@ আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে বের করেছেন, তোমরা কিছুই জানতে না৷ তিনি তোমাদেরকে চক্ষু কর্ণ ও জ্ঞান(ব্রেণ) দিয়েছেন৷যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর৷@
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১০ জুলাই, ২০১৬, ০৮:৫১:১৩ রাত
(বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)
সুরা আন নাহল রুকু;-১১ আয়াত;-৭৭-৮৩
৭৭/وَلِلّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَا أَمْرُ السَّاعَةِ إِلاَّ كَلَمْحِ الْبَصَرِ أَوْ هُوَ أَقْرَبُ إِنَّ اللّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অর্থ;-নভো মণ্ডল ও ভূ মণ্ডলের গোপন রহস্য আল্লাহর কাছেই রয়েছে৷ কেয়ামতের ব্যাপারটিও এমন যেমন চোখের পলক অথবা তার চাইতেও নিকটবর্তী৷ নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান৷
# অদৃশ্য জগতের খবর একমাত্র আল্লাহই জানেন৷ আর কেয়ামতের বিষয়টিও একমাত্র তারই জানা৷ যেটি হঠাৎ করেই ঘটবে৷ কখন কি ভাবে ঘটবে তাও মাত্র তিনিই জানেন৷
৭৮/وَاللّهُ أَخْرَجَكُم مِّن بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لاَ تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ الْسَّمْعَ وَالأَبْصَارَ وَالأَفْئِدَةَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
অর্থ;-আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে বের করেছেন, তোমরা কিছুই জানতে না৷ তিনি তোমাদেরকে চক্ষু কর্ণ ও জ্ঞান(ব্রেণ) দিয়েছেন ৷যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর৷
# প্রাণী জগতে সদ্যজাত মানব শিশুর মত আর কোন শিশু বা শাবক এত অসহায় হয়ে জন্মে না৷ অন্য প্রাণীর সদ্যজাত বাচ্চা অল্প সময় বা অল্প কদিন পরেই প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে পারে অথচ সৃষ্টির সেরা মানুষের বাচ্চার দীর্ঘ সময় লাগে৷ আল্লাহ তায়ালা চোখ, কান, নাক, অনুভুতি ও সেই সাথে জ্ঞান দিয়েছেন, যাতে তারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়৷
‘আফয়েদা’ বা ‘ফুয়াদ’ শব্দের অর্থ অনেকেই অন্তর করেছেন৷ কিন্তু ফুয়াদ হল; ইন্দ্রীয় লব্ধ ডাটা যেখানে গিয়ে ফলাফলে পরিনত হয় তাই৷ আর তা হল ব্রেন বা জ্ঞান৷ আগামী সুরা ‘বণী ইস্রাইলে’ ফুয়াদের বিষয়ে অধিক আলোচনা হবে ইনশা আল্লাহ৷
৭৯/أَلَمْ يَرَوْاْ إِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِي جَوِّ السَّمَاء مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلاَّ اللّهُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অর্থ;-তারাকি উড়ন্ত পাখীকে দেখেনা? এ গুলো অন্তরীক্ষে অধীন রয়েছে৷ আল্লাহ ছাড়া সেখানে কেউ এদেরকে ধরে রাখে না৷ নিশচয় এতে মুমীন লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে৷
# আকাশের পাখী, ছোট হোক আর বড় তারা আপন ডানায় ভর করে শূন্যে ভেসে বেড়ায়৷ সেরা জীব মানুষ তা পারেনা৷ এদের অস্তিস্ব নিয়ে গবেষনার অনেক বিষয় রয়েছে৷ এদের কাছে মুমীনদের শিক্ষার বিষয়ও রয়েছে৷ হজরত ঈশা আঃ বলেছেন, ‘আকাশের পাখীদের দেখ, তারা বোনেওনা কাটেও না৷ সকালে খালি পেটে বার হয় আর সন্ধায় ভরা পেটে ঘরে ফেরে৷’ কে এদের শূন্যে ধরে রাখে, জীবন ধারনের জন্য এরা কার উপর ভরসা করে৷
৮০/أَلَمْ يَرَوْاْ إِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِي جَوِّ السَّمَاء مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلاَّ اللّهُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অর্থ;-আল্লাহ তোমাদের গৃহকে অবস্থানের জায়গা করে দিয়েছেন এবং চতুষ্পদ জন্তুর চামড়া দ্বারা তোমাদের জন্য তাঁবুর ব্যবস্থা করেছেন৷ তোমরা সেগুলোকে সফর কালে ও অবস্থান কালে পাও৷ ভেঁড়ার পশম, উটের বাবরী আর ছাগলের লোম দ্বারা কত আসবাবপত্র ও ব্যবহারের সামগ্রী তৈরী করেছেন৷ এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত৷
# আল্লাহ তায়ালা যার যার গৃহকে তার জন্য অবস্থান ও প্রশান্তির জায়গা করে দিয়েছেন৷ যে যেখানেই যাকনা কেন নিজ বাড়ির একটা টান তার মধ্যে থেকেই যায়৷ চতুষ্পদ জন্তুর চামড়া দিয়ে আজ কাল অনেক কিছুই তৈরী করার জ্ঞান মানুষ লাভ করেছে৷ এক সময় মানুষ এই চামড়া দিয়ে তাঁবু বানিয়ে তাতে বসবাস করত৷ এক জায়গা থেকে তা সহজেই বয়ে নিয়ে অন্য জায়গায় খাটিয়ে বাস করত৷ আজও যাযাবর শ্রেনী তা করে থাকে৷ বুনন শিল্পের প্রথম উপাদানও ছিল মানুষের জন্য এই পশুর পশম৷ এ গুলো চিরস্থায়ী নয়, এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই থাকে এগুলোর স্থায়িত্ব৷
৮১/وَاللّهُ جَعَلَ لَكُم مِّمَّا خَلَقَ ظِلاَلاً وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْجِبَالِ أَكْنَانًا وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُم بَأْسَكُمْ كَذَلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُونَ
অর্থ;-আল্লাহ সৃজিত বস্তু দ্বারা ছায়া করে দিয়েছেন৷ এবং পাহাড় সমুহে তোমাদের জন্য আত্মগোপনের জায়গা করে দিয়েছেন৷ আর তোমাদের জন্য পোষাক তৈরী করে দিয়েছেন, যা তোমাদেরকে উত্তাপ ও বিপদে রক্ষা করে৷ এমনই ভাবেই তিনি তোমাদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহের পূর্ণতা দান করেন, যাতে তোমরা আত্ম সমর্পণ করো৷
# রৌদ্রে ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন৷ যখন মানুষ ঘর বানাতে জানত না তখন মানুষ পাহাড়ের গুহায় বাস করত বা পদব্রজে ভিন দেশে যেতেও পথে পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিত৷ আসহাবে কাহাফও এই পাহাড়ের গুহায় অবস্থান করে ছিলেন৷ শীত গৃষ্মের হাত থেকে বাঁচার উপযুক্ত পোষাক তৈরীও তিনি শিখিয়েছেন৷ যাতে করে মানুষ তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়৷ আর এই কৃতজ্ঞতাই মুসলীমের বৈশিষ্ট৷ এই ‘তুসলীমুন’ শব্দটি হতেই ‘মুসলীমুন’ শব্দটি এসেছে৷ মুসলীমুন কারক আর ‘তুসলীমুন’ ক্রীয়া৷
৮২/فَإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلاَغُ الْمُبِينُ
অর্থ;-যদি তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শণ করে তবে আপনার কাজ হল সুস্পষ্ট ভাবে তা পৌঁছে দেওয়া মাত্র৷
৮৩/يَعْرِفُونَ نِعْمَتَ اللّهِ ثُمَّ يُنكِرُونَهَا وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُونَ
অর্থ;-তারা আল্লাহর অনুগ্রহ চিনে, এর পর অস্বীকার করে এবং তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ (কাফের) ৷
# আল্লাহর অনুগ্রহ সকলেই বোঝে কিন্তু স্বীকার করেনা অনেকে৷ যারা স্বীকার করে, আরও বুঝতে চায় তাদেরকে বুঝিয়ে দেবার দায়িত্ব আল্লাহর রসুলের৷ কিন্তু যারা বুঝেও বোঝেনা অস্বীকার করে তাদের কাছে আল্লাহর বাণী সুষ্ঠ ভাবে পৌঁছে দেওয়া মাত্র৷
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লিখাগুলো পড়লে হৃদয় কেঁপে উঠে বার বার। আল্লাহ তা’ আলা আমাদেরকে কোরআনের আলোকে চলার তৌফিক নসীব ক্রুন। আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন