"আল্লাহ ইচ্ছা করলে স্বীয় অনুগ্রহে তোমাদের অভাব মুক্ত করে দেবেন৷"

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০২ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:০১:১২ রাত

আত তাওবাহ; রুকু;-৪ আয়াত;-২৫-২৯

এ সুরায় বিষয় বস্তুর বিন্নাস অনুযায়ী আমরা আবার প্রথম রুকুর সাথে যুক্ত হলাম৷ যা নবম হিজরীর জিলকদ মাসে নাজিল হয়েছিল৷ যার পথম ছয়টি আয়াত নিয়ে প্রথম রুকু গঠিত৷ রুকু চার ও পাঁচে একই বিষয়ের উপর আলোচনা হয়েছে৷

আকষ্মিক ভাবে কঠোর একটা ঘোষনা দেবার পর মুমিনদের অন্তরে একটা ভীতির সঞ্চার হয়। না জানি সমগ্র আরবের মুশরীকগন এটাকে কি মনে করে, হয়ত পতিক্রিয়া হিসেবে একটা বড় ধরণের যুদ্ধ হতে পারে৷ মুমিনদের সেই আশংকা দূর করার জন্য, আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের মনে করিয়ে দিলেন যে, ইতি মধ্যে সব যুদ্ধের ময়দানে তিনি মুমিনদের সাহায্য করেছেন।

২৫/لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللّهُ فِي مَوَاطِنَ كَثِيرَةٍ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنكُمْ شَيْئًا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُم مُّدْبِرِينَ

অর্থাৎ;-আল্লাহতো তোমাদের সাহায্য করেছেন অনেক যুদ্ধক্ষেত্রে এবং হুনাইনের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের গর্বীত করে তুলেছিল; কিন্তু সে সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবং সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল তোমাদের প্রতি এ পৃথিবী এত প্রশস্ত হওয়া সত্বেও। পরে তোমরা পিঠ প্রদর্শণ করে পালিয়েছিলে৷



২৬/ثُمَّ أَنَزلَ اللّهُ سَكِينَتَهُ عَلَى رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَنزَلَ جُنُودًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعذَّبَ الَّذِينَ كَفَرُواْ وَذَلِكَ جَزَاء الْكَافِرِينَ

অর্থাৎ;-অতঃপর আল্লাহ তার রসুলের পতি ও মুমিনদের প্রতি নিজের তরফ থেকে প্রশান্তি নাজিল করলেন, এমন এক সেনা বাহিনী যাদের তোমরা দেখতে পাওনি। তিনি কাফেরদের শাস্তি দিলেন এবং তা ছিল কাফেরদের কর্মফল৷

অষ্টম হিজরীর শওয়াল মাসে মক্কা বিজয়ের পর হুনাইনের যুদ্ধ হয়। দুই পাহাড়েরমাঝে একটি সংকীর্ণ জায়গায়, পাহাড়ের উপর হতে শত্রুর অতর্কিতে বৃষ্টির মত তীর বর্ষণে মুমিন বাহিনী দিশেহারা হয়ে ছত্রভঙ্গ হয় ও পলায়ন করে৷ মক্কা বিজয় অভিযানে দশ হাজার মুসলীম অংশগ্রহন করে৷ এখানে প্রায় বারো হাজার, মক্কা বিজয়ের পর আরও কিছু লোক ইমান এনেছিল তা ছাড়াও মুসলীমদের অধীনেও কিছু গোত্র আনুগত্যে এসেছিল, যাদের নিয়ে বারো হাজারের বাহিনী গঠিত হয়েছিল৷ বর্ণনায় পাওয়া যায় কেউ বলেন মাত্র তিরিশ চল্লিশ জন সাহাবী রসুল সঃ সাথে ছিলেন, আবার কেউ বলেন তিন চার শো সাহাবী সাথে ছিলেন। সে যাই হোক বারো হাজারের মধ্যে তিন চারশোও বেশী নয়। এমত অবস্থায় রসুল সঃ তরবারী উঁচিয়ে বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ দিলেন, “কেউ আমায় সঙ্গ দিলে যেমন আমি আল্লাহর নবী, কেউ সঙ্গ না দিলেও আমি আল্লাহর নবী, আমি আব্দুল মোত্তালেবের পোতা ময়দানে হাজির আছি”৷ অতঃপর সঙ্গীদের বললেন এইবলে আওয়াজ দিতে, “কোথায় আমার বদরী সাথীরা, কোথায় আমার গাছ তলার সাথীরা”৷ হোদায়বিয়ার সন্ধীর সময় যে সাহাবীরা সঙ্গে ছিলেন তাদের ‘আসহাবে শাজার’ বা গাছতলার সাথী বা হয়৷

আল্লাহ ঐ মুহূর্তের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বললেন, এত প্রশস্ত পৃবিবী সেদিন তোমাদের কাছে সংকীর্ণ মনে হয়ে ছিল, আর সেই বিপদে অদৃশ্য সৈন্য দিয়ে আমিই তোমাদের শত্রু নিধন করে তোমাদের বিজয়ী করেছিলাম, আর নবী ও তার অবশিষ্ট সঙ্গীদের মনে প্রশান্তি দিয়েছিলাম। অতএব আমার এ ঘোষনায় তোমাদের ভয় পাবার কারণ নেই।

২৭/ثُمَّ يَتُوبُ اللّهُ مِن بَعْدِ ذَلِكَ عَلَى مَن يَشَاء وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

অর্থাৎ;-এর পরও আল্লাহ যাদের ইচ্ছে করেন তওবার তৌফিক দেবেন৷ আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

২৮/يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلاَ يَقْرَبُواْ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَـذَا وَإِنْ خِفْتُمْ عَيْلَةً فَسَوْفَ يُغْنِيكُمُ اللّهُ مِن فَضْلِهِ إِن شَاء إِنَّ اللّهَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

অর্থাৎ;-হে মুমিনগন, মুশরীকরাতো অপবিত্র, সুতরাং তারা যেন এ বছরের পর মসজিদে হারামের কাছে না আসে, তবে যদি তোমরা দারিদ্রের আশংকা কর, তাহলে আল্লাহ ইচ্ছা করলে স্বীয় অনুগ্রহে তোমাদের অভাব মুক্ত করে দেবেন৷ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ হেকত ওয়ালা৷

মুশরীকরা অপবিত্র বলতে তাদের শারীরিক পবিত্রতার কথা বলা হয়নি, বরং মানষীক পবিত্রতার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর সাথে অন্যকে সমতুল্য করা বা শির্ক করার কারণে তাদের মানষীকতাকে অপবিত্র বলা হয়েছে৷ আল্লাহ পবিত্র৷ তার ঘরও পবিত্র৷ সেই পবিত্র ঘরের রক্ষক কেমন করে অপবিত্র মেনে নেওয়া যায়? তাই সেখানে তাদের প্রবেশাধিকার রোহীত করা হল। এ ঘোষণাটিও একই সঙ্গে আরাফাতের ময়দানে নবম হিজরীর হজ্জ সমাপনান্তে করা হয়েছিল। এতদিন আল্লাহর ঘরে বা হজ্জে সকলেই যোগদান করলেও ভবিষ্যতে মুশরীকদের জন্য ক্বাবায় প্রবেশ নিষিদ্ধ হল।

মুশরীকদের না আসার কারণে মক্কায় ব্যবসা বানিজ্যে ভাঁটা পড়ার আশংকা দূর করে আল্লাহ বলেন, তাঁর নিজস্ব অনুগ্রহে তাদের সে অভাব পূরণ করবেন৷ এবং তা আজও বিদ্যমান৷

২৯/قَاتِلُواْ الَّذِينَ لاَ يُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَلاَ بِالْيَوْمِ الآخِرِ وَلاَ يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَلاَ يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُواْ الْجِزْيَةَ عَن يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ

অর্থাৎ;-তোমরা যুদ্ধ করতে থাক আহলে কিতাবদের ঐ লোকদের বিরুদ্ধে; যারা ইমান আনেনা আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি, আল্লাহ ও তার রসুল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করেনা এবং অনুসরণ করেনা প্রকৃত দ্বীন৷ যে পর্যন্ত না তারা বশ্যতা স্বীকার করে সহস্তে জিজিয়া প্রদান করে৷



নবম হিজরীর আরাফাতের ঘোষনায় কোরাইশ মুশরীকদের জন্য ছিল দুটি অপশন বা পছন্দ৷ নির্দিষ্ট সময় শেষের আগে ইমান আনো অন্যথায় হত্যা৷ যদিও অঘোষীত তৃতীয় টি আরবভূমী ত্যাগ এসে গিয়ে ছিল৷ যেহেতু রসুল সঃ এর প্রাথমিক নিয়োগ ছিল কোরাইশদের জন্য৷ তিনি তাদের মাঝে ‘ইতমামে হুজ্জত’ শেষ করার পর তাদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পড়ে ছিল, তাই তাদের জন্য আইন কঠোরতম ছিল৷ আর এ আয়াতের আইন ইহুদী নাসারা সহ সারা বিশ্বের মুশরীক বা অমুসলীমদের জন্য৷ এটি তাঁর নবুয়তের দ্বিতীয় ধারার সাথে সম্পর্কযুক্ত৷ দুটি আইনের তফাৎ অবশ্যই মনে রাখতে হবে।

এ আয়াতে ইহুদী নাসারাদের জন্য দেওয়া হল তিনটি অপশন, ইমান আনো, যাতে করে তুমি আমি সমান সমান৷ অথবা বশ্যতা স্বীকার করে অধীনস্থ হয়ে নিজ হাতে জিজিয়া কর প্রদান কর৷ তাতে যে কেউ যে কোন ধর্ম পালনে কোন বাধা থাকবে না৷ অথবা লড়াইয়ের ময়দানে মোকাবেলায় এস৷ আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধ পরিকর৷

রসুল সঃ এর মিশন ছিল দ্বিমুখী, ইসলাম প্রচার, প্রসার ও তা নিজে বাস্তবায়ন করে দেখানো৷ আজ বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত সত্য যে তিনি সে সফতলতা দেখিয়েছেন৷ তাই তাঁর অবর্তমানে সাহাবীরা যেখানেই গেছেন, এই তিন অপশন সাথে নিয়েছেন৷ ব্যাক্তিগত ভাবে কাউকেই ইসলামের জন্য বাধ্য করার নিয়ম ইসলামে নেই৷ এবং অবশ্যই তলোয়ার দিয়ে ইসলাম প্রসারিত হয়নি, তবে তলোয়ার সঙ্গে ছিল৷ যা শাসকের বিরুদ্ধে তিন নম্বর অপশনে ব্যবহারের জন্য৷

বিষয়: বিবিধ

১৫৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File