@@@{} আসমান ও জমীনে অনেক নিদর্শণ রয়েছে যা তারা অহরহ প্রত্যক্ষ করে, কিন্তু এ সবের প্রতি তারা মনোনিবেশ করেনা {}@@@
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৯:২৪:০১ রাত
সুরা ইউসুফ রুকু;-১২ আয়াত;-১০৫-১১১ (শেষ)
এ সুরাটি জুড়ে হজরত ইউসুফ আঃ এর ঘটনা, যার মাধ্যমে বনী ইস্রাঈল গনের মিশরে বসতি স্থাপনের সূচণার কথা বলা হলেও আলোচ্য শেষ রুকুটি উপসংহার রূপে আসছে;
১০৫/وَكَأَيِّن مِّن آيَةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ يَمُرُّونَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُونَ
অর্থ;-আসমান ও জমীনে অনেক নিদর্শন রয়েছে যা তারা অহরহ প্রত্যক্ষ করে, কিনতু এসবের প্রতি তারা মনোনিবেশ করেনা৷
১০৬/وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللّهِ إِلاَّ وَهُم مُّشْرِكُونَ
অর্থ;-তাদের অধিকাংশই তার প্রতি ইমান আনে না তার সাথে শরিক সাব্যস্ত না করে৷
# আমরা জানি প্রায় মুশরিকই আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা রূপে জানলেও তার সাহায্যকারী হিসেবে অন্য দেব দেবীকেও তার শরিক করে থাকে৷ এজন্যই তাদের মুশরিক বলা হয়৷ আবার এমন মানুষও আছে যারা একমাত্র আল্লাহকেই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মনে প্রানে স্বীকার করলেও অজান্তে এমন কিছু কে প্রাধান্য দিয়ে ফেলেন যাতে তিনিও শির্কে লিপ্ত হয়ে পড়েন৷ কারণ শির্ক সব সময় একই রূপে আসেনা৷ জমানা ভেদে শির্কও রং বদলায়৷ আর তাই শির্কএর বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরী৷
বর্তমান বিশ্বে মুসলীম দাবীদারগন যদিও মূর্তী পূঁজা বা চাঁদ সূর্য শক্তির পূঁজা করেন না কিন্তু তাদেরই একটা বড় অংশ পীর দরগা বা মাজারের ভক্ত হয়ে পরক্ষে শির্ক করে চলেছেন৷
১০৭/أَفَأَمِنُواْ أَن تَأْتِيَهُمْ غَاشِيَةٌ مِّنْ عَذَابِ اللّهِ أَوْ تَأْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً وَهُمْ لاَ يَشْعُرُونَ
অর্থ;-তারাকি এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, আল্লাহর সর্বগ্রাসী আজাব তাদের কে আবৃত করে ফেলবে, বা তাদের প্রতি আকস্মিক কেয়ামত এসে পড়বে অথচ তারা টেরও পাবেনা?
# মুশরিক ও আহলে কিতাবদের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা হয়েগিয়েছিল যে, এতদিন শুনে আসা আজাবের বিষয়টি ভূয়া ছাড়া আর কিছুই নয়৷ এত দিন যখন আসেনি তা আর আসবেও না৷ বরং তারাই সঠিক মোহাম্মদ (সঃ) ভূল৷ তাই যদি আজাব আসেও তাতে আমাদের কিছুই হবেনা৷ তাদেরই বলা হয়েছে এমন ধারণা যেন না করে৷
১০৮/قُلْ هَـذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَاْ وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَ اللّهِ وَمَا أَنَاْ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
অর্থ;-বলুন এটাই আমার পথ৷ আমি প্রমানের উপর কায়েম থেকে আল্লাহর দিকে আহবান করি, আমি ও আমার অনুসারীরাও৷ আল্লাহ মহান পবিত্র আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই৷
# নবী ওরসুলগন পূন্যাত্মা নিয়েই জন্মান৷ ওহী এসে তাদের আরও সূ দৃঢ় করে, চাক্ষ্যুস অবলোকন করার মত৷ তাই তিনি নিশ্চিত যে তিনি সঠিক আল্লাহর পথেই আছেন ও সে দিকেই মানুষকে আহ্বান জানাচ্ছেন৷ আর তাঁকে যারা অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে সহযোগী হয়েছেন তাঁরাও সেই ঠিক পথেই রয়েছেন৷
১০৯/وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلاَّ رِجَالاً نُّوحِي إِلَيْهِم مِّنْ أَهْلِ الْقُرَى أَفَلَمْ يَسِيرُواْ فِي الأَرْضِ فَيَنظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَدَارُ الآخِرَةِ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ اتَّقَواْ أَفَلاَ تَعْقِلُونَ
অর্থ;-আমি আপনার পূর্বে জনপদবাসী পুরুষকেই রসুল করে ওহী পাঠিয়েছিলাম৷ তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমন করেনা? তাতে তারা দেখতো কিরূপ পরিণতি হয়েছিল তাদের পূর্ববর্তীদের৷ আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখেরাতের আবাসই উত্তম৷ তবুওকি তারা বোঝেনা!
# রসুল সাধারণতঃ সেই জনপদের মধ্য হতেই মনোনিত হয়েছেন৷ অপরিচিত বা ফেরেশ্তাকে নয় পরিচিত মানুষকেই রসুল মনোনিত করা হয়েছিল৷ অবাধ্য কওমের বিধ্বস্থ এলাকা সফর করে তার প্রমান দেখার পরেও তাদের বোধগম্য হয়না৷
১১০/حَتَّى إِذَا اسْتَيْأَسَ الرُّسُلُ وَظَنُّواْ أَنَّهُمْ قَدْ كُذِبُواْ جَاءهُمْ نَصْرُنَا فَنُجِّيَ مَن نَّشَاء وَلاَ يُرَدُّ بَأْسُنَا عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ
অর্থ;-এমনকি যখন রসুলগন নিরাশ হতেন আর তারা অনুমান করত, তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছে৷ তখন তাদের কাছে আমার সাহায্য এল৷ অতঃপর যাকে আমি বাঁচাতে চেয়েছি তারা উদ্ধার পেয়েছে৷ আমার শাস্তি অপরাধী সম্প্রদায় হতে প্রতিহত হয় না৷
# রসুলগন কখনই নিরাশ হননা৷ তবে অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সাফল্যের হারে কিছুটা হতাশ হতেই পারেন ও অবশিষ্ট হতে আরও কিছু আসার আশায় নিরাশ হন৷ আমরা দেখেছি তখনই এসেছে আল্লাহর চুড়ান্ত ফয়সালা৷ মুমিনদের কৌশলে নিরাপত্তা দান করেছেন ও অবাধ্য কাফের দের ধ্বংস করেছেন৷ এ ফয়সালা কখনই রদ হয়না৷ এটাই আল্লাহর নিয়ম৷
১১১/لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّأُوْلِي الأَلْبَابِ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَى وَلَـكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
অর্থ;-অবশ্যই তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য প্রচুর শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে৷ এটা (কোরআন) কোন মনগড়া কথা নয় বরং তা পূর্বেকার গ্রন্থে যা আছে তার সমর্থন ও সব কিছুর বিশদ বিবরণ৷ মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত৷
# কোরআন কোন মনগড়া কথা নয়৷ পূর্বে নাজিলকৃত গ্রন্থে যা আছে তাকে সত্যায়ন করার সাথে আরও বিশদ ভাবে সব কিছুকে বর্ণনা করা হয়ছে এ গ্রন্থে৷ তওরাত উধাও হওয়ার অনেক পর স্মৃতি নির্ভর ভাবে তাকে পূনঃ রচনা করা হয়েছে৷ আদী হীব্রু ভাষার কোন তওরাত পাওয়া যায়না৷ তাই বর্তমান তওরাতের অসম্পূর্ণতা কোরআনে পূর্ণতা পেয়েছে৷
আল্লাহর অশেষ রহমতে সুরা ইউসুফ শেষ হল৷ এটি ছিল তিনটি সুরার শাখা গ্রুপের তৃতীয় সুরা৷ সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির একক সুরা৷ এমনই আর একটি সুরা পাওয়া যাবে তৃতীয় শাখাগ্রুপে, তা হল; ‘সুরা তোয়াহা’৷ মোসহাফে সুরা দুটি পাশা পাশি না হলেও দুটিতে কিছু মিল লক্ষ্য করা যায়, তা হল, সুরা ‘ইউসুফ’ এর পূরোটাতেই একজন নবী, হজরত ইউসুফ আঃ এর বর্ণনা হয়েছে৷ আর ‘সুরা তোয়াহা’ এর অধিকাংশ জুড়ে এক জন রসুল, হজরত মুসা আঃ এর বর্ণনা হয়েছে৷ এ ছাড়া আরও একটি বিশেষ মিল হল; সুরা ইউসুফে বণী ইস্রাঈলের মিশরে আগমনের বিষয় আছে আর ‘সুরা তোয়াহা’য় আছে বণী ইস্রাঈলের মিশর ত্যাগের কথা৷
বিষয়: বিবিধ
১১৭৩ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন