<><><> সুতরাং আপনি আপনার রবের প্রশংসার সাথে তার পবিত্রতা মহিমা ঘোষনা করতে থাকুন এবং সেজদাহকারীদের শামিল হয়ে যান৷<><><><>
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ০৭:০১:৪৫ সকাল
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)
সুরা হিজর রুকু;-৬ আয়াত;-৮০-৯৯(শেষ)
অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়ের আলোচনা নিয়ে আসছে এ সুরার শেষ রুকুটি৷ বিশেষ করে শেষের পনেরটি আয়াত৷
৮০/وَلَقَدْ كَذَّبَ أَصْحَابُ الحِجْرِ الْمُرْسَلِينَ
অর্থ;-নিশ্চয় হিজরের বাসিন্দারা পয়গম্বরদের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে৷
# সামুদ জাতির এলাকার আরেক নাম হিজর৷ তাদের মাঝেও অনেক নবী এসেছেন৷ “মুরসালীন” শব্দ একাধীক পয়গম্বরদেরই ইঙ্গিত দেয়৷ তারা সকলের দাওয়াতকেই অস্বীকার করে ও পয়গম্বরগনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে৷৷ সর্বশেষে এলেন রসুল, হজরত সালেহ আঃ৷ রসুলকে অস্বীকার করায় আল্লাহর নিয়ম অনুযায়ী তাদের ধ্বংসের শিকার হতে হয়৷ হজরত সালেহ আঃ আল্লাহর দেওয়া উটনীর মোজেজা দেখান৷ তারা সেই উটনীটিকেও হত্যা করে৷
৮১/وَآتَيْنَاهُمْ آيَاتِنَا فَكَانُواْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ
অর্থ;-আমি তাদেরকে নিজের নিদর্শনাবলী দিয়েছি কিন্ত তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়৷
৮২/وَكَانُواْ يَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا آمِنِينَ
অর্থ;-তারা নিরাপদ বাসের জন্য পাহাড় কেটে নিজেদের বাসগৃহ নির্মান করত৷
# সামুদ জাতি পাহাড় খোদাই করে বসবাসের জন্য অট্টালিকা বানাত৷ যার ধ্বংসাবশেষ আজও তাদের শৌর্যবীর্য প্রতিপত্তি ও কারিগরীর নীরব সাক্ষী হয়ে আছে৷
৮৩/فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُصْبِحِينَ
অর্থ;-অতঃপর প্রত্যুষে তাদের উপর একটা শব্দ এসে আঘাৎ করল৷
৮৪/فَمَا أَغْنَى عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَكْسِبُونَ
অর্থ;-তখন কোন উপকারে আসলোনা তারা যা উপার্জন করেছিল৷
# তাদের পাহাড়খোদাই নিরাপদ বাসস্থান, তাদের প্রতিপত্তি কোনই নিরাপত্তা দিতে পারেনি৷ কোন কিছুই কোন উপকারে এলনা, বিকট একটা শব্দে সব তছনছ হয়ে গেল৷ লোকালয়টি বিরান ভূমে পরিনত হল৷
৮৫/وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلاَّ بِالْحَقِّ وَإِنَّ السَّاعَةَ لآتِيَةٌ فَاصْفَحِ الصَّفْحَ الْجَمِيلَ
অর্থ;-আমি আসমান ও জমীন ও এতদউভয়ের মাঝে যা আছে তা অযথা সৃষ্টি করিনি৷ কেয়ামত অবশ্যই আসবে৷
# বিশ্ব প্রকৃতির যাবতিয় বিনা উদ্দেশ্য সৃষ্টি হয়নি৷ আল্লাহ তায়ালা সব কিছু উদ্দেশ্য মূলক ভাবেই সৃষ্টি করেছেন৷ প্রতিটি বিষয়ই তাৎপর্যপূর্ণ৷ একে কোন অবস্থায়ই প্রাকৃতিক বা দেবতাদের লীলা বলার অবকাশ নেই৷ এবং বিশ্বের পরিপূরক হিসেবে এর চাহিদাতেই কেয়ামত অবশ্যই আসবে৷
৮৬/إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْخَلاَّقُ الْعَلِيمُ
অর্থ;-নিশ্চয় আপনার রব সর্বস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ৷
# মহান আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ স্রষ্টা৷ তিনিই সর্বজ্ঞ৷ সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টির ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান রাখবেন এটাই স্বাভাবিক৷ যিন ঘড়ি নির্মান করবেন তিনি অবশ্যই জানবেন তাতে কিকি যন্ত্রাংশ আছে৷ সুরা ‘মূলক’ এ বলা হয়েছে; ‘আলা ইয়া’লামু মান খালাক্ব ওয়াল লাতিফুল খাবির’৷
৮৭/وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ
অর্থ;-আর আমিতো আপনাকে সাতটি আয়াত দিয়েছি যা, বারবার পাঠ করা হয়, আর দিয়েছি মহা ক্বোরআন৷
৮৮/لاَ تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلاَ تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِينَ
অর্থ;-আপধনি চোখ তুলে ঐ সব বস্তুর প্রতি দেখবেন না, যা আমি বিভিন্ন শ্রেনীকে ভোগ বিলাসের জন্য দিয়েছি এবং তাদের জন্য দুঃখীতও হবেন না৷ আর মুমিনদের জন্য স্বীয় কাঁধ নত করুন৷
# আল্লাহ তায়ালা যাকে যা সম্পদ দিয়েছেন তার মাঝেই রয়েছে তার পরীক্ষা৷ কিন্তু অনেকে নিজেকে আল্লাহর অনুগ্রহভাজন ভেবে দৌলতের মালিক হয়েছে মনে করে৷ মুশরীকদের মাঝেও অনেকে ধনবান ছিল৷ তারা রসুল সঃ কে উপহাস করত৷ স্ত্রী হজরত খদিজা রাঃ এর দৌলত নির্ভর বলত৷ আল্লাহ বললেন, তিনি যেন অন্যের ধন দৌলতের দিকে নজর না দেন৷ নির্বোধরা জানেনা আল্লা রসুলকে কি সম্পদ দিয়েছেন, তা হল; সাত আয়াত বিশিষ্ট ‘সুরা ফাতেহা’ যা বার বার পড়া হয়৷ যার রয়েছে সীমাহীন ফজিলত৷ আরও দিয়েছেন পবিত্র কোরআন৷ জাগতিক যে কোন ঐশ্বর্য্য অপেক্ষা যা মহা মূল্যবান৷
নব্য মুমিনদের মধ্য অনেকেই ছিলেন অত্যন্ত গরীব ও গোলাম শ্রেনীর, তাদেরও মুশরিকরা উপহাস করত৷ আল্লাহ রসুল সঃ কে তাদের প্রতি বিনয় ও নম্রতা দেখাতে উপদেশ দিলেন৷ সুরা ‘ত্বা-হা’ এ উক্তিটি আবার আসবে৷ আর ‘বনী ইস্রাইল’ সুরায় পিতা মাতার ব্যাপারে সন্তানদের এ উপদেশ দেওয়া হয়েছে৷
৮৯/وَقُلْ إِنِّي أَنَا النَّذِيرُ الْمُبِينُ
অর্থ;-আর বলুন; অবশ্যই আমি প্রকাশ্য সতর্ককারী৷
৯০/كَمَا أَنزَلْنَا عَلَى المُقْتَسِمِينَ
অর্থ;-যেমন আমি নাজিল করেছি বিভক্তকারীদের উপর৷
৯১/الَّذِينَ جَعَلُوا الْقُرْآنَ عِضِينَ
অর্থ;-যারা কোরআনকে খণ্ড খণ্ড করেছে৷
৯২/فَوَرَبِّكَ لَنَسْأَلَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ
অর্থ;-অতএব, আপনার পালনকর্তার কসম; আমি অবশ্যই ওদের সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করব৷
৯৩/عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
অর্থ;-তারা যা করত সে বিষয়ে৷
# নবী রসুলগনের মূল দায়িত্ব হল মানব জাতির জন্য আল্লাহর বানী পৌঁছে দেওয়া ও সফলদের জন্য সুসংবাদ আর বিফলদের জন্য ভয়াবহ পরিনতির ব্যাপারে সতর্ক করা৷ এবং এরই জন্য আল্লাহ রসুলদের কাছে তার বানী বা কিতাব পাঠিয়ে থাকেন৷ অতীতেও তিনি কোরআন(অন্যত্র তওরাতকেও কোরআন বলা হয়েছে) বা তওরাত যাদের কাছে পাঠিয়েছেন তারা তা খণ্ড খণ্ড করেছে৷ কাট ছাঁট, পরিবর্তনও করেছে৷ আয়াতটির অন্য অর্থও হতে পারে, প্রাথমিক অবস্থায় যখন সুরা নাজিল হত তখন মুশরিকরা উপহাস ছলে আপোসে ভাগ বাঁটোয়ারা করার কথা বলত৷ তবে অধিকাংশের মতে প্রথমটিই স্থান পেয়েছে৷ যারা যাই করুকনা কেন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কৃত কর্মের বিষয়ে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করবেন৷
৯৪/فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ
অর্থ;-অতএব, আপনি প্রকাশ্যে প্রচার করুন যা আপনাকে আদেশ করা হয়েছে৷ এবং মুশরিকদের পরওয়া করবেন না৷
# এ আয়াতটিই প্রমান করে যে সুরাটি রসুল সঃ এর নবুয়ত প্রাপ্তির প্রাথমিক চার বছরের মধ্যে নাজিল হয়৷ নবুয়ত লাভের পর তিনি একান্ত আপন জনের মাঝেই দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন৷ প্রথমেই আপন প্রীয়তমা স্ত্রী, হজরত খাদিজা রাঃ, বাল্য বন্ধু হজরত আবু বকর, স্নেহাস্পদ হজরত আলি, আজাদ কৃত গোলাম, হজরত যায়েদ বিন হারেশ তাঁর আহবানে সাড়া দেন৷ প্রকাশ্য বলাতে অনেকের মতে তিনি গোপনে দাওয়াতি কাজ করেছেন বলা হয়েছে, এটি সঠিক নয়৷ প্রকাশ্যে বলতে খোলা খুলি সবার মাঝে প্রচার করার আদেশ কলরা হল৷
তৎকালে মক্কায় কারও কাছে কোন জরুরী গোপন সংবাদ, যা কোন গোত্রের ভোরবেলা অতর্কিত আক্রমন বিষয়েই বেশি হত, এমন খবর থাকলে সকলকে জানাতে হত৷ সে জন্য ঐ ব্যাক্তি কোন টিলা বা পাহাড়ের উপর উঠে উলঙ্গ দাঁড়িয়ে আওয়াজ দিত, ‘ইয়া সাবাহা-উ’ বলে৷ ব্যাস্ত সমস্ত হয়ে লোকেরা জমায়েত হয়ে খবর শুনত৷ এ কে ‘নাজিরে উরইয়ান’ বলা হত৷
রসুল সঃ এ আদেশ পাবার পর টিলায় উঠে ‘ইয়া সাবাহাউ’ বলে বোল দিলেন৷ (অবশ্যই তিনি ‘উরইয়ান’ বা উলঙ্গ হননি৷) অনেকেই জমায়েত হলে তিনি প্রকাশ্যে দ্বীনের দাওয়াত দিলেন৷
আবু লাহাব এতে ক্ষীপ্ত হয়ে বলে উঠল; ‘তাব্বান লাকা, আ লে হাজা জামা’তানা’! তোমার ধ্বংস হোক এ জন্যই কি আমাদের জমায়েত করেছ? ‘সুরা লাহাবে’ আল্লাহ তার একথার জবাব দিয়েছেন৷
৯৫/إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ
অর্থ;-বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে আমিই আপনার জন্য যথেষ্ট৷
৯৬/الَّذِينَ يَجْعَلُونَ مَعَ اللّهِ إِلـهًا آخَرَ فَسَوْفَ يَعْمَلُونَ
অর্থ;-যারা আল্লাহর সাথে অন্য মাবুদ সাব্যস্ত করে তারা অতি সত্বর জানতে পারবে৷
৯৭/وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّكَ يَضِيقُ صَدْرُكَ بِمَا يَقُولُونَ
অর্থ;-আর আমিতো জানি যে, তারা যা বলে তাতে আপনার হৃদয় ব্যথিত হয়৷
# সুরা ‘আনআম’এ আমরা এমন কথা জেনে এসেছি৷ প্রকাশ্যে দ্বীন প্রচারের আদেশের সাথে আল্লাহ বলে দিয়েছেন, মুশরিকদের কথার পরওয়া না করতে আর বিদ্রুপ কারিদের জন্য তিনিই যথেষ্ঠ৷ কিন্তু রসুল সঃ তো অন্যের মত মানুষই৷ তাঁরও দুঃখ বেদনা অন্যের মত হতেই পারে৷ মুশরিকদের কেউ তাকে পাগল আখ্যাদিল, কেউ বলল, ঘরে একজন ভাল আজমী গোলাম আঁটকে রেখে তার কাছে পুরাণো কিতাবের কথা শুনে আমাদের কাছে বাহাদূরী করে৷ ওৎবা ইবনে রাবিয়া, গোত্রের মুরুব্বী, এসে বলল, ‘ভাতিজা, যদি সত্যই তোমার উপর কোন অপচ্ছায়া পড়ে থাকে বল, আমার সাথে অনেক কবিরাজ বদ্দির জানা শোনা আছে৷ তাদের দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে দেব’৷ এমন সব কথায় রসুল সঃ এর অন্তরে কষ্ট হত, তিনি বিচলিতও হতেন৷ তাই আল্লাহ তাঁকে সান্ত্বনা দিলেন৷
৯৮/فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَكُن مِّنَ السَّاجِدِينَ
অর্থ;-সুতরাং আপনি আপনার রবের প্রশংসার সাথে তার পবিত্রতা মহিমা ঘোষনা করতে থাকুন এবং সেজদাহকারীদের শামিল হয়ে যান৷
৯৯/وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ
অর্থ;-আর আপনার রবের ইবাদত করতে থাকুন, যে পর্যন্ত না নিশ্চিত বস্তুটি এসে যায়৷
# নিশ্চিত বস্তু বলতে সাধারণতঃ মৃত্যুকেই বোঝানো হয়ে থাকে৷ তার চাইতে নিশ্চিত বস্তু আর কিছু নেই৷ এখানে আরও একটি বস্তুর কথাও অনেকে বলে থাকেন, তা হল আল্লাহর সাহায্য৷ সেই বস্তু না আসা পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকার কথা বললেন, যাতে অন্তরে তৃপ্তি আসবে, মন ভাল থাকবে৷
(সুরা ‘হিজর’ ও দ্বিতীয় শাখা গ্রুপ শেষ হল৷)
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৭ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সামুদ জাতির উপর পতিত লানত আমাদের উপর পরতে খুব বেশি দেরি নেই।
আল্লাহ্ হিফাযাতকারী।
এবং
আমাদের জন্মভুমিকে জালিম শাষকের হাত থেকে হেফাযত করুন
আদ ও সামুদ জাতির বাসস্থান সেীদি আরব এর মাদায়েন সালেহ এবং জর্দান এর পেট্রা উদাহরন থাকা সত্বেয় আজকের সিমালংঘনকারিরা শিক্ষা নেয়না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন