{}{} এমনই ভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে বিদ্রুপ করার প্রবনতা সঞ্চার করি৷{}{}
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ৩০ মার্চ, ২০১৬, ০৭:৫১:১৭ সন্ধ্যা
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের ধারা বাহিক বাংলা অনুবাদ)
(১৫) সুরা হিজর (মক্কী) রুকু ৬টি আয়াত ৯৯টি
দ্বিতীয় শাখা গ্রুপের তৃতীয় সুরা ‘হিজর’৷ প্রথম শাখা গ্রুপের প্রথম ও দ্বিতীয় সুরা দুটিতে যেমন মিল ছিল আর তৃতীয় সুরাটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন মেজাজের, এ শাখা গ্রুপেও ঠিক তেমনই প্রথম সুরা ‘রা’দ’ ও দ্বিতীয় সুরা ‘ইব্রাহীমে’ও আমরা মিল দেখেছি৷ আবার তৃতীয় সুরা ‘হিজর’ ও ভিন্ন মেজাজের পাওয়া যাবে৷ ওখানে
তৃতীয় সুরা ‘ইউসুফ’ এর সাথে মিল পাওয়া যাবে সুরা ‘ত-হা’ এর যদিও তা পাশাপাশি নেই৷ এখানেও তেমন সুরা ‘হিজর’ এর মিল পাওয়া যাবে সুরা শোওরা’ এর সাথে, তা ও পাশা পাশি নয়৷
সুরা ‘রা’দ’ ও সুরা ‘ইব্রাহীম’ এ রুকু গুলি ৬/৭ আয়াতেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু এ সুরার রুকু গুলি গড়ে ১৬/১৭ আয়াতে পাওয়া যাবে৷
পর পর পাঁচটি সুরায় বিষয় বস্তু আমরা প্রায় একই পেয়েছি, তারই এক ঘেয়েমী দূর করার জন্যই হয়ত আল্লাহ তায়ালা এ সুরাটি ভিন্ন আঙ্গিকের এখানে দিয়েছেন৷
নবুয়তের প্রাথমিক চার বৎসরের সুরা গুলি সাধারণতঃ ছোট ছোট আয়াত বিশিষ্টি কিন্ত বক্তব্য ও ছন্দ বেশ জোরালো ও ভাব গাম্ভির্যে ভর পুর দেখা যায়, ঠিক যেমন, পাহাড় হতে সৃষ্ট ঝর্ণা৷ যা সংকীর্ন, কিন্তু তাতে থাকে ছন্দ ও জোরালো স্রোত৷ যত সমতলে যায় ততই বিস্তৃত হতে থাকে৷ এ সুরাটিও প্রাথমিক পর্যায়ের সুরা৷ সুরা ‘ক্বাফ’ সুরা ‘নজম’ সুরা ‘রহমান’ সুরা ‘মুল্ক’ প্রভৃতির সঙ্গে এর ছান্দিক মিল রয়েছে৷
মধ্যের চার বৎসরের সুরা গুলি ক্রমশঃ বড় আয়াত, পরের গুলি আরও বড় ও মাদানী সুরার আয়াত, আমরা পাই আয়াতুল কুরষীর মত বড় আয়াতও৷
সুরা হিজর রুকু;-১ আয়াত;-১-১৫
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
পরম করুনাময় ও অতিশয় দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করিলাম৷
১/الَرَ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ وَقُرْآنٍ مُّبِينٍ
অর্থ;-‘আলিফ লাম রা’ এগুলো আল কিতাবের আয়াত এবং সুস্পষ্ট কোরআনের৷
পারা-১৪
২/رُّبَمَا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَوْ كَانُواْ مُسْلِمِينَ
অর্থ;-কোন সময় কাফেররা আকাঙ্খা করবে যে, যদি তারা মুসলীম হত৷
# কাফেররা যখন আজাবের বাস্তব রূপ ও ইমানদার দের পুরষ্কার প্রত্যক্ষ করবে তখন তাদের চমক ভাংবে, আর নিজেদের কর্মফলের জন্য আক্ষেপ করে বলতে থাকবে, আমরা যদি মুসলীম হতাম তাহলে আজ আমাদের এমন দশা হত না৷ কিন্ত তখন আর সময় থাকবেনা৷
৩/ذَرْهُمْ يَأْكُلُواْ وَيَتَمَتَّعُواْ وَيُلْهِهِمُ الأَمَلُ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ
অর্থ;-তাদের ছেড়ে দিন৷ খেয়েনিক, ভোগ করে নিক, এবং আশায় ব্যাপৃত থাকুক৷ অতি সত্বর তারা জেনে নেবে৷
# ভোগ বিলাসের সাথে আশা আকাঙ্খায় ডুবে থাকা অবস্থায় তাদের এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে৷ আকাঙ্খাই মানুষকে শেষ প্রান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে৷ তা সে ব্যক্তিগত যোগ্যতা, দক্ষতা অর্জনই হোক বা ব্যবসা বানিজ্য, সম্পদ আহোরণের আকাঙ্খাই হোক না কেন৷ রসুল সঃ বলেছেন, ‘পরিমিত সম্পদে যদি চাহিদা পূরণ হয় তবে তা অবশ্যই ভাল বেশী সম্পদ আহোরণের আকাঙ্খা হতে৷ কারণ আকাঙ্খা মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে৷” আর এজন্যই হয়তো বলা হয়েছে ‘অর্থই অনর্থের মূল’৷
৪/وَمَا أَهْلَكْنَا مِن قَرْيَةٍ إِلاَّ وَلَهَا كِتَابٌ مَّعْلُومٌ
অর্থ;-আর আমি কোন জনপদ ধ্বংস করিনি; কিন্তু তার জন্য নির্দিষ্ট সময় লিখিত ছিল৷
# সব জাতি বা প্রত্যেক ব্যাক্তির জন্য নির্দিষ্ট সময় সীমা বা মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকে, ঐ মেয়াদ অনুসারেই কোন জাতির ধ্বংস আসে বা ঐ ব্যাক্তির মৃত্যু আসে; তার আগে নয়৷
৫/مَّا تَسْبِقُ مِنْ أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُونَ
অর্থ;-কোন সম্প্রদায় তার নির্দিষ্ট সময়ের আগে যায়না আর না পিছনে থাকে৷
৬/وَقَالُواْ يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ
অর্থ;-আর তারা; হে ঐ ব্যাক্তি, যার প্রতি যার প্রতি স্বরণীকা (কোরআন) নাজিল হয়েছে, আপনিতো উন্মাদ৷
# মজনূন শব্দটি জ্বীন শব্দ হতে এসেছে, যার অর্থ অদৃশ্য৷ পাগলকেও মজনু বলা হয়৷ এর থেকে জান্নাত শব্দেরও উৎপত্তি৷ নবুয়ত প্রাপ্তির আগে রসুল সঃ মক্কার অদূরে হীরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন৷ কখনওবা রাতেও সেখানে রয়ে যেতেন৷ যখন তাঁর উপর ওহী নাজিল শুরু হল, ফেরেশতার আগমনের কথা জানালেন, তখন অনেকেই মনে করত তাঁর উপর কোন অপশক্তির প্রভাব পড়েছে, তাই তিনি বিকারগ্রস্থ বা উন্মাদ হয়ে গেছেন৷ আবার কেউবা বিদ্রুপের ছলেও বলত৷
‘জিকির’ এখানে কোরআনকে বলা হয়েছে৷ এ রুকুতে কোরআনের পরিবর্তে ‘জিকির’ শব্দটি দুই বার এসেছে৷ ‘জিকির’ বা স্মরণীকা এমন উপাদান বা মাধ্যম যা সুপ্ত চেতনাকে জাগ্রত করে৷ যেমন, কোন বন্ধু হারিয়ে যাবার আগে একটি কলম বা একটি রুমাল দিয়ে গিয়ে ছিল যা সযত্নে চোখের আড়ালে রাখাছিল৷ ঐ বন্ধু স্মৃতি থেকে প্রায় মূছে গিয়েছিল, কিন্তু কোনদিন রুমাল বা কলমটি দেখা মাত্রই পুনরায় ঐ বন্ধুস্মৃতি মনে জেগে ওঠে৷ এখানে ঐ উপহার টিই স্মরণীকা৷ মানুষের সুপ্ত চেতনায় আল্লহর অস্তিত্ব অবশ্যই আছে৷ পবিত্র কোরআনও তেমনি স্মরণীকা, যার দ্বারা ভূলে যাওয়া আল্লাহর পথ বা আদেশ নিষেধ পুনরায় জাগ্রত হয়৷
৭/لَّوْ مَا تَأْتِينَا بِالْمَلائِكَةِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ
অর্থ;-যদি আপনি সত্যবাদী হন, তবে আমাদের কাছে ফেরেশ্তাদের আনেন না কেন?
৮/مَا نُنَزِّلُ الْمَلائِكَةَ إِلاَّ بِالحَقِّ وَمَا كَانُواْ إِذًا مُّنظَرِينَ
অর্থ;-আমি ফেরেশ্তা নাজিল করিনা শুধু ফায়সালার জন্য ছাড়া৷ তখন তাদেরকে অবকাশ দেওয়া হবেনা৷
# ফেরেশ্তা পাঠাবার আবেদনের জবাবে আল্লাহ বলে দিলেন যে, যখনই কোন বিষয়ের ফায়সালা হয়ে যায় তখনই সেই ফায়সালা সহই ফেরেশ্তা নামেন আর তখন তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, কোন অবকাশের মেয়াদ আর বাকী থাকেনা৷ যেন লূত আঃ এর কওমের জন্য ফেরেশ্তা এসেছিলেন৷
৯/مَا نُنَزِّلُ الْمَلائِكَةَ إِلاَّ بِالحَقِّ وَمَا كَانُواْ إِذًا مُّنظَرِينَ
অর্থ;-আমিই স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতরণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক৷
# এ আয়াতটি কোরআনের ‘মাহফুজিয়াত’ বা হেফাজতে সংরক্ষণের দলীল৷ আল্লাহ তায়ালা তওরাত, ইঞ্জীলও অবতারণ কেরেছেন, উভয়ের মাঝেই হেদায়েত ও নূর ছিল৷ কিন্তু ও গুলি সংরক্ষণের দায়িত্ব এমন করে তিনি নিজে নেননি৷ বলা যায়, তওরাতে ও ইঞ্জীলে হেদায়েত পূর্ণতা পায়নি তাই কোরআনকে পাঠাতে হয়েছে৷ এবং তা ওহীর মাধ্যমেই এসেছে৷ যেহেতু কোরআনে হেদায়েত পূর্ণতা পেয়েছে তাই ওহীর পথ বন্ধ করা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে ওহী বাহক নবী বা রসুলের আগমনও রোহীত হয়েছে৷ রসুল সঃ তাই বলেছেন, তিনিই শেষনবী, তাঁর পর আর কোন নবী আসবেননা৷
অতএব, যখন হেদায়েত পূর্ণতা পেয়েছে আর কোরআন ঠিক আপন অবয়বে আজও সংরক্ষীত আছে, তখন কারও নিজেকে নবী বলে প্রকাশ করা বা ওহীর আধার বলা বা কাউকে এমন যোগ্যাতার অধিকারী বলে মেনে নেওয়া কতখানি মূর্খতা তা ভেবে দেখা দরকার৷
১০/وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ فِي شِيَعِ الأَوَّلِينَ
অর্থ;-আমি আপনার পূর্বে বিস্তারিত (বিভক্ত) সম্প্রদায়ের কাছে রসুল প্রেরণ করেছি৷
# ‘শীয়া’ অর্থ আলাদা হয়ে যাওয়া, বিস্তারিত হওয়া, ভাগ হয়ে যাওয়া৷ আমরা জানি হজরত নূহ আঃ এর তিন পুত্র তিন দিকে ছড়িয়ে পড়ে, তাদের বংশধরদের মাধ্যমেই বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জাতির সৃষ্টি হয়৷ আল্লাহ সেই বিভক্ত সম্প্রদায়ের মধ্যেই রসুল পাঠিয়েছেন৷
১১/وَمَا يَأْتِيهِم مِّن رَّسُولٍ إِلاَّ كَانُواْ بِهِ يَسْتَهْزِؤُونَ
অর্থ;-তাদের কাছে এমন কোন রসুল আসেনি, যাকে তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ না করেছে৷
# দুনিয়াই যখন যে নবী বা রসুল এসেছেন, তার সাথেই তাঁর নিজের কওম ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছে, অত্যাচার করেছে৷ তারই ধারাবাহিকতায় রসূল সঃ কেও ঠাট্টা বিদ্রুপ করা হচ্ছে৷ অত্যাচার করা হয়েছে৷
১২/كَذَلِكَ نَسْلُكُهُ فِي قُلُوبِ الْمُجْرِمِينَ
অর্থ;-এমনই ভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে বিদ্রুপ করার প্রবনতা সঞ্চার করি৷
# আল্লাহর নিয়ম সৎপথের যাত্রীদের সামনের পথ সুগম করা৷ ঠিক তেমনই তিনি অসৎপথে পা রাখা লোকের জন্যও তার পথ সুগম কররে দেন৷ তাই যারা অপরাধী তাদের মনে রসুলকে বিদ্রুপ করার প্রবনতা বাড়িয়ে দেন৷ নিরাপরাধ বা যার মনে বিদ্রুপ করার প্রবনতা নেই তাকে এ প্রবনতা দেননা৷
১৩/لاَ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَقَدْ خَلَتْ سُنَّةُ الأَوَّلِينَ
অর্থ;-তারা এর (কোরআনের) প্রতি ইমান আনেনা আর এ রীতি পূর্ববর্তীদের থেকেই চলে আসছে৷
১৪/وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِم بَابًا مِّنَ السَّمَاء فَظَلُّواْ فِيهِ يَعْرُجُونَ
অর্থ;-আমি যদি ওদের সামনে আকাশের কোন দরজা খুলে দেই আর তাতে ওরা দিন ভর আরোহন করতে থাকে;
১৫/لَقَالُواْ إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَّسْحُورُونَ
অর্থ;-তবুও তারা অবশ্যই বলবে; আমাদের নজরবন্দী করা হয়েছে, এবং আমরা যাদুগ্রস্থ হয়ে পড়েছি৷
বিষয়: বিবিধ
১২৪৬ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাক আল্লাহ।
এখানে বিস্তারিত শব্দটি যায়না। হয় বিস্তৃত হবে অথবা অন্য কিছু।
রাসূল যখন উন্মাদ গালি শুনেও উনার মিশন বাস্তবায়নের পথে এতটুকু পিছপা হননি, আমরা সে নবীর উম্মত হয়ে কিভাবে একটু বকা শুনলেই, মুখ কালো দেখলেই, এড়িয়ে গেলেই নিজেদের মানুষের রঙ্গে রাঙ্গাতে সচেষ্ট হয়ে পড়ি!
আর হ্যাঁ, ভুল লিখতে ভূল লিখা যাবেনা
জাযাকাল্লাহু খাইর
অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন