{}{}{} অবশ্যই আখেরতের প্রতিদান উত্তম তাদের জন্য যারা ইমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে৷{}{}{}

লিখেছেন লিখেছেন শেখের পোলা ৩০ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:৩৭:৩২ রাত

(উর্দু বয়ানুল কোরআনের ধারাবাহিক বাংলা অনুবাদ)

সুরা ইউসুফ রুকু;-৭ আয়াত;-৫০-৫৭

‘সাকী’ মারফত বদশাহ স্বপ্নের ব্যাখ্যা পেয়ে খুশী হলেন৷ ব্যাখ্যাকারীকে একজন বিচক্ষন, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি মনে করে তাকে দরবারে নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠালেন৷

৫০/وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُونِي بِهِ فَلَمَّا جَاءهُ الرَّسُولُ قَالَ ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ مَا بَالُ النِّسْوَةِ اللاَّتِي قَطَّعْنَ أَيْدِيَهُنَّ إِنَّ رَبِّي بِكَيْدِهِنَّ عَلِيمٌ

অর্থ;-আর বাদশাহ বললেন; তোমরা ইউসুফকে মার কাছে নিয়ে এস৷ অতঃপর দূত যখন তাঁর কাছে এল, তখন তিনি বললেন; “তুমি ফিরে যাও তোমার মনিবের কাছে এবং তাকে জিজ্ঞেস কর ঐ রমনীদের অবস্থা কি? যারা নিজেদের হাত কেটে ফেলেছিল৷ আমার রব অবশ্যই তাদের চক্রান্ত অবগত আছেন৷”

# বাদশার দূত যখন জেল খানায় ইউসুফ আঃ কে দরবারে আনার জন্য গেল, তিনি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ মাথায় নিয়ে যেতে রাজী হলেন না৷ বরং বিষয়টির ব্যাপারে বাদশাহকে তদন্ত করে, তাঁকে দায় মুক্ত করেই যেন জেল থেকে বার করা হয়, সে ব্যাপারে অনুরোধ করে পাঠালেন৷ আর এটি যে চক্রান্ত ছিল তারও ইঙ্গীত দিলেন৷

৫১/قَالَ مَا خَطْبُكُنَّ إِذْ رَاوَدتُّنَّ يُوسُفَ عَن نَّفْسِهِ قُلْنَ حَاشَ لِلّهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ مِن سُوءٍ قَالَتِ امْرَأَةُ الْعَزِيزِ الآنَ حَصْحَصَ الْحَقُّ أَنَاْ رَاوَدتُّهُ عَن نَّفْسِهِ وَإِنَّهُ لَمِنَ الصَّادِقِينَ

অর্থ;-বাদশাহ রমনীদের বললেন; “তোমাদের ঘটনাটি কি? তোমরা যখন কূকর্মের জন্য ইউসুফকে ফুসলিয়েছিলে৷” তারা বলল; “আল্লাহর মাহাত্ম অদ্ভুত, তার মধ্যে কোন দোষ আছে বলে আমরা জানতে পারিনি৷” আজিজের স্ত্রী বলল; “এখনতো সত্য প্রকাশ হয়ে পড়েছে৷ আমিই তাকে কূকর্মে ফুসলিয়ে ছিলাম৷ সে নিঃসন্দেহে সত্যবাদী৷”

# বাদশাহ মহীলাদের জবানবন্দী নিলেন, বাদী আজিজের স্ত্রী সহ সকলে স্বীকার করল যে ইউসুফ নির্দোষ৷

৫২/ذَلِكَ لِيَعْلَمَ أَنِّي لَمْ أَخُنْهُ بِالْغَيْبِ وَأَنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي كَيْدَ الْخَائِنِينَ

অর্থ;-এটা এ জন্য যে যাতে তিনি জেনে নেন, গোপনে আমি তার বিশ্বাস ঘাতকতা করিনি৷ আর অবশ্যই আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের প্রতারণাকে এগুতে দেন না৷

পারা-১৩

৫৩/وَمَا أُبَرِّىءُ نَفْسِي إِنَّ النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلاَّ مَا رَحِمَ رَبِّيَ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ

অর্থ;-আর আমি নিজেকে নির্দোষ বলিনা৷ নিশ্চয় মানুষের মন মন্দ কাজের প্ররোচনা দিয়ে থাকে, তবে সে নয় যাকে আমার রব অনুগ্রহ করেন৷ নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷

# এ আয়াতের উক্তিগুলি আজিজের স্ত্রী ও ইউসুফ আঃ, দুজনেরই হতে পারে৷ যেহেতু কথা হচ্ছে আজিজের স্ত্রীর সাথে, তাই এ জবানবন্দীতে ইউসুফ আঃ এর অগোচরে সে তাঁর বিশ্বাসের মর্যাদা দিল, বিশ্বাস ঘাতকতা করল না, তা যেন ইউসুফ আঃ জেনে নেন৷ হয়তোবা সে ইমানদার হয়ে গিয়ে থাকবে৷

আবার ইউসুফ আঃ এরও হতে পারে, তিনি এ তদন্ত এ জন্য করালেন যাতে তাঁর মনিব, আজিজ জানতে পারে যে তিনি তার বিশ্বাসে অমর্যাদা করে তারই স্ত্রীর সাথে কূকর্মে লিপ্ত হতে চাননি৷

মানুষের মন তাকে খারাপ কাজের ফুসলানী দিয়েই থাকে, তবে যারা আল্লাহর অনুগ্রহ চায়, আল্লাহ যদি তাকে অনুগ্রহ করেন তবে তারা তাদের মনের বিরুদ্ধে জয়ী হয়৷

৫৪/وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُونِي بِهِ أَسْتَخْلِصْهُ لِنَفْسِي فَلَمَّا كَلَّمَهُ قَالَ إِنَّكَ الْيَوْمَ لَدَيْنَا مِكِينٌ أَمِينٌ

অর্থ;-বাদশাহ বললেন; তাকে আমার কাছে নিয়ে এস, আমি তাকে বিশ্বস্ত সহচর করে রাখব৷ অতঃপর যখন তার সাথে কথপোকথন হল, (বাদশাহ) বললেন; “আজ থেকে আপনি আমার কাছে বিশ্বস্ত হিসেবে মর্যাদার স্থান লাভ করলেন৷

# বাদী যখন বিবাদীকে নির্দোষ ঘোসনা দিল, তখন বাদশাহ ইউসুফ আঃ কে দরবারে ভাল পদ দিয়ে রাখার কথা বলে তাঁকে আনতে পাঠালেন৷ তিনি এলেন ও বাদশাহ তাঁর সাথে কথা বলে তাঁকে বিশ্বস্ত সহচর বানাবার ঘোষনা দিলেন৷

৫৫/قَالَ اجْعَلْنِي عَلَى خَزَآئِنِ الأَرْضِ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٌ

অর্থ;-তিনি (ইউসুফ আঃ) বললেন; দেশের ধনভাণ্ডারের উপর আমাকে কর্তৃত্ব দান করুন৷ আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও বেশ অভিজ্ঞ৷

# বাদশার সিদ্ধান্ত জেনে ইউসুফ আঃ আসন্ন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে দেশের কৃষী ও খাদ্য বিষয়ক কর্তৃত্ব নিতে চাইলেন৷ সে বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতাও ছিল৷ আর যাতে দূর্ভিক্ষের জন্য সঠিক পরিকল্পনাও নিতে পারেন৷ ধন ভাণ্ডার বলতে এখানে অর্থ সম্পদ নয়৷

৫৬/وَكَذَلِكَ مَكَّنِّا لِيُوسُفَ فِي الأَرْضِ يَتَبَوَّأُ مِنْهَا حَيْثُ يَشَاء نُصِيبُ بِرَحْمَتِنَا مَن نَّشَاء وَلاَ نُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ

অর্থ;-আর এরূপেই আমি ইউসুফকে সে দেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম৷ সে দেশে যেখানে ইচ্ছা সে স্থান পেতে পারতো৷ আমি যাকে ইচ্ছা রহমত পৌঁছে দিয়ে থাকি এবং পূন্যবানদের প্রতিদান নষ্ট করিনা৷

৫৭/وَلَأَجْرُ الآخِرَةِ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ آمَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ

অর্থ;-আর অবশ্যই আখেরাতের প্রতিদান উত্তম তাদের জন্য যারা ইমান এনেছে ও তাকওয়া অবলম্বন করেছে৷

# সাধারণ নাগরীক হিসেবে ইউসুফ আঃ মিশরের যে কোন জায়গায় বাস করতে পারতেন, কিন্তু আল্লাহ তার বিশেষ রহমতে তাঁকে একটি বিশিষ্ট পদ দিয়ে দেশের বাদশাহর দরবারে প্রতিষ্ঠিত করলেন৷

বিষয়: বিবিধ

১১৯৪ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

352193
৩০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৪৭
হাফেজ আহমেদ লিখেছেন : আল্লহুআকবার
৩০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৫৩
292410
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকে স্বাগতম ও সাথে ধন্যবাদ৷Good Luck
352196
৩০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৫৩
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : সুবহানাল্লাহ!
'মানুষের মন তাকে খারাপ কাজের ফুসলানী দিয়েই থাকে, তবে যারা আল্লাহর অনুগ্রহ চায়, আল্লাহ যদি তাকে অনুগ্রহ করেন তবে তারা তাদের মনের বিরুদ্ধে জয়ী হয়৷'
জাযাকাল্লাহ খায়ের

০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০২:৫৯
292444
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন৷ আপনাকে স্বাগতম ও ধন্যবাদ৷
352199
৩০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৫৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam. Mashaallah very valuable matter been explained beautifully. Jajakallahu khair
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৩:০০
292445
শেখের পোলা লিখেছেন : অ আলায়কুমুস সালাম, আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ৷
352202
৩০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০:১৫
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
সত্যিই আল্লাহর রহমত ছাড়া খারাপ কাজ থেকে মানুষ বাচতে পারে না।

একটি প্রশ্ন ছিল: ইসলামী শরীয়তে কোন ব্যক্তি নিজের জন্য নির্দিষ্ট কোন পদ চাইতে পারে না। অথচ এখানে ইউসূফ (আঃ) নিজেকে খাদ্য মন্ত্রীর পদ দিতে আবেদন করলেন।

এ ব্যপারে যদি একটু বিস্তরিত লিখতেন, উপকৃত হতাম।
জাযাকাল্লাহ খাইর
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৩:১১
292446
শেখের পোলা লিখেছেন : বিষয়টা ছিল দুর্ভীক্ষ জনিত, তারই সমাধানেের বিষয়ে পরামর্শ ছিল সপ্নে৷ বাদশা বিষয়টা কি ভাবে ট্যাকেল করবেন তা তার জানাছিলনা কিন্তু ইউসুফ আঃ জানতেন, এদিকে বাদশা ইউসুফ আঃ কে উচ্চপদ দিতে চাইলেন, তাই তিনি ঐ পদ বেছে নিলেন যাতে সহজে সমাধান করতে পারেন৷ধন্যবাদ
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:২০
292459
আবু জান্নাত লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ
352216
৩০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৪৯
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম।

আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের নফসে আম্মারার ওয়াসোয়াসা থেকে হিফাজত করুন।

জাযাকাল্লাহু খাইর।
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৩:৩৫
292447
শেখের পোলা লিখেছেন : অ আলাইকুমুস সালাম৷ আমিন৷ ধন্যবাদ৷
352271
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
এই ঘটনাটিতে অন্যায় বিচার এর ফলাফল এর কথাও আছে।
০১ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৩২
292511
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ৷
352704
০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৩৩
আফরা লিখেছেন : এই লিখায় তো আমি একটা কমেন্ট করেছিলাম কিন্তু কমেন্ট টা সেন্ট হয়নি তাতো বুঝতে পারি নি ।যাক গে নো প্রবলেম-----

জাজাকাল্লাহ খাইরান চাচাজান ।
০৫ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০১:০৫
292816
শেখের পোলা লিখেছেন : 'নো প্রবলেম' মামনী, অনেক শুভেচ্ছা রইল৷
352842
০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১২:১৭
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান। আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন
০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৩:১৫
292909
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন৷ ধন্যবাদ ভাতিজা৷
353868
১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০২:০৩
রফিক ফয়েজী লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:০৪
293888
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File