয়ারত করতে বের হয় তখন এ দু’আটি পড়বে,

উচ্চারণ, (আস্‌সালামু আলাইকুম –ইয়া আহ্‌লাদ দিয়ারি মিনাল মু’মিনীন ওয়াল মুসলীমিন! ওয়া ইন্না ইনশা-আল্লাহু বিকুম লালাহিকুন। আস-আলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আ্‌ফিয়াহ)

অর্থ, “ হে মু’মিন ও মুসলমান কবরবাসীরা! তোমাদের উপর শান্তির ধারা প্রবাহিত হোক , তোমাদের জন্যে আমরা সে দো’আ করি। আমরা –ইনশাআল্লাহ- তোমাদের সাথে মিলিত হবো। আল্লাহ্‌র দরবারে আমাদের ও তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করছি”[মুসলিম:৯৭৫]

উপরে উল্লেখ কৃত হাদীসসমুহ ও আরো অন্যান্য উদ্ধৃতির আলোকে প্রমানিত হয় যে, নিষেধের পরে কবরযিয়ারতের অনুমোদন দেওয়ার পিছনে মহান দুটি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আছেঃ তা নিম্নরুপ,

১- পরকাল,মৃত্যু ও অনিবার্যবশত দুনিয়া ত্যাগের কথা স্মরণ করতঃ ইহগজতের প্রতি বিমূখিতা প্রদর্শন করা এবং কবর বাসী থেকে শিক্ষা নেয়া। এতে মানুষের ঈমানের রুহ সতেজ হবে, অন্তরে ইয়াক্বিন বা দৃঢ়প্রত্যায় সৃষ্টি হবে , সর্বপরি আল্লাহ্‌র সহিত সম্পর্ক বৃদ্ধি হতে থাকবে। আর তাঁর থেকে সকল উদাসিনতা ও বিমুখিতা চলে যাবে।

২- দু’আ করে মৃত্যু ব্যক্তির প্রতি ইহসান করা হয়। তাদের উপর আল্লাহ্‌র রহমতের কামনা করা হয়। তাদের আত্মার মাগফিরাত চাওয়া হয় এবং আল্লাহ্‌র নিকট তাদের জন্যে ক্ষমা চাওয়া হয়।

হাদীসের আলোকে কবর যিয়ারতে শুধু এদুটি উপকারের কথা পাওয়া যায়। যারা এছাড়া আরো অন্য কিছু উল্লেখ করে তাদের নিকট তাদের স্বপক্ষে দালিলিক প্রমান চাওয়া হবে।তবে বিপরিত পাওয়ার আশা করা যায়না।

এদিকে তাওহীদ ও তার পারিপার্শ্বিক জিনিষগুলি সংরক্ষণের প্রতি লক্ষ্য রেখে কবর ও এর যিয়ারত সংক্রান্ত কয়েকটি কাজের উপর নিষেধ এসেছে হাদীস শরীফে।প্রত্যেক মুসলমানের সেগুলি জানা একান্ত অপরিহার্য।যাতে বাতেল থেকে নিরাপদ দুরুত্বে অবস্থান করে এবং গোমরাহী থেকে বেঁচে থাকে। নিষিদ্ধবলির মধ্যে যেমন:

১- কবর যিয়ারতের সময় অন্যায় কথাবার্তা বলা নিষেধঃ

রাসূলের (সাঃ)-র বাণী,‘ অন্যায় কোনো কথা নাবলা’। ‘অন্যায় কথা না বলার’ অর্থ কি? এ দ্বারা বুঝানো হয়েছে শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ সকল কথা ও কাজকে। এরমধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ আল্লাহ্‌র সহিত শির্‌ক করা।এর ধরণ প্রকৃতি বিভিন্ন হতে পারে;যেমন, কবর বাসীর কাছে দু’আ্ চাওয়া। আল্লাহ্‌ ব্যাতীত কবরবাসীর কাছে কিছুর প্রার্থনা করা, বিপদমুক্তির জন্যে সাহায্য চাওয়া, তাদের কাছে মদদ ও সুস্বাস্থ্য চা্‌ওয়া। এর সবগুলিই সরসরি ও স্পষ্ট শির্‌ক। একাধিক হাদীসে এসব নিষেধ ও পরিহার করতে বলা হয়েছে। অভিশাপ দেয়া হয়েছে।সহিহ্‌ মুসলিম শরিফে জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ্ বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে মৃত্যুর পাঁচদিন পুর্বে বলতে শুনেছি “খবরদার! তোমাদের পূর্বকার লোকেরা তাদের নাবী এবং সতলোকদের ক্ববরকে সিজদার স্থান বানাতো। তোমরা সাবধান! তোমরা ক্ববরকে মাসজিদ বানায়োনা। এত্থেকে তোমাদের নিষেধ করছি”[মুসলিম:৫৩২] সুতরাং মৃত্যু ব্যক্তির কাছে দু’আ করা এবং তাদের নিকট প্রয়োজন মিটানোর প্রার্থনা করা এবং ইবাদতের কিয়দাংশ মৃত্যু ব্যক্তির জন্যে ব্যায় করা মহাপাপ বড় শির্‌ক। ক্ববরের কাছে অবস্থান করা ও এর নিকটে দু’আ কবুল হওয়ার কথা মনে করা এবং যেসব মাসজিদের ভিতরে কবর স্থাপিত সেখানে নামাজ আদায় করা জঘন্যতম কুসংস্কার। আয়েশা (রাঃ) থেকে বুখারি ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত: রাসূল (সাঃ) মৃত্যুর অন্তিমকালে বলেন, “ইয়াহুদী ও নাসারাদের উপর আল্লাহ্‌ অভিশাপ তারা তাদের নাবীদের ক্ববরকে মাসজিদ রুপে গ্রহন করেছে”[বুখারী:১৩৩০, মুসলিম:৫৩১]

২- ক্ববরের নিকট কোরবাণী ও যবেহ্‌ করা নিষেধঃ

এ কোরবাণী ও যবেহ্‌ যদি ক্ববরবাসির নৈকট্য লাভের জন্যে হয়।যাতে করে তারা মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে দেয়। তাহলে ইহা বড় শীর্‌ক। এছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকলে খতরনাক বেদআত বা কুসংস্কার হবে। শির্‌কে লিপ্ত হওয়া তিব্র আশংঙ্কাদায়ক মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। রাসূল (সাঃ) বলেন, “ ইসলামে কোনো ‘আকর’ বা গরু-ছাগল বলিদেয়া নেই”[আবুদাউদ:৩২২২] আব্দুর রাজ্জাক বলেন: জাহেলীযুগের লোকেরা কবরের নিকট গরু অথবা ছাগল কাটত। এটিকে আরবিতে ‘আকর’ বলে।

৩.৪.৫.৬.৭ নম্বর – ক্ববরথেকে নির্গত মাটির চেয়ে বেশি উচু করা, ইট-পাথর গাঁথা, তাঁর উপর লেখা, ভিত্তপ্রস্থ তৈরি করা এবং ক্ববরের উপর বসা সবই নিষেধ।

এগুলি বেদআত বা কুসংস্কার। এসব কুকৃতির মাধ্যমে ইয়াহুদী-খৃষ্টানরা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং এসবগুলি শির্‌কে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যম। হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, “রাসূল (সাঃ) ক্ববরকে ইট-সুঁরকি পাথর ইত্যাদী দিয়ে মেরামত করতে নিষেধ করেছেন। বসতে মানা করেছেন। তার উপর কিছু নির্মান করা, উহা উঁচু করা অথবা তার উপর কিছু লিখা থেকে নিষেধ করেছেন” [মুসলিম:৯৭০, আবুদাউদ:৩২২৫, মুসতাদরাকুল হাকেম:১/৫২৫]

৮- ক্ববরের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করা ও এর কাছে বসা নিষেধ:

আবুমারছাদ গানায়ী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে,“ তোমরা ক্বররের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করনা এবং তার উপর বসনা”[মুসলিম:৯৭২] আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল (সাঃ) বলেছেন“দুনিয়ার যমিন সিজ্‌দা করার উপযুক্ত স্থান তবে ক্ববরস্থান ও বাথরুম”[ আবুদাউদ:৪৯২, তিরমিযী:৩১৭]

৯- ক্ববরের উপর মাসজিদ বা কিছু নির্মান করা নিষেধ:

এর উপর মাসজিদ বানানো বেদআত।ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের ভ্রষ্টকর্ম। পূর্বে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর হাদীস উল্লেখ হয়েছে। তিনি বলেন, “ ইহুদী-খৃষ্টানদের উপর আল্লাহ্‌র অভিশাপ।তারা ক্ববর কে মাসজিদ বানায়েছে”

১০- কবর কেন্দ্রীক উত্সব যাপনের স্থান ঠিক করা নিষেধঃ

ক্ববরকে খুশী বা ঈদ উত্সব পালনের স্থান হিসেবে ঠিক করা জঘন্যতম কুসংস্কার।এতে অপরিসীম ক্ষতি থাকার কারণে হাদীসে জোরালো ভাবে নিষেধ এসেছে। হযরত আবু-হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “ তোমরা আমার কবর কে ‘ঈদ’ হিসেবে গ্রহণ করনা।তোমাদের বাড়িকে ক্ববর বানায়ো না। যেকোন স্থান থেকে আ্মার উপর সালাম পেশ কর, তোমাদের সালাম আমার নিকট পৌঁছানো হয়”[আবু-দাউদ:২০৪২, মুসনাদে আহমদ:২/৩৬৭]

১১- ক্ববর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা নিষেধ:

ক্ববর যিয়ারতের জন্যে বাড়ি থেকে সফর করে যাওয়া শরিয়তের নিষিদ্ধ কাজ। আবুহুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হাদীস, রাসূল (সাঃ) বলেন: “রসদ-পত্র নিয়ে তিনটি স্থান ব্যতীত অন্য কোথায় সফর করে যাওয়া যায়েজ নেই: মাসজিদুল হারাম, মাসজিদু নাবাভী এবং মাসজিদুল আকসা”[বুখারী:১১৮৯,মুসলিম"১৩৯৭]

বিষয়: বিবিধ

১৫৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File