অপেক্ষা ......... সায়েম আহমেদ
লিখেছেন লিখেছেন জল-জোছনা ০৪ জুলাই, ২০১৪, ১২:০০:১২ রাত
খুব সকাল। দুই পায়ের হাঁটুতে দুটি হাত পরস্পর আলিঙ্গন করে তার মধ্যে মুখটা ঢেকে বিছানার উপর বসে আছে তানিসা। বাইরে বিরামহীন বৃষ্টি ঝরছে অনেক্ষণ ধরে, তানিসার বিছানার সাথেই তার দক্ষিণের খুলা জানালাটা। জানালার দিকে কান পেতে বৃষ্টি ঝরার শব্দ শোনছে সে, হঠাৎ কিছু ঠান্ডা হাওয়ার সাথে একফালি বৃষ্টি কণা তার পিটে এসে পড়ে সেখানে বিন্দু বিন্দু জলেরা জমাট বেঁধেছে। তানিসার মাথার নিচেও বিছানায় ফোঁটা ফোঁটা জল টপ টপ করে ঝরছে; তার গা বেয়ে বৃষ্টির জলগুলো নামার প্রস্থ না থাকলেও চোখ বেয়ে ঠিকই ঝরে যাচ্ছে বৃষ্টির লক্ষ ফোঁটার সাথে মিলিতো হয়ে আরো কয়েক ফোঁটা অস্রু।
তানিসা তার ভেতরের আর্তনাদের সাথে বৃষ্টির রুম ঝুম শব্দের কোন তফাৎ খুঁজে পেলনা! অদ্ভুত সঙ্গ দিচ্ছে বৃষ্টি তার সাথে, ভেতর বাহির যেন কষ্টের হু হু চিৎকার, ব্যাকুলতার ঢেউ আর ব্যাথার মিছিল বইছে। কষ্টের সময় একমাত্র বৃষ্টি ছাড়া এমন সঙ্গ আর কেওকি দিতে পারবে? নাহ পারবে না।
একটি মমতাভরা হাত হঠাৎ তানিসার পিঠে আলতো করে রাখলো কেও। তানিসা চোখ না ফিরিয়েই বলল, কে! মা?
সাজেদা বেগম খুব নরম সুরে বললেন, হুম। ১০টা বাজে তুইকি আজও অফিসে যাবিনা?
না মা, আমি কিছুদিন এভাবে একটু একা থাকতে চাই। বসকে বলে রেখেছি অফিসে ঝামেলাও কম।
এভাবে আর কতোরে মা? যেটা ঘটে গেছে সেটাকে নিয়ে এতো ভেঙ্গে পরে কি লাভ? এর চেয়ে সামনের দিন গুলোকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবা আরো বেশী ভালনা? তানিসাকে উদ্দেশ্য করে বললেন সাজেদা বেগম।
প্লিজ মা অন্তত তুমি আমাকে বুঝার চেষ্টা করো, তুমি ছাড়াতো আমার আর কেওই নেই। সাজেদা বেগমকে জড়িয়ে দরে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় কষ্টের বাধ ভেঙ্গে বলল তানিসা।
সাজেদা বেগম তানিসার মাথায় ফিতে কেটে নিজের ঠুট দুটি পরস্পর চেপে ধরে কষ্ট আর অস্রুকে বাধ দিলেন। শেষে আলতো করে বললেন, যে আর কক্ষণো ফিরবেনা তার জন্যে মিছেমিছি এতো অপেক্ষা করে কি লাভ!
ফিরবে মা সে ফিরবে আর যদি না ফিরে তাহলে আমি এভাবে অপেক্ষা করে কাটিয়ে দিতে চাই আমার পুরো জীবন এছাড়া আমার বেঁচে থাকার আর কোন পথ অবশিষ্ট্য নেই। শুধু মাত্র মৃত্যু ছাড়া।
এভাবে বলিসনারে মা, অনেক ভয় করে জানিস? তুই অনেক স্বার্থপর হয়ে গেছিস আমার জন্যে তোর আর এখন কোন চিন্তাই নেই।
চিন্তা আছে মা, তুমি ভয় পেয়ো না আমি এতো তাড়াতাড়ি মরবোনা, এ কথা বলেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তানিসা তার মাকে। সাজেদা বেগমও খুব শক্ত করে ধরলেন নিজের মেয়েকে বুকের মধ্যে চেপে।
আজ কয়েকদিন হল তানিসা অফিসে যাচ্ছেনা বাইরে বেরুচ্ছেনা একা একা এভাবে একলা ঘরে কাটাচ্ছে দিনরাত্রি। নতুন অফিসে সে জয়েন করেছে মাত্র এক বছর হলো আর এই এক বছরে অনেক সাফল্য অর্জনের সাথে জিবনের শেরা একটি জিনিস হাতের মুঠোয় পেয়েও ধরতে অনেক দেরী করে ফেলেছে যার খেসারত তাকে এখন গুণতে হচ্ছে প্রতিটি পদে পদে।
অফিসে জয়েন করার প্রথম দিনেই বাস স্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় অনেক বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তানিসা। বাস স্ট্যান্ডে একা দাঁড়িয়ে চুইঙ্গাম চাবাতে চাবাতে তানিশা হঠাৎ বিরক্তি প্রকাশ করে হাত ঝাকিয়ে বলল; ধুর আর কতক্ষণ! তানিশা এমনিতেই অনেক সুন্দর একটা মেয়ে আর সে রেগে গেলে মনে হয় যেন পূর্ণ একটি চাঁদ পুরো আকাশকে আলোকিত করে দিল কিন্তু আজকে রেগে যাওয়ার পর তানিশাকে বেশম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে কারনটা বোধহয় চুইঙ্গাম চাবানোর ফলে।
ঠিক তখনই একটি ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে বাস স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ালো তানিসার পাশে। তারা প্রথমে একে অন্যেকে খেয়াল করেনি হঠাৎ তানিসা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে চোখ দুটি বড় বড় করে বলল, আরে আপনি? আপনি তাহসান না? মনে আছে সেইদিন ইন্টারভিউর দিন আপনার সাথে দেখা হয়েছিল, আপনাকে ভুল বুঝে আমি আপনার সাথে ঝগরা করেছিলাম আর সেই আপনিই আমাকে কত্ত বড় একটা সাহায্য করেছিলেন। ইন্টারভিউ শেষে আমি আপনাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। আপনার চাকরিটা হয়েছে বুঝি? আমারও হয়েগেছে বেশ হয়েছে আপনি......
- আরে আরে থামেন থামেন এভাবে এত্ত ননস্টপ প্রশ্ন করলেতো দুজনে এখানে একসাথে মারা যাব।
- তানিসা কিছুটা লজ্জা পেয়ে চোখ নিচে করে বলল, স্যরি।
- আরে না না স্যরি বলছেন কেন? আসলে আমি আপনাকে প্রথমে খেয়াল করিনি তানাহলে আমিই প্রথম আপনাকে হাই বলতাম। অবশ্যই মনে আছে আপনাকে। কেমন আছেন?
- আমি ভাল, আপনি?
- খুব ভাল আছি। আপনাকে দেখে এখন আরো একটু বেশীই ভাল লাগছে, তারচেয়েও বেশী ভাল লাগছে আপনার একই অফিসে চাকরিটা হয়েছে জেনে।
- তানিসা ছোট্ট বাচ্চাদের মতো ডানেবায়ে দুলে দুটো হাত এক রেখে বলল, আমারও।
বাস এলে দুজনেই ওঠে পড়ে। সেই থেকে তাহসানের সাথে তানিসার সম্পর্কের পথ নতুন ধার নেয়। বন্ধুতার সম্পর্কে আপনি থেকে তুমিতেও অল্প দিনে গড়ায় তাদের বাক্যালাপ। তারা একে অপরের জন্যে সবচাইতে স্পেসাল কেও হয়ে ওঠে সুখে ফুর্তিতে কাটছে দিন, হাতে হাত রেখে অল্পদিনেই তারা গড়েছে অনেক সাফল্য সুখে-দুঃখে আছে পরস্পর পরস্পরের পাশে। হঠাৎ একদিন তাহসান তানিসাকে তাদের প্রিয় পুকুরপারের আড্ডার যায়গায় জরুরি তলব করে।
জনাব, হঠাৎ এতো জরুরি তলব? কোন সমস্যা? তানিসা বলল।
- না তানি সমস্যা না, একটা বিপদে পড়ে গেছি বিশাল বিপদ।
- কি হয়েছে তাহসান?
- ঈদানীং আমার ঘুমটুম একদম হারাম হয়ে গেছে, শান্তিতে নেই মনটা খুব বিপদে পড়েছি।
- কেন কোন অসূখ হয়েছে? ডাক্তার দেখিয়েছ?
- আরে নাহ এটা ডাক্তারের সমস্যা না, এটা প্রেমের সমস্যা।
- তুমি প্রেমে পড়েছ? ওয়াও ফাইনালি তুমি কারো প্রেমে পড়লে! যে তাহসান প্রেমের নাম মুখে আনতেও অবহেলা করতো একসময়, সে আজ প্রেমে পড়েছে। বেশতো বেশ, তা সেই মেয়েটি কে?
- খুব সহজ ভাষায় কোন দ্ধিধা না নিয়েই বলছি তানিসা, আমি তুমাকে ভালবাসি।
- তানিসার চেহারায় অদ্ভুত কালো ছাপ পরলো, তাহসান ফাজলামো নয়। কে সেই মেয়েটা?
- বিশ্বাস করো তানিসা সেই মেয়েটি তুমি, আর আমি জানি তুমিও আমায় খুব ভালবাস, আমাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক আসলে এখন আর স্থির নেই এটা! তা ছাড়িয়ে গেছে, আমরা একেওন্যের জন্যে যতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছি সেটা আসলে আর কিছুই নয় প্রেম। আমাদের অজান্তেই আমরা একেঅন্যের প্রেমে পড়ে গেছি।
- অসম্ভব তাহসান এটা হতে পারেনা, আমরা একে অন্যের সবচাইতে প্রিয় বন্ধু মাত্র আর কিছুই না, তুমি এই সম্পর্ককে যে পথে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছ এটা নিছক বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
- তারমানে তুমি বলতে চাইছ তুমি আমাকে ভালবাসনা?
- না তাহসান এটা কি করে সম্ভব?
- কেন সম্ভব নয়? তুমি অবশ্যই আমাকে ভালবাস তানু; কিন্তু সেটা তুমি অনুভব করতে পারছনা।
- তাহসান এ ব্যাপারে আমরা আমাদের কথা এখানেই খতম করে দিলে ভাল হবে, আমি তুমার মতো একজন ভাল বন্ধুকে কক্ষনো হারাতে চাইনা তাহসান।
তাহসান কোন কথা না বলেই সেখান থেকে চলে গেল। তানিসা কোথায় যাচ্ছো জিগ্যেস করলেও কোন সায় দেয়নি সে।
পরদিন অফিস থেকে বেরিয়ে আসছে তাহসান, পথের মধ্যে তানিসার সাথে দেখা।
কই যাও? তানিসার প্রশ্নের জবাবে তাহসান বলল, ছুটিতে।
ছুটিতে? হঠাৎ!
কিছুদিন দূরে থাকতে চাই তুমার থেকে, দেখি এই দূরত্বটা তুমাকে মন থেকে মুছার ইরেজার হয়ে কাজ করে কিনা। অনেক কষ্টে ১৫দিনের ছুটি নিয়েছি।
১৫ দিন? চোখ দুটি বড় করে বলল তানিসা। দেখ তাহসান এটা সম্পূর্ণ বোকামী।
বোকা মানুষ বোকামী করলে সেটা কোন অপরাধ না।
তানিসা হেসে হেসে বলল, তাহসান তুমার এই ছ্যাকা ছ্যাকা ভাব আমার কিন্তু একদম ভাল লাগছেনা।
তাহসানও হেসে হেসে জুকারের মতো বলল, তুমি নিজেকে এতো মহাপণ্ডিতনি না ভাবলেই ভাল। আমাকে ছ্যাকা ছ্যাকা লাগছে লাগুক পারলে বুড়িগঙ্গায় যাওয়ার সময় একটা ঝাপ মেরে আত্মাহুতি দেব কোন সমসস্যা?
তানিসা এবার খুব হাসল, তাহসান রাগ করে দ্রুত তার স্থান ত্যাগ করল।
দুদিন যেতে না যেতেই তানিসা খুব বিষণ্ণতা অনুভব করছে, নিজেকে খুব একা লাগছে তার। এমনটা এর আগে কখনো হয়নি; তাহলে হঠাৎ এমনটা হওয়ার কারণ কি। বারবার সুধু মনে পড়ছে তাহসানকে, তাই সে ফোন দেয়ার পর আরো বেশী হতাস হচ্ছে তাহসানের ফোনের সুইচ অফ পেয়ে। খাবার খেতেও ভাল লাগছেনা তানিসার, এই কয়েক রাত ঠিকমতো ঘুম না হওয়ায় চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। ব্যাপারটা চোখে পড়ে সাজেদা বেগমের তানিসাকে জিগ্যেস করতেই সে তার সব কিছু খুলে বলে। একসময় তানিসা তার মাকে প্রশ্ন করে, মা! তবেকি তাহসান সঠিক ছিলো আমিকি সত্যিই তাকে ভালবাসি?
- দেখ মা এটা একান্ত তোর নিজের সাথে নিজের বোঝাপরা আর এটা অনেক কঠিনও বটে। এমন একটি সিদ্ধান্ত কারো কথায় না নিয়ে নিজের মনকে শোন। আর আমি তোকে এই টিপ্স ছাড়া আর কিছুই মতামত দিতে চাইনা।
- হুম মা এই কয়দিনে আমি আমার মনকে পুরোপুরি শোনতে পেরেছি, আমি তাহসানকেই ভালবাসি।
- সাজেদা বেগম এবার হাসলেন, তাহলে এতো চিন্তা কিসের? মাত্রতো কয়দিন তাহসান ফেরার পর সব ঠিকটাক করে নিস। এবার চল খেতে যাবি।
- না মা, আমার খিদে নেই। পরে খাব। আচ্ছা মা; তাহসান ফোন অফ করে রাখলো কেন?
- রাগ করে হয়তো, তুই ওসব চিন্তা বাদ দে মা। চল খেতে চল আমারও খুব খিদে পেয়েছে।
- চলো.........
১০দিন পেরিয়ে গেছে, সকালে হঠাৎ সাজেদা বেগম চিৎকার দিয়ে ওঠলেন! তানিসা ঝলদি এদিকে আয়, তানিসা...
- তানিসা মায়ের ডাকে দৌড়ে গেল ড্রয়িং রুমে, কী হয়েছে মা?
- সাজেদা বেগম খুব নার্ভাস হয়ে বললেন টিভির নিউজটা দেখ।
- কী নিউজ; বলেই তানিসা টিভির দিকে তাকালো,
বুড়িগঙ্গা নদীতে এক যোবকের লাশ উদ্ধার, লাশ অনেক পুরনো তাই চেহারাটা একদম বিকৃত হয়ে গেছে পরনে সাদা শার্ট আর কালো পেন্ট যে গেটাপ পড়ে তাহসান সেদিন বিদায় নিয়েছিল তানিসার কাছ থেকে হুবুহু সব একই রকম। তানিসা নিউজটি দেখে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো, এ কি করে সম্ভব? তাহসান এতো লুজার হতে পারেনা। এরপর তানিসা প্রায় দুইদিন জ্বরে অজ্ঞান ছিল। এখনো সে মানষিকভাবে বিকারগ্রস্থ।
আজ তানিসার জিবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন হওয়ার মূল কারণ আজ তাহসানের ছুটির শেষ দিন, আজ তার ফেরার দিন ছিল। কিন্তু তা আর সম্ভব না, তানিসাও অপেক্ষা করা বন্ধ করে দিবে তাও অসম্ভব।
সাজেদা বেগম অবাক চিত্তে তাকিয়ে রইলেন তানিসার দিকে, একি? তানিসা তুই আজ সেজেগুজে! কোথাও বের হবি?
- হ্যা মা, বের হবো। এই দিনেরইতো অপেক্ষা ছিল এতোদিন। আজ তাহসান ফিরবেনা মা। ভুলে গেলে?
- সাজেদা বেগমের হাসি ভড়া মুখটা একদম ফ্যাকাসে হয়ে গেল। তানিসা আসি বলে বেরিয়ে গেছে সাজেদা বেগম কোন বাক্যই উচ্চারণ করেননি শুধু দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ তুমি আমার মেয়েকে হেফাজত করো। তাহসানের বদলে তুমি অন্য তাহসান দিয়ে তার জীবনে সুখ ফিরিয়ে দাও।
বাসস্ট্যান্ডের বেঞ্চিতে বসে আছে তানিসা, এতক্ষণে প্রায় ১০টি বাস চলে গেল তানিসা প্রত্যেকটি বাসের যাত্রী নামার সময় জিবনের সকল চাওয়া পাওয়াকে দু চোখ ভরে বাসের দিকে থাকিয়ে তাকে। হ্যাঁ সে নামবে এখন নিশ্চই নামবে পরক্ষণে যখন বাসটি চলে যায় তখন আবার তার মুখটি কালো হয়ে আসে। নাহ এবারেরটায়ও ফিরিলোনা, কে বোঝাবে তাকে ......?
সকাল শেষে সময় বিকেলে গড়ালো গুধুলীর লগনে দিন তার আপন পথে টিকই গড়িয়ে গেল শুধু ফিরিলোনা সে। তানিসার দু চোখ বেয়ে অস্রুর খেলা। দাঁড়িয়ে আপন মনে হাটতে লাগলো সে সেই পথ দিয়ে যে পথের স্মৃতিরা তার চোখে ছায়া হয়ে ভেসে ওঠে, আজ আরো নতুন স্মৃতির সাক্ষী হচ্ছে এ পথ একেকফোটা অস্রুর।
কিছুদূর যাবার পর তানিসার বিষণ্নতা ভরা ঝাপসা কল্পনাকে ভেদ করে হঠাৎ কেও আলতো করে বলে উঠলো, তানু? মুহুর্তেই তানিসা থমকে দাঁড়ায় অনেক দ্বিধা আর ভয় নিয়ে সে ধীরে ধীরে পিছু ফিরল। পিছনে তাকিয়েই তানিসার যেন সারা শরীর বরফের মতো শীতল হয়ে এলো, সারাটা অস্তিত্ব জুড়ে অবাক করা প্রশ্নের খেলা! কে? তাহসান...!
- তাহসান তার দুবাহু দুদিকে ছড়িয়ে নিজের দিকে তাকালো তারপর বলল, আমাকে দেখে এতো অচেনা লাগছে তোমার।
তানিসা তখনো প্রশ্নের জড়তা নিয়ে অবাক চিত্তে তাকিয়ে আছে তাহসানের দিকে। সত্যিই তাকে চিনতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। তাহসান তখন তানিসার আরো কাছে এসে বলল, আরে কী হয়েছে তোমার?
তানিসা এই কয়দিনে ঘটা সব কিছু খুলে বলল তাহসানকে, কেঁদে কেঁদে একাকার।
তাহসান খুব হেসে বলল, বিশ্বাস করো ওই লাশটা আমি ছিলামনা খোদার কসম।
তানিসা এবার কিছুটা হেসে বলল, ফাইজলামো করো।
আরে না বিশ্বাস করো অইটা আমি ছিলামনা।
তানিসা তাহসানের ফাইজালামোতে এবার একদম হেসে ফেলল কিছুটা বিরক্তিও আছে কপাল জুড়ে। তানিসা হঠাৎ তাহসানের কান টেনে বলল, তুমি তুমার মোবাইল বন্ধ রেখেছিলে কেন?
আরে আরে লাগছেতো ছাড়ো, আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালবাস কিন্তু সেটা ফিল করতে পারছোনা তাই এই টেকনিক মাথায় এলো কিছুদিন দূরে সরে থাকলে বাস্তবতা তোমার সামনে এসে ধরা দেবে। আর ঠিক তাই ঘটলো। তানিসা এবার বাচ্চাদের মতো কেঁদে কেঁদে তাহসানের বুকে দুই হাত দিয়ে ঘুষি মারতে লাগলো। তাহসান বলল, আহ কি আরাম দাড়াও দাড়াও বলে তানিসাকে থামিয়ে সে তার হাতের ব্যাগটা মাটিতে রেখে পিঠ পেতে বলল জার্নি করতে করতে গাড়ে খুব ব্যাথা করছে তাই তুমি এক কাজ করো আমার গাড়ে মারো আর মনের সকল জেদ মিটিয়ে নাও একঢিলে দুটি শীকার হয়ে যাবে। তানিসা এবার হাসল এবং তাহসানের পিঠে নিজেকে জড়িয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, কথা দাও আমাকে ফেলে এভাবে আর কখনো দূরে সরে যাবেনা।
- হু হু কক্ষণো না।
- সত্যি বলো
- আরে বাবা সত্যিই যাবোনা এমনকি ঈদের ছুটিতেও না।
দুজনের মুখ জুড়ে হাসি, এই আনন্দের কোন অন্ত নেই কোন সমাপ্তি নেই আছে শুধু মৃত্যু জীবন ঠিকই তার পথ ধরে চলবে বহুদূর মাঝখানে হারিয়ে যাবো আমরা তবো হারাবেনা আমাদের বেঁচে থাকার সকল পদচিহ্ন, আনন্দের হাসির হারানো শব্দ বায়ু হয়ে ভেসে বেরাবে চারপাশ। আমাদের নিস্বাস গুলো নিস্বাস হয়ে বেঁচে থাকবে পৃথিবীর অন্তিম পর্যন্ত। আজ খুব সুখের দিন শেষ বিকেলের রোদ যেন হাসছে চারপাশে আজ আকাশে মেঘ নেই তবো যেন চারপাশে ঝরছে অঝর বৃষ্টি। এভাবেই বেঁচে থাক প্রকৃতি প্রতিদিন, চিরিদিন।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৮২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"অ্যাঁই এখানে...। মাউসে গুতা মাইল্লে আন্নেরে অ্যার কাছে লই যাইবো"।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন