সুতরাং যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে তারা তাদের অধিনস্থ দাস দাসীদেরকে তাদের জীবনোপকরণ থেকে এমন কিছু দিতে সম্মত হয়না যে, তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যাবে৷ তবেকি তারা আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করে!
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৬ জুলাই, ২০১৬, ০১:৩৭:০৬ রাত
সুরা আন নাহল রুকু;-১০ আয়াত;-৭১-৭৬
৭১/وَاللّهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِي الْرِّزْقِ فَمَا الَّذِينَ فُضِّلُواْ بِرَآدِّي رِزْقِهِمْ عَلَى مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيهِ سَوَاء أَفَبِنِعْمَةِ اللّهِ يَجْحَدُونَ
অর্থ;-আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন কতককে কতকের উপর জীবনোপকরণের ব্যাপারে৷ সুতরাং যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে তারা তাদের অধিনস্থ দাস দাসীদেরকে তাদের জীবনোপকরণ থেকে এমন কিছু দিতে সম্মত হয়না যে, তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যাবে৷ তবেকি তারা আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করে!
# আল্লাহ তায়ালা অর্থ সম্পদে মানুষের কাউকে কারও উপরে শ্রষ্ঠত্ব দিয়েছেন৷ (যদিও সমাজ তন্ত্রীরা বলবে এটা আল্লাহর ব্যাপার নয়, বন্টন বৈষম্যই এর জন্য দায়ী৷) ঠিক তেমনই আবার বিদ্যা বুদ্ধি, জ্ঞান গরিমা, শক্তি সামর্থ, যোগ্যতা ও সকলকে সমান দেন নি৷ যাকে অর্থ সম্পদ বেশী দেওয়া হয়েছে তারা কখনই তাদের অধিনস্থ দাস দাসীদের মাঝে তা বন্টন করে তাদেরকে কোন দিনই সম পর্যায়ে আনতে চাইবেনা৷ ঠিক তেমনই মক্কার মুশরিকগন তাদের আরাধ্য দেবতাদের আল্লাহর অধিনস্থ বলেই মনে করত৷ অতএব তারা কেমন করে আল্লাহর সমান হবে৷ এ আয়াতে আল্লাহ তাদের ধারণাকে খণ্ডন করলেন৷
৭২/وَاللّهُ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنْ أَزْوَاجِكُم بَنِينَ وَحَفَدَةً وَرَزَقَكُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ أَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُونَ وَبِنِعْمَتِ اللّهِ هُمْ يَكْفُرُونَ
অর্থ;-আর আল্লাহ তোমাদেরই মধ্য হতে তোমাদের জোড়া পয়দা করেছেন এবং তোমাদের যুগল থেকে তোমাদের পুত্র পৌত্রাদী দিয়েছেন এবং তোমাদের উত্তম জীবনোপকরণ দিয়েছেন৷ অতএব তারা কি মিথ্যা বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে৷
# প্রত্যেক প্রাণীর জোড়া আল্লাহ তায়ালা ঐ প্রাণীর জিন হতেই সৃষ্টি করেছেন আর তা থেকেই তার বংশ বৃদ্ধি করে করে দুনিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন৷
৭৩/وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللّهِ مَا لاَ يَمْلِكُ لَهُمْ رِزْقًا مِّنَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ شَيْئًا وَلاَ يَسْتَطِيعُونَ
অর্থ;-আর তারা আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুর ইবাদত করে যে, তাদের জন্য ভূ মণ্ডল ও নভো মণ্ডল থেকে সামান্য রুজী দেওয়ারও অধিকার রাখে না৷ এবং তাদের কোন ক্ষমতাও নেই৷
# এ আয়াতে মুশরিকদের দেব দেবীর যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে৷ বলা হয়েছে যে তারা এমন কিছু বস্তুর উপাসনা করে যারা তাদের জন্য আসমান জমীন হতে সামান্য রুজীরও ব্যবস্থা করার যোগ্যতা রাখেনা৷
অথচ তারা ক্বাবার তাওয়াফের সময়, ‘লাব্বায়েক লা শরিকা লাকা লাব্বায়েক’ এর সাথে বলত, ‘ইল্লা শরিকান তামলেকুহু অমা মালাক’৷ তোমার কোন শরিক নাই শুধু মাত্র ঐ শরিক, যাদের মালিকও তুমি৷ এতে বোঝা যায় তাদের দেবতাদের তারা আল্লাহর অধিনস্থ বলেই জানত৷ এ যেন সেই নাসারাদের একের ভিতর তিন আর তিনের ভিতর এক, তৌহীদের সাথে শির্কের মিশ্রন৷
৭৪/فَلاَ تَضْرِبُواْ لِلّهِ الأَمْثَالَ إِنَّ اللّهَ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
অর্থ;-অতএব আল্লাহর কোন সাদৃশ্য (মিশাল) সাব্যস্ত করোনা৷ নিশ্চয় আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জাননা৷
# যদিও আল্লাহর কার্যাবলী বোঝাতে, আল্লাহর হাত, আল্লাহর কূরসী প্রভৃতি শব্দ বলা হয়ে থাকে, আমরা পড়ে এসেছি, আল্লাহর সাদৃশ্য (মিশাল) অতি উত্তম৷ সুরা শো’য়রায় পাওয়া যাবে, ‘তার সাদৃশ্য কেউ নেই’৷ এ আয়াতে তার মত কিছু বা তার সাদৃশ্য কল্পনা করাকে নিষেধ করা হয়েছে৷ কারণ আমরা ‘আলাম এ খালক’ এর বাসিন্দা৷ আমাদের কল্পনা সসীম৷ আর আল্লাহ অসীম৷ অসীম আল্লাহকে সসীমের মাঝে কল্পনা করা সমিচীন নয়৷
৭৫/ضَرَبَ اللّهُ مَثَلاً عَبْدًا مَّمْلُوكًا لاَّ يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ وَمَن رَّزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَجَهْرًا هَلْ يَسْتَوُونَ الْحَمْدُ لِلّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ
অর্থ;-আল্লাহ একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, অপরের মালিকানাধীন গোলামের যে, কোন কিছুর ক্ষমতা রাখেনা এবং এমন একজন যাকে আমি নিজের পক্ষ হতে চমৎকার রুজী দিয়েছি, অতঃপর সে তা থেকে ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে৷ উভয়ে কি সমান হয়? সব প্রশংসা আল্লাহর, কিন্তু অনেক মানুষ জানেনা৷
৭৬/وَضَرَبَ اللّهُ مَثَلاً رَّجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا أَبْكَمُ لاَ يَقْدِرُ عَلَىَ شَيْءٍ وَهُوَ كَلٌّ عَلَى مَوْلاهُ أَيْنَمَا يُوَجِّههُّ لاَ يَأْتِ بِخَيْرٍ هَلْ يَسْتَوِي هُوَ وَمَن يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَهُوَ عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
অর্থ;-আল্লাহ আর একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, দু ব্যক্তির একজন বোবা, কোন কাজ করতে পারেনা৷ তাই সে তার মনিবের গলগ্রহ৷ মনিব তাকে যেখানেই পাঠায় সে সঠিক কিছু করে আসতে পারেনা৷ সে কি সমান হবে ঐ ব্যক্তির যে, ন্যায় বিচারের আদেশ করে এবং সরল পথে রয়েছে!
# উপরের দুটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দুটি ভিন্ন চরিত্রের উদাহরণ দিয়েছেন, এক জন অকর্মন্য গোলাম, মনিবের কোন উপকার তো করতেই পারেনা কিন্তু অন্ন ধ্বংস করে৷ আর অন্য জন মনিবের সঠিক কাজই করে৷ ঠিক যেন তেমনই দু জন আল্লাহর বান্দা, যার একজন গলগ্রহ৷ আল্লাহর দুনিয়ার সকল কিছুতেই ভাগ বসায় অথচ আল্লাহর কোন কাজই করেনা৷ অপর পক্ষে অন্যজন আল্লাহর সঠিক পথে থাকে৷ ‘আমর বিল মা’রুফ ও নেহী আনিল মুনকার’ করে আপন মালিকের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেয়৷ এরা উভয়ে কোনদিন এক হতে পারে না৷
বিষয়: বিবিধ
১৩৭০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক সুন্দর মান সম্মত বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনা মাশাআল্লাহ। জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনি ও আপনার পরিবারের সকলের জন্য ঈদ মোবারক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন