{}{}{}// আমি তারই উপর ভরসা করি এবং ভরসাকারীদের তারই উপর ভরসা করা উচিত|\\{}{}{}
লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৮:৫১:৫৪ রাত
(উর্দু বয়ানুল কোরআনের সরল ও ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)
সুরা ইউসুফ রুকু;-৮ আয়াত;-৫৮-৬৮
সাত নং রুকু ও আট নং রুকুর বিষয়বস্তুর মাঝে প্রায় দশটি বছরের ব্যবধান আছে৷ ইতি মধ্যে সাত বছর প্রচুর ফষল ফলেছে, ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা মোতাবেক তা সংরক্ষন হয়েছে৷ পরের সাত বছরের দূর্ভিক্ষের সূচনা হয়েছে৷ আপাশের অঞ্চল গুলিতে ক্রমে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে৷ দূর দূরান্ত হতে মানুষ খাদ্যের খোঁজে মিশরে আসতে শুরু করেছে৷ এমতাবস্থায় সদূর কেনান বা ইজরাঈল হতে ইউসুফ আঃ এর ভাইরাও মিশরে খাদ্যের জন্য এসেছে৷
৫৮/وَجَاء إِخْوَةُ يُوسُفَ فَدَخَلُواْ عَلَيْهِ فَعَرَفَهُمْ وَهُمْ لَهُ مُنكِرُونَ
অর্থ;-ইউসুফের (আঃ) ভাইয়েরা এল এবং তার কাছে উপস্থিত হল৷ ইউসুফ তাদেরকে চিনল আর তারা তাকে চিনল না৷
৫৯/وَلَمَّا جَهَّزَهُم بِجَهَازِهِمْ قَالَ ائْتُونِي بِأَخٍ لَّكُم مِّنْ أَبِيكُمْ أَلاَ تَرَوْنَ أَنِّي أُوفِي الْكَيْلَ وَأَنَاْ خَيْرُ الْمُنزِلِينَ
অর্থ;-আর যখন তাদের রসদ প্রস্তুত করে দিল তখন সে (ইউসুফ) বলল; তোমাদের বৈমাত্রেয় ভাইকে আমার কাছে নিয়ে এস৷ তোমরা কি দেখনা যে আমি পুরা মাপ দেই আর মেহমানদের উত্তম সমাদর করি৷
# খাদ্যের সন্ধানে ইউসুফ আঃ এর বৈমাত্রেয় বড় দশ ভাই এসেছিল৷ তাঁর আপন ভাই, সবার ছোট বেনইয়ামিনকে তার বাপ, হজরত ইয়াকুব আঃ সঙ্গ ছাড়া করতেন না, তাই সে আসেনি, কিন্ত তার জন্য রসদ বা রেশনের দাবী জানালে ইউসুফ আঃ তাদের বন্টনের নিয়ম মোতাবেক গ্রাহককে স্বয়ং হাজির হতে হবে আর উপস্থিতদের সমাদরও করা হবে বললেন৷ নিয়ম ছিল, প্রতি পরিবারের জন্য এক উটের বহন যোগ্য পরিমান রসদ এক বছরের জন্য দেওয়া হবে৷ বিনিময়ে যে যার সাধ্যমত বদলা দেবে৷ দ্রব্যের বিনিময়ও চলত৷ ইউসুফ আঃ এর ভাইরা কিছু ভেড়ার লোম নিয়ে এসে ছিল৷ অনুপস্থিত ভাইয়ের পরিবারের রেশন এবারের মত দেওয়া হল তবে পরের বার দেওয়া হবেনা বলে দিলেন৷
৬০/فَإِن لَّمْ تَأْتُونِي بِهِ فَلاَ كَيْلَ لَكُمْ عِندِي وَلاَ تَقْرَبُونِ
অর্থ;-আর যদি তোমরা তাকে আমার কাছে না নিয়ে আস তবে তোমাদের জন্য আমার কাছে কোন রসদ বরাদ্দ থাকবেনা আর তোমরা আমার কাছে আসবে না৷
৬১/قَالُواْ سَنُرَاوِدُ عَنْهُ أَبَاهُ وَإِنَّا لَفَاعِلُونَ
অর্থ;-তারা বলল; আর তার সম্পর্কে তার পিতাকে সম্মত করার চেষ্টা করব৷ এবং অবশ্য আমাদের তা করতেই হবে৷
৬২/وَقَالَ لِفِتْيَانِهِ اجْعَلُواْ بِضَاعَتَهُمْ فِي رِحَالِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَعْرِفُونَهَا إِذَا انقَلَبُواْ إِلَى أَهْلِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
অর্থ;-সে (ইউসুফ)তার ভৃত্যদেরকে বললেন; তাদের পণ্যমূল্য তাদের রেশনের সাথে দিয়ে দাও৷ সম্ভবতঃ তারা গৃহে পৌঁছে তা বুঝতে পারবে৷ সম্ভবতঃ তারা আবার আসবে৷
# দশ ভাই বিনিময় মূল্য যা এনেছিল, তা তাদের অজান্তে তাদের রেশনের সাথে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলেন৷ একারণে যাতে তারা এ অনুগ্রহ বুঝতে পারে, আবার আসে ও আপন ভাইটিকে নিয়ে আসে৷
৬৩/فَلَمَّا رَجِعُوا إِلَى أَبِيهِمْ قَالُواْ يَا أَبَانَا مُنِعَ مِنَّا الْكَيْلُ فَأَرْسِلْ مَعَنَا أَخَانَا نَكْتَلْ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
অর্থ;-তারপর যখন তাদের পিতার কাছে ফিরে এল, তখন তারা বলল; হে আমাদের আব্বা, আমাদের জন্য শষ্যের বরাদ্দ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, অতএব আপনি আমাদের সাথে আমাদের ভাইকে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা শষ্যের বরাদ্দ পেতে পারি৷ আর আমরা তার হেফাজত অবশ্যই করব৷
৬৪/قَالَ هَلْ آمَنُكُمْ عَلَيْهِ إِلاَّ كَمَا أَمِنتُكُمْ عَلَى أَخِيهِ مِن قَبْلُ فَاللّهُ خَيْرٌ حَافِظًا وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
অর্থ;-তিনি (পিতা) বললেন; আমি তার সম্পর্কে তোমাদেরকে কি সেরূপ বিশ্বাস করব? যেমন ইতি পূর্বে তার ভাই সম্পর্কে করে ছিলাম! বস্তুতঃ আল্লাহই সর্বোত্তম হেফাজত কারী এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু৷
# ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে যাবার ব্যাপারে ইয়াকুব আঃ ইউসুফ কে সেই ছোটবেলায় তাদের সাথে ছাড়ার কথা মনে করিয়ে দিলেন৷
৬৫/وَلَمَّا فَتَحُواْ مَتَاعَهُمْ وَجَدُواْ بِضَاعَتَهُمْ رُدَّتْ إِلَيْهِمْ قَالُواْ يَا أَبَانَا مَا نَبْغِي هَـذِهِ بِضَاعَتُنَا رُدَّتْ إِلَيْنَا وَنَمِيرُ أَهْلَنَا وَنَحْفَظُ أَخَانَا وَنَزْدَادُ كَيْلَ بَعِيرٍ ذَلِكَ كَيْلٌ يَسِيرٌ
অর্থ;-যখন তারা তাদের আসবাব পত্র খুলল, তখন তারা তাতে পেল তাদের পণ্যমূল্য ফেরত দেওয়া হয়েছে৷ তারা বলল; হে আমাদের আব্বা, আমরা আর কি চাই! দেখুন আমাদের এ পণ্যমূল্য আমাদের ফেরত দেওয়া হয়েছে৷ এখন আমরা আবার আমাদের পরিবারের জন্য রসদ আনবো৷ এবং আমাদের ভাইয়ের দেখাশোনা করব৷ এক উট বরাদ্দ বেশী আনবো, তা সহজ হবে৷
৬৬/قَالَ لَنْ أُرْسِلَهُ مَعَكُمْ حَتَّى تُؤْتُونِ مَوْثِقًا مِّنَ اللّهِ لَتَأْتُنَّنِي بِهِ إِلاَّ أَن يُحَاطَ بِكُمْ فَلَمَّا آتَوْهُ مَوْثِقَهُمْ قَالَ اللّهُ عَلَى مَا نَقُولُ وَكِيلٌ
অর্থ;-তিনি (পিতা) বললেন; আমি তাকে কখনও তোমাদের সাথে পাঠাবনা যতক্ষন না তোমরা আল্লাহর নামে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দাও যে, তোমরা তাকে ফেরত নিয়ে আসবেই৷ অবশ্য যদি তোমরা সকলে পাকড়াও না হও৷ অতঃপর তারা তাকে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিল, তখন তিনি বললেন; আমাদের কথপোকথনে আল্লাহই মধ্যস্ত রইলেন৷
# তাদের পণ্যমূল্য ফেরত পেয়ে তারা বেশ প্রফুল্ল হল৷ পরবর্তীতে রেশন পুনরায় পাবার পথ সুগম মনে করল, এবং একটু বেশী আনার আশাও ব্যক্ত করল৷বাকী রইল ছোট ভাইকে সাথে নেওয়া৷ আল্লাহকে সাক্ষী রেখে সবাই যখন জোরালো ওয়াদা করল তখন ইয়কুব আঃ বেনইয়ামিনকে তাদের সাথে ছাড়তে রাজী হলেন৷ শর্ত হল তোমরা সকলে যদি বিপদ গ্রস্থ না হয়ে পড় তবে অবশ্যই তাকে ফেরত আনতে হবে৷
৬৭/وَقَالَ يَا بَنِيَّ لاَ تَدْخُلُواْ مِن بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُواْ مِنْ أَبْوَابٍ مُّتَفَرِّقَةٍ وَمَا أُغْنِي عَنكُم مِّنَ اللّهِ مِن شَيْءٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ
অর্থ;-তিনি বললেন; হে আমার বৎসগন, তোমরা একই দরজা দিয়ে প্রবেশ করোনা৷বরং পৃথক পৃথক দরজা দিয়ে প্রবেশ কোর৷ আল্লাহর কোন বিধান থেকে আমি তোমাদের রক্ষা করতে পারিনা৷ বিধান আল্লহরই চলে৷ আমি তারই উপর ভরসা করি এবং ভরসাকারীদের তারই উপর ভরসা করা উচিৎ৷
# ইয়াকুব আঃ নিজ এগারো পুত্রকে পুনরায় রেশন আনতে মিশরের গুদাম ঘরে একই সাথে একই দরজা দিয়ে না গিয়ে আলাদা ভাবে প্রবেশ করতে বললেন৷ মনে করিয়ে দিলে এটি তার সাবধানতা বটে তবে আল্লাহর বিধান যদি অন্য থাকে তবে আমার সাবধনতা বেকার৷ আমাদের সবার তারই উপর ভরসা করা উচিৎ৷ তাঁর অন্তরে কি ছিল তা আল্লাহই ভাল জানেন৷
৬৮/وَلَمَّا دَخَلُواْ مِنْ حَيْثُ أَمَرَهُمْ أَبُوهُم مَّا كَانَ يُغْنِي عَنْهُم مِّنَ اللّهِ مِن شَيْءٍ إِلاَّ حَاجَةً فِي نَفْسِ يَعْقُوبَ قَضَاهَا وَإِنَّهُ لَذُو عِلْمٍ لِّمَا عَلَّمْنَاهُ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ
অর্থ;-আর তারা যখন পিতার কথা মত প্রবেশ করল, তখন আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে তাদের তা বাঁচাতে পারলনা৷ ইয়াকুবের মনের একটি বাসনা তিনি পূর্ণ করলেন৷ নিঃসন্দেহে তিনি জ্ঞানী ছিলেন, কেননা আমি তাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম৷ কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানেনা৷
# পুত্রদের এমন সিদ্ধান্ত দেওয়ার পিছনে উনার মনের ইচ্ছা পুরণ হলেও তা কাজে লাগেনি, কারণ আল্লাহর বিধান ছিল অন্য, যা পরে আসছে৷
বিষয়: বিবিধ
১২১৬ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ চাচাজান ।
এ সূরাটি পড়তে গিয়ে অনেক বিষয়ে আমি নির্বাক হয়ে থাকি, কখনো হয়তো একটি মাত্র আয়াতেই সময়টুকু কেটে যায়!
বিশেষতঃ এ দুটি বিষয়-
(১)ইউসুফ আঃএর বৈমাত্রেয় ভাইদের নৈতিক মান- [একজন(বড়জন) ছাড়া]- যারা একজন নবীর সন্তান হয়েও "সম্মিলিতভাবে" ভ্রাতৃহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারলো!!
(২)ইয়াকুব আঃ জানতেন (তাঁকে জানানো হয়েছিল এবং ইউসুফ আঃএর স্বপ্নের পর নিশ্চিত হয়েছিলেন) যে ইউসুফ আঃ নবী হবেন, কিন্তু তাঁর শোকার্ত ও পেরেশান হওয়া..
এ ছাড়া মানবচরিত্রের অবচেতন মনের অনেক অলিগলি এ সূরাতে উন্মোচিত হয়েছে যা বিস্ময়কর হলেও সত্য!
আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন