তিনি তার নির্দেশে তার বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছে ওহী সহ ফেরেশ্তা প্রেরণ করেন৷ এই মর্মে যে, সতর্ক করে দাও আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই৷ অতএব আমাকে ভয় কর৷
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৬ মে, ২০১৬, ০৭:০১:২৭ সকাল
(বয়ানুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ।)
(১৬) সুরা আন নাহল (মক্কী) রুকু ১৬টি আয়াত ১২৮টি
মক্কী ও মাদানী সুরার মিলিত বড় গ্রুপের তৃতীয় শাখা গ্রুপ সুরা নাহল এর মাধ্যমে শুরু হতে যাচ্ছে৷ বলা হয়েছিল প্রতি শাখা গ্রুপে তিনটি করে সুরা ও প্রথমের তিনটি আনুপাতিক হারে বড় পরের তিনটি ছোট৷ এই ধারায় এ শাখা গ্রুপের তিনটি সুরা বেশ বড়৷ আগের দুই শাখা গ্রুপে আমরা দেখেছি প্রথম দুটি সুরার মাঝে মিল আছে ও তৃতীয়টি আলাদা মেজাজের, যদিও তাদের অন্যত্র সুরার সাথে মিল আছে৷ এ শাখা গ্রুপের প্রথমটিই আলাদা আর পরের দুটির মাঝে মিল রয়েছে৷
সুরা নাহল এ আল্লাহর নেয়ামতের বর্ণনা আছে৷ সেই হিসাবে সুরাটির সুরা ‘আনআম’ এর সাথে বেশ মিল আছে৷ তা ছাড়া সুরা ‘রোম’ এর সাথেও এর মিল রয়েছে৷ ১৬টি রুকু ও ১২৮ টি আয়াত আছে৷
সুরা আন নাহল রুকু;-১ আয়াত;-১-৯
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১/أَتَى أَمْرُ اللّهِ فَلاَ تَسْتَعْجِلُوهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
অর্থ;-এসে গেছে আল্লাহর হুকুম৷ অতএব তোমরা এর জন্য তাড়া হুড়া কোর না৷ আল্লাহ পবিত্র মহিমান্বিত এবং তার যে শরিক সাব্যস্ত করে তিনি তার ঊর্দ্ধে৷
# আল্লাহর হুকুম বলতে কোরআন ও শেষ নবীর কথা বলা হয়েছে৷ এটিই আল্লাহর চুড়ান্ত হুকুম৷ এতেই রয়েছে চুড়ান্ত ফায়সালা৷ তাড়াহুড়া নয় ঠিক সময় মতই তা উপস্থিত হবে৷
২/يُنَزِّلُ الْمَلآئِكَةَ بِالْرُّوحِ مِنْ أَمْرِهِ عَلَى مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ أَنْ أَنذِرُواْ أَنَّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ أَنَاْ فَاتَّقُونِ
অর্থ;-তিনি তার নির্দেশে তার বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছে ওহী সহ ফেরেশ্তা প্রেরণ করেন৷ এই মর্মে যে, সতর্ক করে দাও আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই৷ অতএব আমাকে ভয় কর৷
# সুরা ‘আরাফ’ এ দুইটি জগতের কথা বলা হয়েছে; একটি রুহের জগত অন্যটি সৃষ্টি জগত৷ সৃষ্টি জগত সময়ের ছকে বাঁধা৷ বীজ থেকে বৃক্ষ হতে সময়ের প্রয়োজন৷ ছয়দিনে আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন৷ অপর দিকে রুহের জগতে সময়ের বাঁধন নেই৷ আল্লাহ কোন জিনিষ সৃষ্টি করতে চাইলে বলেন, ‘হও’ আর তা হয়ে যায়৷ রুহের জগতের তিনটি জিনিষের সাথে আমরা পরিচিত৷ ফেরেশ্তা, ওহী আর রুহ বা আত্মা৷ এ আয়াতে উক্ত তিনটি জিনিষকেই রুহ বলা হয়েছে৷ মানুষের মধ্যে যাকে ইচ্ছা করেন ফেরেশ্তা বা রুহের মারফত ওহী বা রুহ দিয়ে তার অন্তর বা রুহের উপর তা নাজিল করেন৷ বলা হয়েছে; ‘নাজালা বিহির রুহু আলা ক্বালবিহি’৷
৩/خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ بِالْحَقِّ تَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
অর্থ;-তিনি যথাযথ ভাবে আসমান জমীন সৃষ্টি করেছেন, যাকে শরিক করা হয় তিনি তার বহু ঊর্দ্ধে৷
# পৃথিবী ও আকাশ যেমনটি হওয়ার তেমনটিই সৃষ্টি করেছেন৷ একমাত্র তিনিই ‘খালেক’, বাকী সবই মাখলুক৷ অতএব যে শক্তিকেই তার সাথে শরিক করা হোক তিনি তার বহু উপরের স্তরের৷
৪/خَلَقَ الإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ
অর্থ;-তিনি মানুষকে শুক্র হতে সৃষ্টি করেছেন অথচ মানুষ প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী হয়ে গেছে৷
# অতি তুচ্ছাতি তুচ্ছ বস্তু শুক্রকীট৷ তার থেকেই মানুষের সৃষ্টি৷ সেই মানুষই গর্বীত, অহংকারী, ঝগড়াটে হয়ে প্রকাশ পায়৷ সৃষ্ট উপাদানের কথা ভূলে যায়৷
৫/وَالأَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ
অর্থ;-তিনি চদুষ্পদ জন্তুকে সৃষ্টি করেছেন, এতে তোমাদের জন্য শীত বস্ত্রের উপকরণ রয়েছে, রয়েছে আরও অনেক উপকার৷এবং তা থেকে তোমরা খেয়ে থাকো৷
# তিনি চার পেয়ে পশুও সৃষ্টি করেছেন৷ যার অনেক গুলির পশমে শীত বস্ত্র তৈরী হয়৷ এক সময় মানুষ পশুর চামড়া দিয়েই পোশাক বানাত৷ আবার কিছু পশুর গোশ্ত মানুষ খেয়ে থাকে৷ আরও অনেক উপকার বলতে আমরা জানি পশুর চামড়া, শিং, হাড়, দাঁত দিয়েও অনেক জিনিষ তৈরী হয়৷ পশুর দুধের ব্যবহারও হয় বহুবিধ উপায়ে৷
৬/وَلَكُمْ فِيهَا جَمَالٌ حِينَ تُرِيحُونَ وَحِينَ تَسْرَحُونَ
অর্থ;-তোমাদের জন্য এতে রয়েছে শোভা৷ সন্ধ্যায় যখন চারণভূমী থেকে নিয়ে আস অথবা প্রভাতে চারণভূমীতে নিয়ে যাও৷
# প্রভাতে পশুর পাল যখন চারণভূমীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় বা গোয়ালে ফিরে আসে তখন মনোরম দৃশ্য দেখা যায়৷ এক সময় গবাদী পশুই মানুষের ঐশর্য্যের মাপকাঠি ছিল৷ যার পালে যত বেশী পশু সে তত সম্পদশালী ছিল৷
৭/وَتَحْمِلُ أَثْقَالَكُمْ إِلَى بَلَدٍ لَّمْ تَكُونُواْ بَالِغِيهِ إِلاَّ بِشِقِّ الأَنفُسِ إِنَّ رَبَّكُمْ لَرَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
অর্থ;-এরা তোমাদের বোঝা বহন করে এমন শহরে নিয়ে যায় যেখানে প্রানান্তকর পরিশ্রম ছাড়া তোমরা পৌঁছতে পারতে না৷ নিশ্চয় তোমাদের রব অত্যন্ত কৃপাশীল, পরম দয়ালু৷
# যান বাহন আবিষ্কারের আগে পশুই মানুষের ভারী বোঝা বহন করত৷ আজও গরু ঘোড়া ও গাধাকে গাড়ি টানতে দেখা যায়৷ হাতী ঘোড়া পিঠের উপর সওয়ারী বহন করে৷ বনাঞ্চলে হাতী দিয়ে ভারী গাছের গুঁড়ি টানানো হয়৷ এ সবই মহান আল্লাহর দয়া৷
৮/وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً وَيَخْلُقُ مَا لاَ تَعْلَمُونَ
অর্থ;-তোমাদের আরোহনের জন্য ও শোভার জন্য তিনি ঘোড়া গাধা, খচ্চর সৃষ্টি করেছেন৷ এবং অনেক সৃষ্টি যা তোমরা জাননা৷
# ঘোড়া একটি সুন্দর প্রাণী, তার দুলকি চাল উপভোগ্য৷ গাধা খচ্চরও বাহন রূপে সৃষ্টি করেছেন৷ আরও অনেক সৃষ্টি যা মনোমুগ্ধকর যেমন গভীর সমুদ্রে বর্ণালী মাছের ঝাঁক, বনভূমে চিতল হরীণ, ময়ূরের পেখম মেলা প্রভৃতি৷ অজানা আরও কত কি আছে যা আমাদের দৃষ্টির বাইরে রয়েছে৷
৯/وَعَلَى اللّهِ قَصْدُ السَّبِيلِ وَمِنْهَا جَآئِرٌ وَلَوْ شَاء لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ
অর্থ;-আর সরল পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে৷ এবং পথগুলোর মধ্যে কিছু বক্র পথও রয়েছে৷ তিনি ইচ্ছা করলে সকলকে অবশ্যই সৎপথে পরিচালিত করতেন৷
# এক মাত্র ‘সিরাতাল মস্তাকীম’ই আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে৷ এবং এটাই মানুষের চলার পথ হওয়া উচিত৷ আল্লাহ চাইলে সকলকেই তিনি এই সোজা পথের পথিক করতে পারতেন৷ কিন্তু যেহেতু দুনিয়া মানুষের পরীক্ষার স্থান তাই কিছু বাঁকা পথও রাখা হয়েছে৷ পরখ করার জন্য কে কোনটা বেছে নেয়৷
বিষয়: বিবিধ
১২৯৩ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে
সোজা পথের উপর চলার তৌফিক দিন,
আমিন,
সুন্দর ও মূল্যবান বিষয়ভিত্তিক লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আল্লাহ আমাদের সিরাত্বাল মুস্তাকীমে অটল রাখুন, আমীন।
জাযাকাল্লাহ খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন