ভাল থেক তুমি----- সায়েম আহমেদ
লিখেছেন লিখেছেন জল-জোছনা ১০ জুন, ২০১৪, ০৪:৩১:০৩ বিকাল
গ্লাসের তলানীতে জমে থাকা লাচ্ছির ফেনাগুলো খুব চিন্তিত মনে পাইপ দিয়ে নাড়াচাড়া করছে নীরব, টেবিলের ওপর পাশে তার মুখোমুখি বসে আছে ফাহমি। ফাহমি আনমনা হয়ে চিপ্সের প্যাকেট থেকে একটা একটা করে চিপ্স খেতে ব্যাস্ত।
- আচ্ছা তোমার মনে কী একটুও দুশ্চিন্তা হচ্ছেনা?
- দুশ্চিন্তা! কীসের?...... ফাহমি মুখে এক পিস চিপ্স নিয়ে খেতে খেতে জবাব দিল।
- দুশ্চিন্তা কীসের মানে! আগামী পরশুদিন তোমার বিয়ে!......
- হ্যাঁ তাইতো! আমিতো তুমাকে কার্ড দিতেই ভুলে গেছি, আসলে তোমার জন্যে একটা কার্ড ব্যাগে করে নিয়ে এসেছি...... এই নাও। খুব সুন্দর তাইনা? এটা আমার ছোট বোন রুমির পছন্দের ওর চয়েস কিন্তু কেও ফেলতে পারেনা।
- ফাহমি? তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছ?
- ফাহমি এবার বেশ কয়েকটা চিপ্স মুখে ভড়ে গাল ফুলিয়ে বলল, তোমার কাছে যেটা ঠাট্টা মনে হচ্ছে ওটা আসলে ঠাট্টা না।
- ফাহমি আমি কিন্তু একদম শেষ হয়ে যাব একদম নিঃস্ব তুমি হয়তো বিয়ে করে খুব সূখি হতে পার কিন্তু আমি তুমাকে ছাড়া তুমার এই হাসিকে ছাড়া একদিনও কল্পনা করতে পারবোনা।
- ফাহমি চিপ্সের খালি প্যাকেটে এবার তার মুখের কিছু অংশ ঢোকিয়ে হা হা হা করে কিছুক্ষণ হেসে প্যাকেটটি নীরবের দিকে এগিয়ে দিল।...... এই নাও।
- নীরব অবাক হয়ে বলল, এটা কী?
- আরে আগে ধরো, একটু সাবধানে মুখ চেপে ধরো।
- নীরব চিপ্সের প্যাকেটটি হাতে নিয়ে একটু বিরক্তির নিশ্বাস ছেড়ে ফাহমির দিকে তাকালো। কী?
- এই প্যাকেটে অনেকগুলা হাসি ভড়ে দিলাম বাড়িতে নিয়ে যাও যখন নিজেকে নিঃস্ব মনে হবে এই প্যাকেট থেকে কিছু হাসি বের করে নিজেকে আবার পূর্ণ করে নিও। ওকে?
- নীরবের চোখ দুটি এবার অশ্রুতে লাল হয়ে গেল, তারমানে তুমার আমার প্রতি আর কোন ইন্টারেস্ট নাই?
- হুমমম! তাহলে চলো পালিয়ে যাই?
- তুমি সিরিয়াস?
- কেন তুমি সিরিয়াস নও?
- না। আসলে আমি এখনো নিজের পায়েই দাঁড়াতে পারিনি তাহলে তোমাকে রাখব কোথায়?
- রাইট, তুমি যদি রাজি হয়ে যেতে তাহলে আমি ঠিক তোমার জবাবটাই তোমাকে দিতাম!
- আমাকে কি আর একটা চান্স দেয়া যায় না?
- নাহ! এই ছেলেটা খুব ভাল ফ্যামিলির এবং তাদের অবস্থাও ভাল। আমেরিকায় পড়ালেখা করা সু-শিক্ষত ছেলে। এমন ছেলেকে কি আর বাদ দেয়া যায়!
- ফাহমি! তুমি এতো তাড়াতাড়ি এতোটা চেঞ্জ হতে পারনা। তুমাকে এতোটা নিষ্টুর আমি আগে কখনো দেখিনি।
- হা হা হা, হাসালে নীরব। ফাহমি ঘড়ির দিকে থাকিয়ে বলল,
এবার যেতে হবে। আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন কিছুক্ষনের মধ্যে শপিংমলে পৌছবেন আমি সেখানে থাকতে হবে। আর বাইরে রুমিও অনেক্ষণ হলো ওয়েট করতেছে। ফাহমি দাঁড়িয়ে বলল, আসি বাই.........
- নীরব হাত বাড়িয়ে পিছু ডাকলো মাত্র একবার কারণ সে জানে ফাহমি আর ফিরবেনা। নীরব তার কপাল টেবিলে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
- নীরবের অজান্তেই ফাহমির দুই গাল বেয়ে নির্বাক অশ্রু ঝড়তে লাগল, চোখের কাজলে কালো হয়ে গেছে পুরো টিস্যু পেপার। ফাহমি মনে মনে ভাবল, আমি তোমাকে এভাবে কষ্ট দিতে চাইনি নীরব। কিন্তু আমি অপারক বাবা দুবার হার্ট এটাক করেছেন মা প্রেশারের রুগী এখনো বিছানায় আছেন এই অবস্থায় আমার হাতে আর কোন অপশন নেই। সত্যিই আমি অপারক। তোমার সাথে এমন ব্যাবহার করার কারণ, আমি চাই তুমি ভেঙ্গে পড়না তুমি এগিয়ে যাও আরো বহুদূর আমাকে ঘৃণা করে। আমার প্রতি এই ক্ষোভই হবে তোমার বেঁচে থাকার চাবি। ভাল থেক তুমি............... অনেক, অনেক, অনেক।
বিষয়: সাহিত্য
১৩৭৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অজান্তে গড়ে উঠে বন্ধুত্ব
তা হতে পারে অপ্রত্যাসিত কোন ব্যক্তির
সাথে , সময়ের প্রয়োজনে জীবনের
বাস্তবতায় আবার তার বিচ্ছেদ ও ঘটে ,
প্রয়োজনের তাকিদে অনেক
দূরে চলে গেলেও যেনো মুছে না ফেলি সৃতির
পাতা থেকে কেউ কাউকে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন