রক্ত কোথায়? স্বপ্ন!
লিখেছেন লিখেছেন সংশপ্তক ২৭ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:২৫:০৫ দুপুর
সোঁদামাটির গন্ধ পেলাম পোড়া শহরে আজ বহুদিন পরে, বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যা যেন স্মৃতি-সঞ্জীবনী উঠল অকস্মাৎ। নাকি হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগায় অবিরাম স্মৃতিচারণ?? খুব সম্ভবত ঈদ-উল-ফিতরের এক কি দুই দিন পরের সন্ধ্যা সেটি। মহাকাল স্মৃতির উপর বিস্মৃতির আস্তরণ ফেলে যায়, তারপরও ফুঁ দিয়ে কিছু ধূলো-বালি উড়ানোর চেষ্টা।
যেভাবে কাটে, আনন্দ-ব্যস্ততা-নিরানন্দ-অলসতায় কাটছিল ঈদের মওসুম। খাওয়া-দাওয়া চলছিল, হঠাৎ পাশের রুম থেকে এল ডাক। টিভি চলছে, অবিশ্বাস্য কিছু অতি-নাটকীয় দৃশ্যের চিত্রায়ন দেখানো হচ্ছে। পাঞ্জাবি পরা এক তরুণ হেঁটে যাচ্ছে আর তার উপর লগি-বৈঠা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কিছু মানুষ (?), কেন কে জানে! আঘাত পেয়েও তরুণটি হেঁটে যাচ্ছে দম দেওয়া পুতুলের মত- হাঁটছে যেন বেঁচে থাকার বেপরোয়া টানে- তারপর হঠাৎ পতন, পুতুলের মতই! পড়েই স্থির, যেন তার আর কোন কিছু করার নেই, যেন সে জেনে গেছে খেলা শেষ। ব্যাকুল হয়ে পরের ফুটেজগুলো দেখলাম, কোথাও কি পুতুল নড়ে উঠে! গলার কাছে কিছু একটা আটকে গেল যেন। না, নেই, কোথাও নেই, আর কখনো তাকে দেখা যাবে না হাঁটতে, আর কখনো তাকে দেখা যাবে না ছুটে বেড়াতে। মনে হল, যা খেয়েছি এখনি সব বের হয়ে আসবে প্রবল বেগে, বন্যাবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে কুৎসিত নেতা-নেত্রীদের ততোধিক কুৎসিত মনোবৃত্তিকে। স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কতক্ষণ খেয়াল নেই, সম্বিত ফিরল কারো ডাকে। স্নেহমাখা উদ্বিগ্ন কণ্ঠ ঢাকা ফিরে যাওয়া ঠিক হবে না এই জিঘাংসু পরিবেশে- দরদ দিয়ে তা-ই বলে যাচ্ছে। স্তম্ভিত আমি তখনও ঠিক ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারিনি, এরকম কিছু আগে কখনো দেখিনি বলেই হয়তো। মাথার ভেতরটা কেমন ফাঁকা হয়ে আছে, ভাবতে পারছিলাম না মানুষ কি আসলেই চারপেয়ে জন্তু-জানোয়ার থেকেও নিচে নামতে পারে? এভাবে?? বিবমিষার ভাব নিয়ে ফিরে এলাম নিজের রুমে, মনে হচ্ছিলো মুখে আর কিছু গেলেই বিদ্রোহ করে উগরে দেবে সবকিছু শরীর ভেতর থেকে। সেই রাতে কেবল ঘুরেফিরে মনে আসছিলো একটি কথাই, কিভাবে সম্ভব !?
রাজধানীতে ফিরে গেলাম ক’দিন পরেই, অবশ্য এরপর খুব বেশিদিন আর থাকা হয়নি সেখানে। তবে চলতে-ফিরতে বহুদিনই চোখে পড়েছে সেদিনের সেই তরুণের অপাপবিদ্ধ নির্মল সারল্যমাখা ছবি, সেঁটে আছে পাষাণ দেয়ালে রক্তের আখরে। রাজধানী থেকে বহু শত মাইল দূরেও তারপর সেই ছবি দেখেছি, দেখেছি রোদে পুড়তে, বৃষ্টিতে ভিজতে। ভেবেছি সময়ের সাথে কি একটুও ম্লান হয় না ঐ সরল দু’টি চোখের ফ্রেমে আটকে থাকা স্বপ্ন?
স্বপ্ন কি কখনো মরে! স্বপ্নের চাষ হয় বুকের ভেতরে, লহুসিক্ত সেই স্বপ্নে তো সোঁদামাটির প্রাণের গন্ধ। স্বপ্ন বাহিত হয় ’৬৯ থেকে ’১৩ তে, প্রাণ থেকে প্রাণে। স্বপ্ন ছড়িয়ে যায় আহত বুকের মাঝে, স্বপ্ন বেঁচে থাকে অশ্রুতে।
২৮ অক্টোবর বেঁচে থাক বুকের মাঝে, স্বপ্ন হয়ে। ২৮ অক্টোবর ঘুমুতে না দিক স্বপ্নের উত্তরাধিকারীদের।ঐ ঈমানদারদের সাথে তাদের শত্রুতার এ ছাড়া আর কোন কারণ ছিল না যে, তারা সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল যিনি মহাপরাক্রমশালী এবং নিজের সত্ত্বায় নিজেই প্রশংসিত, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বের অধিকারী। (বুরূজঃ ৮-৯)
এরা তাদের মুখের ফুঁৎকার দিয়ে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, অথচ আল্লাহর আল্লাহর ফায়সালা হলো তিনি তাঁর নূরকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন। (সফঃ ৮)
বিষয়: রাজনীতি
১০৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন