তোমরা তো রাণী!?
লিখেছেন লিখেছেন আবু হাফসাহ ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:১৭:২৭ রাত
মানুষ আসলে পাখির মত,জিবনের অনিবার্জ প্রোয়োজনে কখন কোথাই পাড়ি জমায় সে নিজেও আগে ভাগে কল্পনা করেনা। তেমনি আমার ওলেখা পড়ার সুবাদে দেশপাড়ি দেয়ার সুযোগ হয়েছে।কিন্তু এমন এক ভুমিতে এসেছি, যেখানে মানুষের শোডাউনের মত বিশ্বের ১৬০টি রাষ্ট্রের মেধাবি স্কলার্সদের মিলনমেলা, বিশ্বখ্যাত মহবিদ্যাপটে।তাদের সাথে ক্লাসরুমে একত্রিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাসফরের আয়োজনে্ও পিছিয়ে থাকতাম না।একদা শিক্ষাসফরে ডক্টরদের নির্দেশে লোহিত সাগরের তীরে মনরম ও আনন্দঘন পরিবেশে ভাববিনিময় চলছিল।ইত্যবছরে আচমকা এ টিচার এসে বলল, তোমরা এখানে ১৫০ দেশের ছেলেরা আছ, আন্তর্জাতিক মহা সম্মিলণের মত।তোমাদের প্রত্যেকের কাছে কিছূ শুনতে চায়।শুরু হয়ে গেলপ্রত্যেকের পালাক্রমে মজাদার শিক্ষাপ্রদ ঘটনার অবতারণা পালা। আজ প্রিয় টুডে বল্গগারদের কাছে তার একটি উপস্থিত করতে চায়। তার একটি নিম্নরুপঃ
আমাদের প্রতিবেশী এক বৃদ্ধ নারী ছিল, যার বয়স প্রায় সত্তরের মত হবে। সে যখন ঘর থেকে বের হতো ও ঘরে প্রবেশ করত, তখন তাকে দেখে আমার খুব দয়া হতো। কারণ, তার সঙ্গে তার পরিবার বা বংশের কেউ ছিল না, যে তাকে সাহায্য করবে। সে নিজেই নিজের প্রয়োজনের সামগ্রী, যেমন খাওয়া-দাওয়া ও কাপড় চোপড় কেনাকাটা করত। তার ঘরের অবস্থা ছিল ভুতরে পরিবেশ, কখনো কেউ তার দরজা নক করতে আসতো না। ইসলাম যেহেতু প্রতিবেশীর কতক অধিকার আমাদের উপর ওয়াজিব করে দিয়েছে, তাই আমি তার সামান্য খেদমত আঞ্জাম দিতে, তার বাড়িতে গেলাম। সে আমাকে দেখে বিস্ময়ে অবাক! অথচ আমি তার বড় কোন প্রয়োজন পুরো করেনি। কারণ, সে এমন এক সমাজে বাস করে, যেখানে ভাল কাজ বলতে কিছুই নেই। সে সমাজ মহব্বত, পরস্পর কল্যাণ কামনা ও প্রতিবেশীর হক বলতে কিছু জানে না। বেশীর চেয়ে বেশী সকাল-সন্ধ্যার অভিভাদন।
সে দ্বিতীয় দিন আমার বাচ্চাদের জন্য কিছু মিষ্টিদ্রব্য ও শুভেচ্ছা স্বরূপ একটি কার্ড নিয়ে আমাদের বাড়িতে উপস্থিত হল। কার্ডে আগের দিনে আমাদের পেশ করা উপহারের জন্য কৃতজ্ঞতার বাণী লিখা ছিল। আমি তাকে আমার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য উদ্বুদ্ধ করলাম। সে সময়ে সময়ে আমার বাড়িতে যাওয়া-আসা করত। সে আমার বাড়িতে যাওয়া-আসার মাধ্যমে জানতে পারল যে, আমাদের দেশে পুরুষরাই নারীদের জিম্মাদার। পুরুষরা নারীদের জন্য কাজ করে, পোশাক-আশাক কেনাকাটাসহ আরো অনেক দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়। আমার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় নারীদের ব্যাপারে মুসলমানদের সম্মান বোধ সম্পর্কেও জানতে পারে সে। বিশেষ করে, নারী যখন বৃদ্ধ হয়। তার সন্তান ও নাতী-পতিরা তার খেদমত ও আরামের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। আমাদের সমাজে যে তার পিতা-মাতার খেদমত পরিহার করে, সে পরিত্যাক্ত ও নিন্দিত বলে বিবেচিত হয়।
বৃদ্ধ এ মহিলা মুসলিম পরিবারের দৃশ্য অবলোকন করতেছিল। কিভাবে পিতা তার সন্তানের সঙ্গে ব্যবহার করে, সন্তানরা কিভাবে পিতাকে ঘরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে ঘিরে ধরে। নারী কিভাবে তার স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়। এ অসহায় নারী তাদের সমাজের অবস্থা ও আমাদের সমাজের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করতেছিল। সে তার সন্তানদের স্মরণ করত, কিন্তু কে কোথায় আছে কিছুই সে জানতো না। কেউ তাকে দেখতে আসতো না। হয়তো এক সময় সে মারা যাবে, তাকে দাফন করা হবে, কিন্তু তারা এ বৃদ্ধা সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবে না। তাদের কাছে এ বিষয়টির কোনও গুরুত্ব নেই। আর বাড়িটি হচ্ছে তার সারা জীবনের উপার্জন ও কষ্টের ফসল। সে আমার স্ত্রীর কাছে পাশ্চাত্যের নারীদের কর্ম ক্ষেত্রে ও হাটবাজারে কেনাকাটার দুঃখ-দুর্দশার বর্ণনা দিত। এ বলেই সে তার কথা শেষ করত : তোমাদের দেশে নারীরা তো রানী। আমার যদি এ বার্ধক্য না হতো, তবে তোমার স্বামীর মত একজন স্বামী গ্রহণ করতাম ও তোমাদের মত জীবন-যাপন করতাম।
পাশ্চাত্যের দেশসমূহে শিক্ষা কিংবা কর্ম উপলক্ষ্যে বসবাসকারী আমাদের দেশের লোকেরা অহরহ এ দৃশ্য দেখছে। তবুও আমাদের দেশের এক শ্রেণী তাদের অনুকরণ ও আনুগত্য করতে লজ্জাবোধ করছে না। আমাদের দেশের অনেক পত্র-পত্রিকা পাশ্চাত্যের নারীদের পোশাক, চালচলন ও তাদের কর্ম ক্ষেত্রের প্রশংসা করে যাচ্ছে। সে সমাজের নারীদের স্বাধীনতা আমাদের দেশে আমদানী করার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে।
হে আল্লাহ, তুমি সকল প্রশংসার মালিক। তুমিই আমাদেরকে ইসলামের নেয়ামত দান করেছ। আল্লাহ তাআলা বলেন :
তারা মনে করে, তারা ইসলাম গ্রহন করে তোমাকে ধন্য করেছে। তুমি বল : তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করেছ মনে করো না। বরং আল্লাহই তোমাদেরকে ঈমানের দিকে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন। তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। (হুজুরাত : ১৭)
বিষয়: বিবিধ
১৪৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন