()() এস কল্যানের পথে।()()
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৯ অক্টোবর, ২০১৮, ০৮:৫১:৩৩ রাত
আল্লাহ তায়ালা সুরা মায়েদায় ঘোষণা দিয়েছেন;- الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا আজ আমি তোমাদের জন্য আমার দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম আর ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনিত করলাম। উদ্দেশ্য হল, রসুল সঃ এ পর্যন্ত যা যা করনীয় বর্জনীয় বিষয়ে তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন সেটাই তোমাদের দ্বীন। আর দ্বীন বলতে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, এর বাইরে যা তা যেমন শরিয়তে মোহাম্মদী সঃ এর অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না ঠিক তেমনই শরিয়তে মোহাম্মদীতে যা অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল তা বাদ দেওয়াও যাবে না। আর এ জন্যই নতুন কোন আমল, আচার-আচরন এতে যোগ করাই বেদায়াত। বেদায়াত হল, যা ছিলনা তা আবিষ্কার করা। বেদায়াত একদিকে যেমন আল্লাহর মতের সাথে নিজেদের মত যোগ করে অন্যায় করা, অন্য দিকে রসুল সঃ, যার জীবনটাই ছিল ইসলামী শরিয়তের পূর্নাঙ্গ রূপ তাঁর জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনাকে ছোট করা। কেননা তিনিই মুসলীমদের শরিয়তের ব্যাখ্যা বিশ্লশন করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আর তাঁকে বুঝিয়েছেন আল্লাহর হুকুমে হজরত জীব্রাঈল আঃ।
যারা বলেন নবী মোহাম্মদ সঃ ইসলামের প্রবর্তক তারা না জেনে বলেন, নবী মোহাম্মদ সঃ ইসলামের প্রবর্তক নন বরং সংষ্কারক। ইসলাম শ্বাশত, সনাতন, যার শুরু হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম আঃ এর সাথে। মানুষ তার স্বাধীনতার অপব্যবহার করে ইসলামে পরিবর্তন করেছে আর আল্লাহ তা মেরামত করার জন্য ও ইসলামকে যুগ উপযোগী করার জন্য যুগে যুগে নবী রসুল পাঠিয়েছেন। সুরা শূরার ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,- তিনি তোমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন সে দ্বীনকে যার নির্দেশ তিনি নূহকে দিয়েছিলেন। আর যা আমি আপনার প্রতি ওহী প্রেরণ করেছি, আর যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈশাকে এই মর্মে যে তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে কোন তফাৎ সৃষ্টি করোনা। যুগ উপযোগী বলার কারণ হল, আল্লাহ হজরত আদমের মাথায় কিছু ইলম দিয়েছিলেন। বর্তমানে যাকে ‘by defolt,’ বলে। সেই জ্ঞান যুগে যুগে বিকশিত হয়ে চলেছে, যার ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞান আজ এত উন্নত। রসুল সঃ এর জন্মের মাত্র সাড়ে পাঁচশত বছর আগে হজরত ঈশা আঃ তাঁর সাথীদের বললেন, ‘তোমাদেরকে আমার আরও অনেক কিছু বলার ছিল, কিন্তু তোমরা এখন তা বুঝতে পারবে না। আমার পরে যিনি (নবী) আসবেন তিনি তোমাদের বলবেন’। এখানেও সেই বুদ্ধি বিকাশের অপেক্ষার উপর নির্ভর করা হয়েছে।
হজরত আদম আঃ থেকে শুরু করে একটা দল হামেশাই সঠিক পথে থেকেছে, আজও আছে, ভবিষ্যতেও কেয়ামত পর্যন্তই থাকবে। আর বাকী যারা ছিটকে পড়েছে বা হটকারিতা, অহংকার, হামবড়া ভাব নিয়ে সঠিক লাইন থেকে বাইরে গিয়ে নিজ বুদ্ধি বিবেচনায় বা সংষ্কার না মেনে দলগত হয়েছে, তারাই নতু্ন ধর্মমতের সৃষ্টি করেছে। এখানেই শেষ নয় সঠিক বেঠিক উভয় দলেও আবার মতভেদের কারণে বহু শাখাদল বা মাজহাবের সৃষ্টি করেছে।
শুরু করেছিলাম দ্বীন বা শরিয়তের পূর্ণতা নিয়ে। দ্বীন পূর্ণতা পেয়েছে আজ থেকে প্রায় সাড়ে চোদ্দশো বছর আগে আমাদের অলক্ষ্যে। আরব ভূমীতে রসুলের মাধ্যমে। ভিন্ন ভাষায়। আমরা বা আমাদের বাপ-দাদারা কেউই সেখানে ছিলেন না। আমাদের কাছে ইসলাম এসেছে লোক মারফত। হাত ও মুখ বদল হতে হতে তাতে হয়েছে অনেক বদল, অনেক সংযুক্তি, অনেক বিচ্যুতি। এ থেকে আমাদের বার হয়ে আসতেই হবে, চিনতে হবে আসল দ্বীনকে। তার উপায়ও আল্লাহর রসুল সঃ বলে দিয়ে গেছেন। তা হল, আল্লাহর কোরআন আর রসুলের সহী হাদীশ। যুগ যুগ ধরে ধর্মযাশকেরা বা ওলামারা সাধারণ মানুষকে ধর্মগ্রন্থ গুলিহতে দূরে রেখে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করে আসছে,ও আজও তা বহাল আছে। কিন্তু মানুষ আজ বুঝতে শিখেছে, প্রযুক্তি তাদের জ্ঞান ও সুবিধা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। শুধু বিদায় হজ্জের ভাষণেই নয়, মৃত্যু শয্যাতেও রসুল সঃ দুটি জিনিষ অনুস্মরণ করতে তাকিদ দিয়েছেন, তা হল কোরআন ও সহী হাদীশ। দুঃখের বিষয় আমরা রসুলের সে তাকিদ ভুলে গেছি। আমাদের ওয়াজ, বক্তৃতা, বিবৃতি খুৎবায় বানানো মুখরোচক গল্প দিয়ে সাধারণ মানুষকে সম্মোহীত করে রেখেছি, সেখানে কোরআন হাদীশ থাকলেও যতটা থাকা উচিৎ তা থাকেনা। কোরআনের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে রসুল সঃ বলেছেন, মান ক্বালা বিহী সাদাক্বা-যে কোরআনের ভিত্তিতে কথা বলল সে সত্য বলল, মান হাক্বামা বিহী আদালা- যে কোরআন অনুযায়ী বিচার করল সে ইনসাফ করল, মান আমেলা বিহী ওজেরা- যে কোরআন মোতাবেক জীবন যাপন করল তার প্রতিদান নিশ্চিত, মান দায়া বিহী হুদেয়া ইলা সিরাতিম মুস্তাক্বীম- যে কোরআন দ্বারা বা কোরআনের দিকে আহবান করল তার জন্য সিরাতে মুস্তাকীম নিশ্চিত। আবার হাদীশে এও বলা হয়েছে, মানিত্তাবায়াল হুদা বে গাইরিল কোরআন আজ্জালাহুল্লাহ-যে কোরআন ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে হেদায়েত গ্রহন বা বিতরণ করবে, তাকে আল্লাহ নিজেই গুমরাহ বা ভ্রান্ত করে দেবেন।
আল্লাহ তায়ালা কোরআনকে মজবুত রজ্জু বা কাছি বলেছেন, ও সমবেত ভাবে তাকে শক্ত করে ধরে রাখতে বলেছেন। এখানেও আজ আমরা ব্যার্থ। আমরা সে রজ্জুকে পাক খুলে দড়ি গুলো আলাদা করে এক এক জন এক একটা নিয়ে তাকেই কাছি ভেবে অন্যকে আমার সাথে আসতে বলি, নিজে অপরেরটায় যাইনা, কারণ ঐ অহংকার আর হামবড়া ভাব। যার কারণে আজ মুসলীমদের একাধিক জমাত বা দল। মশলা মাশাইলে মতভেদ থাকতেই পারে যদি তার সমাধান কোরআন-হাদীশে না মেলে। আমরা কোরআন হাদীশ না ঘেঁটেই ব্যাক্তিগত বা ইমামদের কথাকেই চুড়ান্ত করে ফেলি। আমরা খেয়াল করিনা যে তা যদি কোরআন হাদীশের বিপরিতে যায়, যদিও তা অজান্তে তাতে আল্লাহ ও রসুলকে অবহেলা অপমানিত করা হয়। ফরজ নিয়ে আমাদের কোন ঝগড়া নেই ঝগড়া হল সুন্নত ও মুস্তাহাব নিয়ে, কে জোরে বা আস্তে আমিন বলল, কে বুকে না পেটে হাত বাঁধল, কে কতটা পা ফাঁক করে দাঁড়াল, কে ৮ রাকাত আর কে ২০ রাকাত তারাবী পড়ল, কেউ বা মসজিদে বিশেষ দলের নামে সাইনবোর্ড ঝুলালো, এ সব নিয়ে। আর এই সুযোগে অমুসলীমরা সুযোগের সদ্ব্যাবহার করল।
আল্লাহর রসুল বলেছেন, উনজুর মা ক্বালা অলা তানজুর মান ক্বালা-কে বলেছে তা ভেবোনা বরং কি বলেছে তা ভাব।এ হাদীশের প্রক্ষাপটে একজন গোনাহগার মদ্যপও যদি ভাল কথা বলে তার কথা গ্রহণযোগ্য হবে। আরও একটি হাদীশে আছে, হজরত আবু হুরায়রা রাঃ বাইতুল মালের নাইট গার্ড নিযুক্ত হয়েছেন, এক রাতে এক লোক খাদ্য গুদামে ঢুঁকে বাধা না মেনে কিছু খেয়ে চলে যাতে চাইলে আবু হুরায়রা রাঃ তাকে সকালে রসুলের আদালতে হাজির করতে চাইলে লোকটি বলল ক্ষুধার্থ ছিলাম, ভুল হয়েছে আর হবেনা বলে চলে গেল। দ্বিতীয় রাত এবং তৃতীয় রাতে একই আচরণ করল, ও বলেগেল, আমার পিছনে না পড়ে তাহাজ্জুদ পড়। এ ঘটনা রসুল সঃ শোনার পর বললেন, লোকটি ছিল শয়তান কিন্তু যা বলেছে তা সত্য। তিনি শয়তানের উপদেশ অগ্রাহ্য করেন নি, অথচ আমরা এতই আল্লাহ ওয়ালা আলেম,যে দ্বীনি ইলমকে মাদ্রাসা মক্তবে বন্দী করে ফেলেছি যে, মাদ্রাসায় না পড়লে কোরআন ও হাদীশের কথা বলার অধিকার তার নেই, লম্বা জুব্বা, মুখে দাড়ি, মাথায় পাগড়ি না থাকলে নসিহত করার অধিকার ও নাই। তাই প্যান্ট-শার্ট, কোট-টাই, দাড়িহীন লোক সারা দুনিয়ায় সমাদৃত হলেও কতিপয় ওলামার কাছে তারা গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি নিজেদের লীজ নেওয়া জান্নাতেও তাদের ঠাঁই না হওয়ার ফতোয়া দিতেও মুখে বাধে না। অথচ আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই আজীবন রসুলের দরবারে মুমিনের মর্যাদা পেয়েছে, এমনকি কাফনের জন্য নিজের জুব্বাটি তার ছেলেরদাবীতে দিতেও রসুল সঃ কুন্ঠিত হন নি।
আপনি দর্জীর কাছে একটি শার্ট বানাতে পুরানো শার্টটি নমুনা হিসেবে দিয়েছেন। দর্জী ভুল করে শার্টের বদলে ব্লাউজ বানিয়ে ফেলেছে। আপনি তাকে মজুরী দিয়ে কি ঐটা নেবেন? নিশ্চয়ইনা, বরং নমুনা মত না হওয়ায় প্রত্যাখ্যান করবেন। সুরা আহযাবের ২১ নং আয়াতে আল্লাহ রসুল সঃ কে আমাদের জন্য নমুনা দেওয়ার কথা বলেছেন। আিমরা কি সে নমুনা মোতাবেক আমাদের চাল চলন, আচার আচরণ, আমল করে চলেছি?। যদি উত্তর না বাচক হয় তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর আদালতে আমরা যে প্রত্যাখ্যাত হব না তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? আসুন আমরা নবীর প্রকৃত উম্মত হই। আমিন।
বিষয়: বিবিধ
৯৪২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন