{} অর্থ;-যিনি তোমাদের কল্যানে চন্দ্র ও সূর্যকে নয়োজিত করেছেন, যারা একই নিয়মে অনবরত চলছে৷ এবং দিন রাত্রীকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন৷{}
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৩ মার্চ, ২০১৬, ০২:০২:৪৬ রাত
(উর্দু বয়ানুল কোরনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)
সুরা ইব্রাহীম রুকু;-৫ আয়াত;-২৮-৩৪
২৮/أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ بَدَّلُواْ نِعْمَةَ اللّهِ كُفْرًا وَأَحَلُّواْ قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ
অর্থ;-তুমিকি তাদের কে দেখনি, যারা আল্লাহর নেয়ামতের বদলে কুফরী করেছে এবং নিজেদের কওমকে নামিয়ে এনেছে ধ্বংসের ক্ষেত্রে-
২৯/جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا وَبِئْسَ الْقَرَارُ
অর্থ;-জাহান্নামে, সেখানে তারা প্রবেশ করবে, কত নিকৃষ্ট সে আবাস৷
# যারা আল্লাহর নেয়ামত, আল্লাহর দানকে তার অনুগ্রহ বলে স্বীকার করেনা, তারাই কুফরী করেছে৷ আল্লাহ তায়ালা এ দুনিয়াকে নানান ভাবে মানুষের বাসযোগ্য করে রেখেছেন৷ পথ ভ্রষ্ট মানুষকে পথে আনার জন্য নবী রসুল পাঠিয়ে ছেন৷ অথচ মানুষ তার এ অনুগ্রকে অস্বীকার করে, এ গুলো প্রাকৃতিক বলে৷ সেই নবী রসুলদের উপর জুলুম অত্যাচার করে৷ তারাই আবার সমাজের হর্তা কর্তা৷ সমাজের অনেকেই তাদের তাবেদারী করে, তাদের অনুসরণ করে৷ ফলে, ফেরাউন যেমন তার কওমের বিশাল বাহিনীর সামনে থেকে সকলকে নদীতে নামিয়েখতম করেছে, এই কর্ণধারেরাও তাদের অনুসারীদের এক নিকৃষ্ট স্থান, জাহান্নামে নিয়ে ফেলবে৷
৩০/وَجَعَلُواْ لِلّهِ أَندَادًا لِّيُضِلُّواْ عَن سَبِيلِهِ قُلْ تَمَتَّعُواْ فَإِنَّ مَصِيرَكُمْ إِلَى النَّارِ
অর্থ;-তারা আল্লাহর জন্য অনেক সমকক্ষ সাব্যস্ত করেছে, যেন তার পথ থেকে অন্যদেরকেও বিপথগামী করে দেয়৷ আপনি বলেদিন, তোমরা কিছুদিন ভোগ করে নাও৷ কেননা পরিশেষে দোজখই তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল৷
# ‘শরিক’ শব্দ দ্বারা সাহায্যকারী বা সহযোগী বোঝানো হয়৷ ‘আনদাদ’ শব্দের মানে সমকক্ষ বা মতন বোঝানো হয়৷ যারা এমন করে তারাও অপরাধী৷ কেননা আল্লাহর যেমন শরিক নেই তেমনই তার মতও কেউ নেই৷ এরাও জাগতীক মেয়াদ শেষে জাহান্নামেই যাবে৷
এক বার এক সাহাবী কোন ব্যাপারে আগে পাছে নাভেবে একটা প্রবাদ বাক্যে রসুল সঃ কে বললেন, “মা শা আল্লাহু অমা শেয়তা”৷ আল্লাহ আর আপনি যা চান৷রসুল সঃ তাঁকে বাধা দিয়ে এমন বলতে নিষেধ করেছিলেন৷
৩১/قُل لِّعِبَادِيَ الَّذِينَ آمَنُواْ يُقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَيُنفِقُواْ مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلانِيَةً مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لاَّ بَيْعٌ فِيهِ وَلاَ خِلاَلٌ
অর্থ;-আমার বান্দা, যারা ইমান এনেছে তাদের বলেদিন, তারা নামাজ কায়েম রাখুক, এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করুক, ঐ দিন আসার পূর্বে যেদিন থাকবেনা কোন বেচাকেনা আর বন্ধুত্ব৷
# লক্ষনীয় যে এ আয়াতে ‘ইয়া আইয়ুহাল লাজিনা আমানু’ না বলে ‘ইবাদী’ বলা হয়েছে৷ মনে রাখতে হবে যে, ‘আল্লাজিনা আমানু’ উম্মতে মোহাম্মদী সঃ দের বলা হয় আর তা শুরু হয়েছে মদীনায় হিজরতের পর সাবেকা কওমকে বাতিল করে উম্মতে মোহাম্মদী সঃ কে স্বীকৃতী দেবার পর৷ আর তাই কোন মক্কী সুরায় সরাসরি এমন সম্বোধন নেই৷ সুরা হজ্জে আছে তবে সে টিও মক্কী না মাদানী এ বিষয়ে মতভেদ আছে৷
এ আয়াতের ঘোষণা আমরা সুরা বাক্বারায় ২৫৪ নং আয়াতে পড়ে এসেছি, সেখানে আরও একটা অতিরিক্ত বিষয় যোগ আছে তা হল ‘সুপারিশ’৷ আর দিনটি হল দুনিয়ার মেয়াদ শেষের দিন৷ আরও একটি বিষয় লক্ষ্যনীয় তা হল এখানে ধন সম্পদের কোন নেসাব যেমন বলা হয়নি তেমনি জাকাতের কথাও বলা হয়নি৷ বরং যার যতটুকু আছে তা হতেই অন্যের জন্য খরচ করতে বলা হয়েছে৷ এর চাইতে সুষম বন্টনের আর কোন মতবাদ আছেকি?
৩২/اللّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاء مَاء فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ وَسَخَّرَ لَكُمُ الْفُلْكَ لِتَجْرِيَ فِي الْبَحْرِ بِأَمْرِهِ وَسَخَّرَ لَكُمُ الأَنْهَارَ
অর্থ;-তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বরষণ করে তা দ্বারা তোমাদের ফলের রিজিক উৎপন্ন করেন৷ এবং নৌকাকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন যাতে তার আদেশে তা সমুদ্রে চলে, এবং যিনি তোমাদের উপকারার্থে নদ নদীকে নিয়োজিত করেছেন৷
# যিনি আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় জিনিষ সৃষ্টি করেছেন, নদ নদী মানুষের উপকারার্থে সৃষ্টি করেছেন৷ শুধু তাই নয় তার সমস্ত সৃষ্টিই প্রানী কল্যানে নিয়োজিত আর প্রানী জগতে মানুষই শ্রেষ্ঠ প্রাণী৷ তাই অন্য সকলেই মানুষের কল্যানেই সৃষ্টি৷ নৌকা জাহাজ ও আল্লাহর আদেশেই মানুষের কল্যানেই নিয়োজিত৷ সুরা বাক্বারায় বলা হয়েছে ‘দুনিয়ায় যা কিছু আছে তা তোমাদের জন্যই সৃষ্টিকরা হয়েছে’৷
৩৩/ وَسَخَّر لَكُمُ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ دَآئِبَينَ وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ
অর্থ;-যিনি তোমাদের কল্যানে চন্দ্র ও সূর্যকে নয়োজিত করেছেন, যারা একই নিয়মে অনবরত চলছে৷ এবং দিন রাত্রীকে তোমাদের কাজে লাগিয়েছেন৷
৩৪/وَآتَاكُم مِّن كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوهُ وَإِن تَعُدُّواْ نِعْمَتَ اللّهِ لاَ تُحْصُوهَا إِنَّ الإِنسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ
অর্থ;-যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ তার প্রতিটিই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন৷ যদি আল্লাহর নেয়ামতকে গননা কর তবে শেষ করতে পারবে না৷ নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী ও অতিশয় অকৃতজ্ঞ৷
# পৃথিবীতে প্রানীর জীবন ধারণের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সবই তিনি দিয়েছেন৷ মানুষের চাওয়া বলতে মানুষ যেগুলোর প্রয়োজনীয়তা জানে, যেমন ক্ষুধা তৃষ্ণায় আহার পানীয় দরকার, অন্ধকারে আলোর দরকার, নিশ্বাস প্রশ্বাসে অক্সিজেন দরকার৷ এমনই অনেক দরকারী দ্রব্য মানুষের গোচরে এসেছে৷ এ ছাড়াও বহুবিধ দ্রব্য বা উপাদান রয়েছে যার কত টুকু কখন কোথায় দরকার তা তিনি আমাদের অজান্তেই দিয়ে রেখেছেন৷ অথচ মানুষ তার এ দানে কৃতজ্ঞতা না দেখিয়ে অস্বীকার করে৷ সুরা ‘আর রহমানে’ বিস্তারিত পাওয়া যাবে৷
বিষয়: বিবিধ
১১১৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বরাবরের নেয় শিক্ষণীয় লিখা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
শিরোনামে বানানে দুইটা ভুল আছে। ভেতরেও আছে অনেক, একটু দেখে নিলে ভালো হত।
জাযাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন