প্রবাসে রোজা পালন,( ব্লগে রমজান আলোচনা) &&& [ঐচ্ছিক[&&&

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০২ জুলাই, ২০১৬, ০৬:২৭:১৩ সন্ধ্যা



প্রবাসের চাকচিক্য জীবনধারা আর প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদীর সহজ লভ্যতা সম্পর্কে যারা শুধুই অবগত তারা সেই প্রবাদ বাক্যের মত মনে মনে ভেবে থাকবেন, “ওখানে সকল সুখ আমার বিশ্বাস। “আর যারা প্রবাসে আমার মত ওসী, ডিসী’র (Onion Cutter, Dish Cleaner) কাজ করেন তারা ভাবেন, হায়রে কেনই এলাম বিদেশে, আজ দেশে চলছে কতই না আনন্দ, ভোরের সেইরী, সন্ধ্যায় মুটামুটি পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে ইফতার, মসজিদে মসজিদে খতম তারাবী, জুমাতুল বিদা তার পর সাধ্যমত কেনাকাটা ঈদ। কতই না আনন্দ ছিল জীবনে।

আমার সাথে সব প্রবাসী একমত হবেন এমনটি মোটেও নয়। সে দাবীও করিনা। যারা রাষ্ট্রদূত বা সহযোগী হয়ে আসেন, কিংবা তাদের সহযোগী, কিংবা উচ্চপদে চাকরী নিয়ে আসেন আর পরিবার নিয়ে বাস করেন, তাদের রোজায় দেশীয় আমেজের অভাব ছাড়া মুটামুটি রোজা ভালই কাটে। আর যারা সাধারণ শ্রমিকের চাকরী নিয়ে প্রবাস করেন আরও ব্যাচেলর থাকেন কিংবা ধনীর দুলাল যারা লেখা পড়া করতে প্রবাসে আসেন, তাদের অধিকাংশের অবস্থা একই বলা যায়, সব চাইতে করুন। নিজে রান্না করে খেতে হয়। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর সেটা ভাল লাগেনা কিংবা সিদ্ধ পোড়া যাই পারে তার সময় জোটে না। তবে, সময় করে উঠতে পারলে ইফতারটা মসজিদে করা যায়। যদিও মসজিদ সবার নাগালের ভিতর থাকে না। এখন আসি নিজের কথায়।

আমার বলতে পারেন প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা বহু মূখী। এক দুই করে ২৩টা রমজান মাস যাচ্ছে এই প্রবাস জীবনে। প্রথম ছয় বছর বন্ধুর ফ্যামেলীতে ব্যাচেলর ছিলাম। তারা মুসলীম নয়। তাই রোজা নামাজ ইফফতার এ তিনটা সম্পূর্ণ আমার নিজস্য এখ্তেয়ারে ছিল। স্বাভাবিক রাান্নার চিন্তা, সাথে সেহরীর খাবারে অসুবিধা ছিলনা। মাঝে সাঝে চপ, বেগুনি ও পিঁয়াজিও তৈরী হত। বেশীর ভাগ সাপ্তাহিক ছুটির একদিন। যেহেতু আমার কাজটি ছিল হোটেল ও রান্নার সাথে জড়িত, আর কলিগরা অধিকাংশই মুসলীম রোজাদার তাই ফাঁকে ফুকে নিজেরাই শরবতের সাথে কিছু বানিয়ে রাখতাম। কিন্তু সমস্য হত ইফতারের সময়। একজন দুজন হলে ঐ সময়টা ব্রেক নেওয়া যেত। কিন্তু অনেক জন হওয়ায় ব্রেক পাওয়া যেতনা। আর কানাডার সাদারা সন্ধ্যার আগেই ডিনার শুরু করে। আর তা বিরামহীন ভাবে চলতে থাকে প্রায় ধম্যরাত পর্যন্ত। তাই প্রায় দিনই এক হাতে তং নয় ফ্রাইপ্যান অন্য হাতে পানির গ্লাস নিয়ে ইফতার হত। নামাজের সময়ও নীরবে চলে যেত। আমার ডিউটিটা ছিল আগা গোড়াই বিকাল শিফটে।

তা স্বত্বেও অন্ততঃ আমার আজ বলতে বাধা নেই যে, ৯০-৯৫% মুসলীমের দেশে মায় পাকিস্তান থাকা অবস্থায়ও ইসলাম কে যতটুকু না চিনে ছিলাম জেনে ছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশী এই ননমুসলীমের দেশে এসে চিনেছি। বলা যায় আমরা যেমন অক্সিজেনের মধ্যে বাস করে অক্সিজেনকে চিনিনা তবে জানি, ঠিক তেমনই। এখনে যে যতটুকুই করে তা অন্তর দিয়েই করে। আছে উৎসাহ উদ্দিপনা। ইসলামকে প্রচার করার স্বতস্ফুর্ত প্রচেষ্টা। চাক্যচিক্যদার মসজিদ নাই বটে, কিন্তু সেখানে হুদা আছে। বহু মসজিদে বেতনভূক ইমাম নেই, তাই বলে কোন ওয়াক্তের নামাজ অনাদায় থাকে না। সারা রমজানে ফ্রী ইফতারও সরবরাহ হয়ে থাকে। তাবলীগের কার্যক্রমও চোখে পড়ার মত। চাঁদা আদায়ের রশিদ হাতে কাউকে রাস্তায় বা বাস স্ট্যাণ্ডে দেখা যায়না।

এক দিনের একটা ঘটনা না বল্লে নয়। ঐ সয়টা আমার জেনারেল শিফট ছিল। ছুটির পর বাসায় এসে ইফতারটা করা যেত। এদেশে (কানাডায়) আপনার গন্তব্য পথ যদি এক ঘন্টার হয় তবে নিশ্চয়তা আছে সরকার নিয়ন্ত্রীত যান বাহনে আপনি এক ঘণ্টাতেই যেতে পারবেন। দূর্ঘটনা বা প্রাইভেট কারে এতটা নিশ্চয়তা থাকে না। আমি রোজই বাসায় এসেই ইফতার করি। ইফতারে থাকত ফল মূল আর খেজুর। বর্তমানে অনেক হোটেলে প্লেটে সাজনো ইফতারও পাওয়া যায়। পিঁয়াজি বেগুনি সিঙ্গাড়া জিলাপী যত্র তত্র মেলে। জিলাপী মিষ্টি একটু কষ্ট করলে আগেও পাওয়া যেত। উন্নত ধরণের খেজুর সব সময়ই পাওয়া যেত, এখন আরও বেশী ও সহজলভ্য হয়েছে।। সে দিন ছিল শীত কালের স্নো পড়ার মওসুম। কোন কোন দিন মুষলধারে স্নো পড়ে, সাথে ঝড়ো হাওয়াও থাকে। রাস্তা ঘাটে গাড়ি ঘোড়া কমে যায়। গতি হয় ধীর। ছুটি ঠিক সময়েই হয়েছিল। গাড়ি ধীর গতির কারণে আর ড্রাইভারে ভূলে আমাকে নির্দিষ্ট স্টপ ছেড়ে এক স্টপ দূরে নামতে হয়েছিল। তাই অতিরিক্ত পাঁচ মিনট সহ দশ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে প্রায় বিশ মিনিট লেগে ছিল। ঘড়ি জানালো ইফতারের সময়। কিন্তু আমি তখনও বেশ দূরে আর এমনই অবস্থা আশে পাশে কোন দোকানও নেই। অগত্যা পথের পাশের এক মুঠো স্নো দিয়েই ইফতার সারলাম।

ছয় বছর পর আমার ফ্যামেলীকে আনার পর শুধু কর্মস্থলে সময়ের অসুবিধা ছাড়া মোটামুটি বাড়িতে দেশী ষ্টাইলেই ইফতার হয়ে চলেছে। আর ঘরে বানানো ইফতার কর্মস্থলে নিয়েগিয়ে ইফতার করতাম।। ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেত। স্কুলে বা কাজে রোজা রাখা বা সময় করে নামাজ পড়া বা বোরখা হিজাবে কোন বাধা বা কারও বিরুপ মন্তব্য কেউ কোনদিন শোনেনি। এ দেশে যার পেট আছে। সামর্থ আছে সুস্থও বটে তাকে কাজ করতেই হবে। দেশের লোক এ দেশের বেতনের কথা শুনলেই ক্যালকুলেট করে অবাক হয় এই ভেবে যে, এত টাকা এরা করে কি? তারা কষ্মিন কালেও ভাবেনা যে, ‘হাতী যেমন খায় তেমনই ল্যাদায়’। ছেলে মেয়েদের স্কুলের খরচ সরকারী অনুদানেই চলে যেত। আমার ইনকামে সংসার চললেও বাড়ি ভাড়া বা মর্টগেজের জন্য আমার গিন্নীকে কাজ করতেই হত। তার ইফতারের খবরটা আরও বেদনা দায়ক। কাজটা বেশ দূরে। ছুটির পর বাসায় এসে ইফতারের সম্ভাবণা ছিলনা। তাই তার ভ্যানিটিতে কয়য়েকটা খেজুর আর পানির বোতল থাকত। পথিমধ্যে বাসে থাকা অবস্থায় বসার যায়গা পেলে বসে নয়ত দাঁড়িয়েই খেজুর আর পানি খেয়ে সপ্তায় পাঁচদিন ইফতার করতে হত। বেশ কয়েক বছর এমনটাই ছিল।

এখন সময় বদলেছে। আমরা দুজনেই পেনশন ছাড়া অবসরে। দুই মেয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে নিকট দুরত্বে থাকে। দুজনারই বাচ্চা ছোট হওয়ায় কেউই কাজ করেনা। জামাইদের বেতনেই চলে যায়। আর আমার ছেলে ও আমার সাথে থাকা ভাইপো, বড় বউমা কাজ করে। তাতেই আল্লাহ ভাল রেখেছে। বর্তমানে আমাদের রোজা ১৭ ঘণ্টার। আপনাদের শুভ কামনা বা দোওয়া আশা করে। এখন তবে আসি।

বিষয়: বিবিধ

১৫৪১ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373774
০২ জুলাই ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:০২
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! মাশ-আল্লাহ খুব সুন্দর লেখা পড়ে জানতে পারলাম প্রবাসের রমাদ্বান সম্পর্কে। আল্লাহ সবার জন্যেই সহায়ক হোক। আমিন।
০২ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:০৭
310177
শেখের পোলা লিখেছেন : অ আাইকুমুস সালাম অরহমাতুল্লাহে অবরকাতুহু। আপনিও মাশাআল্লাহ প্রবাসী, আপনার অভিজ্ঞথতার সাথে মিলবে না বলেই মনে করি।আগাম ঈদের শুভেচছা সহ ধন্যবাদ রইল।
373787
০৩ জুলাই ২০১৬ রাত ১২:০৫
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আপনার প্রবাস কাহিনী ভালই লাগলো, প্রবাসে সব চেয়ে কষ্ট লাগে কাপড় কাচা ও পাক করা।
আপনার অতীত জেনে ভালো লাগলো। অনেক অনেক ধন্যবাদ
০৩ জুলাই ২০১৬ রাত ১২:২৫
310180
শেখের পোলা লিখেছেন : ভারী কাপড় এখানে বাইরে মেশিনে কাচা ও শুকানো যায়, আর রান্না করা আসলেই কষ্টের। অনেকে গোশ্ত রানতে পারলেও মাছ পারেনা। তার চেয়ে বড় সমস্যা সময় পাওয়া। ধন্যবাদ।
373788
০৩ জুলাই ২০১৬ রাত ১২:১৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।
ইউরোপ আমেরিকায় এখন নাকি রমজানে যে আমেজ পাওয়া যায় সেটা এই দেশ থেকে যেন উঠে গেছে।
০৩ জুলাই ২০১৬ রাত ১২:২৮
310181
শেখের পোলা লিখেছেন : যাই থাক হাঁক ডাক নেই, নেই গুলশান আর চক বাজারের ইফতার। ধন্যবাদ।
373795
০৩ জুলাই ২০১৬ রাত ০৩:০২
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : খুবই ভালো লাগলো আপনার লেখাটা | এই হাসি কষ্ট নিয়েইতো বিদেশে আমাদের রোজা |আমিও বলি দেশে থাকতে ইসলামকে যত না চিনেছি তার চেয়ে অনেক বেশি চিনেছি আমেরিকায় এসে |
০৩ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:৫৪
310230
শেখের পোলা লিখেছেন : অন্ততঃ আমি নিশ্চিত যে প্রবাসেই প্রকৃত ইসামের পথের সন্ধান পেয়েছি। আপনাকে ধন্যবাদ৷
373800
০৩ জুলাই ২০১৬ রাত ০৩:৪৫
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মাশাআল্লাহ খুবই ভালো লাগলো আপনার লেখা দারুল আমান ট্রাষ্ট মসজিদ টরেন্টো আপনি চিনেন..? ফজল মোহাম্মদ ভাইকে এবং ইন্জিনিয়ার রুহুল আমিন ভাইকে ছিনেন..?জানাবেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
০৩ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:৫৭
310231
শেখের পোলা লিখেছেন : না চিনলাম না। কারণ মসজিদগুলি অনেক দূরে দূরে। কাছা কাছি গুলো ছাড়া অন্যগুলোর অবস্থান জানলেও নাম বা ব্যক্তিদের চিনা সম্ভব নয়। ধন্যবাদ আপনাকে।
373807
০৩ জুলাই ২০১৬ সকাল ০৬:০৭
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু । দাদা হুজুরের প্রবাস জীবন পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। সেই তুলনায় আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেক ভালো আছি। ১৬ বছর প্রতি রমজানে বাসায় নিজের হাতের ইফতার করি। আমি গোস্ত থেকে মাছকে প্রাধান্য দেই বেশি। তাই সাপ্তাহে পার চার পাচ দিন মাছ থাকে।

০৩ জুলাই ২০১৬ রাত ০৯:০০
310232
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ। রান্নার ঝামেলার কারণে প্রবাসী ব্যাচেলররা মাছ ছেড়ে গোশ্তই বেশী খায়। আমার বাড়ি সব রকমই এখন রান্না হয়। দাওয়াত রইল।
373818
০৩ জুলাই ২০১৬ সকাল ১০:৫২
হতভাগা লিখেছেন : আমাদের দেশের অনেক মাস্টার্স পাশ পোলাপান ওসব দেশে গিয়ে ওসি ডিসির কাজ করে যারা দেশে কি না এক গ্লাস পানিও নিজে ঢেলে খেত না ।
০৩ জুলাই ২০১৬ রাত ০৯:০৬
310233
শেখের পোলা লিখেছেন : দুই জন ডক্টরেট ধারী ও একজন প্রফেসরকে আমি নিজের কাছেই ঐ কাজ করতে দেখেছি। এ দেশে মূচী আর মন্ত্রীতে মানবতার বিষয়ে তফাত নেই। ডিউটির পরে জজ সাহেবও নিজেকে জজ বলে সুবিধা পাবার উপায় নেই। আমার ল ইয়ার ট্রেনে নিজের সিট আমাকে ছেড়ে নিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এটা আমার লাট সাহেবী নয় বরং তার উদারতা। ধন্যবাদ।
০৪ জুলাই ২০১৬ সকাল ০৯:৫০
310283
হতভাগা লিখেছেন : শুনেছি বাংলাদেশের বিখ্যাত এক রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী নাকি পেট্রোল পাম্পে কাজ করতেন ।

নিজের দেশে থাকলে / আসলে খুব ডাঁট ফাঁট দেখায়
377572
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:৩৯
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : মাইন্ড করবেন না
আমি কোন না কারনে ব্লগে আসতে পারিনাই অনেক দিন পরে ব্লগে আসছি
আপনার লেখা সুন্দর হয়েছে চমতকার
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:০১
313009
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকে ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File