মরহুম ডঃ ইসরার আহমাদ সাহেবের উর্দু মুন্তাখাব নিসাব এর সংক্ষিপ্ত বাংলা অনুবাদ। ( যার উৎসমূল ‘সুরা ওয়াল আসরে’।)

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৪ জুন, ২০১৬, ০৫:১৬:৩৫ সকাল

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

১/ وَالْعَصْرِ

২/ إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ

৩/ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ

পবিত্র কোরআনের ক্ষুদ্রতম সুরা গুলির মধ্যে এ সুরাটি একটি। নিয়ম মোতাবেক, তিন আয়াতের কমে কোন সুরা হয়না। আর তাই নামাজে সুরা ফাতেহার পরে কোন সুরা বা কমপক্ষে তিন আয়াত তেলাওয়াতের বিধান রয়েছে। অবশ্য যদি কোন আয়াত তিন আয়াতের সমান বা তার অপেক্ষা বড় হয় তবে তা ভিন্ন কথা। সেখানে এক আয়াতই যথেষ্ট।

কোরআন অবতীর্ণের ধারায় এ সুরাটি নবুওতের প্রাথমিক অবস্থার সুরা৷ সহজতর সুরাগুলির মধ্যে এটি একটি, কেননা সুরায় ব্যবহৃত শব্দগুলির বেশ কয়েকটি আমরা সচরাচর ব্যবহার করে থাকি৷ যেমন, ‘ইনসান’ ‘আমল’ ‘হক্ব’ ‘সবর’ প্রভৃতি।

প্রাথমিক সুরাগুলি মানুষকে চমকে দেবার উপযুক্ত যা আয়তনে ছোট হলেও তার অন্তর্নিহীত ভাব সুদূরপ্রসারী। এ সুরাটি তারই একটি।

অবতীর্ণের ধারা যত এগিয়ে গেছে সুরাগুলি আয়তনে বড় হয়ে চলেছে। ১৫/১৬ বছরে তা বিশাল রুপ ধারণ করেছে। যেমন, সুরা ‘বাক্বারা’, সুরা ‘আলে ইমরাণ’ ‘সুরা নিসা’ প্রভৃতি। মুসহাফে শেষের সুরাগুলিকে প্রথমে আর প্রথমের সুরাগুলিকে শেষে স্থান দেওয়া হয়েছে। সুরা ‘হূদ’এর প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে,- ১/الَر كِتَابٌ أُحْكِمَتْ آيَاتُهُ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِن لَّدُنْ حَكِيمٍ خَبِيرٍ

অর্থ;-‘আলিফ, লাম, রা’ এটি এমন কিতাব যার আয়াত সমুহ সুদৃঢ়, আর বিশদ ভাবে বর্ণনা হয়েছে এমন সত্তার তরফ থেকে যিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।

কোরআনেই বলা হয়েছে যে, প্রথমের ভাব-গাম্ভির্যপূর্ণ সুরাগুলির বিশদ ব্যাখ্যা পরে দেওয়া হয়েছে। ঠিক যেমন একটি আমের আঁটি প্রথমে দুটি পাতা ছেড়ে তার অস্তিত্ব জানান দেয়। পরে ক্রমে ক্রমে তা বিশাল বৃক্ষের আকারে পত্র-পল্লবে বিস্তৃতি লাভ করে, এ যেন তেমনই।

সুরার প্রথমেই মহান আল্লাহ ধাবমান সময়ের শপথ করেছেন বা সাক্ষী মেনেছেন।। আমরা শপথ করি চাক্ষ্যুসদর্শী কোন মহান ব্যক্তিত্বের। কেননা সাক্ষী তিনিই যিনি উপস্থিত থেকে বিষয়টি অবলোকন করেন। আল্লাহ তায়ালা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সদা বিরাজমান ও সর্বদর্শী৷ তাই তিনি শপথ করেন তাঁর সৃষ্টির যে কোন জিনিষ। অনাদী অনন্তকাল যাবত ধাবমান সময় সর্ববিষয়ের প্রত্যক্ষদর্শী৷ আল্লাহ এখানে তারই শপথ করেছেন ও আরবী ব্যাকরণের সম্ভাব্য সব উপকরণগুলি শপথের জন্য ব্যবহার করেছেন।

সাধারণ ভাবে সুরাটির অর্থ করলে দাঁড়ায়;-

শপথ প্রবহমান সময়ের, নিশ্চয়ই মানুষ ভীষণ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে, কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম করে এবং একে অপরকে সত্যের তাকীদ করে ও একে অন্যকে ধৈর্যের তাকীদ দেয়।

বিশেষ বিশেষ সুরাকে বিশেষ বিশেষ বিষয় বিবেচনায় শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন তৌহীদের বিষয়ে ‘সুরা ইখলাস’৷ ‘সুরা ফাতিহা’কে উম্মুল কোরআন বলা হয়েছে। ‘সুরা ফাতিহায়’ আমরা সিরাতাল মুস্তাকীমের কথা পেয়েছি; ‘সুরা আল আসর’ সেই সিরাতাল মুস্তাকীমের বৈশিষ্ঠমণ্ডিত। সিরাতাল মুস্তাকীমের নির্দেশনা রয়েছে সুরা আসর’এ৷

ইমাম শাফী রঃ বলেছেন যে, যদি কেউ শুধুমাত্র সুরা আল আসর’ নিয়ে গবেষণা করে তবে তার হেদায়েতের জন্য এ সুরাই যথেষ্ট। এ কথাটাই মুফতী মোহাম্মদ আবদুহু তাঁর আমপারার তাফসীরে নকল করে বলেছেন, ‘লাও লাম ইউনাজ্জিল মিনাল কোরআনে সিওয়া হা লাকা-ফাতিন্নাস’৷ কোরআন মজিদের এই ‘সুরা আল আসর’ ছাড়া যদি আর কিছুই নাজিল না হত তবুও তা মানুষের হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট ছিল। আমার মতে পুরা কোরআনের বিষয়বস্তু গুলির একটা ‘ইনডেক্স’ এ সুরায় পাওয়া যাবে।

জনাব শাহ ওয়ালী উল্লাহ রঃ তাঁর ‘ফওজুল কবির’ গ্রন্থে কোরআনের বিষয় গুলিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন। আমিও সেই পাঁচ ভাগেই ভাগ করি, তবে ভিন্ন আঙ্গিকে, ‘সুরা আসর’ এ ব্যবহৃত শব্দ গুলির ভিত্তিতে, এবং তা নিম্নরূপ।

(১) কোরআনের একটা বড় অংশ ইতিহাস রূপে বিস্তৃত, যা আম্বিয়া রসুলগনের অবস্থা, তাঁদের উপর আপতীত সংকট সমূহ, যা ‘নও ইনসানের’ জন্য ইতিহাস হয়ে আছে।

(২)আদীতে যা ঘটেছে, যেমন, আদম আঃ কে সৃষ্টি, ফেরেশ্তগণকে আদম আঃ প্রতি অবনত হবার আদেশ, আদম আঃ এর অবস্থান, এক কথায় বলা যায় ‘জামানা’ বা কাল এ সমস্তই তার অধীনে নিয়ে রেখেছে। সৃষ্টির আদী থেকে অন্ত পর্যন্ত এই কাল বা সময় যেন একটি লম্বা চাদরে ঢেঁকে রেখেছে। আর এই সময়ই যাবতীয় ঘটনার চাক্ষ্যুস সাক্ষী৷ কওমে নূহ আঃ কে বন্যায় তলিয়ে যেতে দেখেছে। দেখেছে কওমে লূত আঃ সহ অন্যান্নদের ধ্বংস হতে। এবং আজও যথারীতি অবলোকন করেই চলেছে। এ জন্যই ‘অয়াল আসর’ শব্দ এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। এর পর রয়েছে ইমান ও তৌহীদের কথা, তার দলীল, ইমানের বিরুদ্ধে যা ছিল তা রদ করার বিষয়ও এসেছে।

(৩) আমলে সালেহ এর কথা এসেছে। প্রথমে ব্যক্তি পর্যায়ে, একজন মানুষের স্বভাব চরিত্র কেমন হবে। তার পর পারিবারিক, পরিবারের সদস্যদের আচরণ কেমন হবে। এর পর বৃহৎ পরিসরে রাষ্টের নাগরিকদের আচরণ কেমন হবে। কোরআনে এ বিষয়েও বিভিন্ন ভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। এ সুরাতেও সেই আমলে সালেহের কথা এসেছে।

(৪) দাওয়াত ইল্ল্লাহ, দাওয়াত ইলাল হক,আল্লাহর পথে আহবান করা। আমর বিল মা’রুফ আর নেহি আনিল মুনকার, শাহাদাতে হক্, ইকামতে দ্বীন, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। পবিত্র কোরআনের এ বিষয়গুলিও এ সুরায় এসেছে।

(৫) সবর, ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানুস বেরু ওয়া রাবেতু, এ বিষয়টিও কোরআনে বর্ণীত হয়েছে যা এ সুরাটিতেও আছে। এ গেল সাধারণ ভাবে সুরাটির বক্তব্য বিষয়। এখন একটু বিশ্লেষণে যাওয়া যাক।

প্রথমেই বলা হয়েছে যে, মানুষ ধ্বংসের প্রান্তসীমায় অবস্থান করছে। বাস্তবিকই মানুষ দুঃখ দুর্দশা, দূরবস্থার মাঝেই দিনাতিপাত করছে। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই উদয়াস্ত প্রাণপাত পরিশ্রম করেও দুবেলার আহার যোগাতে পারেনা। কঠিন পীড়ায় কাতর সন্তানের মুখে ওষুধ তুলেদিতে পারেনা। এদের সেই কলুর বলদ বা ভারবাহী পশুর সাথে তুলনা করা যেতে পারে। তবুও এদের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। পশুর কোন দুশ্চিন্তা নেই, নেই কোন অনুশোচনা। তার সন্তানদের ভবিষ্যত বা পীড়ায় চিকিৎসার দুর্ভাবনা নেই। সর্বপরি নেই তার সৃষ্টিকর্তার সামনে জবাবদেহিতা। যা এত দুঃখ বঞ্চনার পরও মানুষকে মোকাবেলা করতেই হবে।

মনে হতে পারে অসহায় পরিশ্রমি মানুষই বুঝি শুধু এর শিকার। কিন্তু তা নয়। সবার মাঝেই রয়েছে দুঃখ বেদনা,বঞ্চনার হা-হুতাস। হয়ত তা ভিন্ন আঙ্গিকে। আল্লাহ এ কথা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন,- 1/لَا أُقْسِمُ بِهَذَا الْبَلَدِ

2/وَأَنتَ حِلٌّ بِهَذَا الْبَلَدِ

3/وَوَالِدٍ وَمَا وَلَدَ

4র/لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي كَبَدٍ

না, আমি শপথ করছি এই নগরীর, আর এই নগরীতে আপনার জন্য যুদ্ধকরা সিদ্ধ হবে। শপথ জন্মদাতার ও সন্তান সন্ততির, অবশ্যই আমি মানুষকে অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে সৃষ্টি করেছি।

গালিব বলেছেন, মৃত্যুর আগে মানুষ এ থেকে রেহাই পাবে কেমন করে? যদি মরণের পরেও রেহাই না পায় তবে কেমন হবে। এ কথা স্মরণ করে সিদ্দিকে আকবর হজরত আবু বকর রাঃ, যিনি আশারায়ে মুবাশ্শারার এক জন, তিনিও আক্ষেপ করে বলতেন, ‘হায় আমি কেন গাছের ডালের পাখি হলাম না! কেন আমি তৃণখণ্ডটি হলাম না, যার কোন জবাবদেহীতা নেই’। সুরা নাবায় এসেছে তারই সূর,- إِنَّا أَنذَرْنَاكُمْ عَذَابًا قَرِيبًا يَوْمَ يَنظُرُ الْمَرْءُ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ وَيَقُولُ الْكَافِرُ يَا لَيْتَنِي كُنتُ تُرَابًا

অর্থ;- আমি তোমাদের আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলা্ম, সেদিন মানুষ প্রত্যক্ষ করবে যা সে স্বহস্তে প্রেরণ করেছিল; আর তখন কাফের ব্যক্তি বলবে, হায় আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম!

কল্পণা করুন কপিলাবস্তুর রাজ কুমার, সিদ্ধার্থ যার পরবর্তি রাজা হবার নিশ্চিত সম্ভাবন। মানুষের দুঃখ দুর্দশা, ব্যাধি, জরা, মৃত্যুর কারণ ও তার প্রতিকারের চিন্তা করে তিরিশ বছর বয়সে সুন্দরী স্ত্রী, ফুটফুটে একরত্তি সন্তান আর রাজ মহল ছেড়ে বার হলেন। সারা জীবন বনে জঙ্গলে পাহাড়ে তপস্যা করে প্রতিকার বা নির্বাণ খোঁজার চেষ্টা করলেন। তিনি তা পেয়েছিলেন কিনা কিংবা কি পেয়েছেন তা আমাদের জানা নাই।

সেই ক্ষতিরই প্রান্তসীমায় মানুষের অবস্থান, যা খুসরীন শব্দ দ্বারা বোঝানো হয়েছে। তা থেকে নির্বান, নাজাত বা সাফল্য পাবার উপায়ও আল্লাহ এই ক্ষুদ্রতম সুরাটির মাঝে বলে দিয়েছেন। আর একজন মুসলীমের একমাত্র কাম্যই সেই নাজাত বা সাফল্য।

যা তার সকল জবাবদেহীতা সহজ করে আমলনামাখানি ডান হাতে এনে দেবে। তাকে আক্ষেপ করে বলতে হবেনা- এ কেমন আমলনামা যা ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি। বলতে হবেনা ইয়া লাইতানি কুন্তো তুরাবা।

‘সুরা ওয়াল আসরে’ মানুষের নাজাতের ন্যূনতম চাহিদার দিক নির্দেশনা দেয়। ফার্ষ্ট ডিভিশণ বা জি পি এ ফাইভ নয়। বলা যায় পাশ ডিভিশণ। তা পুরণের জন্য চারটি শর্ত পুরণের কথা বলা হয়েছে। সবার আগে হুশিয়ার করা হয়েছে এই বলে যে, তোমাদের সময় দ্রুত গতিতে চলে যাচ্ছে। আরবীতে সময় বোঝাতে আরও শব্দ রয়েছে, যেমন ‘দাহর’। দাহর মানে সময় কিন্তু তাতে গতির কোন বালাই বোঝায়না। অপর দিকে ’আসর’ দ্রুত ধাবমান সময়ের ইঙ্গিত দেয়। সময়কে অমূল্য সম্পদ বলা হয়ে থাকে।

চারটি শর্ত বা বিষয় যার একটিও বাদ দেবার সুযোগ নেই। কোনটি কোনটি অপেক্ষা তুচ্ছও নয়। বরং একটি অপরটির সহায়ক। এ চারটি যিনি আয়ত্বে এনেছেন যদি তিনি সহায় সম্পদহীনও হন তবুও তিনি সফল। আবার যার এগুলি নেই অথচ তিনি অগাধ সম্পদের মালিক তিনি অবশ্যই বিফল। নমরূদ, ফেরাউন, কারুনরা বিফল। আবার কপর্দকহীন আবুজর গীফারী রাঃ সফল। রসুল সঃ বলেছেন যে, সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যার সমাজে কোন দাম নেই, কোন মজলীশে বসার জন্য কেউ জায়গা ছাড়ে না, আত্মীয়তা করতে চাইলে কেউ পাত্তা দেয়না। অথচ তারা যদি ভুলে কোন ওয়াদা করে বসে তবে আল্লাহ তার মর্যাদা রক্ষায় তৎপর হন। এরাই সফল। তাফসীরে কাবির প্রনেতা ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী রঃ বলেছেন যে, মানুষের সফলতার ন্যূনতম উপায়টি এই চারটি বিষয়ের মাঝে ঝুলে রয়েছে। বিষয় চারটি হল, ইমান, আমালে সালেহ, আপোষে হক বা ন্যায়ের তাকিদ ও সবরের তাকিদ।

বিষয় চারটির প্রথমটি হল ইমান। প্রধানতঃ ইমান দুই প্রকারের, প্রথমটি মুখে স্বীকার করা। যিনি কলেমা শাহাদাৎ মুখে উচ্চারণ করলেন তিনি মৌখিক ইমানের মালিক হলেন। এহেন ইমানের সম্পর্ক হল ইসলামের সাথে। দ্বিতীয়টি হল প্রকৃত ইমান, যার আধার হল ক্বলব বা অন্তর। রসুল সঃ বলেছেন যে, মানুষের শরীরে এমন একটি মাংসখণ্ড রয়েছে, সেটি সুস্থ থাকলে সমগ্র শরীর সুস্থ থাকবে। আবার সেটি কলুষীত হলে সমগ্র শরীর কলুষীত হয়ে পড়ে, তাহল ক্বলব। ইমান এখানে প্রবেশ করলেই হওয়া যায় প্রকৃত মুমিন। প্রকৃত ইমান ছাড়া আমল সঠিক থাকেনা।

রসুল সঃ বলেছেন যে, অন্তরে ইমান থাকা অবস্থায় ধর্ষক ধর্ষণ করতে পারে না, চোর চুরি করতে পারে না, মদ্যপ মদপান করতে পারে না। হজরত আনাস রাঃ বলেছেন যে, কদাচিৎ এমন হয়ে থাকবে যে, রসুল সঃ আমাদের খোৎবা দিয়েছেন আর এ কথাটি বলেনি, কথাটি হল, যার আমানতদারী নেই তার ইমান নেই, যার কথায় আস্থা নেই তার ইমান নেই। এর কোনটিই শির্কের পর্যায়ের নয় তবুও এ হেন আমলের দ্বারা ইমানের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়। অতএব, বিষয়গুলী একে অন্যের পরিপুরক।

তাওয়াসি বিল হক্কে;- মিলে মিশে বা আপোষে ভাল কাজের অনুশিলণ করা। যেমন দেখলেন কেউ কারও কাছে টাকা পাবে অথচ দিচ্ছে না, তার হয়ে সুপারিশ করলেন বা বাচ্চারা রাস্তায় খেলা করছে, দূর্ঘটণা ঘটতে পারে বলে তাদের মাঠে যেতে বললেন। এ ভাবেই আমর বিল মা’রুফ ও নেহী আনিল মুনকারের হক আদায় হবে। যাতে সহযোগিতা, সহমর্মিতার সৃষ্টি হবে। ইমান ও আমলে সালেহ সম্প্রসারিত হবে।

তাওয়াসি বিস্ সাবরে;- মিলে মিশে বা আপোষে ধৈর্যের অনুশিলণ করা। মনে রাখতে হবে ভাল কাজ বা হক্ক কথা বড়ই তিতা। কেউই সহজে গ্রহণ করেনা। পাওনা টাকা আদায়ের সুপারিশ করলেন, শুনতে হতে পারে ‘আপনি বলার কে?’। বাচ্চাদের রাস্তায় খেলতে নিষেধ করবেন, শুনতে হতে পারে,’নিজের চরকায় তেল দেন’। এতো গেল ছোটখাট বিষয়। ইকামতে দ্বীনের দাওয়াত দেবেন, তাগুত তাড়াতে চাইবেন, জেল জুলুম অত্যাচার সইতে হবে। অতএব, সবর বা ধৈর্য মুমিনের চরিত্রে থাকতেই হবে।

সুরা তীনে বলা হয়েছে;-

لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ 04

আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।

ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ 05

অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নীচ থেকে নীচে।

মানুষকে উচ্চতম স্থানে সৃষ্টি করে ফেরেশ্তাদের দ্বারা সম্মানিত করে নীচ থেকে নীচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। চেষ্টা ও যোগ্যতা দ্বারা মানুষ সেই হৃতস্থানে পুণরায় ফিরে যাবে এটিই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছবার ন্যুনতম সাফল্যের দিক নির্দেশণা রয়েছে এই ‘সুরা ওয়াল আসরে’তে। এবং এ কথাটাই আল্লাহ সুরা ‘আলে ইমরাণের শেষ আয়াতে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اصْبِرُواْ وَصَابِرُواْ وَرَابِطُواْ وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ 200

হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার।

বিষয়: বিবিধ

১৫০৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

372994
২৪ জুন ২০১৬ সকাল ০৫:৫২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : প্রাথমিক সুরাগুলি মানুষকে চমকে দেবার উপযুক্ত যা আয়তনে ছোট হলেও তার অন্তর্নিহীত ভাব সুদূরপ্রসারী। এ সুরাটি অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ جزاك الله خيرا وشكرا لك
২৪ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:১৪
309684
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
373000
২৪ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:০৮
নাবিক লিখেছেন : ভালো লাগলো খুব, অনেক ধন্যবাদ।। Rose
২৪ জুন ২০১৬ সকাল ০৯:১৪
309685
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
373013
২৪ জুন ২০১৬ দুপুর ১২:১৮
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান চাচাভাই
২৪ জুন ২০১৬ রাত ০৮:৩৪
309708
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন। ধন্যবাদ।
373015
২৪ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:১০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৪ জুন ২০১৬ রাত ০৮:৩৪
309709
শেখের পোলা লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ।
373016
২৪ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৩৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam. Jajakallah for nice explanation.
২৪ জুন ২০১৬ রাত ০৮:৩৫
309710
শেখের পোলা লিখেছেন : অ আলায়কুমুস সালাম। আমিন।
373042
২৪ জুন ২০১৬ রাত ১০:৪৯
আফরা লিখেছেন : সূরা আসরটা আমার অনেক বেশী পড়া হয় । বিভিন্ন প্রগ্রামে এর তাফসীর ও শুনেছি অসংখ্যবার ।আসলেই তাই এই একটা সূরার মানুষের হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট।

জাজাকাল্লাহ খায়ের ।
২৬ জুন ২০১৬ রাত ০৪:২৫
309778
শেখের পোলা লিখেছেন : শেখের পোলা লিখেছেন : সমগ্র কোরআনের বিষয়বস্তু অতি সংক্ষেপে এখানে দেওয়া আছে। নবুয়তের প্রথম জামানায় দুই সাহাবীর দেখা হলে পরস্পরে সুরা আসর না শুনিয়ে আলাদা হতেন না।শুভেচ্ছা নিও।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File