{}যারা নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে তারাকি এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূ-গর্ভে বিলীন করে দেবেন না বা তাদের কাছে এমন দিক থেকে আজাব আসবে যা তারা ধারণাও করেনি৷{}
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২১ জুন, ২০১৬, ০১:১৬:৫৪ রাত
(মরহুম জনাব ডাঃ ইসরার আহমাদ সাহেবের উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ।)
সুরা আন নাহল রুকু;-৬ আয়াত;-৪১-৫০
এ সুরাটি রসুল সঃ এর মক্কী জীবনের শেষ ভাগের শেষ দিকের সুরা৷ ইতি মধ্যে মুমিনদের হিজরত করার অনুমতি হয়ে গেছে, অনেকে মক্কা ছেড়ে গেছেন৷ তাদের কথা দিয়ে এরুকু শুরু হচ্ছে৷ রসুল সঃ এর নিজের হিজরতের কথা পরের সুরায় পাওয়া যাবে৷
৪১/وَالَّذِينَ هَاجَرُواْ فِي اللّهِ مِن بَعْدِ مَا ظُلِمُواْ لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَلَأَجْرُ الآخِرَةِ أَكْبَرُ لَوْ كَانُواْ يَعْلَمُونَ
অর্থ;-যারা নির্যাতিত হবার পর আল্লাহর উদ্দেশ্যে হিজরত করেছে, আমি অবশ্যই দুনিয়ায় তাদেরকে উত্তম বাসস্থান দেব এবং আখেরাতের প্রতিদান তো শ্রেষ্ঠ৷ হায়! যদি তারা জানত!
৪২/الَّذِينَ صَبَرُواْ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
অর্থ;-যারা দৃঢ়পদে রয়েছে এবং তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করেছে৷
# যারা মুশরিকদের অত্যাচার সহ্য করে অবশেষে হিজরত করেছে আর যারা আল্লাহর উপর ভরসা করে এক নিষ্ঠ ভাবে বহল আছে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে উত্তম পুরষ্কার৷ আখেরাতের পুরষ্কারই অধিক উত্তম কিন্তু তা তাদের জানা নাই৷
৪৩/وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلاَّ رِجَالاً نُّوحِي إِلَيْهِمْ فَاسْأَلُواْ أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ
অর্থ;-আমি আপনার পূর্বে ওহী সহ পুরুষ মানুষকেই প্রেরণ করেছি৷ অতএব তোমরা কিতাবীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমরা না জান৷
# এটি মূলতঃ মুশরীকদের প্রশ্নের উত্তর৷ যারা মনে করত রসুল আর সবার মত মানুষ না হয়ে অন্য কিছু হবে৷ কিতাবী বলতে মদীনায় যে ইহুদী গোত্র বাস করত তাদের বলা হয়েছে৷ তারা জানত মূসা ইশা আঃ সাধারণের মত মানুষই ছিলেন৷ তাই তাদের কাছে জেনে নিতে বলা হয়েছে৷
৪৪/بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থ;-তাদেরকে প্রেরণ করেছিলাম স্পষ্ট নিদর্শণ ও গ্রন্থ (সহিফা) সহ আর আপনার প্রতি আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি যাতে আপনি লোকদের নিকট ঐ সব বিষয় বিবৃত করেন যে গুলো তাদের প্রতি নাজিল করা হয়েছে৷ যাতে তারা চিন্তা ভাবনা করে৷
# পবিত্র কোরআনের আগেও আল্লাহ তায়ালা কিতাব ও সহিফা সহ অনেক নবী রসুল দুনিয়ার মানুষের মধ্য হতেই মানুষের কাছে প্রেরণ করেছেন, যা আহলে কিতাবীরা জানে৷ মদীনায় আহলে কিতাবের অনেক আলেম বাস করত তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে জানা যাবে যে আগের নবী গনও মোহাম্মদ সঃ এর মতই মানুষের মধ্য হতেই ছিলেন৷ আগের কিতাব ও সহিফাগুলোতেও হেদায়েতের সন্ধান ছিল৷ আর কোরআন হল সেগুলোরই সর্বশেষ স্মরণিকা৷ রসুল সঃ উপর ফরজ হল এই কোরআনের সকল বিষয়, প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য, অন্তর্নিহীত গূঢ় রহস্য মানুষের কাছে তুলে ধরা৷ যাতে সকল নাজিল কৃত বিষয়াদী সবার বোধগম্য হয় ও চিন্তা ভাবনা করে৷ অতএব, রসুল সঃ শুধুই পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে তার দায়ীত্ব শেষ, এ কথা বলার অবকাশ রইল না৷
৪৫/أَفَأَمِنَ الَّذِينَ مَكَرُواْ السَّيِّئَاتِ أَن يَخْسِفَ اللّهُ بِهِمُ الأَرْضَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَشْعُرُونَ
অর্থ;-যারা নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে তারাকি এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূ-গর্ভে বিলীন করে দেবেন না বা তাদের কাছে এমন দিক থেকে আজাব আসবে যা তারা ধারণাও করেনি৷
৪৬/أَوْ يَأْخُذَهُمْ فِي تَقَلُّبِهِمْ فَمَا هُم بِمُعْجِزِينَ
অর্থ;-অথবা চলা ফেরা অবস্থায় তাদেরকে পাকড়াও করবেন তারা তা ব্যর্থ করতে পারবেনা৷
৪৭/أَوْ يَأْخُذَهُمْ عَلَى تَخَوُّفٍ فَإِنَّ رَبَّكُمْ لَرؤُوفٌ رَّحِيمٌ
অর্থ;-কিংবা ভীতি প্রদর্শণের পর তাদেরকে পাকড়াও করবেন৷ তোমাদের পালনকর্তা তো অত্যন্ত নম্র ও দয়ালু৷
# আক্রমন দু ভাবে হয়ে থাকে৷ এক অতর্কিত আর অপরটি দম্ভ ভরে ঘোষনা দিয়ে আহবান করে তবেই আক্রমন করা৷ আল্লাহ তায়ালা দু ভাবেই তা করতে পারেন৷
৪৮/أَوَ لَمْ يَرَوْاْ إِلَى مَا خَلَقَ اللّهُ مِن شَيْءٍ يَتَفَيَّأُ ظِلاَلُهُ عَنِ الْيَمِينِ وَالْشَّمَآئِلِ سُجَّدًا لِلّهِ وَهُمْ دَاخِرُونَ
অর্থ;-তারাকি আল্লাহর সৃজিত বস্তু দেখেনা, যার ছায়া আল্লাহর প্রতি বিনিতবে সেজদাবনত থাকে ডান ও বামদিকে ঝুঁকে পড়ে৷
# এ আয়াতে একটি রূপক বিষয়ের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে আল্লাহর স্থাপন করা জিনিষ যেমন পাহাড় পর্বত, গাছ পালা, যার ছায়া সকাল সাঁঝে ডানে বামে ঝুঁকে যেন আল্লাহকে সেজদা করে৷ সেজদা মূলতঃ সর্বোচ্য শিখর সর্ব নিম্নে লুটিয়ে দেওয়া৷ মানুষ তার শিখর মাথাকে পায়ের নীচের মাটির উপর লুটিয়ে দিয়েই বিনয় প্রদর্শন করে এবং তাকেই সেজদা বলে৷ গাছের মাথার ছায়াও তেমনই তার গোড়ায় ঝুঁকেই যেন তার সৃষ্টি কর্তাকে বিনতি জানায়৷ জড় পদার্থ যখন তার সৃষ্টি কর্তার প্রতি বিনয়ী হয় তখন মানুষের কি উচিত নয় তার প্রতি বিনয়ী হওয়া!
৪৯/وَلِلّهِ يَسْجُدُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مِن دَآبَّةٍ وَالْمَلآئِكَةُ وَهُمْ لاَ يَسْتَكْبِرُونَ
অর্থ;-যাকিছু আছে নভোমণ্ডলে আর যাকিছু আছে ভূ-মণ্ডলে জীবজন্তু সহ সকলে আল্লাহকে সেজদা করে৷ এবং ফেরেশ্তারাও; তারা অহংকার করেনা৷
৫০/يَخَافُونَ رَبَّهُم مِّن فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
অর্থ;-তারা তাদের উপর পরাক্রমশালী তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, আর তারা যা আদেশ পায় তাই করে৷
# আসমান জমিনে যা কিছুই আছে, পশু পাখি, জীব জন্তু, পাহাড় পর্বত সকলেই তাদের মহা শক্তিধর সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করে আর ফেরেশ্তাদের কাজ হল তাদের যা আদেশ করা হয় তা যথার্থ পালন করা৷ তাদের কোন ইচ্ছা স্বাধীনতা নেই যা মানুষের আছে৷
(এটি একটি সেজদার আয়াত, তাই পাঠক শ্রোতা সকলকে তেলাওয়াতের সেজদা করতে অনুরোধ করা হল)৷
বিষয়: বিবিধ
১০২৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়া।
মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকেই হেফাজত করুণ ও তাঁর কল্যাণের পথে অবিচলিত রাখুন। আমীন।
আমিন। ভাল থাকেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন