***"তিনি তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন;"হায় আফসোস ইউসুফের জন্য"৷আর শোকে তাঁর চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি অসহণীয় শোক সম্বরণ করছিলেন৷"***
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৯:১৩:৫৭ রাত
( উর্দু বয়ানুল কোরআনের ধারা বাহিক বাংলা অনুবাদ)
সুরা ইউসুফ রুকু;-১০ আয়াত;-৮০-৯০
৮০/فَلَمَّا اسْتَيْأَسُواْ مِنْهُ خَلَصُواْ نَجِيًّا قَالَ كَبِيرُهُمْ أَلَمْ تَعْلَمُواْ أَنَّ أَبَاكُمْ قَدْ أَخَذَ عَلَيْكُم مَّوْثِقًا مِّنَ اللّهِ وَمِن قَبْلُ مَا فَرَّطتُمْ فِي يُوسُفَ فَلَنْ أَبْرَحَ الأَرْضَ حَتَّىَ يَأْذَنَ لِي أَبِي أَوْ يَحْكُمَ اللّهُ لِي وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِينَ
অর্থ;-তার পর তারা যখন তার কাছ থেকে নিরাশ হয়ে গেল, তখন পরামর্শেের জন্য পৃথক গেল৷ তাদের বড় ভাই বলল; তোমরা কি জাননা যে, পিতা তোমাদের কাছ থেকে আল্লাহর নামে অঙ্গীকার নিয়েছেন! এবং আগেও তোমরা ইউসুফের ব্যাপারে অন্যায় করেছ, অতএব কখনই আমি এ দেশ ছেড়ে যাব না যে
পর্যন্ত না পিতা আমাকে অনুমতি দেন অথবা আল্লাহ আমার জন্য কোন ব্যবস্থা করে দেন৷ তিনিই সর্বোত্তম ব্যস্থাপক৷
# যখন কোন অনুরোধে কাজ হলনা৷ আর বেনইয়ামিনকে ছেড়ে যাওয়া ছাড়া পথ নেই ভাবল, তখন তারা আলাদা ভাবে নিজেরা পরামর্শ করতে লাগল৷ সবার বড় ভাই, যিহুদা, ইউসুফ আঃ কে হত্যা করার সিদ্ধান্তে অমত করে বরং কূপে ফেলার কথা বলেছিল, সে পিতার কাছে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে দিয়ে আসা অঙ্গীকারের কথা মনে করিয়ে দিল, আর ইউসুফের সাথে তাদের অন্যায় ব্যবহারের কথাও মনে করিয়েদিয়ে সিদ্ধান্ত নিল পিতার অনুমতি না পেলে নিজেও এদেশেই থেকা যাবে৷ আর ইতি মধ্যে আল্লাহ কোন ব্যবস্থা করে দিলে অন্য কথা৷ আরও বলল;-
৮১/ارْجِعُواْ إِلَى أَبِيكُمْ فَقُولُواْ يَا أَبَانَا إِنَّ ابْنَكَ سَرَقَ وَمَا شَهِدْنَا إِلاَّ بِمَا عَلِمْنَا وَمَا كُنَّا لِلْغَيْبِ حَافِظِينَ
অর্থ;-তোমরা তোমাদের পিতার কাছে ফিরে যাও এবং বল; হে আমাদের আব্বা, আপনার ছেলে চুরি করেছে৷ আমরা যা জানি তাই বললাম৷ আমরা তো গায়েবের বিষয় জানতাম না৷
৮২/وَاسْأَلِ الْقَرْيَةَ الَّتِي كُنَّا فِيهَا وَالْعِيْرَ الَّتِي أَقْبَلْنَا فِيهَا وَإِنَّا لَصَادِقُونَ
অর্থ;-আর জিজ্ঞেস করুন ঐ জনপদের লোকদেরকে যেখানে আমরা ছিলাম৷ আর ঐ কাফেলাকে যাদের শামিল হয়ে আমরা এসেছি৷ অবশ্যই আমরা সত্যবাদী৷
# এ কথার পর বড় ভাই আর সবার ছোট বেনইয়ামিন ছাড়া অন্যেরা কেনানে ফিরে এল৷
৮৩/قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنفُسُكُمْ أَمْرًا فَصَبْرٌ جَمِيلٌ عَسَى اللّهُ أَن يَأْتِيَنِي بِهِمْ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
অর্থ;-তিনি (পিতা) বললেন; বরং তোমরা তোমাদের জন্য একটা মনগড়া কথা সাজিয়ে নিয়েছ৷ পূর্ণ ধৈর্য ধারণই শ্রেয়৷ হয়তবা আল্লাহ তাদের সবাইকে এক সাথে আমার কাছে নিয়ে আসবেন৷ তিনিই সুবিজ্ঞ প্রজ্ঞাময়৷
৮৪/قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنفُسُكُمْ أَمْرًا فَصَبْرٌ جَمِيلٌ عَسَى اللّهُ أَن يَأْتِيَنِي بِهِمْ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
অর্থ;-তিনি তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন; “হায় আফসোস ইউসুফের জন্য”৷ আর শোকে তার চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি অসহনীয় শোক সম্বরণ করছিলেন৷
# ইউসুফের শোকতো ছিলই সঙ্গে যোগ হল বেনইয়ামিনের শোক৷ কারও সন্তান মারা গেলে অবশ্যই দুঃখ হয়৷ কিন্ত ক্রমে ক্রমে একদিন তা শেষ হয়ে যায়৷ কিন্তু যদি কারও সন্তান হারিয়ে যায় এবং নিশ্চত মৃত্যুর খবর না আসে তবে সে দুঃখ শোক হয়ে প্রতি নিয়ত বেদনা দিতেই থাকে৷ সেই অবস্থার শিকার হজরত ইয়াকুব আঃ৷ তাঁর বিশ্বাস ছিল, ইউসুফ বেঁচে আছে এবং একদিন আসবেই৷ কিন্তু কোথায় কি ভাবে আছে তার দুশ্চিন্তায় ব্যাকুল ছিলেন৷ আর তারই ফল স্বরূপ তাঁর চোখ দুটি সাদা হয়ে গিয়েছিল৷ এর ব্যখ্যা চক্ষু বিশারদ গনই দিতে পারবেন এটি কোন ধরণের রোগ৷
৮৫/قَالُواْ تَالله تَفْتَأُ تَذْكُرُ يُوسُفَ حَتَّى تَكُونَ حَرَضًا أَوْ تَكُونَ مِنَ الْهَالِكِينَ
অর্থ;-তারা বলল; আল্লাহর কসম, মনে হয় আপনি সর্বদা ইউসুফের স্মরণেই লেগে থাকবেন যে পর্যন্ত না মরণাপন্ন হয়ে জান বা মৃত্যু বরণ না করেন৷
৮৬/قَالَ إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللّهِ وَأَعْلَمُ مِنَ اللّهِ مَا لاَ تَعْلَمُونَ
অর্থ;-তিনি বললেন; আমিতো আমার বেদনা আমার দুঃখ কেবল আমার আল্লাহর কাছেই নিবেদন করছি৷ এবং আমি আল্লাহর তরফ থেকে যা জানি তা তোমরা জান না৷
৮৭/يَا بَنِيَّ اذْهَبُواْ فَتَحَسَّسُواْ مِن يُوسُفَ وَأَخِيهِ وَلاَ تَيْأَسُواْ مِن رَّوْحِ اللّهِ إِنَّهُ لاَ يَيْأَسُ مِن رَّوْحِ اللّهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ
অর্থ;-হে আমার বৎসগন, যাও, ইউসুফ ও তার ভাইকে তালাশ কর এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা৷ কেননা আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায় ছাড়া কেউ নিরাশ হয়না৷
৮৮/فَلَمَّا دَخَلُواْ عَلَيْهِ قَالُواْ يَا أَيُّهَا الْعَزِيزُ مَسَّنَا وَأَهْلَنَا الضُّرُّ وَجِئْنَا بِبِضَاعَةٍ مُّزْجَاةٍ فَأَوْفِ لَنَا الْكَيْلَ وَتَصَدَّقْ عَلَيْنَآ إِنَّ اللّهَ يَجْزِي الْمُتَصَدِّقِينَ
অর্থ;-অতঃপর তারা যখন তার (ইউসুফ আঃ) কাছে পৌঁছল তখন বলল; হে মহাত্মন, আমরা ও আমাদের পরিবার বর্গ নিদারূন কষ্ট ভোগ করছি৷ এবং আমরা অপর্যাপ্ত পূঁজি নিয়ে এসেছি৷ তা সত্বেও আমদের পুরা বরাদ্দ দিন৷ আর আমাদেরকে দান করুন৷ আল্লাহ দাতাদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকেন৷
# টানা দূর্ভিক্ষে জন জীবন বিপর্যস্ত৷ কয়েক বছর যদিওবা কিছু মূল্য দেওয়া গিয়েছিল কিন্তু এবছর তাও নাই বললেই চলে৷ তাই তারা যখন ইউসুফ আঃ এর ধনভাণ্ডারে প্রবেশ করল তখনই করুনার সুরে নিজেদের দৈনতার কথা, অপ্রতুল বিনিময় মূল্যের কথা বলেই বরাদ্দের কোটা সব টুকুই দাবী করল৷ এমনকি যদি খয়রাতের ছলেও হয় তবে যেন তা দেওয়া হয় বলল৷
অবস্থা দৃষ্টে হজরত ইউসুফ আঃ আর নিজেকে গোপন রাখতে পারলেন না৷ বললেন;
৮৯/قَالَ هَلْ عَلِمْتُم مَّا فَعَلْتُم بِيُوسُفَ وَأَخِيهِ إِذْ أَنتُمْ جَاهِلُونَ
অর্থ;-তিনি (ইউসুফ আঃ) বললেন; ‘তোমাদের জানা আছেকি? যা তোমরা ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সাথে করেছ যখন তোমরা অজ্ঞতার মধ্যে ছিলে!
৯০/قَالُواْ أَإِنَّكَ لَأَنتَ يُوسُفُ قَالَ أَنَاْ يُوسُفُ وَهَـذَا أَخِي قَدْ مَنَّ اللّهُ عَلَيْنَا إِنَّهُ مَن يَتَّقِ وَيِصْبِرْ فَإِنَّ اللّهَ لاَ يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ;-তারা বলল; তবেকি তুমিই সেই ইউসুফ! তিনি বললেন; আমিই ইউসুফ আর এ আমার সহোদর৷ আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন৷ নিশ্চয় যে তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সবর করে আল্লাহ তেমন নেককারদের শ্রমফল বিন্ষ্ট করেন না৷
৯১/قَالُواْ أَإِنَّكَ لَأَنتَ يُوسُفُ قَالَ أَنَاْ يُوسُفُ وَهَـذَا أَخِي قَدْ مَنَّ اللّهُ عَلَيْنَا إِنَّهُ مَن يَتَّقِ وَيِصْبِرْ فَإِنَّ اللّهَ لاَ يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ;-তারা বলল; আল্লাহর কসম! নিঃসন্দেহে আল্লাহ আমাদের উপর তোমাকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং অবশ্যই আমরা অপরাধী ছিলাম৷
৯২/قَالَ لاَ تَثْرَيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللّهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
অর্থ;-তিনি বললেন; তোমাদের বিরুদ্ধে আজ কোন অভিযোগ নেই৷ আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন৷ তিনি সব মেহেরবানদের চাইতে অধিক মেহেরবান৷
৯৩/اذْهَبُواْ بِقَمِيصِي هَـذَا فَأَلْقُوهُ عَلَى وَجْهِ أَبِي يَأْتِ بَصِيرًا وَأْتُونِي بِأَهْلِكُمْ أَجْمَعِينَ
অর্থ;-তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও এবং এটি আমার আব্বার চেহারার উপর রেখ, এতে তিনি দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবেন৷ আর তোমরা তোমাদের পরিবারের সকলকে নিয়ে আমার কাছে এস৷
# এক বৎসর আগে ভাইকে এ দেশে স্থান দেওয়া যার জন্য সহজ ছিলনা, সেই তিনিই বিনা দ্বিধায় তাঁর পিতা-মাতা ও এগারো ভাইয়ের পরিবার সহ সকলকে এ দেশে চলে আসার অনুমতি দিলেন৷ সঙ্গে পিতার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসার ব্যবস্থাও করলেন৷
বিষয়: বিবিধ
১২২২ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আলহাদমুলিল্লাহ। দারুন লাগল। অনেক কিছু বিষয় রয়েছে এর মধ্যে। এত জঘন্ন অপরাধের পরও ইউসুফ(আঃ)ক্ষমা করলেন। এটাই ধৈর্য এবং দয়া।
আসুন সবাই বলি - আমানতুবিল্লাহে আলিউল আযীম ওয়া তা'য়াককালতু আলাল-হাইউল কাইউম।।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন