@@@ আর তার চতুর্দিক থেকে মৃত্যু ধেয়ে আসবে এবং সে মরবে না৷ তার পিছনেও রয়েছে কঠিন আজাব৷ @@@
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৪ মার্চ, ২০১৬, ০৮:৫৩:৪৫ রাত
(মরহুম ডাঃ ইসরার আহমদ সাহেবের উর্দু বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ৷)
সুরা ইব্রাহীম রুকু;-ত আয়াত;-১৩-২১
১৩/وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُواْ لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّـكُم مِّنْ أَرْضِنَآ أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا فَأَوْحَى إِلَيْهِمْ رَبُّهُمْ لَنُهْلِكَنَّ الظَّالِمِينَ
অর্থ;-কাফেররা পয়গম্বরদিগকে বলেছিল; ‘আমরা তোমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বার করে দেবই অথবা তোমাদেরকে আমাদের মিল্লাতে ফিরে আসতে হবে’৷ তখন রসুলগনকে তাদের রব ওহীর মাধ্যমে জানালেন; ‘আমি জালেমদেরকে অবশ্যই ধ্বংস করে দেব৷’
# কাফেরগন জামানার রসুলকে অস্বীকার তো করলোই উপরন্তু তাদের হুমকী দিয়ে দিল যে যদি তারা কাফেরদের ধর্ম বিশ্বাসে ফিরে না আসে তবে দেশ ছাড়া করা হবে৷ এভাবে রসুলদের উপর অত্যাচারের মাত্রা যখন সীমা অতিক্রমের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছল, অপর দিকে রসুল গনও অধৈর্য হয়ে উঠে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানালেন, তখন আল্লাহ তাঁর রসুলগনকে ওহীর মাধ্যমে তাঁর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত, কাফেরদের ধ্বংসের খবর জানিয়ে দিলেন৷
১৪/وَلَنُسْكِنَنَّـكُمُ الأَرْضَ مِن بَعْدِهِمْ ذَلِكَ لِمَنْ خَافَ مَقَامِي وَخَافَ وَعِيدِ
অর্থ;-এবং তাদের পরে আমি তোমাদেরকে দেশে আবাদ করবই৷ এটা তার জন্য যে ভয় রাখে আমার সামনে দণ্ডায়মান হবার এবং যে ভয় রাখে আমার শাস্তির৷
# আল্লাহ জামানার রসুল ও তাঁর মুমিন সঙ্গীদের দুনিয়ায় প্রতিষ্টা করার ওয়াদা দিলেন, কেননা তারা আখেরাতে আল্লাহর সামনে হাজির হওয়া ও শাস্তির ভয় রাখে৷ আর এটিই মুমিনের কাজ৷
১৫/وَاسْتَفْتَحُواْ وَخَابَ كُلُّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ
অর্থ;-আর তারা ফয়সালা চাইতে লাগল এবং প্রত্যেক উদ্ধত হঠকারী ব্যর্থকাম হল৷
# কাফেরগন তাদের ফায়সালা, রসুলদের দেশ ছাড়ার হুমকী দিয়েছিল কিন্তু তারাই বিফল হয়ে ধ্বংস হল৷
১৬/مِّن وَرَآئِهِ جَهَنَّمُ وَيُسْقَى مِن مَّاء صَدِيدٍ
অর্থ;-তার পিছনে রয়েছে জাহান্নাম৷ তাকে পূঁজতুল্য পানি পান করানো হবে৷
১৭/يَتَجَرَّعُهُ وَلاَ يَكَادُ يُسِيغُهُ وَيَأْتِيهِ الْمَوْتُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَمَا هُوَ بِمَيِّتٍ وَمِن وَرَآئِهِ عَذَابٌ غَلِيظٌ
অর্থ;-গেলার চেষ্টা করবে সহজে গিলতে পারবে না৷ আর তার চতুর্দিক থেকে মৃত্যু ধেয়ে আসবে এবং সে মরবে না৷ তার পিছনেও রয়েছে কঠিন আজাব৷
# পিপাসার্ত জাহান্নামীদের পূঁজের মত পানি যা তারা গিলতে পারবে না তাই দেওয়া হবে৷ আর যন্ত্রনায় কাতর হবে, মুত্যুর উপক্রম হবে কিন্ত মৃত্য হবেনা, পুনরায় আবার আজাব শুরু হবে৷ জাগতীক দুঃখ যন্ত্রনা, দুঃসহ মৃত্যু যন্ত্রনারও মৃত্যুর সাথে শেষ হয় কিন্তু দোজখের যন্ত্রনার শেষ নেই৷
১৮/مَّثَلُ الَّذِينَ كَفَرُواْ بِرَبِّهِمْ أَعْمَالُهُمْ كَرَمَادٍ اشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيحُ فِي يَوْمٍ عَاصِفٍ لاَّ يَقْدِرُونَ مِمَّا كَسَبُواْ عَلَى شَيْءٍ ذَلِكَ هُوَ الضَّلاَلُ الْبَعِيدُ
অর্থ;-যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করে তাদের উপমা তাদের কর্ম সমুহ ছাই ভষ্মের মত যার উপর দিয়ে ঝড়ের দিনে প্রবল বাতাস বয়ে যায়৷ যা তারা উপার্জন করেছিল তার কিছুই তারা কাজে লাগাতে পারবেনা৷ এটাই হল দূরবর্তী পথ ভ্রষ্টতা৷
# এ উক্তিটি পবিত্র কোরআনে তিনবার এসেছে, এটিই প্রথম বার৷ এখানে কাফের বা কুফর মিশ্রিত ইমানদারদের ভাল কাজ বা নেকীর উদাহরণ দেওয়া হয়েছে৷ যেমন ছাইভষ্মের স্তুপ প্রচণ্ড ছড়ের পর আর অবশিষ্ট থাকেনা তেমনই এদের নেকীও উড়ে যাবে৷ আল্লাহর নিক্তিতে তার কোন ভর থাকবে না৷ পিপাসার্ত মরুচারী যেমন মরিচিকার পিছনে জীবন বাজী রাখে কিন্তু পানির দেখা পায়না তেমনই এ নেকী দেখা গেলেও কাজে আসবে না৷
অবৈধ পথের সম্পদ, ঘুষ ও সুদের অর্থ ভোগকারীরা লোক দেখানোর জন্য কিছু নেকীর কাজ করে, যেমন, ঘোষণা দিয়ে জাকাত, ওমরা বা হজ্জ পালন, মসজীদ মাদ্রাসা, এতিম খানা, দাতব্য চিকিৎসালয় প্রভৃতি স্থাপন করে প্রশান্তি লাভ করে৷ মনেমনে হিসেবে উৎরে যাবার স্বপ্ন দেখে৷ তাদের ঐ নেকীরও এটা উদাহরণ৷ প্রকৃত নেকী কেমনে অর্জন করা যায় তা সুরা বাক্বারার ১৭৭ আয়াতে আল্লাহ পরিষ্কার বলেদিয়েছেন, যার প্রথমেই ইমানের কথা বলা হয়েছে৷ এ উক্তি পুনরায় ‘সুরা নূর’ ও ‘সুরা ফুরকানে’ পাওয়া যাবে৷
১৯/أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللّهَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ بِالْحقِّ إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَأْتِ بِخَلْقٍ جَدِيدٍ
অর্থ;-তুমিকি দেখনি, আল্লাহ আসমান ও জমীন সঠিক ভাবে সৃষ্টি করেছেন! তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে ধ্বংস করতে পারেন ও কোন নতুন সৃষ্টি আনতে পারেন৷
২০/وَمَا ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ بِعَزِيزٍ
অর্থ;-এটা আল্লাহর পক্ষে মোটেই কঠিন নয়৷
২১/وَبَرَزُواْ لِلّهِ جَمِيعًا فَقَالَ الضُّعَفَاء لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُواْ إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنتُم مُّغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللّهِ مِن شَيْءٍ قَالُواْ لَوْ هَدَانَا اللّهُ لَهَدَيْنَاكُمْ سَوَاء عَلَيْنَآ أَجَزِعْنَا أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِن مَّحِيصٍ
অর্থ;-সকলেই আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হবে৷ তখন দূর্বলেরা অহংকারী নেতাদের বলবে; আমরাতো তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম৷ এখন তোমরাকি আমাদেরকে আল্লাহর আজাব থেকে কিছুমাত্র রক্ষা করতে পারবে? তারা বলবে; যদি আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়েত দিতেন, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে সৎ পথ দেখাতাম৷ এখন আমরা অস্থির হই আর সবর করি আমাদের জন্য সমান৷ আমাদের রেহাই নেই৷
# জাগতিক লাভের আশায় মানুষ প্রভাবশালীদের মোসাহেবী করে, ক্ষমতার দম্ভে দ্বীনকে অবমাননা বা অস্বীকার করতেও দ্বিধা করেনা৷ ঠিক এমনই পীর, মাজার পুজারীরা অন্ধ আবেগে যাদের অনুসণ করে, কেয়ামতের কঠিন হিসাবের দিনে তাদের কাছে ধর্না দিয়ে বিফলকাম হবে৷ আল্লাহর আদালতে তাদের কোনই স্থান থাকবেনা আর পীর বা মাজারের বাসিন্দা তাদের মুরীদ বা অনুসারীদের অনুসরনের ব্যাপারে অজ্ঞতা প্রকাশ করবেন৷
বিষয়: বিবিধ
১১২১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সেইদিন আল্লাহ যেন আমাকে নিশ্চিন্ত করেন আর জালিমের পরিনতি প্রত্যক্ষ করান।
এই কথাগুলো যদি মানুষ মনে রাখতো, তাহলে পাপের দ্বারে কাছেও কখনো যেতো না। এই জন্য পাপকাজ থেকে বিরত থাকার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো বেশি বেশি কোরআন অধ্যয়ন।
জাযাকাল্লাহু খাইর
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ৷
কঠিন আযাব থেকে পানাহ চাই!
শুকরিয়া
মন্তব্য করতে লগইন করুন