&&& জীবনেতিহাসের ছেঁড়া পাতা (সমাপ্তি পত্র)&&&
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৬ জুন, ২০১৬, ০৮:৪৪:৪১ রাত
বিছানা বালিশ নিয়ে একদিন আবারও সেই অস্থায়ী ভগ্নপ্রায় মাদ্রাসায় হাজির হলাম। অনেক অসুবিধার মাঝেও কোন রকমে অল্প কয়েকজন ছাত্র নিয়ে হাঁটি হাঁটি পাপা করে শুরু হল। স্থানীয় জনগনের ভালই সাপোর্ট পাওয়া গেলেও ক্লাশ ও থাকার সংকুলান ছিল সংকীর্ণ। ৪/৫ মাসের মাথায় বাড়ি থেকে ডাক আসলো, বাড়ি গেলাম।
কলকাতার কাছেই এক নাট বল্টুর কারখানায় বড় ভাইয়ের চাকরীটা মুসলমান হওয়ার অপরাধে হারাতে হয়েছে। কৃষি নির্ভর গ্রাম। নিজের জমি না থাকায় অন্যের জমিতে শ্রম বেচা ছাড়া উপায় নেই। খরচের হাত যত সহজে বাড়ে তত সহজে আর তাকে কমানো যায় না। তাই চাকরী ও চাষ দুটোই হারাবার পর আমরা দিশেহারা হলাম। নিরাপত্তার অভাবে আর সাম্প্রদায়িকতার গ্রাসে আমার জেদী আব্বার পাকা সিদ্ধান্ত, যে দেশে মুসলমানদের নিরাপত্তা নেই সেখানে আর থাকব না। মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান হয়েছে আমরা সেখানেই চলে যাব। যেখানে নিরাপত্তার নিঃশ্বাস চলে সেখানেই দিন-মজুরী করব।
নিজের পরিচিত পরিবেশ। শৈশব কৈশোরের খেলার সাথী, সহপাঠী বন্ধু, রাস্তা ঘাট, বাজার দোকান, গাছ পালা মায় বাড়ির পাশের গরু ছাগলগুলোও কত চেনা, বাড়ির পোষা কুকুরটি, কতই না আপন। শুধুমাত্র মুসলীম হবার অপরাধে আর জীবন বাঁচাবার তাকিদে এ সব ছেড়ে কোন এক অচেনা অ জানা পরিবেশে চলে যেতে হবে।
আমার সৎ দাদার বাড়ি ছিল নদিয়ায় পাকিস্তান বর্ডারের কাছের শ্রীরামপুর গ্রামে। দাদার ভাগ্নাদের সাথে আমার আব্বার সখ্যতা ছিল। জেলা বদলের পরে আর যাতায়াত না থাকলেও সম্পর্ক ছিল। তাদের সাথে যোগাযোগ করে, দালালের সাহায্যে ১৯৬৫ সালের ১৭ই মার্চ আমরা বর্ডার পার হয়ে আমাদের ৭ সদস্যের ফ্যামিলী পাকিস্তানী ৯৬ টাকা সম্বল করে পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখলাম। এ খানে একটা কথা বলে রাখি সরকারী ভাবে ভারতের ২ টাকায় পাকিস্তানী ১ টাকা পাওয়া যেত।
খুলনায় এসে কয়েকদিন পরে পুনরায় মাদ্রাসায় ভর্তির জন্য চেষ্টা করতে লাগলাম। আমরা কোথায় কি আছে জানতাম না। যশোর নওয়া পাড়া আর যশোর রেল শ্টেশন মাদ্রাসার সন্ধান পেয়ে গিয়ে ছিলাম, কিন্তু কোথাওই স্থান হল না। তবে কলকাতা ( জামেউল উলুম) মাদ্রাসার হেফজ সেশনের আব্দুস সামাদকে যশোর রেল শ্টেশন মাদ্রাসায় পেলাম। তার কাছেই হাফিজ সুলতান,যে আমাদের গ্রামে খতম তারাবী পড়াতো তার ভাইয়ের বাড়ি যশোরে আছে খবর পেলাম, দেখাও করলাম। আমরা বেঁচে আছি জানাজানি হল। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম।
( পরের ঘটনা অনেক আগে ‘না বলা কথা’ হেডিংএ পোষ্ট করেছিলাম) http://www.bddesh.net/blog/blogdetail/detail/3696/boka/54950#.V1LQhpErLIU//http://www.bddesh.net/blog/blogdetail/detail/3696/boka/53666#.V1LQ2ZErLIU এখানে আছে। যারা ধৈর্য ধরে পড়েছেন তাদের জানাই মুবারক বাদ। আজ আমি জাগতিক দায়ীত্ব প্রায় মুক্ত বলে মনে করি। জীবনে কোনদিন ধৈর্যহারা হয়নি। বরং সমস্ত কিছুকেই আমাদের জন্য আল্লাহর পরীক্ষা বলেই মেনে নিয়েছি। জানিনা পরীক্ষায় পাশ করিছি কিনা তবে নিজেকে সুখী মানুষ বলেই মনে করি। একটা সাইকেল কিনতে বেতনের উপর লোন নিতে হয়ে ছিল, আমার ছেলে আজ জিরো কিলো মিটারের নিশান চালায়। এ আমার অহংকার নয় বরং অন্যকে জানানো যে আল্লাহ পাহাড়কে সাগর আর সাগরকে পাহাড় বানাতে পারেন। আল্লাহর উপর আস্থা থাকলে তিনি প্রতিদান অবশ্যই দিয়ে থাকেন। আল হামদু লিল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১২৯১ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার নিষ্ঠুর বাস্তব জীবন কাহিনী আসলে নাটক সিনেমাকেও হার মানায়।
কঠিন সংগ্রামী এই জীবন থেকে নেয়া গল্পের মাঝে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় লুকিয়ে আছে।
মানুষের দৃঢ় মনোবল, ঈমানী শক্তি আর বিধাতার প্রতি অকৃত্রিম আস্থা অসম্ভবকেও সম্ভব করে তোলে। যার আপনি উজ্জ্বল উদাহরণ। মাশাআল্লাহ।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার দোয়ায় এই বোনকে শামিল রাখার অনুরোধ রইলো।
আপনার জন্য শুধুই দোয়া ও শুভেচ্ছা।
না বলা কথা আর জীবনেতিহাসের ছেঁড়া পাতা দুই সিরিজ একসাথে করে বই বেরকরলে পরবর্তী প্রজন্ম অনেক অজানা ইতিহাস জানবে।
আল্লাহ আপানর সবর এবং কষ্টের প্রতিদান দুনিয়াতে যতটুকুই পূর্ণ করেছেন আখিরাতে আরো উত্তম বিনিময় দান করুন ।
আমিন।
বাস্তবতা যেন এক কাল্পনিক গল্প
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন