"আল্লাহর বন্ধু' (ওলী)

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২০ মার্চ, ২০১৩, ০৮:১৪:৪২ রাত

জেনে রাখো, যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের কোন ভয় নেই, তারা বিচলিতও হবেনা৷” (সুরা ইউনুস৬২) ওলী শব্দটি পবিত্র কোরআনে, বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়েছে৷ কোথাও বন্ধু, কোথাও অভিভাবক, কোথাও উপদেষ্ঠা৷ এখানে বন্ধু রূপেই এসেছে৷ বোঝা গেল এঁরা অত্যন্ত ভাগ্যবান৷ তবেকি আল্লাহ এদের অন্য উপাদানে তৈরী করেছেন? না এরা সবার মতই মানুষ৷ তাহলে দেখা যাক তফাৎটা কোথায়!

পরের আয়াতে এদের কিছু পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে, বলা হয়েছে; “যারা ইমান এনেছে আর তাকওয়া অবলম্বন করেছে৷”তারও পরের আয়াতে এদের জন্য রয়েছে আরও সু খবর৷ পর্থিব জীবনে আর পরকালের ব্যপারেও৷ আরও বলা হয়েছে; এরাই প্রকৃত সফলতার অধিকারী৷

ইমান ও তাকওয়া, শব্দ দুটি ছোট কিন্তু এর গভীরতা ব্যাপক৷ একটু খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা যাক৷ কেননা কোআনের একটি আয়াত নিয়েই যেমন কোন সিদ্ধান্তে আসা যায়না তেমনই বলা হয়েছে কোরআনের একটি আয়াত অন্য আয়াতের ব্যাখ্যা দেয়৷

সুরা বাক্বারার ২৫৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, যারা ইমান এনেছে আল্লাহ তাদের ওলী বা বন্ধু৷ উপরে বলা হয়েছে, ওলীরা আল্লাহর বন্ধু, এখানে বলা হল আল্লাহ ওলীদের বন্ধু অর্থাৎ পরষ্পর বন্ধু৷ তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোতে বের করে আনেন৷

সাধারণ মুমিন ও প্রকৃত মুমিনের মধ্যে কিছুটা তফাৎ আছে৷ প্রকৃত মুমিনের সংজ্ঞা সুরা আনফালের ২য় ও ৭৪ নম্বর আয়াতে দেওয়া হয়েছে৷ আবার দুটিকে এক সাথে করে সুরা হুজরাতের ১৫ নং আয়াতে দেওয়া হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, “প্রকৃত মুমিনতো তারাই যারা ইমান এনেছে আল্লাহ ও তার রসুলের প্রতি, পরে কখনও সন্দেহ করেনি, এবং আল্লাহর পথে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে, তারাই সত্যবাদী লোক”৷ এখানে বোঝাগেল, ইমান নির্ভেজাল ও নিখুত হতে হবে, আর জান মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করতে হবে৷ জিহাদ বলতে শুধু যুদ্ধ বললে ভূল হবে, সর্বোত ভাবে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও তা রক্ষক্ষার চেষ্টা করতে হবে, প্রয়োজনে যুদ্ধও করতে হবে৷ রসুল সঃ তাবুক অভিযান শেষে মদীনা ফেরার পথে বলেছিলেন, ‘আমরা ছোট জিহাদ শেষ করে বড় জিহাদের দিকে চলেছি’৷ এখানে তিনি ঘরের শত্রু মোনাফেকদের সাথে জিহাদ করার কথা বলে ছিলেন৷ ইতিহাস সাক্ষী মোনাফেকদের সাথে রসুল সঃ সন্মুখ যুদ্ধ কোন দিনই করেননি৷ আবার তিনি নিজের নফসের সাথে সংগ্রামকেও জিহাদ বলেছেন৷ আসল কথায় ফিরে আসি;

সুরা তওবার ১১১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ প্রকৃত মুমিনদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময়ে বাকীতে কিনে নিয়েছেন, তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেন, শত্রু নিধন করেন আবার নিজেরাও নিহত হন৷ আবার ১১২ নং আয়াতে তাদের চরিত্রের নয়টি গুনের পরিচয়ও দিয়েছেন, যার ছয়টি ব্যাক্তিগত আর তিনটি সামাজিক৷

ব্যাক্তি পর্যায়ের গুনগুলি হল;-

তওবা করা; তারা সর্বদা নিজেকে তার প্রতিপালক, আল্লাহর কাছে অপরাধী মনে করে ও তওবা করায় অভ্যাস্থ থাকে৷ কখনও কোন কারণে কোন ত্রুটি হলেই সাথে সাথে অনুশোচনা যাগে আর তওবা করে৷ রসুল সঃ বলেছেন, প্রতিদিন তিনি অন্ততঃ সত্তর বার তওবা করতেন৷

ইবাদত; তারা কখনই ইবাদতে গড়িমসী করবেনা৷ তারা সর্বদা মনেরাখে, আল্লাহ তার ইবাদত করার জন্যই বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন৷ নামাজে দাঁড়িয়ে তারা মনে করেন, তার সামনে আল্লাহ দাঁড়িয়ে তাকে লক্ষ্য করছেন৷ ইবাদতের প্রতি একাগ্রতা অবলম্বন করেন৷

প্রশংসা বা শুকরীয়া; তারা সব কিছুকেই আল্লাহর নেয়ামত বা অনুগ্রহ মনে করে তারই প্রশংসা বা শুকরিয়া করে৷ তারা সব সময় মনে করেন, তাদের কাছে তাই আসে যার অনুমোদন আল্লাহই দেন, তিনিই তাদের একমাত্র মওলা৷

সংসার ত্যাগী; তারা সংসারের আরাম আয়েশ ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর জন্য পথে বার হয়৷ অনেক ওলী আউলিয়ার জীবনীতে নির্জন গুহা জঙ্গলে বাসের কথা জানা যায়৷ ইসলামে বৈরাগ্য নেই, তবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য বা জ্ঞান অর্জনের জন্য সাময়ীক ভাবে সংসার ছেড়ে যাওয়া অনুমোদন করে৷ যেমন যুদ্ধে যাওয়া তবলীগে বার হওয়া৷

রুকু ও সেজদাহ; তারা যথাযত নামাজ কায়েম করে৷ কায়েম অর্থ, নামাজের ধারা অব্যাহত রাখা৷ কখনও ত্যাগ না করা বা বিরতি না দেওয়া৷

সামাজিক গুন তিনটি হল;

‘আমর বিল মা’রুফ ও নেহী আনিল মুন কার’;তারা ভাল কাজের নির্দেশ দেয় আর মন্দ কাজে বাধা দেয়৷

আর আল্লাহর ‘হদূদ’ রক্ষা কারী; তারা আল্লাহর বিধি বিধানের (শরিয়ত) রক্ষক হিসেবে তাতে কাট ছাঁট বা অনুপ্রবেশে দৃঢ়তার সাথে বাধা দান করে৷

সামাজিক তিনটি কাজের জন্য চাই যেমন মনবল তেমনই জনবল৷ কেননা বাতিল যখন প্রবেশ হয়েই যায় তা জেঁকে বসে৷ সহজে যায়গা ছাড়েনা৷ তাই এ তিনটি গুনের আবার তিনটি ধাপ রয়েছে; শক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে৷ সম্ভব না হলে, মুখের কথায়(বা লেখনীর মাধ্যমে) প্রতিবাদ করতে হবে৷ তাও সম্ভব না হলে, মনে ঘৃনা পোষন করতে হবে৷ সাথে উপরের ধাপে পৌঁছবার জন্য প্রস্তুতী নিতে হবে৷ তিন নম্বর অবস্থানটি ইমানের দূর্বলতম অবস্থাবলে গন্য হবে৷

এখন আসা যাক তাকওয়ার কথায়; তাকওয়া হল ইমানের গতি বর্ধক৷ এক্সেলেটর যেমন গাড়িকে দ্রুত হতে দ্রুততর করে, তাকওয়াও তেমন ইমানকে উপরের দিকে ঠেলতে থাকে৷ সুরা মঈদার ৯৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে; মুমিন মুত্তাকীগন আরও তাকওয়া করেন সালেহীন হন, আরও তাকওয়া করে মুহসিনীন স্তরে পৌঁছে যান৷

কোরআনের প্রথমেই সুরা বাক্বারার ২য় আয়াতেই তাকওয়াকারী বা মুত্তাকীদের কথা বলা হয়েছে ও পরের আয়াতগুলিতে মুত্তাকীদের কিছু পরিচয়ও দেওয়া হয়েছে৷ বলা হয়েছে, ‘এ কিতাব তাদেরই পথ দেখাবে বা হেদায়েত দেবে, যারা মুত্তাকী হয়েছে,’ তারা হল, ‘যারা গায়েবে ইমান এনেছে’ বা আল্লাহ ও তার অদৃশ্য বিষয়াবলীতে বিশ্বাস করে, ‘আর নামাজ কায়েম করে, আর তাকে যে রিজিক দেওয়া হয়েছে তাথেকে খরচ করে,’ আর যারা আসমানী কিতাবগুলির উপর বিশ্বাস করে, আর আখেরাতের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস করে৷ এখানে দুটি লক্ষ্যনীয় বিষয় হল; খরচের ব্যাপারে ‘তা থেকে’ আর আখেরাতের ব্যাপারে ‘দৃঢ়’ শব্দ দুটি৷ খরচের বেলায়, যার যা প্রাপ্য তাকে তা দিতে হবে৷ সর্বস্য দিতে যেমন বলা হয়নি তেমনি দেবার পর ভবিষ্যতে আমার কি করে চলবে ভাবারও অবকাশ নেই, কেননা তাদের সর্বোত ভাবেই আল্লাহর উপর নির্ভরতা রয়েছে৷ আর সব কিছুর উপর বিশ্বাস তো থাকতেই হবে, কিন্তু আখেরাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে৷ কারণ, এতেই আছে জবাবদেহীতা৷ এটাই ইমানের আসল অংশ৷ জবাব দিতে হবে এ ভয় যাদের আছে তারা সর্বদাই সকল কাজে যত্নবান হবেই৷

এ সকল গুনে গুনান্বিত হলেই কেউ আল্লাহর বা আল্লাহ তার বন্ধু হবেন৷ লম্বা কোর্তা বিশেষ চেহারার বা লক্ষ্যলোকের নারাতে ওলী হওয়া যায়না৷ আসুন আমরা মুমিন মুত্তাকী হওয়ার চেষ্টা করি৷ আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন৷ আমিন৷

বিষয়: বিবিধ

১৮৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File