&&& "তারা বলল; হে আমদের আব্বা, আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আমরাতো নিশ্চিত অপরাধী৷"&&&
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০১:৩১:১৪ রাত
সুরা ইউসুফ রুকু;-১১ আয়াত;-৯৪-১০৪
মহান আল্লাহ তায়ালা বিশেষ বিশেষ সময়ে কোন বিশেষ ব্যাক্তিকে বিশেষ গুনের ক্ষমতা দিয়ে থাকেন৷ তারই একটির আভাস এ রুকুর প্রথম আয়াতে রয়েছে;
৯৪/وَلَمَّا فَصَلَتِ الْعِيرُ قَالَ أَبُوهُمْ إِنِّي لَأَجِدُ رِيحَ يُوسُفَ لَوْلاَ أَن تُفَنِّدُونِ
অর্থ;-তারপর যখন কাফেলা বেরিয়ে পড়ল, তখন তাদের পিতা বললেন, যদি তোমরা আমাকে প্রলাপোক্তিকারী মনে না কর তাহলে শোন, “আমি ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি”৷
# ইউসুফ আঃ এর আত্মপ্রকাশের পর রসদ ও জামা নিয়ে যখন তাঁর ভাইরা মিশর খাদ্য ভাণ্ডার ত্যাগ করল ঠিক তখনই সুদূর কেনানে বসে হজরত ইয়াকুব আঃ ঘোষণা দিলেন, তিনি ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছেন এবং এটি তার কল্পনা নয় বাস্তব৷ এটিই সেই আল্লাহর দেওয়া বিশেষ গুন৷ যখন ইউসুফ অন্ধকূপে পড়েছিল, আর তা ছিল অধিক নিকটে, অথচ তিনি ঘ্রাণ পান নি৷ তাহলে হয়ত সে ঘ্রাণ অনুস্মরণ করে তাকে উদ্ধার করতে পারতেন৷ঠিক এমন ভাবেই আল্লাহ তায়ালা হজরত ওমর রাঃ কে শামদেশের যুদ্ধের ময়দান দেখিয়ে ছিলেন৷ এটি কোন টি ভি’র নব নয় যে ঘোরালেই কআঙ্খীত জিনিষটি দেখা যাবে৷ এটি আল্লাহ দিয়ে থাকেন৷
৯৫/قَالُواْ تَاللّهِ إِنَّكَ لَفِي ضَلاَلِكَ الْقَدِيمِ
অর্থ;-তারা (আহলে বাইত) বলল; আল্লাহর কসম আপনি তো আপনার পুরাণো ভ্রান্তির মধ্যেই আছেন৷
# সংসারের অন্যেরা একে পুরাতন প্রলাপ বলেই ধরে নিলেন৷ তাদের ধারণা ছিল, ইউসুফ আর বেঁচে নেই৷ কিন্তু ইয়াকুব আঃ অন্তরে আশা পুষেই রেখেছিলেন৷
৯৬/فَلَمَّا أَن جَاء الْبَشِيرُ أَلْقَاهُ عَلَى وَجْهِهِ فَارْتَدَّ بَصِيرًا قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ مِنَ اللّهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ
অর্থ;-তার পর যখন সু-সংবাদ দাতা এল, সে জামাটি তার চেহারার উপর রাখল অমনি তিনি দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেলেন৷ তিনি বললেন; “আমিকি তোমাদের বলিনি যে, আমি আল্লাহর তরফ থেকে যা জানি তোমরা তা জান না”৷
৯৭/قَالُواْ يَا أَبَانَا اسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا إِنَّا كُنَّا خَاطِئِينَ
অর্থ;-তারা বলল; হে আমাদের আব্বা, আমাদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আমরাতো নিশ্চিত অপরাধী৷
৯৮/قَالَ سَوْفَ أَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّيَ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
অর্থ;-তিনি বললেন; সত্বরই আমি পালনকর্তার কাছে তোমাদের জন্য ক্ষমা চাইব৷ নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, দয়ালু৷
# ভুক্তভূগী পিতা পুত্রদের কথায় কিছুটা ইতস্থত করলেন, তাই তখনই আল্লাহর কাছে মাগফেরাতের বদলে শিঘ্রই তা করবেন বলে পুত্রদের শান্ত্বনা দিলেন ও নিজে সময় নিলেন৷ ‘সাওফা’ শব্দটি তাই বলে৷
৯৯/فَلَمَّا دَخَلُواْ عَلَى يُوسُفَ آوَى إِلَيْهِ أَبَوَيْهِ وَقَالَ ادْخُلُواْ مِصْرَ إِن شَاء اللّهُ آمِنِينَ
অর্থ;-অতঃপর তারা যখন ইউসুফের কাছে পৌঁছল, তখন সে তার পিতামাতাকে নিজের কাছে স্থান দিল ও বলল; আপনারা আল্লাহর ইচ্ছায় মিশরে প্রবেশ করুন৷
১০০/وَرَفَعَ أَبَوَيْهِ عَلَى الْعَرْشِ وَخَرُّواْ لَهُ سُجَّدًا وَقَالَ يَا أَبَتِ هَـذَا تَأْوِيلُ رُؤْيَايَ مِن قَبْلُ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّي حَقًّا وَقَدْ أَحْسَنَ بَي إِذْ أَخْرَجَنِي مِنَ السِّجْنِ وَجَاء بِكُم مِّنَ الْبَدْوِ مِن بَعْدِ أَن نَّزغَ الشَّيْطَانُ بَيْنِي وَبَيْنَ إِخْوَتِي إِنَّ رَبِّي لَطِيفٌ لِّمَا يَشَاء إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
অর্থ;-সে তার পিতামাতাকে সিংহাসনের উপর বসাল এবং তারা সবাই তার সামনে সেজদায় পতিত হল৷ তখন সে বলল; হে আমার আব্বা, এ হল আমার পুর্বেকার স্বপ্নের ব্যাখ্যা৷ আমার রব একে সত্যে পরিণত করেছেন৷ তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন৷ আমাকে জেল থেকে বের করেছেন৷ আপনাদেরকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন৷ শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার পর৷ নিশ্চয় আমার রব যা চান তা নিপুনতার সাথেই করেন৷ তিনি তো সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়৷
# হজরত ইউসুফ আঃ এর আব্বাম মা সহ এগারো ভাইয়ের পরিবার পরিজন যখন তাদের মরুভূমীর যাযাবরের জীবন ছেড়ে মিশরের সামাজিক জীবনে এসে পৌঁছলেন তখন ইউসুফ আঃ তাদের সাদরে অভর্থনা জানালেন৷ পিতাও মাতাকে নিজের কাছে, সিংহাসনের উঁচুতে বসালেন৷ তখন তার এগারো ভাই তাঁকে সম্মান দেখাতে সেজদায় পড়ে গেল৷ ইউসুফ আঃ তখন তাঁর আব্বাকে জানালেন এটি সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যা যা বাল্যকালে দেখেছিলেন তারই বাস্তবায়ন আজ আল্লাহ তায়ালা করেদিলে৷ (আয়াত নং ৪)
শরিয়তে এসেজদা জায়েজ ছিল, কিন্ত ইসলামী শরিয়ত পূর্ণতা লাভ করার পর রসুল সঃ একে হারাম ঘোষণা করেছেন৷ তাই এ সেজদার দলীল হিসেবে এ আয়াত গ্রহনের আর সুযোগ নেই৷
১০১/رَبِّ قَدْ آتَيْتَنِي مِنَ الْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِي مِن تَأْوِيلِ الأَحَادِيثِ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ أَنتَ وَلِيِّي فِي الدُّنُيَا وَالآخِرَةِ تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ
অর্থ;-হে আমার রব, আপনি আমাকে রাজ্য দান করেছেন, এবং আমাকে তাৎপর্য সহ ব্যখ্যা করার বিদ্যা শিখিয়েছেন৷ হে আসমান জমীনের স্রস্টা, আপনিই আমার অভিভাবক ইহকাল ও পরকালের৷ আমাকে মুসলীম অবস্থায় মৃত্যুদান করুন এবং আমাকে সজ্জ্বনদের সাথে মিলিত করুন৷
১০২/ذَلِكَ مِنْ أَنبَاء الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ أَجْمَعُواْ أَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُونَ
অর্থ;-এ ঘটনা গায়েবী ঘটনা সমুহের একটি যা আমি আপনাকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি৷ আপনি তাদের কাছে তখন উপস্থিত ছিলেন না যখন তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করছিল এবং তারা সড়যন্ত্র করছিল৷
# প্রশ্ন ছিল, ইব্রাহীম আঃ ইরাক হতে কেনানে গিয়ে নিজ পুত্র ইসহাক কে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ তাঁরই পুত্র হজরত ইয়াকুব আঃ সেই কেনানেই ছিলেন৷ কেমন করে তার বংশধরেরা মিশরে গেল ও এবং সেখানে বসতি গাড়ল৷ তারই উত্তরে আল্লাহ তায়ালা সুন্দর সাবলীল ভাবে রসুল সঃ কে ওহীর মাধ্যমে সে ঘটনা জানালেন৷ বিষয়টি ছিল বহুকাল আগের ও বহুদূরের৷ যখন ইউসউফ আঃ এর ভাইয়েরা ষড়যন্ত্র করে তাঁকে কূপে ফেলে আসে বা তারা আপোষে পরামর্শ করে বেনইয়ামীনকে মিশরে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়, সেখানে তখন রসুল সঃ এর থাকার বা তা জানার কোনই সম্ভবনা নেই৷ অথচ তিনি যখন এ সংবাদ দিলেন তখন অবশ্যই এটি ওহীর মাধ্যমে আসা গায়েবী খবর, যা আল্লাহ তায়ালাই পাঠিয়েছেন৷ এবং সর্ববাংশে সত্য৷ এ উত্তর পাওয়ার পর প্রশ্নকারীদের নমনীয় হওয়া বা ইমান আনাই উচিৎ৷
১০৩/وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ
অর্থ;-আপনি যতই আকাঙ্খা করুন না কেন, অধিকাংশ মানুষ ইমান আনার নয়৷
১০৪/وَمَا تَسْأَلُهُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ هُوَ إِلاَّ ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِينَ
অর্থ;-আপনিতো এর জন্য তাদের কাছে কোন বিনিময় চান না৷ এটাতো সারা বিশ্বের জন্য উপদেশ বৈ নয়!
# এ ওহী বা এই কোরআন প্রচার করে রসুল সঃ কোন রকম বিনিময় মূল্য আশা করেন নি৷ এটি বিশ্বের মানুষের জন্য উপদেশ ছাড়া আর কিছু নয়৷ তিনি সেই উপদেশই দান করেছেন৷ সেই উপদেশ মানুষ গ্রহন করুক এটিই তাঁর কাম্য৷ কিনতু আল্লাহ জানেন, অনেকেই সে উপদেশ গ্রহন করবেনা৷ তাই রসুল সঃ কে শান্ত্বনা দিলেন৷
বিষয়: বিবিধ
১১৫১ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যেমন-আল্লাহ তায়ালা হজরত ওমর রাঃ কে অনেক দূরে অবস্থিত শামদেশের যুদ্ধের ময়দান দেখিয়ে ছিলেন৷ কিন্তু পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ইহুদী ঘাতক সম্পর্কে জানতে দেন নি। সব আল্লাহর ইচ্ছা।
অনেক ধন্যবাদ চাচাজান ।
অনুবাদে সম্ভবত একটু গরমিল হয়েছে। কথাটি কি এইরকম হবে, 'এটাতো সারা বিশ্বের জন্য উপদেশ ছাড়া আর কিছু নয়'?
মনোযোগের সাথে লেখাটি পড়লাম এবং খুব ভালো লাগল।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন