ঁঁঁঁঁঁঁ আল্লাহর ওয়াদা পাকা পোক্ত৷ কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না৷ ঁঁঁঁঁঁঁ
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১২ জুন, ২০১৬, ০৮:৪৩:১১ রাত
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ)
সুরা আন নাহল রুকু;-৫ আয়াত;-৩০-৩৫
৩৫/وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُواْ لَوْ شَاء اللّهُ مَا عَبَدْنَا مِن دُونِهِ مِن شَيْءٍ نَّحْنُ وَلا آبَاؤُنَا وَلاَ حَرَّمْنَا مِن دُونِهِ مِن شَيْءٍ كَذَلِكَ فَعَلَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَهَلْ عَلَى الرُّسُلِ إِلاَّ الْبَلاغُ الْمُبِينُ
অর্থ;-আর মুশরিকরা বলবে, যদি আল্লাহ ইচ্ছে করতেন তবে আমরা তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করতাম না৷ এবং আমাদের পিতৃ পুরুষেরাও করত না৷ আর তার আদেশ ছাড়া আমরা কোন বস্তুই হারাম করতাম না৷ তাদের পূর্ববর্তীরাও এমনই করেছে৷ রসুলের দায়িত্ব তো শুধু সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেওয়া৷
# পারত পক্ষে এ যেন উল্টে আল্লাকেই দোষ দেওয়া৷ তাদের বক্তব্য হল, আল্লাহ সর্বশক্তিমান, তিনি ইচ্ছা করলে জোর করে তাদের অন্যায় কাজ হতে ফিরিয়ে আনতেন৷ তাহলে শুধু তারা নয় বরং তাদের বাপ দাদারাও অন্যায়ের পথে পা বাড়াতে পারতো না আর না তারা ইচ্ছে মত হারাম হালাল ফতোয়া দিতে পারতো৷
কিন্তু আল্লাহর নিয়ম সেটা নয়৷ সবার সব কাজ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন, ভুল পথ হতে ফিরিয়ে আনতে নবী রসুল পাঠিয়েছেন৷ সেখানেও জোর খাটাতে নিষেধ করেছেন৷ তাঁদের কাজ শুধুই আল্লাহর বাণী জনগনের কাছে পৌঁছে দেওয়া৷ কে মানলো আর কে মানলোনা তার ফয়সালা আল্লাহ নিজে করবেন৷ দুনিয়া পরীক্ষার খাতা ছাড়া আর কিছু নয়৷
৩৬/وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلالَةُ فَسِيرُواْ فِي الأَرْضِ فَانظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ
অর্থ;-আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রসুল প্রেরণ করেছি যাতে তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর আর ‘তাগুত’ থেকে নিরাপদ থাক৷ অতঃপর তাদের কতক কে আল্লাহ হেদায়েত দান করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের উপর বিপথগামীতা অবধারিত হয়ে গেল৷ সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমন কর আর দেখ মিথ্যা আরোপ কারীদের কিরূপ পরিনতি হয়েছে৷
# আল্লাহ প্রত্যেক জাতীর জন্যই নবী রসুল পাঠিয়েছেন এই উদ্দেশ্যে যে তারা যেন ভ্রান্ত পথ ছেড়ে নবী রসুলের দেখানো আল্লাহর মনোনিত পথে ফিরে আসে৷ উল্লেখ্য যে পবিত্র কোরআনে ঐ সমস্ত নবী রসুল গনের কথা বলা হয়েছে যাদের ব্যাপারে আরবের মুশরিকদের কিছু ধারণা ছিল বা বানিজ্য পথে যাদের ধ্বংসাবশেষ তাদের নজরে পড়ত৷ নবী রসুলগনের দেওয়া আল্লাহর পথে যারা চলতে মনস্থ করেছে আল্লাহ তাদের হেদায়েত দিয়েছেন৷ আর যারা তার অন্যথা করেছে তাদের আল্লাহর নিয়ম অনুযায়ী বিপথগামীতা অবধারিত হয়ে গেছে৷ আর রসুল হলেন কোন জাতীর শেষ নবী৷ তাঁকে অস্বীকার করার পরিনাম আজাবের মাধ্যমে ধ্বংস হওয়া৷ পৃথিবীতে এমন বহু ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে বা হচ্ছে যা সেই জাতীর পরিনামের চিহ্ন৷
এ আয়াতে ‘তাগুত’ পরিহার করার কথা বলা হয়েছে, আমরা সুরা বাক্বারার ২৫৬ নং আয়াতে জেনে এসেছি, ‘নিশ্চয়ই ভ্রান্ত পথ হতে সৎপথ সুস্পষ্ট হয়ে গেছে৷ যারা ‘তাগুত’ কে পরিহার করে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, তারা যেন একটি এমন শক্ত হাতল ধরল যা কখনও ভাঙবার নয়’৷ তাগুত কি তা জানা দরকার; দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে আল্লাহর নিয়মের বাইরে কোন পথ পদ্ধতি গ্রহন করাকেই তাগুত বলে৷ ঈমানের শক্ত হাতল তখনই পাওয়া যাবে যখন তাগুত সম্পূর্ণ ঝেড়ে মুছে আল্লাহর পথ, আল্লাহর নিয়মও আইনের সাথে মিশে যাওয়া যাবে৷
৩৭/إِن تَحْرِصْ عَلَى هُدَاهُمْ فَإِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي مَن يُضِلُّ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ
অর্থ;-যদি আপনি তাদের হেদায়েত পাওয়ার আকাঙ্খাও করেন তবুও আল্লাহ তাদের কে হেদায়েত দান করেন না যাদেরকে তিনি বিপথগামী করেন এবং তাদের কোন সাহায্য কারীও নেই৷
# বিপথগামী মানুষের কাছে আল্লাহ প্রেরীত সু পথের সন্ধান শুধু মাত্র পৌঁছে দেবার দায়ীত্ব হলেও একজন নবী বা রসুল নিজ জাতীকে সুপথে আনার আপ্রান চেষ্টা করেন৷ আগের আয়াতে বলা হয়েছে যারা আল্লাহর পথকে অগ্রাহ্য করেছে তাদের জন্য বিপথগামীতা অবধারিত হয়েছে৷ কিন্তু এ আয়াতে বলা হয়েছে ‘আল্লাহ যাদের বিপথগামী করেন তারা হেদায়েত পাবেনা’৷ শুনতে পরষ্পর বিরোধী মনে হয়৷ কিন্তু বুঝতে হবে আল্লাহর নিয়ম হল; যখন মানুষের সামনে সত্য সত্য রুপেই প্রকাশ পাবে তখন তাকে পুনঃ পুনঃ সুযোগ দেবার পরও যদি তা গ্রহন না করে তবে তার সে গ্রহন যোগ্যতা চিরতরে রোহিত করা হয়৷ এর পর আর তাকে হেদায়েত দেওয়া হয়না৷ বা তার জন্য কাউকে সুপারিশের সুযোগও দেওয়া হবেনা৷ আর এ অবস্থাকেই অন্তরে মোহর মারা বলা হয়েছে৷
৩৮/وَأَقْسَمُواْ بِاللّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ لاَ يَبْعَثُ اللّهُ مَن يَمُوتُ بَلَى وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا وَلـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ
অর্থ;-আর তারা দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর নামে শপথ করে বলে, যে ব্যাক্তি মারা যায় আল্লাহ তাকে পুণরায় জীবিত করবেন না৷ অবশ্যই করবেন! আল্লাহর ওয়াদা পাকা পোক্ত৷ কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না৷
# মুশরিকদের মাঝেও কিছু লোক ছিল যারা পুনরুত্থান বা আখেরাতের কথা মানতো৷ সেই সঙ্গে এও জানতো যে তাদের প্রীয় দেব দেবীরাই তাদের উদ্ধার করে নেবে৷ আবার কিছু ছিল যারা বিষয়টিকে অস্বীকার করত৷ এটি আল্লাহর ওয়াদা৷ তিনি তা করেই ছাড়বেন৷
যাদের অন্তরে কলুষতা স্পর্শ করেনি বিশ্ব প্রকৃতি ও তার চলমান পরিস্থিতি দেখে তার অন্তরে এর স্বাভাবিকতা আর অস্বাভাবিক বিষয় গুলি উদয় হতেই পারে৷ এক জনের এত প্রাপ্তি আর জন্য জনের শূন্য৷ একজন ছড়ি ঘোরায় আর অন্যজন নেচেই চলে, একজন প্রভু অন্যজন দাশ৷ বঞ্চিতের তো কোন অপরাধ নেই৷ তবে কেন সকলে তার প্রাপ্য পায়না৷ তাই অবশ্যই এর সামঞ্জ্যস্য হওয়া প্রয়োজন৷ আর তখনই তার অন্তরে আসে আখেরাতের কথা, তার উপর বিশ্বাস, যেখানে হবে এর চুলচেরা সমাধান৷ এখানেই আল্লাহর ওয়াদা৷
৩৯/لِيُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي يَخْتَلِفُونَ فِيهِ وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ كَفَرُواْ أَنَّهُمْ كَانُواْ كَاذِبِينَ
অর্থ;-এ জন্য যে, তিনি প্রকাশ করে দেবেন সে বিষয়ে যাতে তাদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল এবং যারা কুফরী করে ছিল, তারা যেন জানতে পারে যে তারাই ছিল মিথ্যাবাদী৷
# এ আয়াতে আগের আয়াতের দুই মতবাদের লোকদের ভ্রান্ত ধারণা নিরসনের কথা বলা হয়েছে৷ আখেরাতের উদ্দেশ্যের এটিও একটি৷
৪০/إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَن نَّقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ
অর্থ;-আমি যখন কোন কিছু ইচ্ছা করি তখন তাকে বলি ‘হয়ে যাও’ আর তা হয়ে যায়৷
# বিশ্বের এক মাত্র স্রষ্টা মহান আল্লাহ তায়ালা যখন কোন কিছু সৃষ্টির মনস্থ করেন তখন তিনি শুধু বলেন, হয়ে যাও আর তা তাৎক্ষনিক ভাবে হয়ে যায়৷
আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি জগৎ দুটি৷ একটি ‘আলাম এ আরওয়াহ’ বা রুহের জগৎ যা অদৃশ্য৷ অন্যটি ‘আলাম এ খালক’ বা জীব জগৎ, যা দৃশ্যতঃ৷ রুহের জগতের তিনটি বিষয়ের সাথে আমরা পরিচিত তা হল; ফেরেশ্তা, ওহী ও রুহ৷ এ জগতের সাথে কোন সময়ের বেড়াজাল নেই৷ জীবরাঈল আঃ এর পৃথিবীতে আসতে যেতে সময় লাগেনা৷ ওহী ও রুহের বেলায়ও তাই৷ জ্বীন সম্প্রদায়ও এ জগতের৷ সুরা নমলের ৪০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যার কাছে কিতাবের জ্ঞ্যান ছিল সে মুহূর্তের মধ্যে রাণী সাবা’র সিংহাসন টি সুলায়মান আঃ এর সামনে হাজির করলেন’৷ এখানেও সময় বাধা হয়নি৷ আল্লাহর ‘কূন শব্দ’ এখানেই তাৎক্ষনিক ভাবে কার্য্য করি৷ কিন্তু আলাম এ খালক এ সময়ের বিষয় বিদ্যমান৷ আল্লাহ ইচ্ছা করলে এখনেও তাৎক্ষনিক ভাবে সব অবশ্যই করতে পারেন৷ বীজ অঙ্কুরীত হয়ে পূর্ণাঙ্গ বৃক্ষ হতে তিনিই সময় বেঁধে দিয়েছেন৷ পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন৷
ধারণা করি, তার কূন শব্দটি প্রথমে একটি স্নিগ্ধ জ্যোতির সৃষ্টি করে; সেই জ্যোতি দিয়েই তিনি ফেরেশ্তা ও মানব রুহ সৃষ্টি করেন৷ প্রথম রুহটিই ছিল হজরত মোহাম্মদ সঃ এর৷ (“প্রথমেই আল্লাহ যা সৃষ্টি করেন তা আমার রুহ- হাদীশ)৷ এর পর এক সময় এ জ্যোতির মাঝে একটি বিরাট বিষ্ফোরণ ঘটেও অর্বুদ তাপের সৃষ্টি হয়৷ এ তাপ হতেই সৃষ্টি করেন জ্বীন জাতি৷ এ বিষ্ফোরণকেই বলা হয় ‘বিগ ব্যাঙ্গ’৷ যার ফলে সৃষ্টি হয় গ্রহ নক্ষত্র, সূর্য আর আমাদের পৃথিবী৷ তাপ ক্রমশঃ বাষ্প হয়ে উপরে উঠতে থাকে ও পৃথিবী ঠাণ্ডা হতে থাকে, যার ফলে কুঁকড়ে গিয়ে সমতলভূমী, পাহাড় টিলা, সাগর নদীর সৃষ্টি হয়৷ এর পর বাষ্প মেঘ হয়ে বৃষ্টির আকারে বহু বছর ধরে চলতে থাকে৷ নদ নদীও হ্রদ সাগর পানি পূর্ণ হয়ও জীবনের সৃষ্টি হয়৷(উদ্ভীদ ও প্রানী জগৎ)৷ বলা হয়েছে আল্লাহর আরশ তখন পানির উপর ছিল৷ এরও পরে মাটির উপাদান হতেই আল্লাহ আদম আঃ কে সৃষ্টি করেন ও রুহের জগৎ হতে রুহ ফুঁকে দেন৷ এখান থেকেই মানুষের যাত্রা শুরু৷ এই আদম বা মানুষকেই আল্লাহ জীব জগতের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন৷(এটি অনুমান মাত্র তবে আল্লাহই ভাল জানেন)৷
দুটি ভিন্ন জগৎ কিন্তু একেবারে আলাদা নয়৷ আমাদের মাঝে সর্বদা ফেরেশ্তা রয়েছেন৷ তারা অদৃশ্য তাই আমরা তাদের দেখতে পাই না৷ রসুল সঃ বলেছেন, ‘আল্লাহর এমন কোন ঘর বাদ নেই যেখানে আল্লাহর কোরআন আলোচনা হয় আর সেখানে রহমতের ফেরেশ্তা থাকেন না৷ বরং যায়গাটিকে তারা ঘিরে রাখেন’৷ শাহ ওলীউল্লাহ রঃ তাঁর ‘হুজ্জআতুল্লাহিল বালেগা’ কিতাবে লিখেছেন, যে, আল্লাহ তায়ালা ওলী আউলিয়াদের রুহকেও ফেরেশ্তাদের সাথে তার কাজে লাগিয়ে দেন৷
বিষয়: বিবিধ
১৩০৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যারা তাগুতের দোসর তারা বিভিন্ন অজুহাতে তাদের কুকর্ম জায়েজ করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু আল্লাহ্ পাক হলেন অন্তর্যামী। তিনিই সবই জানেন।
তাই ফন্দি ফিকিরে কোনই লাভ নেই!
সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী একটি লিখা মাশাআল্লাহ।
আপনাদের সকলের জন্য অনেক অনেক দোয়া ও মাহে রামাদ্বানের শুভেচ্ছা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ জাযাকাল্লাহ খাইর
এটা হয়তো প্রথমবারের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে, কিন্তু পরবর্তী আরো অসংখ্যবার আল্লাহতায়ালা "কুন" বলেছেন এবং "হয়ে গেছে"- সেসব ক্ষেত্রে উপরোক্ত ব্যাখ্যা (এবং বিগ ব্যাং) প্রযোজ্য নয়!
আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!
এটার সূত্র উল্লেখ করলে উত্তম হতো!!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন