<><><> -সে বলল; হে আমার রব, আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ঠ করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করে দেব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ঠ করে দেব৷<><><>
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১২ এপ্রিল, ২০১৬, ০৬:২৯:১৪ সন্ধ্যা
(বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)
সুরা হিজর রুকু;-৩ আয়াত;-২৬-৪৪
২৬/وَلَقَدْ خَلَقْنَا الإِنسَانَ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ
অর্থ;-আমিতো মানুষ সৃষ্টি করেছি গন্ধযুক্ত বিশুষ্ক ঠন ঠনে মাটি থেকে৷
# মানুষ সৃষ্টির জাগতীক উপাদান মাটি৷ পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন জায়গায় এই মাটিকে বিভিন্ন অবস্থায় বর্ণনা করা হয়েছে৷ প্রথমে মানুষ কে (‘তুরাব’)বা সাধারণ ভাবে মাটি বলা হয়েছে৷ এর পর (‘ত্বীন’)বা সাধারণ কাদা বলা হয়েছে, সুরা ‘আ’রাফে’ এ৷ আবার (‘ত্বীনে লাজেম’)বা পচা কাদা, বলা হয়েছে৷ এ আয়াতে গন্ধ যুক্ত ঠন ঠনে মাটি বলা হয়েছে৷ সুরা ‘রহমান’এ বলা হয়েছে, পোড়া মাটির মত ঠনঠনে শুষ্ক মাটি থেকে৷ মাটিও পানির মিশ্রনেই মানুষ তৈরী হয়েছে৷ বিজ্ঞান ও বলে প্রাণের সৃষ্টি পানি হতে৷
আদম ও ইবলীসের ঘটনা কোরআনে এটি তৃতীয় বার বর্ণনা করা হল৷ লক্ষনীয় যে, এ বর্ণনায় শুধু মাত্র সুরা ‘আলে ইমরাণের ৫৯ আয়াতে আদম শব্দটি ব্যবহার হয়েছে, অন্যান্ন স্থানে এ আয়াতের মত ‘বাশার’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে৷
২৭/وَالْجَآنَّ خَلَقْنَاهُ مِن قَبْلُ مِن نَّارِ السَّمُومِ
অর্থ;-এবং এর আগে জ্বীন সৃষ্টি করেছি আগুনের আঁচ থেকে৷
# মানুষ যেমন মাটির তৈরী হলেও তার শরীর মাটির নয় তেমনই জ্বীন আগুনের তৈরী হলেও সরাসরি আগুন নয়৷ আগুনের শিখার চুতুর্পাশের অদৃশ্য তাপ বা আঁচ এর উপাদান দিয়েই জ্বীন জাতির সৃষ্টি হয়েছে৷
২৮/وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ
অর্থ;-আর যখন আপনার রব ফেরেশ্তাদেরকে বললেন, আমি বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি থেকে মানু সৃষ্টি করতে চাই৷
২৯/فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُواْ لَهُ سَاجِدِينَ
অর্থ;-তার পর যখন তাকে পরিপাটি রূপে গঠন করব এবং তার মধ্যে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার প্রতি সেজদায় অবনত হয়ো৷
# গন্ধ যুক্ত পচা ঠন ঠনে মাটি থেকে আদম সৃষ্টি করার পর যখন আল্লাহ তাতে ‘রূহ’ প্রয়োগ করবেন তখন সব ফেরেশ্তাদের আদম আঃ কে সেজদা করার হুকুম দিলেন৷ এ সেজদাহ যেমন মাটির তৈরী আদমকে নয় বরং তার মধ্যস্থিত ‘রূহ’কে তেমনই এ সেজদাহ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনীধি আদমের বশ্যতা স্বীকারের৷
৩০/فَسَجَدَ الْمَلآئِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ
অর্থ;-তখন ফেরেশ্তারা সকলে মিলে সেজদাহ করল৷
৩১/إِلاَّ إِبْلِيسَ أَبَى أَن يَكُونَ مَعَ السَّاجِدِي
অর্থ;-কিন্তু ইবলীস সেজদাহকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে অস্বীকৃতি জানাল৷
৩২/قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا لَكَ أَلاَّ تَكُونَ مَعَ السَّاجِدِينَ
অর্থ;-তিনি (আল্লাহ) বললেন, হে ইবলীস, তোমার কি হলো যে তুমি সেজদাকরীদের অন্তর্ভূক্ত হলেনা?
৩৩/قَالَ لَمْ أَكُن لِّأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ
অর্থ;-আমি এমন নই যে, এমন একজন মানুষকে সেজদা করব যাকে আপনি পচা কাদা থেকে তৈরী ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন৷
৩৪/قَالَ فَاخْرُجْ مِنْهَا فَإِنَّكَ رَجِيمٌ
অর্থ;-তিনি বললেন, তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও৷ নিঃসন্দেহে তুমি বিতাড়িত৷
৩৫/وَإِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ إِلَى يَوْمِ الدِّينِ
অর্থ;-অবশ্যই তোমার প্রতি অভিসম্পাত থাকবে প্রতিদানের দিন পর্যন্ত৷
৩৬/قَالَ رَبِّ فَأَنظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
অর্থ;-হে আমার রব, আমাকে পুনরুত্থান দিবস অবধি অবকাশ দিন৷
৩৭/قَالَ فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ
অর্থ;-তিনি বললেন, তোমাকে অবকাশ দেওয়া হল৷
৩৮/إِلَى يَومِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ
অর্থ;-সেই অবধারিত সময় (কেয়ামত) উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত৷
# উল্লেখ্য, জ্বীন জাতির অন্যান্নে স্বাভাবিক হায়াত মওত থাকলেও ইবলীসকে আল্লাহ তায়ালা কেয়ামত পর্যন্ত আয়ু প্রলম্বিত করে দিলেন৷
৩৯/قَالَ رَبِّ بِمَآ أَغْوَيْتَنِي لأُزَيِّنَنَّ لَهُمْ فِي الأَرْضِ وَلأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ
অর্থ;-সে বলল; হে আমার রব, আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ঠ করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করে দেব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ঠ করে দেব৷
৪০/إِلاَّ عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
অর্থ;-তবে, তাদের মধ্যে যারা আপনার বাছাই করা বান্দা তাদের ছাড়া৷
৪১/قَالَ هَذَا صِرَاطٌ عَلَيَّ مُسْتَقِيمٌ
অর্থ;-তিনি বললেন, এটা আমা পর্যন্ত সরল পথ৷
# ইবলীশের সাথে আল্লাহর কথা পাকা হয়েগেল৷ আল্লাহর পথটি হল সোজা আর শয়তানের পথ বাঁকা৷
৪২/إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ إِلاَّ مَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْغَاوِينَ
অর্থ;-যারা আমার বান্দা তাদের উপর তোমার কোনই ক্ষমতা নেই; শুধুই পথভ্রষ্ঠদের মধ্যে যারা তোমার পথে চলে৷
৪৩/وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمَوْعِدُهُمْ أَجْمَعِينَ
অর্থ;-নিশ্চয় জাহান্নাম হচ্ছে তাদের নির্ধারিত স্থান৷
৪৪/لَهَا سَبْعَةُ أَبْوَابٍ لِّكُلِّ بَابٍ مِّنْهُمْ جُزْءٌ مَّقْسُومٌ
অর্থ;-এর সাতটি দরজা আছে৷ প্রত্যেক দরজার জন্য এক একটি পৃথক দল আছে৷
# ইবলীস ফেরেশ্তা ছিলনা৷ সৃষ্টির উপাদানের নৈকট্য হেতু ফেরেশ্তালোকেই তার অবস্থান ছিল৷ আল্লাহর আদেশ অমান্য আর অহংকারের জন্যই বিতাড়িত হল৷ বিনিময়ে সে আল্লাহর কাছে কেয়ামত পর্যন্ত আয়ু চেয়ে নিল৷ যাতে সে আদম সন্তানদের নানা প্রলোভন দিয়ে বিপথে নিতে পারে৷ সে নিজেই আল্লাহর ‘মুখলাস’বা বাছাই করা কাউকে বিপথে নেবেনা তাও বলেদিল৷ আল্লাহও জানিয়ে দিলেন, কাউকেই জোর করে নেবার অধিকার তোমার থাকবে না৷ তবে যে সেচ্ছায় তোমার পথে যাবে তাকেই শুধু নিতে পার৷ তবে মনে রেখো তাদের জন্য আমিও জাহান্নাম তৈরী রাখব৷ অপরাধের শ্রেনী ভেদে তারা সাতটি দরজার একটি দিয়ে সেখানে প্রবেশ করবে৷
বিষয়: বিবিধ
১১৯৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান রব আমাদেরকে সহজ ও সোজা পথে অবিচলিত রাখুন। আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
হে আল্লাহ !ঐ সাত দরজা আমাদের জন্য বন্ধ করে দিন ও আমাদের জান্নাতুল ফেরদাউস পাবার মত আমল করার তৌফিক দিন । আমীন
জাজাকাল্লাহ খায়ের চাচাজান ।
জাযাকাল্লাহু খাইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন