%%%%%% নজরবন্দী %%%%%%

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০২ জানুয়ারি, ২০১৬, ১০:২৩:৫৪ রাত



নজরবন্দী

জীবনের প্রথম পনেরটি বছর যে গ্রামে কেটেছে সেটি পশ্চিম বঙ্গের হুগলী জেলার একটা মুসলীম প্রধান গ্রাম৷ এ গ্রামটির কথা গরবের সাথেই মনে পড়ে৷ কেননা গর্ব করার মত অনেক কিছুই সে গ্রামে ছিল৷ সবচেয়ে বেশী যা দেখেছি তা হল মানবতা৷ যাক্ সে আজ অনেক দিনের কথা৷ আজ সেই গ্রামেরই অন্য একটা বিষয় মনে পড়ল৷

গ্রামটি কৃষী প্রধান৷ ধান পাট আর আলু তখন মূলতঃ এই তিনটি ফষলই হত৷ হেমন্তে ধান উঠে গেলে ধানের জমি গুলি বর্ষার আগ পর্যন্ত পড়েই থাকত৷ বর্তমানে নিয়ম বদলেছে৷ জমি আর পড়ে থাকতে পায়না৷ এখনের কথা নয়, তখনের কথা বলি৷ শীত কালে খামারে ধান ঝাড়া হয়ে গেলে কারও তেমন কোন কাজ থাকত না৷ ঐ সময়টায় প্রায় সব গ্রামে ওয়াজ মাহফীল যেমন হত তেমনই প্রায়ই সার্কাস বা ম্যাজিক শো লেগেই থাকত৷ সেই সুবাদে জ্যামিনীর মত বড় সার্কাস আর গোলাম রসুল বা এ বি সরকারের মক ম্যাজিসিয়ানদের বড় বড় ম্যাজিক দেখার সুযোগও হয়েছে৷ বিশ্বখ্যাত যাদুকর পি সি সরকার হল ভরা লোকের হাতের ঘড়ি এক ঘণ্টা পিছিয়ে তিনি যে লেট করেননি তার প্রমানের গল্প আব্বার কাছে শুনেছি৷ তাজ মহলের সামনে পর্দা ধরে এক টানে পর্দা সরিয়ে তাজ মহলকে গায়েব করার গল্পও শুনেছি৷ আর স্টেজের সামনে শুকনা জায়গায় ছিপে কৈ মাছ ধরা, দর্শকদের সামনে দর্শকদের দ্বারা একজন মানুষকে কবর দিয়ে তাকে দূরের বাগানে গাছের ডালে পাঠানো৷ হ্যাণ্ডকাপ পরা মানুষকে সিন্দুকে তালা দিয়ে তার উপরে মশারীর ফিতরে একজনকে বসিয়ে শক্তিশালী কারও দ্বারায় মশারীর ভিতরের জনের হাত ধরিয়ে মুহূর্তে তাকে সিন্দুকে হ্যাণ্ডকাপ সহ আর ভিতরের জনকে হ্যাণ্ডকাপ ছাড়া মশারীর ভিতর আনা ও যথারীতি হাত ধরে রাখা৷ এ ছাড়া গলা কাটা জীভ কাটা হরেক রকম ম্যাজিক৷ এ ছাড়া রাস্তা ঘাটে বালি মুখে দিয়ে চিনি বলা৷ কেরোসীনকে শরবত বলাতো আছেই৷ জুয়েল আইচ সাহেবের গাজর মূলা কাটা মেশিনে মানুষের গলা কাটাও দেখেছি৷ মা বলত, এ গুলো নাকি নজর বন্দী৷ ম্যাজিশিয়ান দর্শকদের দৃষ্টিকে কণ্ট্রোল করে ফেলে৷ আর যাদুকরেরা প্রথমেই সব খেলা কেই হ্যাণ্ড ট্রিক্স বলে খেলা শুরু করত৷ এক গাছী খেজুর গাছে রস পাততে উঠে তাঁবুর ফাঁক দিয়ে আসলটি দেখে চিল্লে উঠলে তার কোমরের দড়িকে সাপে বদল করার কথাও শুনেছি৷ এতে এটাই প্রামন হয় যে, এই নজরবন্দী শুধুই স্টেজেই সীমাবদ্ধ থাকে৷ বা একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের বাইরে কাজ করেনা৷

যুগ বদল হয়ে নতুন নতুন আবিষ্কার সামনে আসছে৷ সে সঙ্গে এ সব যাদু আর যাদুকরেরও উন্নতি হচ্ছে৷ বর্তমানে বাংলাদেশে এমন এক যাদুকরের আববির্ভাব হয়েছে, যিনি স্টেজ আর খেজুর গাছ নয়, বরং সারা দেশের দর্শকদের নজরবন্দী করতে সক্ষম, অল্প কিছু লোকের চোখ বাদে৷ শুধু তারাই যাদুকরের হ্যাণ্ড ট্রিক্সটাকেই দেখে ফেলেছে, নজরবন্দীতে পড়েনি৷ অপর দিকে যত মন্ত্রী আমলা, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি মায় তাদের বড় বড় কর্তা ব্যক্তি ও রাষ্ট্রপতি, কিছু শুশীল, বুদ্ধীজীবি পর্যন্ত সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নির্বাচণের কারচুপী, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, কিছুই দেখতে পেলেন না ঐ নজরবন্দীর কারণে৷ যাদুকরের জয় হোক৷

বিষয়: বিবিধ

১৬০১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

356032
০২ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:৫০
তট রেখা লিখেছেন : যাদুর খেলায় নজরবন্দী, করে ভাই যাদুকরে,
নজর তাদের বন্দী হয়ে
আছে ভাই চেতনার জ্বরে।
০৩ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:৩১
295655
শেখের পোলা লিখেছেন : চেতনাতে যাদু আছে ভাই, তাই এ নজরবন্দী৷ ধন্যবাদ৷
356035
০২ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:৪১
আফরা লিখেছেন : লিখাটা খুব চমৎকার হয়েছে চাচাজান ।

চাচাজান আমার শরীর খারাপ আমার জন্য দুয়া করবেন ।
০৩ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:৩৩
295656
শেখের পোলা লিখেছেন : আল্লাহর কাছে দোওয়া করি শিঘ্র সেরে ওঠ৷ শুভেচ্ছা নিও৷
356069
০৩ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ১০:৪৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : চাচাভাই যেসব আশ্চর্যজনক ম্যাজিকের কথা বললেন পিসি সরকারের সেসবের চাইতে আশ্চর্যজনক ম্যাজিকের ফাকিও আজকাল ধরে দিয়ে টিভি শো হয়। ইউটিউবে ম্যাজিক রিভিল নামক কিছু ভিডিও আছে যা জিওগ্রাফিক চ্যানেলে দেখানো হত...সে যাইহোক....শেষে যে যাদুর কথা বললেন সে যাদুর কাছে ডেভিড কপারফিল্ড,হুডিনি,,,ক্রিস এঞ্জেলও সদ্যজাত শিশু....Happy
০৪ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:০৪
295697
শেখের পোলা লিখেছেন : সব বড় যাদুকরই শো শুরুর আগেই যাদুযে চালাকি তা বলেই দেয়৷ ধন্যবাদ৷
356071
০৩ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ১১:১১
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : চাচাজান আমার আম্মুও হুগলির মেয়ে। আমার নানা-নানি দুজনই হুগলী থেকে এসেছিলেন। নানিজানের পূর্বপুরুষরা ছিলেন ইরানী। আপনার সাথে তাহলে আমার আম্মুর মিল আছে। কিন্তু হুগলির সবচেয়ে সুন্দর দিকটা ছিল এর ভাষা। কলকাতার ভাষা জঘন্য কিন্তু হুগলির ভাষাটা খুব সুন্দর। আম্মুর জন্য আমাদের মাঝেও এই ভাষাটা মুখে এসেছে।
০৪ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:১০
295698
শেখের পোলা লিখেছেন : আমার জন্ম গঙ্গার অপর পারে যা এখন উত্তর ২৪ পরগনা৷ আমার নানার বাড়ি হুগলী শহরের মল্লিক কাশিম হাটের কাছে শুনেছি, দেখিনি৷ কারণ আমার জন্মের বছর ৫০ সালের দাঙ্গায় আমাদের সব সম্পত্তি (নানা দাদার) হিন্দুরা দখল করে নেয়৷ আমরা ভাসমান রিফিউজী হয়ে পড়ি৷ তোমার মায়ের জন্য সালাম রইল আর তোমাকে শুভেচ্ছা৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File