{}{}{} সেদিন তারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং তারা যে মিথ্যা অপবাদ দিত তা বিস্মৃত হবে৷{}{}{}
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৬ জুলাই, ২০১৬, ০২:১৪:২৮ রাত
(উর্দুু বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)
সুরা আন নাহল রুকু;-১২ আয়াত;-৮৪-৮৯
৮৪/وَيَوْمَ نَبْعَثُ مِن كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا ثُمَّ لاَ يُؤْذَنُ لِلَّذِينَ كَفَرُواْ وَلاَ هُمْ يُسْتَعْتَبُونَ
অর্থ;-আর আমি যেদিন প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী দাঁড় করাব সে দিন কাফের দেরকে অনুমতি দেওয়া হবেনা এবং তাদেরকে তওবার সুযোগও দেওয়া হবেনা৷
# সুরা ‘আরাফ’ এর ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে; ‘অতঃপর আমি তাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করব, যাদের কাছে রসুল প্রেরণ করা হয়েছিল এবং অবশ্যই আমি রসুল গনকেও জিজ্ঞেস করব’৷ আবার সুরা ‘নিসা’ এর ৪১ নং আয়াতে বলা হয়েছে; ‘তখন কি অবস্থা হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আপনাকে তাদের উপর সাক্ষী রূপে উপস্থিত করব’৷ আল্লাহ তায়ালা নবী রসুল শব্দের সাথে প্রায় জায়গায় ‘শাহিদ’ ‘মোবাশ্শির ও ‘নাজির’ শব্দ গুলিও জুড়ে দিয়েছেন৷ এখানে সেই কথারই পুনরাবৃত্তি এসেছে এ রুকুতে দুইবার৷ আল্লাহ তায়ালা যাদের কাছে রসুল প্রেরণ করেছিলেন তাদেরকে তাদের রসুলের সামনে হাজির করে রসুলের দায়িত্ব যথাযত পালন করেছেন কিনা জানতে চাওয়া হবে৷ অস্বীকারকারী উম্মতের রসুলের বিরুদ্ধে নালিশ করার পথ থাকবেনা আর তাদের আত্ম পক্ষ সমর্থনের সুযোগও থাকবেনা আর তওবারও সুযোগ থাকবেনা৷ ঠিক তেমনই মক্কার মুশরিকদের সাথে রসুল সঃ কেও উপস্থিত করে একই প্রশ্ন করা হবে৷ মুশরিকদেরও আত্ম পক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকবেনা৷ আমরা জানি বিদায় হজ্জে রসুল সঃ তাঁর দায়িত্ব যথাযত পালনের সাক্ষী উপস্থিত জনতার কাছে নিয়ে রেখেছেন৷ এবং সেই সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব পরবর্তী কালে তাঁর উম্মতের উপর দিয়ে গেছেন৷ অতএব উম্মতকেও এমন দায়িত্ব পালনের জবাব দেহি করতে হবে৷
৮৫/وَإِذَا رَأى الَّذِينَ ظَلَمُواْ الْعَذَابَ فَلاَ يُخَفَّفُ عَنْهُمْ وَلاَ هُمْ يُنظَرُونَ
অর্থ;-যখন জালিমরা আজাব প্রত্যক্ষ্য করবে তখন তাদের থেকে তা হাল্কা করা হবেনা আর তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হবেনা৷
৮৬/وَإِذَا رَأى الَّذِينَ أَشْرَكُواْ شُرَكَاءهُمْ قَالُواْ رَبَّنَا هَـؤُلاء شُرَكَآؤُنَا الَّذِينَ كُنَّا نَدْعُوْ مِن دُونِكَ فَألْقَوْا إِلَيْهِمُ الْقَوْلَ إِنَّكُمْ لَكَاذِبُونَ
অর্থ;-আর যখন মুশরিকরা তাদের শরিক (দেবদেবী) দের দেখবে তখন বলবে; হে আমাদের রব, এরাই আমাদের সেই সব শরিক, তোমাকে ছেড়ে যাদেরকে ডাকতাম৷ কথা ফেরত যাবে, তারা বলবে, তোমরা মিথ্যাবাদী৷
# কল্পীত দেব দেবী নয় বরং বাস্তব শরিক যাদের অস্তিত্ব দুনিয়ায় ছিল, তাদেরকে তাদের মুশরিকরা দেখে আল্লাহকে বলবে যে এরাই সেই শরিক যাদেরকে তারা ডাকত৷(বলা যেতে পারে নাসারাগন ইশা আঃ কে দেখে বলবে; এনাকে আমরা ঈশ্বর পুত্র ঈশ্বর বলে উপাসনা করতাম৷) তারা তখন বলবে যে, এটি মিথ্যা কথা৷ আর যদি তারা তাদের ডেকেও থাকে তবে তারা সে বিষয়ে কিছুই জানেনা৷ যে সমস্ত ওলী আউলিয়াদের মাজারে শির্ক সংঘটিত হয় তা ঐ মাজারের বাসীন্দার অজান্তেই হয়ে থাকে৷ ওলী আউলিয়াগন আল্লাহর দরবারে মর্যাদাবান হেতু তাদের সেভাবেই কেয়ামতের দিন দেখা যাবে৷
৮৭/وَأَلْقَوْاْ إِلَى اللّهِ يَوْمَئِذٍ السَّلَمَ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَفْتَرُونَ
অর্থ;-সেদিন তারা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং তারা যে মিথ্যা অপবাদ দিত তা বিস্মৃত হবে৷
# তাদের যে মন গড়া ধারণা তারা মনে ধারণ করত, যেমন দেবদেবীরা আল্লাহর প্রীয় পাত্র, এরা সুপারিশ করে আমাদের উদ্ধার করবে বা খাজা বাবা আল্লাহর প্রীয় বান্দা তিনি আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন অথবা যীশু তার উম্মতের সকল অপরাধ নিজের কাঁধে নিয়ে নিজে ক্রুশে জীবন দিয়েছেন, আমাদের আর কোন দুঃশ্চিন্তা নেই৷ এ সব ধারণা উবে যাবে৷ আর তাঁরা তা অস্বীকার করবেন৷ তখনই তারা তাদের ভুল স্বীকার করবে৷
৮৮/الَّذِينَ كَفَرُواْ وَصَدُّواْ عَن سَبِيلِ اللّهِ زِدْنَاهُمْ عَذَابًا فَوْقَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُواْ يُفْسِدُونَ
অর্থ;-যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করেছে, আমি তাদেরকে আজাবের পর আজাব বাড়িয়ে দেব কারণ তারা অশান্তি সৃষ্টি করত৷
# যারা নিজেরা কুফরে লিপ্তছিল এবং অন্যদেরকেও মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ভুলপথেই ধরে রেখেছে, মূলতঃ তারা অন্যের পথে বাধা সৃষ্টিই করেছে, তাদের দ্বিগুন শাস্তি হবে৷
৮৯/وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِي كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا عَلَيْهِم مِّنْ أَنفُسِهِمْ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيدًا عَلَى هَـؤُلاء وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ
অর্থ;-যে দিন প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমি একজন সাক্ষী দাঁড় করাব তাদের বিপক্ষে তাদের মধ্য থেকেই এবং তাদের বিষয়ে আপনাকেই সাক্ষী স্বরূপ উপস্থাপন করব৷ আমি আপনার প্রতি গ্রন্থ নাজিল করেছি যা প্রত্যেক বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা, যা হেদায়েত, রহমত ও সু সংবাদ মুসলীমদের জন্য৷
# রুকুর প্রথম আয়াতে প্রত্যেক উম্মতের রসুলদেরকে উম্মতের বিরুদ্ধে সাক্ষী দাঁড় করানোর কথা বলা হয়েছে আর এ আয়াতে সাধারণ ভাবে সব উম্মতের মধ্য হতেই সেই উম্মতের বিরুদ্ধে সাক্ষী দাঁড় করার কথা বলা হয়েছে৷ উভয় আয়াতেই রসুল সঃ কেই মক্কার মুশরিকদের বিপক্ষে সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে৷
সুরা বাক্বারার ১৪৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে; ‘এমনই ভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থি সম্প্রদায় করেছি যাতে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানব মণ্ডলীর জন্য এবং রসুল সাক্ষদাতা হন তোমাদের জন্য’৷ এর পর ১৯ রুকুর ১৫৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে; ‘হে মুমিনগন তোমরা ধৈর্যধারণ কর ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর’৷ কারণ, তোমাদের উপর বেশ ভারী দায়িত্ব চাপানো হল৷
কোরআনে সকল বিষয়ের সমাধান আছে যা মুমিনদের জন্য পথ প্রদর্শক, এ কথা আমরা সুরা ‘বাক্বারা’র প্রথম রুকুতেই জেনে এসেছি৷ এতে রয়েছে রহমত ও মুমিনদের জন্য সুসংবাদ৷
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহতী এই সুকঠিন কর্মের জন্য মহান রব আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। সেইসাথে পাঠককূলকেও কবুল করুণ। আমীন।
অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন