ঁঁঁঁঁ রোজা, রমজান, কিয়ামুল লাইল ও ইইতেক্বাফ ঁঁঁঁঁ
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ৩০ জুন, ২০১৬, ০৬:০৯:৪০ সকাল
দ্বীন ইসলামের পাঁচটি আরকান যথা, কলেমা বা ইমান, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ব, জাকাত। এদের যাবতীয় হুকুম আহকাম পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ দ্বারাই সাব্যস্ত হয়েছে।
ইমান ও তৌহীদের বিষয়ে কোরআনের বহু স্থানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বহুবার বর্ণন করা হয়েছে। এর পর আসা যাক নামাজের কথায়। নামাজের হুকুম আহকাম কোন এক জায়গায় নয় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বিভিন্ন জায়গায় এসেছে। কোথাও বা অজুর কথা, কোথাও, কোথাও আপদ কালীন নামাজের কথা, কোথাও ভ্রমন কালীন নামাজের কথা, আবার কোথাও ওয়াক্তের কথা। এ ছাড়াও য়াক্তের কথা পূর্ণাঙ্গ ভাবে কোরআনে নাই, তা এসেছে হাদীশে। ঠিক তেমনই জাকাতের পূর্ণাঙ্গ হুকুম কোরআনে নেই। জাকাতের পরিমান, কে কাকে কতটুকু দেবে তা হাদীশ দ্বারাই সাব্যস্থ হয়েছে। আবার দেখা যায় হজ্জ্বের বিষয়টি মক্কী ও মাদানী উভয় কোরআনেই এসেছে। সুরা বাকারায় ২৪ ও ২৫ রুকুর প্রায় সবটুকুই হজ্জ্বের বিষয়ে বলা হয়েছে। হজ্জ্ব নামের একটি সুরাই কোরআনে রয়েছে। আবার হজ্জ্বের ফরজ হওয়ার কথাটি এসেছে ‘সুরা আলে ইমরাণে’৷
এখন আসা যাক সিয়াম বা সওমের কথায়। যাকে আমরা রোজা বলে থাকি। দ্বীন ইসলামে এটিও একটি বিশেষ ‘রুকুন’। রোজা কি? কি তার ফজিলত, কি তার প্রথমিক হুকুম, চুড়ান্ত হুকুমই বা কি! রমজান মাসের সাথে কি তার সম্পর্ক! কিয়ামুল লাইল বা কি! যাবতীয় আল্লাহ তায়ালা কোরআনের সুরা বাক্বারার ২৩ নং রুকুর কয়টি আয়াতেই সীমাবদ্ধ করেছেন। এটি ব্যতিক্রমীও বটে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى
الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ 183
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।
أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ وَأَن تَصُومُواْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ 184
গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর যারা সামর্থ রাখবে তারা মিসকীনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার।
আলোচ্য আয়াত দুটি রোজার প্রাথমিক পর্যায়ের ধারণা দেয়। বলা হয়েছে যে, শুধু তোমাদের জন্যই একে ফরজ করা হয়নি বরং তোমাদের আগের উম্মতদের জন্যও ফরজ করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য হল যাতে তোমরা ‘তাকওয়া’ অর্জন করতে পার।
একে প্রাথমিক পর্যায় এ জন্য বলা হয়েছে কারণ, অন্যান্ন রুকুন যেমন সালাত বা নামাজ সম্পর্কে মক্কাবাসীদের কিছু ধারণা ছিল, যদিও তার নিয়ম কানুন এখনের মত ছিল না। নামাজের নামে তারা তালি সিটি বাজাত, বাদ্য বাজনা বাজাত। দান খয়রাত বা মুসাফীর হজ্জ্বযাত্রীদের পানাহার করানোকে সওয়াবের কাজ ভাবতো। কাবার তওয়াফে তারা অভ্যস্থ ছিল, এমনকি উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করাকে বড়ই সওয়াবের বিষয় মনে করত। কিয়ামে আরাফা, কিয়ামে মিনা তারা পালন করতো। কিন্তু সিয়াম বা রোজার বিষয়ে তাদের কোন ধারণাই ছিলনা। তারা ছিল ইসমাঈলী। হয়ত হজরত ইব্রাহীম আঃ এর দ্বীনে রোজার বিষয়টি না থেকে থাকবে। তবে ‘সওম’ শব্দটির সাথে তাদের পরিচয় ছিল। এটি তারা তাদের ঘোঁড়ার উপর প্রয়োগ করত।
তারা ছিল মরুভূমীর দুর্ধর্ষ লুটেরা বেদুইন জাতী। লুটপাট করে দ্রুত পলায়ণই ছিল তাদের জীবিকা। উট মরুভূমীর বাহন, দীর্ঘদিন পানাহার ছাড়া মরুভূমীর ধুলি-ঝড়, লু-হাওয়ায় টিকে থাকতে অভ্যস্থ। কিন্তু উট দ্রুতগামী নয়। তাদের প্রয়োজন দ্রুতগামী বাহণ ঘোঁড়া। ঘোঁড়া ক্ষুধা-তাপ সহিষ্ণু নয়। তাই ঘোঁড়াকে প্রশিক্ষন দিতে তারা তাকে পানাহার বঞ্চিত করে লু-হাওয়া মুখী করে বেঁধে রাখত। সওমের শব্দগত অর্থই হল থেমে থাকা।
পরের আয়াতে বলা হয়েছে, যে রোজা তোমাদের জন্য ফরজ করা হল তা গননায় কয়েকটি দিন মাত্র। এ সময়ে যদি কেউ অসুস্থ থাকে বা সফরে থাকে তবে সে অন্য দিনে তা পুরা করে দেবে। সেকালে সফর ছিল বড়ই কষ্টকর। তাই কাযার ব্যবস্থা। সামর্থবানরা রোজার বদলে মিসকীনদের আহার্য দিলেও চলবে। আর যদি সে আনন্দচিত্তে রোজাও রাখে আর ফিদিয়া বা বদলা স্বরূপ মিসকীনকে আহার্যও দেয়, তাহলে তা হবে তার জন্য কল্যানকর। ‘মা’দুদাত’ শব্দটিকে জমা কিল্লাত বলে, যা এক অংক বা নয় সংখ্যাটির মধ্যে সীমাবদ্ধ। ‘সুরা বাক্বারার’২০৩ নং আয়াতে মা’দুদাত বলে তিন দিনকে বোঝানো হয়েছে। (মীনায় হজ্জ্বযাত্রীদের অবস্থান তিন দিনের হয়, তার জন্য মা’দুদাত শব্দ ব্যবহার হয়েছে।) রোজার তিন দিন হল প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখ, যা বণী ইস্রাঈলের জন্যও ফরজ ছিল। এ দুটি আয়াতে রোজার ফজিলত ও প্রাথমিক হুকুম সম্পর্কে জানা গেল। রসুল সঃ মদীনায় হিজরত করার পর ইহুদীদের আশুরার রোজা রাখতে দেখে কারণ জিজ্ঞাসা করায় জানলেন যে, এটি তাদের নাজাতের তারিখ। আশুরা বা দশ তারিখে তারা ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিল। তিনি ঘোষণা দিলেন, যেহেতু আমরা মুসা আঃ কে ইহুদী অপেক্ষা বেশী মান্য করি তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করব। এর পর এল প্রতি মাসে তিন দিনের রোজা। এ যেন তাদের রোজার অভ্যাসের প্রশিক্ষন। যা পরে মনসুখ হয়ে ঐচ্ছিকে রূপ নেয় আর ফরজটি রমজান মাসে এসে যায়।রসুল সঃ ঐ তিনদিনও পালন করতেন। এমনকি রসুলের একান্ত অনুসারীগণকে আজও পালন করতে দেখা যায়।
পরের দুটি আয়াতে পাওয়া যাবে সিয়ামের চুড়ান্ত হুকুম, রমজান মাসের সাথে সম্পর্কও অন্যান্ন আহকাম। মুসহাফে যদিও আয়াত দুটি পরেই এসেছে কিন্তু তাফসীরে ইবনে কাসীর প্রনেতা ইমাম রাজী রঃ ও আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রঃ এর মতে আয়াতগুলির নজুল অনেক পরে হয়েছে। যা প্রথম আয়াতদ্বয়ের হুকুমকে মনসূখ করে ঐচ্ছিক করে দিয়েছে।
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ
وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ 185
রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না।যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ববর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।
এ আয়াতেই পাওয়া গেল রোজার মাস রমজান। এ মাসেই মানুষের হেদায়েতের ওসিলা পবিত্র কোরআন নাজিল হয়, যাতে রয়েছে পথ নির্দেশনা, ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্যের প্রমান। জীবদ্দশায় যে জন এ মাসটি পাবে তার জন্য রোজা পালন আবশ্যিক। অসুস্থ ও মুসাফিরের জন্য আগের মতই কাযার বিধান বলবৎ থাকবে। আল্লাহ বান্দার জন্য সহনীয়টাই পছন্দ করেন। অতএব, হটকারিতায় অসুস্থতার মাঝে বা কষ্টকর ভ্রমনে রোজা পালনে কোনই মহত্ব নেই। ফিদিয়ার বিষয়টি এখানে নাই। রসুল সঃ রোজায় সক্ষমের বদলে অক্ষমের জন্য মিসকীনকে বদলা দেবার বিধানটি চালু রেখেছেন।
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَآئِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ عَلِمَ اللّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ فَالآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُواْ مَا كَتَبَ اللّهُ لَكُمْ وَكُلُواْ وَاشْرَبُواْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّواْ الصِّيَامَ إِلَى الَّليْلِ وَلاَ تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَقْرَبُوهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্নপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরন কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে।
সাবেকা উম্মতের জন্য রোজা শুরু হত রাতে খেয়ে দেয়ে শোয়ার সাথে আর শেষ হত পরের দিন সন্ধ্যায়। আল্লাহ উম্মতে মোহাম্মদী সঃ এর জন্য তা সহজ করে ভোরের সাদা রেখা উঠার আগে থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত বলবৎ করলেন। বাকী সময় পানাহার সহ স্ত্রী সহবাস বৈধ হয়ে গেল। এ আয়াতে সেহরীর বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে গেল, যাকে রসুল সঃ বরকতময় বলেছেন।
যেহেতু রসুল সঃ ইহুদীর মত আশুরার রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাতে সাহাবীদের ধারণা ছিল যে, তাদের রোজার নিয়ম কানুন ইহুদীদের মত খেয়ে ঘুমাতে যাবার সাথেই শুরু হয়ে পরের দিন সুর্যাস্ত পর্যন্তই হবে। আবেগের বশে অনেকে রাতে স্ত্রী সহবাস করে নিজের মনের সাথেই সঠিক বেঠিক দ্বন্দে ভুগতেন। এ আয়াতে তাদের সে প্রতারণা থেকে রেহাই দেওয়া হল। আর চিরতরের জন্য বলবৎ হয়ে গেল। তবে এইতেকাফ অবস্থার কটা দিনে তা অবৈধই রয়ে গেল। আয়াতের শেষে একটি সাবধান বাণী দেওয়া হয়েছে এই বলে যে, এটা আল্লাহর সীমানা, এর কাছেও যেও না। মনে রাখতে হবে আল্লাহর ‘হদ’ বা সীমানা দুই প্রকার। একটি সীমানা অতিক্রম না করতে বলা হয়েছে। আর দ্বিতীয়টি সীমানার কাছেই যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে দ্বতীয় স্তরেরটিই বলা হয়েছে। এতো গেল কোরআনের কথা। এখন আসা যাক হাদীশের দিকে।
হজরত সালমান ফারসী রাঃ বর্ণীত বায়হাকীর একটি হাদীশে বলা হয়েছে,-“খাতাবানা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ফিল আখেরে মিন শা’বানা, ফা ক্বা লা ইয়া আইয়ুহান্না স, ফাক্বাদ আজাল্লাকুম শাহরুন আজিমুন, শাহরুম মুবারাকুন, শাহরুন ফিহে লাইলুম মুবা রাকুন খাইরুম মিন আলফে শাহরিন। জায়ালাল্লা হু সিয়া মাহু ফরি দাতান ওয়া কিয়ামু লাইলেহি তাতাওয়ান, ইলা আখেরিহি-----।
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক কে এই সাহাবী সালমান ফারসী। তিনি ছিলেন ইরানের লোক। হজরত ইব্রাহীম আঃ এর পিতার মত ইনার পিতাও ছিল অগ্নি পূঁজারী। বিরোধিতা করায় ইব্রাহীম আঃ এর মত ইনাকেও ঘর ছাড়তে হয়। ইনিও শাম দেশে চলে যান। সেখানে তিনি ঈশায়ী ধর্ম গ্রহণ করেন ও অনেক রাহিবের সংস্পর্শে আসেন। শেষ রাহিবের মৃত্যু আসন্ন হলে তিনি জানান যে তিনি তার কাছে অনেক কিছুই শিখেছেন তবুও আরও জানার জন্য তার অবর্তমানে কার কাছে যাবেন। মৃত্যু পথযাত্রী রাহিব তাঁকে জানান যে তিনি নিশ্চিত না হলেও যতটুকু জেনেছেন তাতে বলা যায় যে শেষ জামানার নবীর আবির্ভাবের সময় আসন্ন। তিনি খেজুরের দেশে আবির্ভূত হবেন, তাঁর কাছে যেও। ঐ রাহিবের মৃত্যুর পর তিনি এক কাফেলার সাথে মক্কার পথে রওয়ানা হন। পথে ডাকাতের কবলে পড়ে ক্রীতদাস রূপে বিক্রি হয়ে যান। তাঁর মনিব তাঁকে নিজ দেশ মদীনায় নিয়ে আসে। এক সময় মদীনায় তিনি খবর পান যে মক্কায় কোন একজন নিজেকে শেষ জমানার নবী বলে দাবী করছে। তিনি ছিলেন ক্রীতদাসের শিকলে আবদ্ধ। তাই ইচ্ছা থাকলেও তিনি যেতে পারেন নি। প্রবাদ আছে যে, পিপাসার্তই কূঁয়ার কাছে যায়, কূঁয়া পিপাসার্তের কাছে আসে না। কিন্তু আল্লাহর এ পিপাসার্ত বান্দার কাছে স্বয়ং কূঁয়াই একদিন এসে হাজির হয়। জনাব রসুলুল্লাহ সঃ হিজরত করে একদিন নিজেই মদীনায় চলে আসেন। হজরত সালমান ফারসী তাঁর মনিবের কাছে কিছু খেজুর ও অনুমতি নিয়ে একদিন হুজুরের খেদমতে হাজির হন। নবীকে চেনার উপায় হিসেবে রাহিব জানিয়েছিল যে তিনি ফিদিয়া কবুল করবেন না তবে হাদিয়া বা তোফা কবুল করবেন। যাচাই করার মানষে তিনি রসুল সঃ কে খেজুরগুলি ফিদিয়া হিসেবে দিতে চাইলে রসুল সঃ বললেন যে তিনি ফিদিয়া নেন না, ও গুলো গরীবদের হক, তাদের দিয়ে দাও। তিনি তাই করে ফিরে এলেন। কিছুদিন পর পুনরায় মনিবের অনুমতি ও খেজুর নিয়ে এলেন ও এবার হাদিয়া বলে দিতে চাইলে রসুল সঃ তা গ্রহন করলেন। তিনি নিশ্চিত হলেন ও তৎক্ষনাৎ ইসলাম কবুল করলেন। মদীনায় কিছু সাহাবীদের ফুকারা সাহাবী বলা হত। তাদের কোন অর্থ সম্পদ ছিল না। তাঁরা সর্বদা দ্বীনের কাজ করতেন। হজরত সালমান রাঃ ছিলেন তাঁদেরই একজন। রসুল সঃ তাঁকে আহলে বাইতের মধ্যে শামিল বলেছেন। হাদীশটি এই সাহবীই বর্ণনা করেছেন। যার অর্থ হল,- শাবানের শেষ দিন রসুল সঃ এক খোৎবায় বললেন,”হে, লোক সকল, তোমাদের উপর একটি মর্যাদাপূর্ণ মাসের ছায়া ছেয়ে গেছে। মাসটি অত্যন্ত বরকত ময়। ।সেই বরকতময় মাসে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। উক্ত মাসের রোজাগুলিকে আল্লাহ ফরজ করেছেন আর রাতের বিষয়টি তোমাদের মর্জির উপর ছেড়ে দিয়েছেন।“
এ হাদীশটির সম্পর্ক রয়েছে, রোজা, রমজান মাস, একটি বিশেষ রজণী ও কিয়ামুল লাইলের সাথে। সুরা মুজাম্মিল দ্বারা রসুল সঃ এর জন্য কিয়ামুল লাইল ও তার সময় সীমার হুকুম দেওয়া হয়। একই সুরার শেষে সময়সীমাকে ঐচ্ছিক করা হয়। এ কিয়াম যা আমরা তাহজ্জুদ নামে জানি। রসুল সঃ এর জন্য ফরজ হলেও সাধারণের জন্য নফল তবে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ যা আজও উম্মতে মোহাম্মদীর অনেকে পালণ করে থাকে। যেহেতু রমজান বরকতময় মাস তাই এ মাসের তাহাজ্জুদও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন।
(মরহুম জনাব ইসরার আহমাদ সাহেবের বয়ান হতে)
https://www.youtube.com/watch?v=dZVR3SyEhTw
বিষয়: বিবিধ
১৬০৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন