@@ অর্থ;-যারা প্রাধান্য দেয় দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের উপর, মানুষকে বিরত রাখে আল্লাহর পথ থেকে এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করে৷ এ রূপ লোকেরা পথ ভূলে দূরে পড়ে আছে৷@@
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৫:৩৮:২৪ সকাল
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)
১৪) সুরা ইব্রাহীম (মক্কী) রুকু ৭টি আয়াত ৫২টি
শুরু হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় শাখা গ্রুপের দ্বিতীয় সুরা, সুরা ইব্রাহীম৷ শাহ ওয়ালী উল্লাহ রঃ পবিত্র কোরআনের বর্ণনা পদ্ধতিকে, ‘আত তাজকীর বে আলাইল্লাহ’ বা আল্লাহর কুদরত, নেয়ামত প্রভৃতির মাধ্যমে সতর্ক করণ’, ‘আত তাজকীর বে আইয়ামিল্লাহ’ বা বিশেষ বিশেষ সময়, কাল বা দিনের মাধ্যমে সতর্ক করণ, ‘কাসাসুন নবিঈন’ বা নবীগনের বর্ণনার মাধ্যমে সতর্ক করণ ও ‘আম্বাউ রুসুল’ বা রসুল গনের মাধ্যমে সতর্ক করণ হিসেবে আলাদা করে দেখিয়েছেন৷ সে হিসেবে সুরা ‘রা’দ’ ছিল ‘আত তাজকির বে আলাইল্লাহ’ পদ্ধতিতে৷ আর সুরা ‘ইব্রাহীমে’ পাওয়া যাবে ‘আম্বাউ রুসূল’পদ্ধতি৷ তবে অন্যান্ন সুরার মত আলাদা আলাদা ভাবে নয়, সমষ্টিগত ভাবে৷
সুরা রা’দ ও ওসুরা ইব্রাহীমের মাঝে এমন কিছু মিল রয়েছে যাতে এদের জোড়া বলা হয়েছে৷ দুটিই আয়তনে ছোট, প্রায় সমান৷ সুরা রা’দ এ ছয়টি রুকু ও সুরা ইব্রাহীমে আছে সাতটি৷ নাম ছাড়া একটি আয়াতে রসুলের কথা বলা হয়েছে সুরা রা’দ এ আর সুরা ইব্রাহীম এ মুসা আঃ এর সামান্য বিবরণ ছাড়াও সমষ্টি গত ভাবে রসুল গনের কথা আছে৷ দুটি সুরাতেই এমন কিছু আয়াত আছে যা সুরা বাক্বারার সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ৷
সুরা ইব্রাহীম রুকু;-১ আয়াত;-১-৬
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
১/الَر كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ بِإِذْنِ رَبِّهِمْ إِلَى صِرَاطِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ
অর্থ;-, ‘আলিফ লাম রা,’ একটি গ্রন্থ, যা আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি, যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনেন-পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য পালণকর্তার নির্দেশে তারই পথের দিকে৷
# দুইটি শাখা গ্রুপের ছয়টি সুরার প্রথম তিনটিই শুরু হয়েছে, ‘আলিফ লাম রা’ দিয়ে, চতুর্থটি, সুরা ‘রা’দ’ শুরু হয়েছিল, ‘আলিফ লাম মিম রা’ দিয়ে, এটি শুরু হল পুনরায় ‘আলিফ লাম রা’ হরফে মুকাত্তায়াত দিয়ে, পরেরটিও তাই হবে৷
২/اللّهِ الَّذِي لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ وَوَيْلٌ لِّلْكَافِرِينَ مِنْ عَذَابٍ شَدِيدٍ
অর্থ;-তিনিই আল্লাহ, আসমান ও জমীনে যা কিছু আছে তা তারই৷ আর কঠোর শাস্তির দূর্গতি রয়েছে কাফেরদের জন্য৷
৩/الَّذِينَ يَسْتَحِبُّونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الآخِرَةِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا أُوْلَـئِكَ فِي ضَلاَلٍ بَعِيدٍ
অর্থ;-যারা প্রাধান্য দেয় দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের উপর, মানুষকে বিরত রাখে আল্লাহর পথ থেকে এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করে৷ এ রূপ লোকেরা পথ ভূলে দূরে পড়ে আছে৷
# যারা আখেরাতের জীবন অপেক্ষা দুনিয়ার জীবনকেই শ্রেষ্ঠ ভাবে, এমনও আছে যারা আখেরাতকে বিশ্বাসই করেনা, তারাদুনিয়াকেই আঁকড়ে থাকে৷ তাদের থিওরী হল ‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও’৷ এরাই বে ইমান, কারণ ইমানের মূল অংশই হল আখেরাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে৷ এরা শুধু নিজে এতে ডুবে থেকেই ক্ষ্যান্ত হয়না, অন্যকেও দলে নিতে আপ্রান চেষ্টা করে৷ বিশেষ করে যুবকদের এরা সবক দেয়, উন্নত শিক্ষা, প্রযুক্তি গ্রহন করে জীবনে আরাম আয়েশের পথ নিশ্চিত করতে৷ প্রকৃত পক্ষে এরাই পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে চলেছে৷ এরাই দ্বীনের মধ্যে ছিদ্র অন্বেষন করে৷ বিভিন্ন ভাবে অপব্যাখ্যার মাধ্যমে আল্লাহর বিধানকে হেয় করে জনমত গড়ার ও দল ভারী করার চেষ্টা করে৷ এদের ব্যাপারেই আল্লাহ বলেছেন যে, প্রকৃত পক্ষে এরা এদের চলার আসল পথ থেকে অনেক দূরেই অবস্থান নিয়েছে৷
৪/وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللّهُ مَن يَشَاء وَيَهْدِي مَن يَشَاء وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
অর্থ;-আর আমি কোন পয়গম্বরকেই তার ভাষা ছাড়া প্রেরণ করিনি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে৷ আর আল্লাহ যাকে চান বিপথ গামী করেন এবং যাকে চান সৎপথে পরিচালিত করেন৷ তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়৷
# যে কওম বা জাতির কাছে আল্লাহ তায়ালা রসুল পাঠিয়েছেন, সে জাতির মধ্য হতেই তাঁকে নির্বাচিত করেছেন ও সেই জাতির ভাষাতেই তাঁর কিতাব দিয়েছেন৷ ফলে আল্লাহর বাণী জনগনের কাছে পৌঁছে দিতে যেন তিনি বেগ না পান বা জনগনকে যাতে সহজে বোঝাতে পারেন৷ আয়াতের পরের অংশটির অন্য ভাবেও অর্থ করা যায়, যে, যারা বিপথে চলতে চায়, আল্লাহ তাদের বিপথই দেন আবার যারা হেদায়েত বা সঠিক পথে চলতে চায় আল্লাহ তাদের হেদায়েত বা সঠিক পথই সহজ করে দেন৷
৫/وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَى بِآيَاتِنَا أَنْ أَخْرِجْ قَوْمَكَ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللّهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
অর্থ;-আমিতো মুসাকে আমার নিদর্শন সহ প্রেরণ করে বলে দিয়েছিলাম যে, নিজের কওমকে অন্ধকার থেকে আলোয় বার করে আনো এবং তাদের ‘আইয়াম’ সমূহের মাধ্যমে সতর্ক করো৷ নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে৷
# ফেরাউনের কবল থেকে নিজ কওম বনী ইস্রাঈল কে বার করে আনার জন্য আল্লাহ তায়ালা মুসা আঃ কে তাদেরই মধ্য হতে রসুল মনোনিত করে, তাদেরই ভাষা হীব্রুতে তওরাত দিয়েছিলেন ও তাঁকে মোজেজাও দিয়ে ছিলেন৷ আর ‘আততাজকীর বে আইয়া মিল্লাহের’ বা আল্লাহর বিশেষ দিন গুলির উপমা দিয়ে তাদের সতর্ক করে অন্ধ কার বা ভূল পথ হতে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে বলে দিয়ে ছিলেন৷
‘সাব্বার’ ও ‘শাকুর’ শব্দ দুটি গুন বচক বিশেষন, যা প্রতি মুমিনের চরিত্রে থাক উচিত৷ ‘সাব্বার’ হল, ‘রাজী বা রাজায়ে রব’, আল্লাহ যখন যে অবস্থায় রাখেন তাতেই খুশী থাকা, বিপদে আপদে ধৈর্য ধরা, আর ‘শাকুর’হল আল্লাহর প্রতিটি নেয়ামতের জন্য তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা বা শুকরিয়া আদায় করা৷
৬/وَإِذْ قَالَ مُوسَى لِقَوْمِهِ اذْكُرُواْ نِعْمَةَ اللّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ أَنجَاكُم مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوءَ الْعَذَابِ وَيُذَبِّحُونَ أَبْنَاءكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءكُمْ وَفِي ذَلِكُم بَلاء مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ
অর্থ;-আর যখন মুসা স্বজাতিকে বললেন, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদেরকে ফেরাউনের সম্প্রদায় হতে মুক্তি দেন৷ তারা তোমাদেরকে কঠোর শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদেরকে হত্যা করত আর তোমাদের কন্যাদেরকে জীবিত রেখে দিত৷ এতে ছিল তোমাদের রবের তরফ থেকে এক বিরাট পরীক্ষা৷
বিষয়: বিবিধ
১২৭৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় একটি লিখা মাশাআল্লাহ!
মহান রব আমাদের সকলের হৃদয়ের বক্রতা নিরসন করে কোরানিক আলোর পথে অবিচলিত রাখুন। আমীন।
আল্লাহ আমাদের সত্য সুন্দর পথের উপর চলা সহজ করে দিন । আমীন
জাজাকাল্লাহ খায়ের চাচাজান ।
আখিরাত কে প্রধান্য দিয়ে চলার যোগ্যতা ও পাথেয় আল্লাহ আমাদের দান করুন।
জাযাকলা্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন