রসুল প্রেম ও আমরা (মরহুম ডাঃ ইসরার আহমাদ সাহেবের 'হুব্বে রসুল' অবলম্বনে)
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ৩১ আগস্ট, ২০১৮, ০৭:১৯:৩৯ সন্ধ্যা
রসুল প্রেম ও আমরা------
একজন আমেরিকান লেখক, নাম তার মাইকেল এইচ হার্ট, তিনি বহু পরিশ্রম করে তথ্য সংগ্রহ করে “দি হাণ্ড্রেড নামে এক খানি গ্রন্থ রচনা করেছেন যা ঐ বৎসরের ‘বেষ্ট সেলার’ বা সর্বাধিক বিক্রিত গ্রন্থ বলে আমেরিকায় বিবেচিত হয়েছে। তিনি ঐ গ্রন্থে স্মরণকালের বিখ্যাত একশত মনিষীর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেছেন। স্মরণযোগ্য যে উক্ত একশত বিখ্যাত মনিষীর তালিকায় রসুল মোহাম্মদ সঃ কেই প্রথম স্থান দিয়েছেন। যেহেতু তিনি খ্রীস্টান তাই দাবী উঠতেই পারে হজরত ঈশা আঃ বা যীশুকে তিনি প্রথম স্থান দিলেন না কেন? তিনি নিজেই মুখবন্ধে তার কৈফিয়তে লিখেছিলেন যে, বহু বিবেচনা বিশ্লেষণে একমাত্র মোহাম্মদ (সঃ) ছাড়া আর কাউকেই পান নি যিনি মনুষ্য জীবনের সকল ক্ষেত্রে সমান সাফল্য দেখাতে পেরেছেন। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি পারিবারিক, সামাজিক, বৈবাহিক,রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমান দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাই তাকেই তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মনিষীর স্থান দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন;- যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ রাখে, তাদের জন্য রসুলের চরিত্রে উত্তম নমুনা রয়েছে। (আহযাব/২১)
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
সুরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে;- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً
ওহে যারা ইমান এনেছ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসুলের এবং তাদের যারা তোমাদের মধ্যে ফায়সালার অধিকারী। তার পর যদি তোমরা কোন বিষয়ে মতভেদ কর, তবে তা প্রত্যার্পন কর আল্লাহ ও রসুলের প্রতি---যদি তোমরা ইমান এনে থাক আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি। আর এটাই উত্তম এবং পরিনামে কল্যানকর।
সুরা নিসার ৬৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে; وَمَن يُطِعِ اللّهَ وَالرَّسُولَ فَأُوْلَـئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاء وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـئِكَ رَفِيقًا
আর যে ব্যক্তি আনুগত্য করবে আল্লাহ ও রসুলের, এ রূপ ব্যক্তিরা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গী হবেন যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, তারা হলেন; নবী, সিদ্দীক, শহিদ এবং সৎকর্মপরায়ন ব্যক্তিবর্গ। আর কত উত্তম সঙ্গী এরা।
সুরা মায়ীদার ৯২ নং আয়াতে বলা হয়েছে; وَأَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَاحْذَرُواْ فَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُواْ أَنَّمَا عَلَى رَسُولِنَا الْبَلاَغُ الْمُبِينُ
তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রসুলের এবং সতর্ক হও; কিন্তু যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তবে জেনে রেখ, আমার রসুলের দায়িত্বতো শুধু স্পষ্ট প্রচার করা।
যে ব্যক্তি রসুলের আনুগত্য করল সে আল্লাহরই অনুগত হল। আর যে মুখ ফিরিয়ে নিল, আমি তার জন্য আপনাকে তত্বাবধায়ক করে পাঠাইনি।(সুরা নিসা/৮০)
مَّنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللّهَ وَمَن تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا
সুরা আ‘রাফের ১৫৭ নং আয়াতের শেষাংশেবলা হয়েছে;-
فَالَّذِينَ آمَنُواْ بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُواْ النُّورَ الَّذِيَ أُنزِلَ مَعَهُ أُوْلَـئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
অতএব, যারা তার প্রতি ইমান এনেছে,তাকে সম্মান করেছে, তাকে সাহায্য করেছে এবং অনুসরণ করেছে সে আলোর (কোরআন) যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, এরূপ লোকেরাই প্রকৃত সফলকাম।
আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে সফলকাম বান্দার একটা চিত্র এঁকেছেন, আসুন তা একটু তলিয়ে দেখি। তাদের সফল হওয়ার জন্য চারটি গুনের উল্লেখ করেছেন, প্রথমটি হল ‘আমানু বিহী’ প্রথমত সব গুনই নির্ভর করবে আল্লাহর রহমতের উপর। আল্লাহর রহমত দুই প্রকারের, একটি সার্বজনীন, যা সবার জন্যই উন্মুক্ত অপরটি হল এ আয়াতের আবেদনে যারা আল্লাহ তায়ালার এই নিরক্ষর নবীর উপর ইমান আনবে তাদের জন্য। আবার ইমানও দুপ্রকার। একটি স্বীকার করা ও মুখে বলা। অন্যটি অন্তরের অন্তস্থলে ধারন করা। মুসলীম দাবীদারদের জন্য দ্বিতীয়টিই কাম্য অন্যথায় সুরা মুনাফিকুন(৬৩) এর প্রথম আয়াত যেখানে বলা হয়েছে যে, মুনাফেকরা যখন নবীর সংস্পর্শে আসত তখন নিজেকে খাঁটি মুমিন প্রমান করার জন্য অপ্রয়োজনীয় ভাবে ঘোষণা দিত, ‘আমরা স্বাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি নিশ্চয় আল্লাহর রসুল’। সেখানে আল্লাহ বলেন যে, তিনি জানেন মোহাম্মদ (সঃ) নিশ্চয় তার রসুল সেই সঙ্গে আল্লাহ স্বাক্ষ্যও দেন যে মুনাফেকেরা মিথ্যা বলছে এবং তারা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।
দ্বিতীয় শব্দ বা শর্তটি হল ‘অআজ্জারুহু’ অর্থাৎ আল্লাহর এই উম্মী নবীর যথাযত তা’জীম বা সম্মান করবে। সুরা হুজরাতের প্রথম দুটি আয়াতে আল্লাহ নির্দেশ দেন, হে মুমিনগন তোমরা কোন বিষয়ে নবীর অগ্রনী হয়ো না আর নবীর স্বরের উপর নিজের কথার আওয়াজকে উচ্চে তুলোনা। তাতে তোমাদের অজান্তে তোমাদের কর্মফল বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। মায়াজ আল্লাহ, সাহাবীরা তাঁর সর্বোচ সম্মান করতেন। তাঁর মজমায় এমন ভাবে মাথা নীচু করে বসতেন যে, মনে হত তাদের মাথার উপর বুঝি কোন পাখি বসে আছে, সামান্য নাড়া পেলেই পাখিটি উড়ে যাবে। আর তাই এ সংযম এ নীরবতা।
প্রশ্ন হতে পারে নবীর বর্তমানে সাহাবীরা তাঁকে সাক্ষাতে পেয়েছেন, তাজিম করেছেন। পরবর্তীরা এ শর্তটি কেমন করে পূরণ করবে। একটি ছোট উদাহরণে বোঝানো যায়, তাহল কোন আলোচনায় বিপক্ষে কেউ যদি কোন হাদীশের উল্লেখ করে আর তার বিপক্ষে তাৎক্ষনিক ভাবে কোন হাদীশ না পাওয়া যায় তবে উক্ত হাদীশটীর সম্মানই রসুলের সম্মান আর আর উচ্চ আওয়াজে গায়ের জোরে তাকে অসম্মান করাই রসুলকে অসম্মান বলে গন্য হবে।।
রসুল সঃ সাহাবীদের মুফলিস কাদের বলে জিজ্ঞেস করলে সাহাবীরা কপর্দকহীন মানুসই মুফলিস বললেন। রসুল বললেন ‘না’। আমার উম্মতের মধ্যে তারাই মুফলিস হবে যারা কেয়ামতের দিন অনেক রোজা নামাজ হজ্জ জাকাত দান খয়রাত কোরবাণীর নেকী সঙ্গে নিয়ে হাজির হবে, কিন্তু তার পিছনে থাকবে পাওনাদারদের লাইন। দুনিয়ায় কারও হক মেরেছে বা কাউকে বিনা কারণে গালি দিয়েছে বা গীবত করেছে বা বিনা দোষে জুলুম করেছে বা কারও বদনাম করেছে যা দুনিয়ায় অন্যায় বলে মনেই করেনি। সেদিন দাবী আদায়ের বিনিময়ে কোন কারেন্সী থাকবে না; নেকীর মাধ্যমে ঐ সব দাবীদারদের পাওনা মেটাতে তার নেকীর অঙ্ক কমতে থাকবে আর পাওনাদেরের বদী তার অক্ষ ভারী করবে। এমনই ভাবে এক সময় সে নিঃস্ব হয়ে যাবে, সেই হল প্রকৃত মুফলিস।
তৃতীয় শর্ত বা শব্দটি হল; অ নাসারুহ, আল্লাহর উম্মী রসুলকে সাহায্য করবে। মনে রাখতে হবে রসুল সঃ নিজের জন্য কারও কোন রকম সাহায্যের প্যত্যাশী ছিলেন না। তিনি নিজের কাজ নিজেই করা পছন্দ করতেন। আজীবন খেদমতগার হজরত আনাস রাঃ কোন দিনও রসুলের কাছে কোন আদেশ পাননি। এমনকি ঘোঁড় সওয়ার অবস্থায় হাতের ছড়িটি পড়ে গেলেও কাউকে তুলে দিতে বলতেন না। সব থেকে বড় উদাহরণ হল; মক্কায় নও মুসলীমরা অকথ্য অত্যাচারে অথিষ্ট হলে সবাইকে সাধ্যমত হিজরত করার অনুমতি দিলেও নিজে আল্লাহর অনুমতির অপেক্ষায় রয়ে গেছেন। প্রাণের বন্ধু হজরত আবুবকর রাঃ প্রতিদিন অনুমতি এসেছে কিনা খবর নেন, কারন তিনিও সফর সঙ্গী হবেন। একদিন দুপুরের রোদ নিজেকে চাদরে ঢেঁকে অনুমতির সংবাদ দিতে আবুবকর রাঃ এর বাড়ি গেলেন। চমকে দেবার জন্য হজরত আবু বকর জানালেন যে তিনি দুজনার বাহনের জন্য দুটি উটনী যত্ন করে তৈরী রেখেছেন। প্রস্তাব শুনে রসুল সঃ জানালেন, হাঁ আমি একটা উটনী ব্যবহার করব তবে মূল্য পরিশোধ করার পর। সজল চোখে দোস্ত অনুযোগ করলেন, ‘হুজুর আমার সাথেও’। হুজুর বললেন ‘হাঁ’।
তবে তিনি আল্লাহর দ্বীন,তারই দেওয়া নিয়মনীতি ও দুনিয়ায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য আর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে(আমি জ্বীন ও ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি। জারিয়াত/৫৬) বাস্তবে রূপ দেবার জন্য অন্যের সাহায্য চেয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এ কথা তিনবার এসেছে। আর কোন নবীর জন্য নয়,তবে হজরত ঈশা আঃ ও এ আবেদন একবার করেছেন, যদিও আর কোন নবীই আল্লাহর নিজাম দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। সুরা ‘সাফ’ এর ১৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন;-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُونوا أَنصَارَ اللَّهِ كَمَا قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ لِلْحَوَارِيِّينَ مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللَّهِ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ اللَّهِ فَآَمَنَت طَّائِفَةٌ مِّن بَنِي إِسْرَائِيلَ وَكَفَرَت طَّائِفَةٌ فَأَيَّدْنَا الَّذِينَ آَمَنُوا عَلَى عَدُوِّهِمْ فَأَصْبَحُوا ظَاهِرِينَ
ওহে যারা ইমান এনেছ! তোমরা আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যকারী হয়ে যাও। যেমন মরিয়ম তনয় ঈশা হাওয়ারীদের বলেছিলেন, “আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে”তখন হাওয়ারীরা বলেছিল, “আমরা আল্লাহর পথে সাহায্যকারী হলাম”। অতঃপর বণী ইস্রাইলের একদল ইমান আনল এবং এক দল কুফরী করল। পরিশেষে আমি যারা ইমান এনেছিল, তাদেরকে তাদের শত্রুর মোকাবেলায় সাহায্য করলাম, ফলে তারা বিজয়ী হল।
চতুর্থটি হল; অনুসরণ (আনুগত্য) কর সে আলোর যা তার সাথে পাঠানো হয়েছে (আল কোরআন)। কোরআনের অনুগত হওয়া মানেই আল্লাহর অনুগত হওয়া। মনে রাখতে হবে একা কোরআন দিয়ে নিজামে জিন্দেগী,শরিয়ত,মোয়ামেলাত কোনটিই পূর্ণ করা সম্ভব নয়, সাথে চাই নবীর সুন্নাহ। কোরআন বলে নামাজ কায়েম কর,উদয় হতে অস্ত পর্যন্ত রোজা পালন কর। কোরআনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরিষ্কার কোন আয়াত নেই,তা রসুল দ্বারা স্বীকৃত। কেমন করে কখন কি ভাবে দাঁড়াতে হবে, তার রুকুসিজদাহ কয়টা কেমন করে কারতে হবে, কি কখন পড়তে হবে সবই রসুলের নির্দেশ মোতাবেক স্থীরকৃত। এমন ধারাই নিজামে জীন্দেগীর প্রতিটি বিষয়ই রসুল নির্দেশিত। ।এজন্যই বলা হয়েছে রসুলের আনুগত্যই আল্লাহর আনুগত্য। তবে তা কোন অংশেই, কোনমূল্যেই আংশিক হওয়া চলবে না, পূর্ণাঙ্গ হতে হবে। যদি কোন বিষয়ে কোন নির্দেশ অপূ্র্ণাঙ্গ থাকে তবে তার হুশিয়ারীতে সুরা বাক্বারার ৮৫ নং আয়াতই যথেষ্ট। আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে;- أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاء مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنكُمْ إِلاَّ خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
তবেকি তোমরা গ্রন্থের কিয়দংশ বিশ্বাস করো আর অংশ বিশেষ অস্বীকার করো? যারা এরূপ করে, পার্থীব জীবনে দূর্গতি ছাড়া তাদের আর কোন পথ নেই এবং কেয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে ধাবিত করা হবে, আল্লাহ তোমাদের কার্য কলাপে অজ্ঞ নন।
সুরা তওবার ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন;- আপনি বলে দিন; তোমাদের কাছে যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের স্বগোত্রীয় লোক, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যার মন্দা পড়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসগৃহ যা তোমরা পছন্দ কর--- আল্লাহ, তার রসুল এবং তার পথে জিহাদ করার চেয়ে অধিক প্রীয় হয় তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর নির্দেশ আসা পর্যন্ত। আল্লাহ ফাসিক লোকদের হেদায়েত করেন না।
এখানে বিষয়টি হল মহব্বত বা ভালবাসার। একদিকে বান্দার আটটি জিনিষ অপর দিকে আল্লাহর তিনটি জিনিষ। এই তিনটির কোনটি যদি বান্দার আটটির কোন একটি অপেক্ষা মর্যাদায় বা ভালবাসায় সামান্যতম খেলো বা হেয় হয়ে যায় তবে বান্দাকে ওয়েটিং লিষ্টে অপেক্ষায় থাকতে হবে। পরক্ষনেই বলা হয়েছে আল্লাহ ফাসেক লোকদের হেদায়েত করেন না।
আল্লাহর রসুল বলেছেন;- তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষন না আমি তার কাছে তার পিতা মাতা ও সকলের চাইতে প্রীয়তর হই।
হজরত আয়েশা রাঃ বলেছেন; রসুল হলেন জীবন্ত কোরআন। অথচ মজার ব্যাপার আমরা সেই রসুলের উম্মত, সেই কোরআনের অনুসারী বলে নিজেদের জাহির করি। প্রতি মুহূর্তে কেয়ামতের কঠিন দিনে তার সুপারিশের প্রত্যাশা করি। অথচ আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তার প্রতি, তার রসুলের প্রতি আমাদের আন্তরিক মুহব্বত নাই। যদিও আমরা জোর গলায় তা জাহির করে থাকি, তার কিছু সুন্নতের আমল করেই জান্নাত কেনার স্বপ্ন দেখি।
আমাদের সন্তানদের উৎসাহ দিই জর্জ বার্নাড স, সেক্স পিয়ার, নিউটন, রবীন্দ্র নাথ প্রমূখের মত হতে। যেখানে স্বয়ং আল্লাহ স্বাক্ষী রসুলের উত্তম আদর্শ হওয়ার। কি বিচিত্র আমরা। হয়ত এ জন্যই কথিত আছে একজন বিজ্ঞানীকে মৃত্যুকালে ‘দুনিয়ায় সবচাইতে ভাল কি দেখে যাচ্ছেন’ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ইসলাম’। ঠিক তেমনই ‘সব চাইতে খারাপ কি দেখেছেন’ প্রশ্নে বলেছিলেন ‘মুসলমান’। উক্তিটি আমাদের খারাপ লাগতেই পারে, অথচ এটিই সত্য। আমরা মুখে রসুল প্রেমের ফোয়ারা ছোটাই আর অন্তরে পুষে চলেছি জাগতীক ক্ষমতার পূঁজা। অর্থ-সম্পদ, পদ মর্যাদার লিপ্সা। লম্বা জামা, টুপি-পাগড়ী, দাড়ি-বাবরীর মাঝেই রসুল প্রেমকে আবদ্ধ করে নিয়েছি। নবুয়তের সূচনার পর হতে রসুল সঃ একটি দিনও জীবন জীবিকার কাজে নিজেকে নিয়জিত না করে প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়ায় বাস্তবায়নের জন্য আপ্রান সংগ্রাম করে গেছেন, অর্থ-সম্পদ বা পারিশ্রমিকের আশা করেন নি, যা কিছু সবই আল্লাহর উপর ন্যাস্ত করে নিশ্চিন্ত থেকেছেন। তাঁর এ সুন্নতকে আমরা চিনিনা, অথচ আমরা সুন্নত পালনের গর্বে নিজেকে ‘হামচূনী দীগার নিস্ত’ ভাবি। রসুলপ্রেমে কেঁদে বুক ভাঁসাই।
তাঁর আনুগত্য, তাঁর অনুসরণ তখনই হবে যখন তাঁর নির্দেশিত পথে তাঁরই নিয়মে নিজেকে সমর্পীত করে, অন্যদেরও সঙ্গে নেবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এগিয়ে যেতে পারব। মনে রাখতে হবে এটিই সেই আল্লাহ মনোনিত সরল সঠিক পথ, যার প্রান্তে রয়েছে মুমিনের চিরস্থায়ী আবাস আল জান্নাহ।
মূল বক্তা- ডঃ ইসরার আহমাদ সাহেবের “হুব্বে রসুল অনুসরণে।“
বিষয়: বিবিধ
১২৭৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন