ঁঁঁঁঁঁ "রামাদান উপলক্ষ্যে ব্লগ আয়োজন।"ঁঁঁঁঁ ******রমজান আত্মসংযমের মাস।******
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৯ জুন, ২০১৬, ০৫:৫১:৪৫ সকাল
মহান আল্লাহ তায়ালা শরিয়তে মোহাম্মদীর বিভিন্ন হুকুম আহকাম পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু সওম বা রোজার হুকুম শুধু মাত্র সুরা বাক্বারার একই যায়গায় ১৮৩, ১৮৪, ১৮৫ ও ১৮৭ নং আয়াতের দ্বারাই পূর্ণ করেছেন, যার শেষের দুটিই উম্মতে মোহাম্মদী সঃ এর জন্য। প্রথমটিতে সওমের মাস রমজানের ফজিলত ও নিয়ম কানুন আর দ্বতীয়টিতে এসেছে বিধি নিষেধ তাকওয়া ও সংযমের কথা। মূলত রোজা তিনটি বিষয়ের সংযমেরই অন্য নাম। তা হল- পান, আহার ও সহবাস।
১৮৫/ شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
অর্থাৎ;-রমজান মাসই হল সেই মাস, যাতে কোরান অবতীর্ন করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও আন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী, কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটি পাবে,সে এমাসের রোজা রাখবে, আর যে অসুস্থ বা মুসাফীর অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গননা পূরণ করবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, জটিল করতে চাননা, যাতে তোমরা গননা পূরণ কর, আর হেদায়েত দান করার জন্য আল্লাহর মহত্ব বর্ণনা কর, আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।
১৮৭/أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَآئِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ عَلِمَ اللّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ فَالآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُواْ مَا كَتَبَ اللّهُ لَكُمْ وَكُلُواْ وَاشْرَبُواْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّواْ الصِّيَامَ إِلَى الَّليْلِ وَلاَ تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَقْرَبُوهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
অর্থাৎ;-রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রীসম্ভোগ বৈধ করা হল, তারা তোমাদের পরিচ্ছদ, তোমরা তাদের পরিচ্ছদ, আল্লাহ অবগত আছেন যে, তোমরা পরষ্পর গোপনে যা করতে, তিনি তোমাদের দিকে ফিরেছেন এবং ক্ষমা করেছেন, সূতরাং এখন তাদের সাথে সঙ্গত হও, এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কর, আর পানাহার কর যতক্ষন না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখাযায়, অতঃপর রোজাপূর্ণ কর রাত পর্য্যন্ত, স্ত্রীদের সাথে মিশোনা যতক্ষন মসজিদে ইতেকাফে অবস্থান কর, এই হল আল্লাহ প্রদত্ত সীমানা, অতএব এর কাছেও যেওনা, এভাবেই আল্লাহ তার আয়াত সমুহ বর্ণনা করেন, যাতে তারা তাকওয়া অর্জন করতে পারে।
হজরত আবু হোরায়রা রাঃ বর্ণীত হাদীশে জানা যায় যে, রসুল সঃ রোজাকে ঢাল স্বরূপ বর্ণনা করেছেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে ঢাল যেমন যোদ্ধাকে শত্রুর আক্রমন হতে রক্ষা করে রোজাও তেমন একজন মুমিনকে শয়তানের অনিষ্ঠ হতে রক্ষা করে। একজন যোদ্ধাকে যেমন ঢালের ব্যবহার কৌশল আয়ত্ব করতে হয়, একজন মুমিনকেও রোজা পালনের সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। জনাব রসুল সঃ আত্মসংযমকেও জিহাদ বলেছেন। এটি মোটেও সহজ কাজ নয়। সামনে অজস্র হালাল খাবার কিন্তু রোজাদার তা স্পর্শ করেনা। বহু উপাদেয় ইফতার সামনে রোজাদার সঠিক সময়টির অপেক্ষা করে। এটিইও সংযম। তবে সংযম শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়।
বারো মাসের একমাস রোজা অবশ্যই আমাদের সংযমের অভ্যাস গড়তে সহায়তা করে। মহাগ্রন্থ কোরআনে বার বার নামাজ কায়েমের কথা এসেছে। নামাজ কায়েম অর্থ তার ধারা অব্যাহত রাখা, ফজরের পর জোহর, জোহরের পর আসর এমনই। যাতে নামাজের উদ্দেশ্য মুমিনকে অন্যায় কাজ ও অসদাচারণের মধ্যে পড়তে না পারে। তেমনই বারো মাসের একমাস রোজার শিক্ষা, আবেদন, সংযম যেন মুমিনকে বাকী এগারো মাসও আগলে রাখে। তাই সংযম শুধুই রমজান মাসে সীমাবদ্ধ নয় বরং সারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
সংযম শুধু পানাহার ও সঙ্গমেই নয়, সংযম চাই জীবনের প্রতি পদে পদে। হাদীশে এসেছে যে, যে ব্যক্তি পাপাচার পরিত্যাগ করল না অথচ পানাহার পরিত্যাগ করল অর্থাৎ রোজা রাখল, তার রোজা হল না। এই পাপাচার পরিত্যাগও সংযম। আর জুলুম,দাঙ্গা-ফাসাদ, মিথ্যাকথন,পরনিন্দা, অশ্লিলবাক্য, সূদ, ঘূস, অবিচার সবই পাপাচারের অন্তর্ভূক্ত।
দরীদ্র অভুক্ত মানুষের ক্ষুধার অনুভূতি লাভ করাও রমজানের উদ্দেশ্য বলে বলা হয়। আমাদের রমজানে সত্যই কি তা হয়। হয়না। রমজানে আমাদের রসুইতে বিশেষ বিশেষ উপাদেয় খাদ্যের সরবরাহ বেড়ে যায়। ইফতারীর আয়োজন দেখলে অভুক্তের ভির্মী খাওয়ার উপক্রম হয়। বাজারে কৃত্রীম সংকট সৃষ্টি করে ভোগ্য পন্যের দাম অহেতুক বাড়িয়ে জনগণের নাভিশ্বাস উঠানো হয়। সর্বত্র ঘূষ, বখশিসের সয়লাব আসে। এর কোনটিই রমজানের শিক্ষা বা সংযমের আওতায় আসেনা।
উচ্চ বিত্ত ও সম্পদশালী পরিবার, বিশ্বের উন্নত দেশ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে অহেতুক খাদ্যের বাহুল্য দেখা যায়, যা উচ্ছিষ্ট আকারে আঁস্তাকূড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। অথচ তা পৃথবীর বহু অভুক্ত মানুষের ক্ষুধা নিবারণে সক্ষম ছিল। তাতে রোজার সংযমী মর্যাদা অবশ্যই ক্ষুন্য হয়। এটি রমজানের শিক্ষা হতে পারেনা।
রসুল সঃ বলেছেন যে রমজান মাসে শয়তানকে দন্দী করে রাখা হয়। নবীর বাণী ফাঁকা বুলি নয়। প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে এ হেন অনিয়ম বিশৃঙ্খলার কারণ কি? কারণ হল, আল্লাহ জ্বীন শয়তানকে বন্দী করেন ঠিকই কিন্তু মানুষ শয়তান যা ইবলিশের দীক্ষায় দীক্ষিত তারা বন্দী হয়না। আসুন আমরা এ রমজানে খালেস অন্তরে তওবা করে আমাদের ভিতরের শয়তানকে বহিষ্কার করে রমজানের প্রকৃত হক আদায় করি। অপচয় বন্ধ করি৷ আল্লাহ নির্দেশও রসুল সঃ অনুসৃত পথে চলি। যার যার আত্মিয় স্বজন, প্রতিবেশীর সুখ দুঃখের সাথী হয়ে সংযমের সাথে মাহে রমজানের যাবতীয় করণীয় পালন করে বে গুনাহ হয়ে ঈদের জামাতে শরিক হই।
অপরাধ স্বীকার;- সময় মত পোষ্ট দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষমা প্রার্থী।
বিষয়: বিবিধ
১৭১৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুবই ভালো বলেছেন।
আমিও ক্ষমাপ্রার্থী দেরি করে পড়ার জন্য।
আপনি অনেক ধকল সহ্য করেই লেখাটি পোস্ট করেছেন। এই জন্য শুকরিয়া।
আল্লাহর কাছে আপনার জন্য দোয়া পাঠিয়ে দিলাম.
মন্তব্য করতে লগইন করুন